রোহিঙ্গা সংকটে ৪ বছর, প্রত্যাবাসন সহ বহুমাত্রিক সমস্যায় জর্জরিত

প্রকাশ | ২৫ আগস্ট ২০২১, ১৮:২২

ফারুক আহমদ, উখিয়া (কক্সবাজার ) উপজেলা প্রতিনিধি

 

 

রোহিঙ্গা সংকটের চার বছর পূর্ণ হলেও মিয়ানমারের  প্রত্যাবাসন সহ বহুমাত্রিক  সমস্যা আরো প্রকট হচ্ছে। তবে  ক্যাম্প প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা  বাহিনীর ব্যাপক কড়াকড়ি  কারণে রোহিঙ্গারা এ দিবস  উপলক্ষে  বড় ধরনের  কোন সমাবেশ  বা শো ডাউন  করতে পারেনি।

 

২৫ আগষ্ট  মিয়ানমারের  রোহিঙ্গা  জনগোষ্ঠী  গণ হত্যা দিবস হিসেবে  পালন করে  আসছে বিশেষ করে ২০১৯ সালে আজকে এই দিনে উখিয়ার রোহিঙ্গা  ক্যাম্পে লাখো মানুষের  উপস্থিতি  সমাবেশ  করেছিল।  যা রীতিমতো  রাষ্ট্রের অভ্যন্তরে হুমকির  কারণ হয়ে  দাড়িয়েছিল।  সেই  থেকে প্রশাসন ও আইনশৃংখলা  বাহিনী ২৫ আগষ্ট  রোহিঙ্গা  ক্যাম্পে  কড়া  সর্তক সহ টহল নজর ধারী বাড়ান।

 

এ দিকে  আন্তর্জাতিক মহলের কাছে চাপা পড়ে যাচ্ছে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের বিষয়টি। করোনা মহামারী ও রাজনৈতিক অস্থিরতার দোহাই দিয়ে মিয়ানমার প্রত্যাবাসনের প্রস্তুতিমূলক কার্যক্রমও বন্ধ রেখেছে প্রায় দুই বছর ধরে।উদ্ভুত পরিস্থিতিতে প্রত্যাবাসন কার্যক্রম শুরু করা এখন সরকারের জন্য অনেক বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

 

২০১৭ সালে মিয়ানমারে গণহত্যার মুখে দেশ ছেড়ে দলে দলে উখিয়া  টেকনাফ  সীমান্ত হয়ে বাংলাদেশে ঢুকেছিল এই রোহিঙ্গারা। সেসময় প্রায় ৭ লাখ লোকের ঠাঁই দেওয়ায় নতুন এক মানবিক বাংলাদেশকে চিনে বিশ্ব।  কিন্তু মাত্র ৪ বছরের ব্যবধানে উদ্বাস্তু হিসেবে আশ্রয় নেওয়া সেই রোহিঙ্গারাই এখন এদেশের মাথা ব্যাথার কারণ হয়ে দাড়িয়েছে। তাঁরা জড়িয়ে পড়েছে খুন, গুম, অপহরণ, ধর্ষণ, চাঁদাবাজি, ডাকাতিসহ নানা অপরাধে। একই সাথে  মাদক,  ইয়াবা ও স্বর্ণ চোরাচালান  সহ অবৈধ  অস্ত্রের  ডিপো হচ্ছে  রোহিঙ্গা  ক্যাম্প।ফলে উখিয়া  টেকনাফ সহ পুরো কক্সবাজার জেলাবাসীর কাছে এখন মূর্তিমান আতংকে পরিণত হয়েছে রোহিঙ্গারা।

 

বিগত ৪ বছরে জেলায় রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে অস্ত্র, মাদক, ধর্ষণ, অপহরণ, বিশেষ ক্ষমতা আইন, পুলিশ আক্রান্ত, ডাকাতি বা ডাকাতির প্রস্তুতি, হত্যা, মানব পাচার সহ ১২ ধরনের অপরাধে ১২৯৮ টি মামলা হয়েছে। এর মধ্যে ৭০টি খুন, ৭৬২টি মাদক, ২৮টি মানব পাচার, ৮৭টি অস্ত্র, ৬৫টি ধর্ষণ ও ১০টি ডাকাতি এবং ৩৪টি অপহরণ ও মুক্তিপণ আদায়ের মামলা ও অন্যান্য আইনে ৮৯ টি মামলা উল্লেখযোগ্য। ২০১৭ সালে নানা অপরাধে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে মামলার সংখ্যা ছিল ৭৬টি আর আসামি হন ১৫৯ জন। ২০১৮ সালে ২০৮ মামলায় আসামি ৪১৪ জন। ২০১৯ সালে মামলার সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ২৬৩টি আর আসামি হন ৬৪৯ জন। ২০২০ সালে  ১৮৪ মামলায় ৪৪৯ জন রোহিঙ্গা আসামী হন। চলতি বছরের আগষ্ট পর্যন্ত ৫৬৭ টি মামলায় ১ হাজারের উপরে রোহিঙ্গা আসামী হয়েছে।

