শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

জেলহত্যা দিবস ইতিহাসের কলঙ্কময় অধ্যায়

নতুনধারা
  ০৩ নভেম্বর ২০২১, ০০:০০
আপডেট  : ০৩ নভেম্বর ২০২১, ০৯:৪১

আজ শোকাবহ জেলহত্যা দিবস। এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না, এই দিনটি জাতির ইতিহাসে কলঙ্কময় একটা দিন। স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশকে একাত্তরের পরাজিত শক্তিরা আবার তাদের কবজায় নেওয়ার জন্য ইতিহাসের নারকীয় হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছিল ১৯৭৫ সালের এই দিনে। স্বাধীনতা প্রাপ্তির সাড়ে তিন বছরের মাথায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করা হয় ১৫ আগস্ট। আর এর আড়াই মাস পর আজকের এই দিনে কারাগারে আটক রাখা জাতীয় চার নেতা সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমদ, এম মনসুর আলী এবং এ এইচ এম কামারুজ্জামানকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়। ১৯৭৫ সালের এই দিনে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে ঢুকে সেনাবাহিনীর কয়েকজন বিপথগামী সদস্য যে নৃশংস হত্যাকান্ড ঘটিয়েছিল, সভ্য দুনিয়ায় এ ধরনের ঘটনার নজির নেই। বঙ্গবন্ধু ও জাতীয় চার নেতাকে কেন এবং কী কারণে হত্যা করা হয়েছিল তার প্রকৃত ভাষ্য মেলে না। কিন্তু এ ধারণা অমূলক নয় যে, দেশি-বিদেশি অপশক্তিগুলো একত্রে তাদের নির্মমতার বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়েছিল। এই হত্যাকান্ডের মধ্য দিয়ে অর্জিত রাষ্ট্রীয় মূলনীতি শুধু পরিবর্তনই নয়- দেশকে পাকিস্তানি ভাবধারায় পরিচালিত করে। রাজনৈতিক দল বা গোষ্ঠী এবং বিভিন্ন পেশার বাংলাদেশবিরোধীরা হত্যাকান্ডের ক্ষেত্র তৈরি ও ষড়যন্ত্রে জড়িত এবং সহায়ক ছিল। বঙ্গবন্ধু যখন পাকিস্তানের অন্ধকার কারা প্রকোষ্ঠে বসে স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্রের স্বপ্ন দেখছেন তার সেই স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করার জন্য বঙ্গবন্ধুর অবর্তমানে মহান মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনার ঐতিহাসিক দায়িত্ব পালন করেন এই জাতীয় চার নেতা। এ কথাও বলার অপেক্ষা রাখে না, বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার ধারাবাহিকতায় মূলত জাতীয় চার নেতাকে ঠান্ডা মাথায় সুপরিকল্পিতভাবে গভীর ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবেই হত্যা করা হয়। রাতের আঁধারে জাতীয় এই চার নেতাকে জেলখানার ভেতর হত্যা করা হয়েছিল নিষ্ঠুর পৈশাচিকতায়। মূলত এর মধ্য দিয়ে সদ্য স্বাধীন হওয়া বাংলাদেশ রাষ্ট্রের পেছনে চলা শুরু হয়। হত্যা-কু্য-ষড়যন্ত্রের রাজনীতি বাসা বাঁধে। বলা দরকার, এরপর স্বাধীনতাবিরোধী পরাজিত শক্তি আবারও মাথাচাড়া দিয়ে উঠে। রাজনীতিতে স্বাধীনতাবিরোধী শক্তির পুনর্বাসন ঘটে। দুই দফায় সামরিক শাসকরা ক্ষমতা দখল করে মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী আওয়ামী লীগকে ক্ষমতার বাইরে রাখে। জেলহত্যার বিচারের পথও রুদ্ধ করে রাখা হয়, বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার যেমন করে বন্ধ রাখা হয়েছিল ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ জারি করে। কিন্তু ইতিহাসের চাকা বাঁক নেয়। ১৯৯৬ সালে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দীর্ঘ একুশ বছর পর আওয়ামী লীগ জন রায় নিয়ে ক্ষমতাসীন হয়। এরপর বঙ্গবন্ধু হত্যাসহ জাতীয় চার নেতার হত্যার বিচারের পথও সুগম হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় আসার পর বঙ্গবন্ধু ও জেলহত্যার বিচার কার্যক্রম শুরু করেন। পরবর্তী সময়েও বিচারকাজ নানা প্রতিবন্ধকতার মুখে পড়ে। ২৯ বছর পর ২০০৪-এর ২০ অক্টোবর অভিযুক্তদের মধ্যে পলাতক ৩ জনের ফাঁসি, জেলে অবস্থানরত ১২ জনের যাবজ্জীবন কারাদন্ড ও জামিনে মুক্তদের নির্দোষ ঘোষণা করে বিচারিক আদালত দায়সারা একটি রায় দেয়। রায়ে এত বড় একটি ঘটনায় ষড়যন্ত্রীদের শাস্তির আওতায় না আসাও জাতিকে বিস্মিত করে। পরে ডেথ রেফারেন্স ও রায়ের বিরুদ্ধে আসামি পক্ষের করা আপিলের শুনানি শেষে হাইকোর্ট ২০০৮ সালের ২৮ আগস্ট মৃতু্যদন্ডপ্রাপ্ত দুই আসামিকে বেকসুর খালাস এবং যাবজ্জীবন কারাদন্ডাদেশ প্রাপ্তদের মধ্যে চারজনকে দন্ড থেকে অব্যাহতি দেয়। আসামিদের খালাস করে দেয়া হাইকোর্টের রায় বাতিল এবং বিচারিক আদালতের সাজা বহাল রাখার আরজি জানিয়ে সুপ্রিমকোর্টে আপিল করে রাষ্ট্রপক্ষ। এর পরিপ্রেক্ষিতে আপিল বিভাগ ২০১৩ সালের ৩০ এপ্রিল দুই আসামির মৃতু্যদন্ড বহাল রেখে রায় দেন। তবে এ দুই আসামি পলাতক রয়েছেন। আমরা মনে করি, সংশ্লিষ্টদের কর্তব্য হওয়া দরকার, পলাতক দন্ডিত আসামিদের খুঁজে বের করে এনে শাস্তি কার্যকর করা। যেন এর মধ্য দিয়ে জাতি অভিশাপ মুক্ত হয়।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে