বিজয়ের সুবর্ণজয়ন্তী ও বঙ্গবন্ধু

বাংলাদেশের ৫০ বছরের ইতিহাস আমাদের আশাবাদী করে তোলে। আমাদের যথেষ্ট উন্নয়ন হয়েছে। কিন্তু এই উন্নয়নের পাশাপাশি সমাজে বৈষম্য বেড়েছে। এই বৈষম্য দূর করতে হবে।

প্রকাশ | ১৫ ডিসেম্বর ২০২১, ০০:০০ | আপডেট: ১৫ ডিসেম্বর ২০২১, ০৯:০৮

সালাম সালেহ উদদীন

এবার ১৬ ডিসেম্বর বিজয়ের সুবর্ণজয়ন্তী পালন করবে বাংলাদেশ। এটা আমাদের জন্য অত্যন্ত গৌরবের। বাঙালির স্বাধীনতা সংগ্রাম ত্যাগ আর সংগ্রামের। রক্ত আর বেদনার। ১৯৭১ সালে মার্চের প্রথম দিনগুলো ছিল খুবই উত্তাল। তখন দেশব্যাপী অসহযোগ আন্দোলন চলছিল জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে। ১ মার্চ, ১৯৭১ জেনারেল ইয়াহিয়া জাতীয় সংসদের উদ্বোধনী অধিবেশনকে অনির্দিষ্টকালের জন্য মুলতবি রাখার ঘোষণা দিলেন। জেনারেল ইয়াহিয়া নির্বাচনে পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের রায়কে মানবে না এবং নির্বাচনের মাধ্যমে যে শক্তি তাদের প্রাপ্য, সেই অধিকার থেকে তাদের বঞ্চিত করতে চায়। পূর্ব পাকিস্তানব্যাপী তাৎক্ষণিক প্রতিবাদ মিছিল বের হয়ে গেল। অনেক লোক সামরিক বাহিনীর হাতে নিহত হলো। ২ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এক গণসমাবেশে বাংলাদেশের নতুন জাতীয় পতাকা উড়িয়ে দেওয়া হলো। সেই পতাকায় সবুজ পটভূমির মধ্যখানে ছিল গোল সূর্যের লাল আভা এবং সেই লাল গোলের ওপর হলুদ রঙে আঁকা বাংলাদেশের মানচিত্র। ৩ মার্চ শেখ মুজিব, জুলফিকার আলী ভুট্টো ও জেনারেল ইয়াহিয়ার মধ্যে এক বৈঠক হয়। সেই আলোচনা ব্যর্থ হলো। ৩ মার্চ ঢাকায় এক জনসমাবেশে শেখ মুজিবের উপস্থিতিতে 'স্বাধীন বাংলার ইশতেহার' পাঠ করা হয়। পাকিস্তানি শাসনের বিরুদ্ধে সর্ব প্রকার অসহযোগিতা শুরু হলো। বাংলার মানুষ রুখে দাঁড়াল। ২ মার্চ থেকে ২৫ মার্চ পর্যন্ত শেখ মুজিব পূর্ব পাকিস্তানের সব সরকারি ও বেসরকারি অফিস চালনার জন্য দৈনিক নির্দেশ দিতে লাগলেন। পাকিস্তান সরকারের জারিকৃত নির্দেশাবলিকে অগ্রাহ্য করা হলো। যার ফলে সেই সরকারের কর্মশক্তির বিলুপ্তি হলো। আমরা জানি, দ্বিজাতি তত্ত্বের ভিত্তিতে, ধর্মের দোহাই দিয়ে ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান সৃষ্টি হয়েছিল। এর অগ্রনায়ক ছিলেন জিন্নাহ তথা মুসলিম লীগ। কিন্তু অল্পদিনেই বাঙালিরা বুঝতে পারে, মুসলমান-মুসলমান ভাই ভাই বলা হলেও প্রকৃত অর্থে পূর্ব পাকিস্তান তাদের নয়। প্রথমে ভাষার ওপরে আঘাত দিয়ে শোষণ শুরু করে পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী। রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে প্রথম আন্দোলনে কারাবরণ করেছিলেন বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা শেখ মুজিব। এরপর বাংলার এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে ছুটে বেড়িয়েছেন তিনি। প্রতিটি বাঙালির কাছে পৌঁছে দিয়েছেন পরাধীনতার শিকল ভাঙার মহামন্ত্র। পাকিস্তানের জন্মের শুরু থেকেই পূর্ব পাকিস্তানকে অর্থনৈতিকভাবে বশীভূত করা হয়। যদিও পূর্ব পাকিস্তান পাট রপ্তানির মাধ্যমে সমগ্র পাকিস্তানের সিংহভাগ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করত, পশ্চিম পাকিস্তানের অর্থনৈতিক উন্নয়নের পেছনে তার অধিকাংশই বিনিয়োগ করা হতো। পাকিস্তানের পরিকল্পনা কমিশনের রিপোর্ট অনুযায়ী, ১৯৫০-১৯৭০ পর্যন্ত পূর্ব পাকিস্তানের জন্য সামগ্রিক বাজেটের শতকরা ২৮.৭ ভাগ ব্যয় করা হয়। পূর্ব পাকিস্তানের জনসাধারণ অনুভব করেছিল যে, তাদের পাকিস্তানের রাজনৈতিক ক্ষমতা ও অর্থনৈতিক সুবিধার ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হয়েছিল। এই বৈষম্য দূর করার জন্য আওয়ামী লীগ দলের নেতা শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৬৬ সালে স্বায়ত্তশাসনের জন্য ছয় দফার একটি পরিকল্পনা রচনা করেন। ১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলন, ১৯৫৪'র যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন, ১৯৫৮'র সামরিক শাসনবিরোধী আন্দোলন, ১৯৬৬'র ৬ দফা ও পরে ১১ দফা আন্দোলন এবং ১৯৬৯ সালের গণ অভু্যত্থানসহ প্রতিটি গণতান্ত্রিক ও স্বাধিকার আন্দোলনে সফল নেতৃত্ব দেন বঙ্গবন্ধু। এর ভেতর দিয়ে তিনি আবির্ভূত হন বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা তথা মহানায়ক হিসেবে। শেখ মুজিবুর রহমানকে সবাই ডাকতেন মুজিব ভাই বলে। এ নামেই তিনি পরিচিত ছিলেন বন্ধু, নেতাকর্মী সবার কাছে। ১৯৭০ সালের নির্বাচনই স্বাধীন বাংলাদেশের ভাগ্য নির্ধারণ করে দেয়। এরপর যদি আমরা ১৯৭১ সালের প্রসঙ্গে আসি, তাহলে দেখব- বাংলার প্রতিটি মুক্তিযোদ্ধা বঙ্গবন্ধুর নামেই মুক্তিযুদ্ধে জীবন দিতে প্রস্তুত হয়েছিল। সেই সময়ের স্স্নোগানগুলোর প্রতি মনোযোগী হলেই এ কথার সত্যতা মিলবে। 'তোমার নেতা, আমার নেতা শেখ মুজিব, শেখ মুজিব।' 'ভুট্টোর মুখে লাথি মার, বাংলাদেশ স্বাধীন কর।' আশার পতাকাকে কেউ নিশ্চিহ্ন করতে পারে না। আর তাই অযুত জনতা '৬৯-এর গণ আন্দোলনের মাধ্যমে ফাঁসির মঞ্চ থেকে ছিনিয়ে এনেছিল তাদের জীবন আর সংগ্রামের প্রতীক শেখ মুজিবকে। কেউ কেউ বলেন বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতা চাননি, কেউ বলেন, বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ চাননি। কেউ বলেন, তিনি ভাষা আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত ছিলেন না। কেউ বলেন, তিনি পতাকা ওড়াননি। আবার কেউ বলেন, তিনি পাকিস্তানিদের কাছে আত্মসমর্পণ করেছেন। এসবের জবাব দেওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই। এর জবাব একটি। ২৬ মার্চ রাতে রেডিও মারফত ইয়াহিয়া সাহেব যে ভাষণ দিয়েছিলেন তাতে শুধু একটি নামই উচ্চারিত হয়েছিল শেখ মুজিব। 