‘ভালোবাসতে কোন স্পেশাল দিনের প্রয়োজন হয় না’

প্রকাশ | ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ১১:৩৫ | আপডেট: ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ১১:৫৭

সাজ্জাদ হোসাইন

তরুণ সাংবাদিক সাজ্জাদ হোসাইনের বিয়ের দুই বছর পূর্ণ হলো আজ। একসঙ্গে পথচলায়  স্ত্রী জামিলা আক্তার নানাভাবে জড়িয়ে আছেন এই তরুণ সাংবাদিকের জীবনে। এই অল্প সময় একসঙ্গে চলার পথে স্ত্রীর অবদান তুলে ধরে তরুণ এ সাংবাদিক ফেসবুকে লিখেছেন, বিশ্ব ভালোবাসা দিবস ও আমাদের বিবাহ বার্ষিকী একই সঙ্গে। সেই সঙ্গে পেয়েছি পহেলা ফাল্গুনও।ভালোবাসতে কোন স্পেশাল দিনের প্রয়োজন হয় না। বিবাহের পর থেকে প্রত্যেকটি দিন আমার কাছে ১৪ ফেব্রুয়ারি মনে হয়েছে। সাজ্জাদ হোসাইনের পুরো স্ট্যাটাস তুলে ধরা হলো।

 

‘আজ ১৪ ফেব্রুয়ারি বিশ্ব ভালোবাসা দিবস, একই সঙ্গে আমাদের দ্বিতীয় বিবাহ বার্ষিকী। আজকের এই দিনটি আমার জন্য অনেক বেশি খুশির কারণ বিশ্ব ভালোবাসা দিবস ও আমাদের বিবাহ বার্ষিকী একই সঙ্গে। সেই সঙ্গে পেয়েছি পহেলা ফাল্গুনও।যদিও ১৪ ফেব্রুয়ারি এই দিনটাকে কোনো পরিকল্পনা করে ঠিক করা হয়নি। কারণ বিবাহ হয়েছে পারিবারিক ভাবেই তাই আমাদের পরিকল্পনা তো প্রশ্নই আসে না। প্রকৃতিই এই তারিখটি ঠিক করে দিয়েছে। এসব দিবস আমি কখনো পালন করিনি আর এসব দিবসের পক্ষপাতীও ছিলাম না কখনো। কারণ ভালোবাসতে কোন স্পেশাল দিনের প্রয়োজন হয় না। বিবাহের পর থেকে প্রত্যেকটি দিন আমার কাছে ১৪ ফেব্রুয়ারি মনে হয়েছে। এই দিনে জামিলা আক্তারকে জীবন সঙ্গি হিসেবে পেয়ে আমি অনেক বেশি খুশি সেজন্য মহান রবের কাছে শুকরিয়া- আলহামদুলিল্লাহ।

 

করণ জামিলার মত মেয়ে পৃথিবীতে খুব কম আছে। এতো ভালো মানুষ কি করে হয়? বিবাহের ২টি বছর পার করলাম আজ পর্যন্ত কোনদিন আমার নাম ধরে ডাকেনি। কোন ঝগড়া তো দূরের কথা আমার সঙ্গে জোরগলায় কথাও বলেনি। রাগ হয়নি, সামান্য অভিমান করলেও মুহূর্তেই আমি ভেঙে ফেলি। ওর হাজারটা গুণ আছে যা বলে বা লিখে শেষ করা যাবে না। আমি জানি না মাসের বাজার খরচ, চালের দাম, লবণ কত টাকা কেজি। বাসায় কোন কোনটা শেষ হওয়ার পথে। কি কি বাজার থেকে আনতে হবে। জানা নেই রান্নাঘরের চুলো জ্বলছে না, বেসিনে পানি আটকে গেছে বা ঘরে বৈদ্যুতিক কোনো সমস্যা হলে কোনটার জন্য কাকে ফোন করতে হবে। আমার অসুখ হলে কী কী ওষুধ খেতে হয় বা রাতে কী কী খাই, সবই জানে সে।

 

