বিজয়ের সুবর্ণজয়ন্তী এবং বাংলাদেশের উন্নয়ন

বিজয়ের ৫০ বছরে পাকিস্তানের চেয়ে বাংলাদেশ সব সূচকে এগিয়ে রয়েছে। জিডিপির আকার অনুয়ায়ী বৃহত্তর অর্থনৈতিক দেশের তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান আশাব্যঞ্জক। আর পাকিস্তান এক্ষেত্রে বাংলাদেশের চেয়ে তিন ধাপ পিছিয়ে রয়েছে। মূলত সফল নেতৃত্বের জন্যই পাকিস্তানের চেয়ে বাংলাদেশ এগিয়ে রয়েছে। বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্বের জন্যই আমরা এগিয়ে চলেছি। অন্যদিকে, পাকিস্তানে দীর্ঘদিন গণতান্ত্রিক সরকার ছিল না। সেখানে সামরিক বাহিনীর প্রভাব অনেক বেশি। সে কারণে বিদেশি বিনিয়োগ নেই বললেই চলে। গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া বারবার বাধাগ্রস্ত হওয়া, জঙ্গিবাদ প্রতিরোধে ব্যর্থ হওয়া, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা না হওয়া ইত্যাদি কারণে পাকিস্তান বাংলাদেশের চেয়ে পিছিয়ে পড়েছে।

প্রকাশ | ০১ ডিসেম্বর ২০২১, ০০:০০ | আপডেট: ০১ ডিসেম্বর ২০২১, ০৯:৫৭

সালাম সালেহ উদদীন

১৬ ডিসেম্বর বিজয়ের সুবর্ণজয়ন্তী পালন করবে বাংলাদেশ। বিজয়ের সুবর্ণজয়ন্তীর আগেই স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের চূড়ান্ত সুপারিশ পেল বাংলাদেশ। এক প্রতিবেদনে প্রকাশ, স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) তালিকা থেকে বাংলাদেশকে উত্তরণের সুপারিশ জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে অনুমোদিত হয়েছে। পরিষদের ৭৬তম বৈঠকের ৪০তম পেস্ননারি সভায় বুধবার (২৪ নভেম্বর) এ ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। উলেস্নখ্য, গত ২৬ ফেব্রম্নয়ারি অনুষ্ঠিত জাতিসংঘের কমিটি ফর ডেভেলপমেন্ট পলিসির (সিডিপি) ত্রিবার্ষিক পর্যালোচনা সভায় দ্বিতীয়বারের মতো বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণ বা গ্র্যাজুয়েশনের মানদন্ড পূরণের মাধ্যমে উত্তরণের সুপারিশ লাভ করেছিল। সিডিপি একই সঙ্গে বাংলাদেশকে ২০২১ থেকে ২০২৬ সাল পর্যন্ত পাঁচ বছরব্যাপী প্রস্তুতিকালীন প্রদানের সুপারিশ করেছে। জাতিসংঘের অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিষদ ইতোমধ্যে সিডিপির সুপারিশ অনুমোদন করেছে। আশা করা হচ্ছে, পাঁচ বছর প্রস্তুতিকাল শেষে বাংলাদেশের উত্তরণ ২০২৬ সালে কার্যকর হবে। একমাত্র দেশ হিসেবে বাংলাদেশ জাতিসংঘ কর্তৃক নির্ধারিত উত্তরণের তিনটি মানদন্ড পূরণের মাধ্যমে উত্তরণের যোগ্যতা অর্জন করেছে। বাংলাদেশের এই অর্জন বিশ্ব দরবারে দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করবে। প্রস্তুতিকালীন বাংলাদেশে স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে প্রাপ্ত সব সুযোগ-সুবিধা অব্যাহত থাকবে। ১৯৭৫ সাল থেকে স্বল্পোন্নত দেশের কাতারে থাকা বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণে সব শর্ত পূরণ করে ২০১৮ সালে। জাতিসংঘের নিয়মানুযায়ী, কোনো দেশ পরপর দুটি ত্রিবার্ষিক পর্যালোচনায় উত্তরণের মানদন্ড পূরণে সক্ষম হলে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণের চূড়ান্ত সুপারিশ পায়। সিডিপি তিনটি সূচকের ভিত্তিতে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণের বিষয়টি পর্যালোচনা করে। তিনটি সূচকেই বাংলাদেশ শর্ত পূরণ করে অনেক এগিয়ে গেছে। উন্নয়নশীল দেশ থেকে একটি দেশের মাথাপিছু আয় হতে হয় কমপক্ষে ১২৩০ মার্কিন ডলার, বাংলাদেশের ২০২০ সালে মাথাপিছু আয় ছিল ১৮২৭ ডলার। মানবসম্পদ সূচকে উন্নয়নশীল দেশ থেকে ৬৬ পয়েন্টের প্রয়োজন; বাংলাদেশের পয়েন্ট এখন ৭৫.৩। অর্থনৈতিক ভঙ্গুরতা সূচকে কোনো দেশের পয়েন্ট ৩৬-এর বেশি হলে সেই দেশকে এলডিসিভুক্ত রাখা হয়, ৩২-এ আসার পর উন্নয়নশীল দেশের যোগ্যতা অর্জন হয়। সেখানে বাংলাদেশের পয়েন্ট ২৫ দশমিক ২। সিডিপির প্রবিধান অনুযায়ী, উত্তরণের সুপারিশ পাওয়ার পর একটি দেশ তিন থেকে পাঁচ বছর পর্যন্ত প্রস্তুতিকালীন ভোগ করতে পারে। পাঁচ বছরের প্রস্তুতিকালীন শেষে ২০২৬ সালে বাংলাদেশের উন্নয়নশীল দেশে আনুষ্ঠানিক উত্তরণ ঘটবে। এটা সত্য আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে নতুন মাইলফলক অর্জন করল দেশ। এর মধ্য দিয়ে উন্নয়নের নতুন অভিযাত্রা শুরু হলো। এই অর্জন আমাদের জন্য অত্যন্ত গৌরবের। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে বাংলাদেশের জন্য যা এক অনন্য অর্জন। এ অর্জন অবশ্যই আমাদের আশাবাদী করে। করোনাকালে উন্নয়নশীল দেশ হওয়ার যোগ্যতা অর্জনের চূড়ান্ত অনুমোদন আমাদের জন্য অত্যন্ত আনন্দের। এতে বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি বাড়বে। বিদেশি বিনিয়োগ বাড়বে। আরও বেশি হারে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির পথ সুগম হবে। উত্তরণের সব পর্যায়েই কিছু চ্যালেঞ্জ থাকে। এগুলোর মুখোমুখি হওয়ার প্রস্তুতি নিতে হবে। যেমন- ইউরোপীয় ইউনিয়নে জিএসপি সুবিধা থাকবে না। বাংলাদেশকে এ জন্য প্রস্তুতি নিতে হবে। এলডিসি না থাকলে অন্যান্য দেশের রপ্তানিতে বাংলাদেশের এখনকার মতো শুল্কমুক্ত সুবিধা থাকবে না। এলডিসি হিসেবে বিশ্ব বাণিজ্যে বাংলাদেশ শুল্ক ও কোটামুক্ত সুবিধাসহ অন্য যেসব অগ্রাধিকার পায়, তা যদি না থাকে তা হলে চ্যালেঞ্জ আরও বেড়ে যাবে। এ ছাড়া সহজ শর্তে ও স্বল্প সুদের বৈদেশিক ঋণ কমে যাবে। ওষুধশিল্পে মেধাস্বত্বের আন্তর্জাতিক আইন-কানুনের অব্যাহতি থাকবে না। কৃষিতে ভর্তুকি সুবিধা সীমিত করতে হবে। এ জন্য বিমসটেক, বিবিআইএনের মতো আঞ্চলিক উদ্যোগের সুবিধা কীভাবে কার্যকরভাবে নেওয়া যায়, তার জন্য আমাদের ব্যাপকভাবে প্রস্তুতি থাকতে হবে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো, প্রতিযোগিতা