'মুজিব, ইজ এ ট্রেইটর টু দ্য নেশন, দিজ টাইম হি উইল নট গো আনপানিসড।' দেশবাসী জিজ্ঞাসা করুন তাদের যে মানুষ কিছুই করল না, বাংলাদেশ চাইল না, পতাকা উড়ালো না, তার ওপর পাকিস্তানিদের কেন এত রাগ? তাহলে আজ বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বে মুজিববর্ষ পালিত হচ্ছে কেন? ফিলিস্তিনে কেন শেখ মুজিবের নামে সড়ক হচ্ছে? কলকাতার ইসলামিয়া কলেজ, যেখানে থেকে তিনি বিএ পাস করেছেন। সেই ইসলামিয়া কলেজের বেকার হোস্টেলে বঙ্গবন্ধুর আবক্ষ ভাস্কর্য রয়েছে। তিনি ওই কলেজের ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন, ১৯৮৬ সালে। বর্তমানে কলেজটির নাম মওলানা আজাদ কলেজ। জনসাধারণের ওপর পাকিস্তানি হামলার কথা চিন্তা করে শেখ মুজিব ৭ মার্চের বিশাল জনসভায় সমবেত জনতাকে 'প্রত্যেক ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তুলতে' ও 'স্বাধীনতার জন্য সংগ্রাম' করতে বলেন। ভাষণ সমাপ্তির প্রাক্কালে তার আহ্বান 'এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম' পূর্ব বাংলার জনসাধারণকে স্বাধীনতা সংগ্রামে উদ্বুদ্ধ করল। সে দিন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বাংলার জনগণের উদ্দেশে যে বক্তব্য দিয়েছিলেন তা থেকে আবেগঘন বক্তৃতা আর কখনো দিয়েছেন বলে আমার মনে হয় না। জাতির পিতার রেসকোর্স ময়দানে প্রায় ১৭ মিনিট জাতির উদ্দেশে গুরুত্বপূর্ণ ভাষণ দেন। যা ছিল জাতির জন্য দিকনির্দেশনা। বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণও ছিল ১৮ মিনিট সময়ের, শব্দ ১১০৫ (এক হাজার একশত পাঁচ)। তিনি মূলত বাঙালিকে স্বাধীনতা সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়ার ঘোষণা দেন। ১৫ মার্চ জেনারেল ইয়াহিয়া ঢাকায় আসে। শেখ মুজিবের সঙ্গে তার বেশ কটি বৈঠক হয়। বিরামহীন ও গভীর আলোচনার শেষে দুই পক্ষ ২০ মার্চ ক্ষমতা হস্তান্তরের পক্ষে একমত হয়। ২১ মার্চ জুলফিকার আলী ভুট্টো ঢাকায় শেখ মুজিবের সঙ্গে 'আলোচনার' জন্য আসে। এই পর্যায়ে ভুট্টো ক্ষমতা হস্তান্তরের চুক্তি মানতে রাজি না হয়ে সমগ্র প্রক্রিয়ায় বাধার সৃষ্টি করে। শেখ মুজিবের সঙ্গে সরাসরি আলোচনার জন্য অধিক সময় চাইল। ২৩ মার্চ আয়োজিত জাতীয় সংসদের অধিবেশনকে মুলতবি ঘোষণা করা হলো। ২৫ মার্চ শেখ মুজিব ও তার দলের প্রধান সদস্যরা জেনারেল ইয়াহিয়ার সঙ্গে ক্ষমতা হস্তান্তর প্রক্রিয়া বিশদে আলোচনার উদ্দেশ্যে একটি টেলিফোন বার্তার জন্য অপেক্ষা করেছিলেন। তারা বৃথায় অপেক্ষা করেছিলেন। সেই টেলিফোন বার্তা কখনো