 

অর্থলোভে ও আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে উখিয়া ও টেকনাফের ক্যাম্পগুলোতে গড়ে উঠেছে একাধিক সন্ত্রাসী বাহিনী। প্রায় প্রতিনিয়িত সেখানে এসব সন্ত্রাসী বাহিনীর হাতে খুন, অপহরণ হচ্ছে সাধারন রোহিঙ্গারা।

 

উখিয়ার পালংখালী  ইউপি চেয়ারম্যান গফুর উদ্দিন চৌধুরী  বলেন, মানবিক কারণে আশ্রয় দেয়া রোহিঙ্গারা এখন স্থানীয়দের কাছে আতংকে পরিণত হয়েছে।তারা প্রতিনিয়ত মাদক ও মানবপাচার, অবৈধ অস্ত্র ও স্বর্ণের চোরকারবার, অপহরণ খুন সহ নানা অপকর্ম করেই যাচ্ছে।

 

এক সময় মানবিক কারণে মিয়ানমার ফেরত এই উদ্বাস্তুদের আশ্রয় দিলেও এখন তাদের জন্যই নিজেদের অনিরাপদ ভাবতে শুরু করেছেন স্থানীয়রা। 

 

উখিয়া  টেকনাফের সচেতন নাগরিক সমাজ  বলেন,  রোহিঙ্গারা যেভাবে অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে তা বর্ণণা করা সম্ভব নয়। যেতই সময় গড়াচ্ছে ততই তারা ভয়ংকর হয়ে উঠছে। এখনো যদি তাদের লাগাম সটেণে ধরা না হয় তবে তাদের নিয়ন্ত্রণ করা দু:রহ হয়ে পড়বে। 

 

তারা আরো জানান, খুব দ্রুত তাদেরকে মিয়ানমার ফেরত পাঠানো দরকার।

রোহিঙ্গাদের অপরাধে নিয়ন্ত্রণে ক্যাম্পে আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর সদস্যরা কাজ করছেন বলে জানিয়েছেন   ১৪ আর্মড পুলিশ ব্যাটেলিয়ান এর অধিনায়ক মোহাম্মদ নাইমুল হক  ।  তিনি বলেন রোহিঙ্গারা অপরাধের সাথে জড়িয়ে পড়েছে।রোহিঙ্গাদের নিয়ন্ত্রণে  পুলিশের পাশপাশি ক্যাম্পে এপিবিএনের তিনটি ব্যাটালিয়ান কাজ করছে। 

 

 সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, মিয়ানমার দুই পর্যায়ে মাত্র ৩০ হাজার রোহিঙ্গাকে যাচাই করে প্রত্যাবাসনের জন্য চূড়ান্ত করেছে। তার মধ্যে প্রথম পর্যায়ের মাত্র আট হাজারের তালিকা বাংলাদেশের কাছে হস্তান্তর করেছে। দ্বিতীয় পর্যায়ের ২২ হাজারের তালিকা এখনো দেয়নি।

 

শরনার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার শাহ রেজওয়ান হায়াত বলেন, রোহিঙ্গারা যেকোনো সময় নিজ দেশে ফেরত যেতে প্রস্তুত রয়েছে।  আমরা সেভাবেই কাজ করছি। এক সময় অবশ্যই তাদের নিজ দেশে ফিরে যেতে হবে। এ ব্যাপারে তারা মানসিকভাবে প্রস্তুত । বর্তমানে উখিয়া  টেকনাফে  ১১ লক্ষাধিক রোহিঙ্গা  জনগোষ্ঠী  ৩৪  ক্যাম্পে বসবাস করছেন।

 

যাযাদি/এস