সক্ষমতা আরও বাড়াতে হবে। কেন না, শুল্কমুক্ত সুবিধা না থাকলে প্রতিযোগিতা বেড়ে যাবে, সে কথাও আমাদের মাথায় রাখতে হবে। এটা স্বীকার করতেই হবে বিভিন্ন দিক দিয়েই বাংলাদেশের অগ্রগতি চোখে পড়ার মতো। অথচ এই বাংলাদেশের অগ্রগতির লাগাম টেনে ধরে রেখেছিল পশ্চিম পাকিস্তান। বিভিন্নভাবে তারা পূর্ব পাকিস্তান তথা বাংলাদেশের মানুষকে শোষণ করেছে। ৫০ বছর পর সেই পাকিস্তান কেমন আছে? তারা কি আমাদের চেয়ে এগিয়েছে নাকি পিছিয়ে গেছে? সংগত কারণেই এই প্রশ্ন সামনে চলে আসে। অর্থনীতিসহ প্রায় সব ধরনের সূচক অনুযায়ী পাকিস্তানের চেয়ে এগিয়ে আছে বাংলাদেশ। বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে ওঠে ইমরান খানের ক্ষমতা গ্রহণের পর। অনেকেই ভেবেছিলেন বাংলাদেশ টিকতে পারবে না। সেই বাংলাদেশ পারমাণবিক বোমা ছাড়া আর্থসামাজিক সব সূচকে আজ পাকিস্তানকে পেছনে ফেলে অদম্য গতিতে এগিয়ে চলেছে। ইসলামাবাদে এক অনুষ্ঠানে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান বলেছিলেন, 'পূর্ব পাকিস্তান (বর্তমানে বাংলাদেশ) যখন আলাদা হয়েছিল, আমাদের অনেকে বলেছিলেন, পূর্ব পাকিস্তান আমাদের জন্য বড়মাপের বোঝা হিসেবে ছিল। নিজের কানেই আমি এসব শুনেছি। সেই পূর্ব পাকিস্তান (বর্তমান বাংলাদেশ) আজ সব কিছুতেই এগিয়ে গেছে। তাদের দূরদর্শী চিন্তার জন্যই এটা হয়েছে।' এছাড়া পাকিস্তানের একটি টিভি টক শো'তে দেশটির নৃবিজ্ঞানী জাইঘাম খান নিজ দেশের সরকারের উদ্দেশে বলেছিলেন, 'পাকিস্তানের উন্নয়ন ঘটাতে চাইলে, বাংলাদেশের দিকে তাকান। সুইডেন নয়, বাংলাদেশের উন্নয়ন মডেল অনুসরণ করুন'। পাকিস্তান কেন বাংলাদেশকে অনুসরণ করবে, সে বিষয়ে জাইঘাম খান তার বক্তব্যে নানা যুক্তি তুলে ধরেছিলেন। তার ওই বক্তব্যের পর পাকিস্তানে বিতর্কের ঝড় উঠেছিল। এটা সত্য, জাতিসংঘের মানব উন্নয়ন সূচক, জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ, সামাজিক উন্নয়ন, নারীর ক্ষমতায়ন, ক্ষুধা প্রতিরোধ, সুশাসন, জঙ্গিবাদ প্রতিরোধ ইত্যাদি খাতে পাকিস্তান পিছিয়ে পড়েছে। জাতিসংঘের মানব উন্নয়ন সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান বেশ উজ্জ্বল। পাকিস্তান এই সূচকে ১৭ ধাপ পিছিয়ে রয়েছে। নারীর ক্ষমতায়নেও বাংলদেশ এগিয়ে রয়েছে। বাংলাদেশের জাতীয় সংসদে নারীর প্রতিনিধিত্ব পাকিস্তানের চেয়ে বেশি। বাংলাদেশে প্রতিনিধিত্ব ২০ দশমিক ৩ ভাগ। আর পাকিস্তানে প্রতিনিধিত্ব ২০ ভাগ। বিশ্ব ক্ষুধা প্রতিরোধ সূচকে (জিএইচআই) পাকিস্তানের চেয়ে এগিয়ে রয়েছে বাংলাদেশ। ক্ষুধা সূচকে ১১৭টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ৮৮তম। আর পাকিস্তানের অবস্থান ১০২। বাংলাদেশের মানুষের গড় আয়ু এখন ৭৩ বছর। আর পাকিস্তানের মানুষের গড় আয়ু ৬৮ দশমিক ১ বছর। বিজয়ের ৫০ বছরে পাকিস্তানের চেয়ে বাংলাদেশ সব সূচকে এগিয়ে