আসেনি। ২৫ মার্চ রাতে গ্রেপ্তার হওয়ার আগে স্বাধীনতার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিলেন শেখ মুজিব। বঙ্গবন্ধুকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে যাওয়া হলো পশ্চিম পাকিস্তানের কারাগারে। একদিকে দীর্ঘ নয় মাস ধরে বাঙালিদের ওপর চলল পাকিস্তানি আগ্রাসন, বাঙালিদের রক্তাক্ত প্রতিরোধ আর অন্যদিকে পাকিস্তানের অন্ধকার কারাগারে প্রতিমুহূর্তে বঙ্গবন্ধুর মৃতু্যর হাতছানি। ৩০ লাখ শহীদের আত্মত্যাগ আর কয়েক লাখ মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে আসে কাঙ্ক্ষিত মুক্তি। যে পাকিস্তানি সৈন্যরা নিরীহ বাঙালিদের ওপর গণহত্যা চালিয়েছিল, তাদের খুবই দ্রম্নত ও লজ্জাকর পরাজয় ঘটল। ১৬ ডিসেম্বর, ১৯৭১ পাকিস্তান আত্মসমর্পণ করল এবং ৯০,০০০ পাকিস্তানি সৈন্যকে যুদ্ধবন্দি হিসেবে নেয়া হলো। দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের পর এটাই হলো সবচেয়ে বড় ধরনের আত্মসমর্পণ। \হএরপর ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি বাংলাদেশের মাটিতে পা রাখেন স্বাধীন বাংলাদেশের স্বপ্নদ্রষ্টা, মৃতু্যঞ্জয়ী মহানায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের পরে এক মুহূর্ত সময় অপচয় করেননি। পাকিস্তানি হানাদাররা শুধু এ দেশের ৩০ লাখ মানুষকেই হত্যা করেনি, এ দেশের স্কুল, কলেজ, হাসপাতাল, অফিস-আদালত, কলকারখানা সব ধ্বংস করে দেয়। স্বাধীন বাংলাদেশের পুনর্গঠনে শুরু হলো বঙ্গবন্ধুর সংগ্রাম। দিন-রাত বঙ্গবন্ধুর অক্লান্ত পরিশ্রম আর কূটনৈতিক পারদর্শিতায় বাংলাদেশ এগিয়ে যেতে থাকে। ঘাতকের বুলেট তাকে থামিয়ে দেয়। বাংলাদেশ আবার পেছনের দিকে যাত্রা শুরু করে। ১৯৭৫-এর ১৫ আগস্ট মোশতাক-জিয়াচক্র কেবল ব্যক্তি মুজিবকেই হত্যা করেনি। তারা বঙ্গবন্ধুর আদর্শ তথা বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের ভিত্তির ওপর আঘাত হানে। পঁচাত্তরের ক্ষমতাসীন সামরিক-বেসামরিক এলিটচক্র বাংলাদেশকে মুক্তিযুদ্ধের আদর্শগত অবস্থান ও লক্ষ্য থেকে সরিয়ে এনে একটি ধর্ম-সাম্প্রদায়িক রাষ্ট্রে পরিণত করে। আশার কথা, বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা ২১ বছর পর ক্ষমতায় এসে দেশকে এগিয়ে নিতে থাকেন। ২০০১ সালে আবার বিরতি পড়ে। উত্থান ঘটে জঙ্গিবাদের। দেশের মানুষ নিরাপত্তাহীন হয়ে পড়ে, বিপন্ন হয়ে পড়ে দেশের গণতন্ত্র ও মানবাধিকার। এরপর শেখ হাসিনা আবার ক্ষমতায় আসেন। তিনি টানা ১৩ বছর ক্ষমতায় আছেন। বিশ্বের দীর্ঘমেয়াদে নারী শাসক তিনি। তার দূরদর্শী ও সফল নেতৃত্বে বাংলাদেশের উন্নয়ন ঘটছে। মার্কিন অর্থ ও বাণিজ্যবিষয়ক সাময়িকী ফোর্বসের ২০২১ সালের বিশ্বের প্রভাবশালী ১০০ নারীর তালিকায় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৪৩তম স্থানে রয়েছেন। বিশ্বজুড়ে রাজনীতি, মানবসেবা, ব্যবসাবাণিজ্য এবং গণমাধ্যম খাতে নেতৃস্থানীয় ভূমিকা পালন করে আসা প্রভাবশালী নারীদের মাঝ থেকে ১০০ জনকে বেছে নিয়ে সোমবার এই তালিকা প্রকাশ করেছে ফোর্বস। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবারের এই তালিকায় ৪৩তম স্থানে আছেন। এর আগে ২০২০ সালে ফোর্বসের প্রভাবশালী নারীর তালিকায় ৩৯তম স্থানে ছিলেন তিনি। বাংলাদেশকে এখন বলা হয় এশিয়ার বাঘ উন্নয়নের রোল মডেল। বিভিন্ন দিক দিয়েই বাংলাদেশের অগ্রগতি চোখে পড়ার মতো। অথচ এই বাংলাদেশের অগ্রগতির লাগাম টেনে ধরে রেখেছিল পশ্চিম পাকিস্তান। বিভিন্নভাবে তারা পূর্ব পাকিস্তান তথা বাংলাদেশের মানুষকে শোষণ করেছে। ৫০ বছর পর সেই পাকিস্তান কেমন আছে? তারা কি আমাদের চেয়ে এগিয়েছে নাকি পিছিয়ে গেছে? অর্থনীতিসহ প্রায় সব ধরনের সূচক অনুযায়ী পাকিস্তানের চেয়ে এগিয়ে আছে বাংলাদেশ। বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে ওঠে ইমরান খানের ক্ষমতা গ্রহণের পর। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান বলেন, 'পূর্ব পাকিস্তান (বর্তমানে বাংলাদেশ) যখন আলাদা হয়েছিল, আমাদের অনেকে বলেছিলেন, পূর্ব পাকিস্তান আমাদের জন্য বড়মাপের বোঝা হিসেবে ছিল। নিজের কানেই আমি এসব শুনেছি। সেই পূর্ব পাকিস্তান (বর্তমান বাংলাদেশ) আজ সব কিছুতেই এগিয়ে গেছে। তাদের দূরদর্শী চিন্তার জন্যই এটা হয়েছে।' এছাড়া গত বছর পাকিস্তানের একটি টিভি টক শো'তে দেশটির নৃবিজ্ঞানী জাইঘাম খান নিজ দেশের সরকারের উদ্দেশে বলেছিলেন, 'পাকিস্তানের উন্নয়ন ঘটাতে চাইলে, বাংলাদেশের দিকে তাকান। সুইডেন নয় বাংলাদেশের উন্নয়ন মডেল অনুসরণ করুন'। জাতিসংঘের মানব উন্নয়ন সূচক, জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ, সামাজিক উন্নয়ন, নারীর ক্ষমতায়ন, ক্ষুধা প্রতিরোধ, সুশাসন, জঙ্গিবাদ প্রতিরোধ ইত্যাদি খাতে পাকিস্তান পিছিয়ে পড়েছে। এমনকি নানা সামাজিক ও অর্থনৈতিক সূচকে ভারতকেও পেছনে ফেলেছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশের উন্নয়ন এক বিস্ময়কর ঘটনা। বাংলাদেশের ৫০ বছরের ইতিহাস আমাদের আশাবাদী করে তোলে। আমাদের যথেষ্ট উন্নয়ন হয়েছে। কিন্তু এই উন্নয়নের পাশাপাশি সমাজে বৈষম্য বেড়েছে। এই বৈষম্য দূর করতে হবে। বাংলাদেশ এখন উন্নয়নশীল দেশের কাতারে। দুর্নীতি বিভেদ অনৈক্য, অর্থনৈতিক বৈষম্য, হানাহানি দূর করতে পারলে ও নির্মূল করতে পারলে বাংলাদেশ বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে, পরিণত হবে উন্নত দেশে। আর আমরা হবো গর্বিত জাতি। সালাম সালেহ উদদীন : কবি, কথাসাহিত্যিক, প্রাবন্ধিক, সাংবাদিক ও কলাম লেখক