আমি জানি না, আমি মাসে কত টাকা বেতন পায় কত টাকা কোথায় খরচ করা হয়। মাসের ৭ তারিখ হলেই ফোন দিয়ে বলবে আজ কার্ড থেকে টাকাটা উঠিয়ে আনবেন। টাকাটা হাতে নিয়ে সর্বপ্রথম আম্মার হাত খরচের টাকা আলাদা করে বাকি টাকা কোথায় কিভাবে খরচ করবে তা নিয়ে হিসেব করতে দেখি প্রতি মাসেই। এসব কিছুই তার মনে-মাথায় সাজানো। যা আমি চিন্তায় আনতে পারি না সে স্বপ্ন দেখে। আমাকে বলে যে আমাদের আর এতো বছর এতো মাস লাগবে তাহলে আমরা সুন্দর একটা বাড়ি করতে পারবো, একটা গাড়ি কিনবো, দুজনে এক সঙ্গে হজ্জ করতে যাবো এরকম হাজারও স্বপ্ন।

আমাদের ছোট্ট সংসার একজনও সাহায্যকারী নেই যে জামিলাকে বিভিন্ন কাজে সহযোগিতা করবে। সপ্তাহে ২/১ দিন সময় পায় তাকে যথাসাধ্য চেষ্টা করি রান্নার কাজে সাহয্য করি। মাসে ১/২ বার মার্কেটে যেতে হয়। প্রতি সপ্তাহে ঘুরার চেষ্টাও করি।

 

জগৎ ও জীবন শেখার জন্য রোজ আমি তার কাছ থেকে শিখি। মহান রব আমাদের ভালো রেখেছেন-আলহামদুলিল্লাহ, রাখবেন- এই আশা। আরও আশা, আমরা উভয়ের জন্য উভয়েই যেন সুস্থ ভাবে বেঁচে থাকতে পারি। আমাদের প্রাপ্তি আর অপ্রাপ্তির পাল্লা হিসাব করলে, দেখা যাবে প্রাপ্তির পাল্লাই অনেক বেশি। আমি অনেক সুখী যখন দেখি সুখ দুঃখ, ভালো মন্দ মিলে আমাদের দুইজনের মধ্যে পারস্পরিক বোঝাপড়া অনেক মজবুত। মাঝে মাঝে যে ছন্দ পতন হয়নি তা নয়, তবে আমাদের ভালোবাসা, আমাদের কে সঠিক পথে থাকার প্রেরণা দিয়েছে। আলহামদুলিল্লাহ, আল্লাহর কাছে অনেক শুকরিয়া যে, জামিলার মতো একজন সৎ সঙ্গী পেয়েছি। এমন সৎ সঙ্গীর সঙ্গে শত বছর পার করার ইচ্ছে আছে।

 

প্রিয়তমা জামিলা, আমার অন্তস্থল থেকে ভালোবাসা, কারণ, সুখে-দুঃখে, আনন্দ-বেদনায় একসঙ্গে থাকার জন্য, আমার উপর আস্থা রাখার জন্য, আমি তোমার কাছে অনেক অনেক কৃতজ্ঞ। আমি জানি আমাদের চলা কুসুমাস্তীর্ণ ছিলনা, কিন্তু যেটা ছিল সেটা হল পরস্পরের প্রতি ভালবাসা আর আস্থা। তার উপরে নির্ভর করে আমাদের পথ চলা। আমাদের  দ্বিতীয় বিবাহ বার্ষিকী ভরে উঠুক, আনন্দ আর ভালবাসায়। আরও অনেক যুগ একসাথে থাকার স্বপ্ন নিয়ে, তোমাকে অভিবাদন প্রিয়তমা। শুভ হোক তোমার প্রতিটা দিন, শুভ হোক আমাদের আগামী।-শুভ দ্বিতীয় বিবাহ বার্ষিকী।

 

লেখক: সাজ্জাদ হোসাইন

স্টাফ রিপোর্টার, দৈনিক ভোরের কাগজ।

 

যাযাদি/এসএইচ