রয়েছে। জিডিপির আকার অনুয়ায়ী বৃহত্তর অর্থনৈতিক দেশের তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান আশাব্যঞ্জক। আর পাকিস্তান এক্ষেত্রে বাংলাদেশের চেয়ে তিন ধাপ পিছিয়ে রয়েছে। মূলত সফল নেতৃত্বের জন্যই পাকিস্তানের চেয়ে বাংলাদেশ এগিয়ে রয়েছে। বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্বের জন্যই আমরা এগিয়ে চলেছি। অন্যদিকে, পাকিস্তানে দীর্ঘদিন গণতান্ত্রিক সরকার ছিল না। সেখানে সামরিক বাহিনীর প্রভাব অনেক বেশি। সে কারণে বিদেশি বিনিয়োগ নেই বললেই চলে। গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া বারবার বাধাগ্রস্ত হওয়া, জঙ্গিবাদ প্রতিরোধে ব্যর্থ হওয়া, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা না হওয়া ইত্যাদি কারণে পাকিস্তান বাংলাদেশের চেয়ে পিছিয়ে পড়েছে। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিও ভূয়সীপ্রশংসা এবং পাকিস্তানের বর্তমান অর্থনৈতিক অস্থিরতা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে বিশ্বব্যাংকের একজন সাবেক উপদেষ্টা বলেছেন, দেশটির অর্থনৈতিক খাতে এই হতাশাজনক অবস্থা অব্যাহত থাকলে বাংলাদেশের কাছে পাকিস্তানের সহায়তা চাইতে হতে পারে। আবিদ হাসান বলেন, 'যদি পাকিস্তানে অর্থনৈতিক বিশৃঙ্খল অবস্থা অব্যাহত থাকে, তাহলে এমন সম্ভাবনা দেখা দিতে পারে যে, ২০৩০ সালে বাংলাদেশের কাছে আমাদের সহায়তা চাইতে হতে পারে।' \হএ ক্ষেত্রে পাকিস্তানে আত্মমূল্যায়নের সময় এসেছে। বাংলাদেশ নিয়ে আমরা আশাবাদী। বাংলাদেশ এখন উন্নয়নশীল দেশের কাতারে। সরকারের পরিকল্পিত উদ্যোগই কেবল পারে সার্বিক উন্নয়নকে আরো বেগবান করতে। এর আগে বাংলাদেশ নিয়ে আশাবাদ ব্যক্ত করেছে ভারতের প্রভাবশালী গণমাধ্যম দ্য টেলিগ্রাফ। স্বাধীনতাপরবর্তী বাংলাদেশ এতটাই আর্থিকভাবে দুর্বল ছিল, মার্কিন রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ও রাজনীতিবিদ হেনরি কিসিঞ্জার এই দেশকে একটি 'তলাবিহীন ঝুড়ি' হিসেবে অ্যাখ্যা দিয়েছিলেন। ১৯৭১ সালের সেই বাংলাদেশ এখন উন্নয়নশীল দেশে পরিণত হয়েছে। আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হয়েছেন অজোপাড়া গ্রামের গরিব-দুঃখী মানুষও। ভারতের প্রভাবশালী গণমাধ্যম দ্য টেলিগ্রাফে মতামতধর্মী এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অবস্থা আগের থেকে অনেক ভালো। এশিয়া উন্নয়ন ব্যাংকের তথ্যানুযায়ী, বর্তমানে দেশটির জিডিপি ৮ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। এক প্রতিবেদনে বাংলাদেশের দুইজন দিনমজুরের সাক্ষাৎকার তুলে ধরা হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গে সারা দিন পরিশ্রম করে ১০০ রুপি আয় করাই কষ্ট। অথচ বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল দিনাজপুরেও দৈনিক ৭০০ টাকা দিয়েও একজন শ্রমিক