সংবাদ মাধ্যম সারা বিশ্বেই রাষ্ট্রের ৪র্থ স্তম্ভ

প্রকাশ | ৩০ জুন ২০২১, ০০:০০ | আপডেট: ৩০ জুন ২০২১, ১১:৫২

এম এ মান্নান

সংবাদ মাধ্যমকে সারা বিশ্বেই রাষ্ট্রের ৪র্থ স্তম্ভ বলে গণ্য করা হয়। সংবাদপত্র তথা গণমাধ্যমের স্বাধীনতা একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের পরিপূর্ণ বিকাশের গুরুত্বপূর্ণ পূর্বশর্ত। আমাদের মহান সংবিধানের ৩৯(২)(খ) অনুচ্ছেদে 'সংবাদক্ষেত্রের স্বাধীনতার নিশ্চয়তা দান করা হইল' মর্মে উদ্ধৃতি রয়েছে। গণমাধ্যমের প্রতি বর্তমান সরকারের আচরণ সংবিধানের এই ঘোষণা দ্বারা পরিচালিত হচ্ছে। স্বাধীনতার মূল স্বপ্ন বাঙালি জাতির জন্য একটি আইনের দ্বারা শাষিত সমাজ প্রতিষ্ঠা করা। সে সমাজে পার্থিব সব বিষয়ে বিশ্ব মানবতা যে উচ্চপর্যায়ে পৌঁছেছে, সেই মাত্রায় পৌঁছানোই হবে আমাদের লক্ষ্য। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং তার সতীর্থ অযুত মুক্তিযোদ্ধার স্বপ্নের বাস্তবায়ন কেবল এই পথেই সম্ভব বলে আমরা বিশ্বাস করি।  বিশ্বজুড়ে প্রিন্ট মিডিয়ার শক্তি সম্প্রতি ক্রমান্বয়ে কমে আসছে। উন্নত প্রযুক্তি, ইন্টারনেট, ফেসবুক ইত্যাদির উপস্থিতি ছাপার কাগজকে ক্রমান্বয়ে দূরে সরিয়ে দিচ্ছে। কিন্তু এর মধ্যেও উন্নতমানের সংবাদপত্রের স্থান এখনো রয়ে গেছে বলে অভিজ্ঞ মহল মনে করেন। পশ্চিমা জগতে প্রাপ্ত সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী প্রিন্ট মিডিয়ার প্রতি মানুষের আগ্রহ পুনরায় ফিরে আসছে। আমাদের দেশেও সাক্ষরতার হার ও মাথাপিছু আয় বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে মানুষের খবরের কাগজ পড়ার প্রবণতা পুনরায় বৃদ্ধি পাবে বলে অভিজ্ঞ মহল মনে করেন। সরকার যে বিশাল উন্নয়ন কর্মযজ্ঞ সারা দেশে পরিচালনা করছে, তার বস্তুনিষ্ঠ বার্তা সব নাগরিকের কাছে দ্রম্নত পৌঁছে দেওয়ার জন্য আমরা গণমাধ্যমের উপর বহুলাংশে নির্ভর করি। বর্তমান সরকারপ্রধান জননেত্রী শেখ হাসিনা জনগণের জানার অধিকারকে সম্মান করেন এবং এর গুরুত্ব সম্পর্কে তিনি সম্পূর্ণ ওয়াকিবহাল। এমতাবস্থায় এই গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যমের সঙ্গে যারা জড়িত, সব পর্যায়ের সংবাদকর্মী ও বিনিয়োগকারী, সবার অধিকার সংরক্ষণে সরকারপ্রধান সম্পূর্ণরূপে দায়বদ্ধ। সংবাদকর্মীদের জীবনমান উন্নয়নের লক্ষ্যে সরকার সম্প্রতি একটি ওয়েজবোর্ড প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দিয়েছেন। এই বোর্ড সংবাদকর্মীদের সঙ্গত দাবিগুলোর প্রতি সম্মানশীল হয়ে, মালিকপক্ষের বিনিয়োগ সংরক্ষণের পূর্ণ নিশ্চয়তা বিধান করে, সবার কল্যাণ নিশ্চিত করবে আমরা এরূপ আশা করি। প্রেস কাউন্সিল স্থাপন, প্রেস প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা ইত্যাদির মাধ্যমে সরকার গণমাধ্যমের প্রতি তার দায়বদ্ধতার কথা পরিষ্কার স্বীকার করেছে। বাংলাদেশ প্রেস ইনস্টিটিউটের জন্ম ১৯৭৪ সালে। জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বাধীন তৎকালীন সরকারের এ সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত ১৯৭৪ সালের। আর ১৯৭৬ সালে একটি রেজিউলেশনের মাধ্যমে পিআইবি প্রতিষ্ঠা করা হয়। পরবর্তীতে  প্রেস ইনস্টিটিউট বাংলাদেশ (পিআইবি) আইন-২০১৮ জাতীয় সংসদ পাস হয়। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির কাজে লাগিয়ে গণমাধ্যমের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অগ্রগতির ধারাকে বজায় রাখতে পিআইবি এবং একসেস টু ইনফরমেশন (এটুআই) প্রোগ্রামের যৌথ উদ্যোগে ২০১৭ সালে অনলাইনে সাংবাদিকতা শেখার পস্ন্যাটফর্ম চালু করেন। প্রধানমন্ত্রীর ডিজিটাল বাংলাদেশ তৈরিতে ও শিক্ষাকে মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে সারা দেশের হাজার হাজার সাংবাদিক, শিক্ষার্থী ও সাংবাদিকতায় আগ্রহী বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ যুক্ত হয়েছেন। যা তথ্য-প্রযুক্তির চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সাংবাদিকতা নতুন মাত্রা যুক্ত হয়েছে। এখন সংবাদকর্মীরা মোবাইল ব্যবহার করে অনেক কাজ করতে পারছেন। যা করোনাভাইরাসকালে সরকারি বিধিনিষেধের সময় সংবাদকর্মীরা সর্বোত্তম ব্যবহার করেছে। যা সংবাদপত্রের জন্য একটি মালইফলক ঘটনা। অবশ্যই এ ধারা আগামীতে অব্যাহত থাকবে। সংবাদপত্র প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই বাংলাদেশের স্বাধীনতা, সুষম অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও সুশাসন প্রতিষ্ঠার পক্ষে নিরলস কাজ করে আসছে। এই ঐতিহ্য সমুন্নত রেখে আগামী দিনেও জাতির প্রতি গণমাধ্যম তার দায়িত্ব যথাযথ পালন করবে।  বাঙালির মহান মুক্তিযুদ্ধ ও তার দীর্ঘ প্রস্তুতিকালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ পরিচালিত সংগ্রামের সবপর্যায়ে গণমাধ্যমের ভূমিকা ও অবদান অনস্বীকার্য। বিশেষ করে সেই ৫০-৬০ দশকে 'শেখ মুজিব' ও তার লাখো সতীর্থদের অগ্নিঝরা বার্তা গ্রাম-বাংলায় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা কোটি বাঙালির মধ্যে পৌঁছে দেওয়ার দায়িত্ব  তৎকালীন প্রিন্ট প্রকাশনাগুলো ও অন্য গণমাধ্যমকর্মীরা সাহস ও সততার সঙ্গে পালন করেছেন। তখনকার দিনে ইলেকট্রনিক ও ডিজিটাল প্রযুক্তির অনুপস্থিতির মধ্যে ছাপার কাগজগুলো যে দুরূহ দায়িত্ব সাহসের সঙ্গে পালন করেছে তা অবিস্মরণীয়। গণমাধ্যমের সঙ্গে সম্পৃক্ত শত শত কর্মী নিগৃহীত হয়েছেন, লাঞ্ছিত হয়েছেন এবং মৃতু্যবরণও করেছেন। তাদের সবাইকে আজকের বাংলাদেশের সরব গণমাধ্যমের মধ্যে কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করে এ জাতি। বাংলাদেশের গণমাধ্যমের কর্মীরা স্বাধীনতার আগে থেকেই জাতি গঠনের সংগ্রামে ইতবাচক ভূমিকা পালন করছেন। বিশেষ করে চরম প্রতিক্রিয়া ও ইতিহাসের চাকা পিছন দিকে ঘুরিয়ে দেওয়ার প্রচেষ্টায় লিপ্ত বাংলা ও বাঙালির বিরুদ্ধ শক্তিগুলোর মোকাবিলায় বাংলাদেশের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা যে জীবনপণ সংগ্রামে লিপ্ত রয়েছেন সে কাজে বর্তমান শক্তিশালী গণমাধ্যম সামনের কাতারে থাকবে। নিরক্ষরতা, কুসংস্কার, পশ্চাৎপদতা ও একুশ শতকের মানবজাতির অর্জনের সমান অংশীদার হিসেবে পৃথিবীতে টিকে থাকার এই প্রচেষ্টায় গণমাধ্যমে কর্মরত সবার সহযোগিতা থাকবে। স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার পেছনে বাঙালির হাজার বছরের স্বপ্নের চূড়ান্ত বাস্তবায়ন বাংলাদেশের স্বাধীনতা। বাঙালির স্বাধীনতার মহান সংগ্রামে লাখো লাখো মানুষ জীবনোৎসর্গ করেছেন। তাদের মধ্যে অনেক সংবাদকর্মীও রয়েছেন। জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু। লেখক : রাজনীতিবিদ ও বাংলাদেশ সরকারের পরিকল্পনামন্ত্রী