পাওয়া কষ্টসাধ্য ব্যাপার। এ কথা কোনোভাবেই অস্বীকার করার উপায় নেই বিজয়ের ৫০ বছরে বাংলাদেশ অনেক এগিয়ে গেছে। বাংলাদেশকে এখন বলা হয় উন্নয়নের রোল মডেল, বলা হয় এশিয়ার বাঘ। যতই দিন যাচ্ছে বাংলাদেশ উন্নয়ন অগ্রগতির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। দেশের সাধারণ মানুষের অর্থনৈতিক সক্ষমতা বেড়েছে। একাত্তরের বাংলাদেশ আর বর্তমান বাংলাদেশ এক নয়। দেশ এখন খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ, যদিও করোনাকালে চাল আমদানি করতে হচ্ছে। দেশের বিদু্যৎ সংকট সিংহভাগই কেটে গেছে। দারিদ্র্য বিমোচনের ক্ষেত্রে বর্তমান শেখ হাসিনা সরকার চ্যালেঞ্জিং ভূমিকা পালন করেছে। বর্তমান সরকার দেশের ঈপ্সিত প্রবৃদ্ধির ভিত্তি রচনা করতে সক্ষম হয়েছে। রেমিট্যান্স প্রাপ্তির হারও অনেক বেড়েছে এবং এক্ষেত্রে বাজেটে বিশেষ সুবিধা দেয়া হয়েছে। মাতৃমৃতু্য ও শিশুমৃতু্যর হার কমেছে। মুদ্রাস্ফীতি নেমে এসেছে ১ দশমিক ৫৯ শতাংশে। তথ্যপ্রযুক্তিতে, নারীর ক্ষমতায়নে বাংলাদেশ অনেক এগিয়েছে। সামাজিক উন্নয়ন সূচকে ভারত পাকিস্তানের চেয়ে বাংলাদেশের অগ্রগতি অনেক ভালো। বাংলাদেশের মানুষের গড় আয়ু বেড়েছে। সুখি দেশের তালিকায় বাংলাদেশ আশাব্যঞ্জক অবস্থানে রয়েছে। \হশিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি, ক্রীড়াসহ প্রতিটি ক্ষেত্রে ঘুরে দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশ। বিশেষ করে করোনা মোকাবিলায় বাংলাদেশ সফল হয়েছে। দেশে মৃতু্য ও আক্রান্ত এখন অনেক কম। সামনে শীতকাল। পৃথিবীর অনেক দেশেই সংক্রমণ বাড়ছে। আমাদেরও সতর্ক থাকতে হবে। বাংলাদেশকে একটি সুখী ও সমৃদ্ধ সোনার বাংলায় পরিণত করতে 'ভিশন-২০২১' ও 'ভিশন-২০৪১' কর্মসূচি গ্রহণ করেছে সরকার- যা সফল হওয়ার পথে। শুধু দেশেই নয়- আন্তজার্তিক অঙ্গনেও এর স্বীকৃতি মিলেছে। আমাদের এই অর্জন ধরে রাখতে হবে। তবে বাংলাদেশ আরো এগিয়ে যেতে পারতো। এ ক্ষেত্রে দুর্নীতিই বড় বাধা। দুর্নীতির রাহুগ্রাস থেকে বাংলাদেশ এখনো মুক্ত হতে পারেনি। বিশেষ করে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা দুর্নীতিতে এমনভাবে জড়িয়ে পড়েছেন, তাদের বেতন দ্বিগুণ করেও কোনো লাভ হয়নি। তাদের লোভ ও মানসিকতার কোনো পরিবর্তন হয়নি। দুদকের বর্তমান তৎপরতার মাধ্যমে অনেক তথ্য রেবিয়ে আসছে। এর দ্বারা প্রমাণিত ও প্রতিষ্ঠিত হয় যে, বাংলাদেশ থেকে দুর্নীতি নির্মূল করা অনেক কঠিন কাজ। এ জন্য সরকারকে কার্যকর পদক্ষেপ এবং দীর্ঘ মেয়াদি পরিকল্পনা নিতে হবে। দুর্নীতি নিমূল করা সম্ভব হলে বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ হবে বিশ্বের বুকে একটি মর্যাদাশালী ও গর্বিত দেশ। বাংলাদেশ এগিয়ে যাক সমহিমায় তার উজ্জ্বলতা নিয়ে। সালাম সালেহ উদদীন : কবি, কথাসাহিত্যিক, প্রাবন্ধিক, সাংবাদিক ও কলাম লেখক