জন আপডাইক ও শহরতলির জীবনধারা

প্রকাশ | ২৭ মে ২০২২, ০০:০০ | আপডেট: ২৭ মে ২০২২, ১১:৪৮

সরকার মাসুদ

১৯৮৭/৮৮/৮৯-এর দিনগুলোতে ঢাকার দু'একটি সাহিত্য আড্ডায় জন আপডাইকের নাম শোনা যেত। আমরা এও শুনতাম যে, এই মার্কিন লেখক দু'বার নোবেল পুরস্কারের জন্য 'সংক্ষিপ্ত তালিকাভুক্তও হয়েছিলেন। নানা রকম কথা শুনে আমি সত্যিই আগ্রহী হয়ে উঠেছিলাম তার ব্যাপারে। কিন্তু নিউমার্কেটসহ গুলশানের দু'তিনটি অভিজাত বই বিতান কোথাও তার গল্প / উপন্যাস খুঁজে পাইনি। আনুমানিক পনেরো / ষেলো বছর পর নীলক্ষেত বাকুশা মার্কেটের চৌধুরীর দোকান থেকে ঈড়ঢ়ষবং এবং নীলক্ষেতেরই ফুটপাত থেকে ইবপয রং ইধপশ বই দুটো সংগ্রহ করি। আর ওপরে ২০০৪/৭-এর অচিন্তনীয়ভাবে আপডাইকের বেচ সিরিজের প্রথম বই ইবপয ধ ইড়ড়শ-এর সন্ধান পাই শাহবাগের কেন্দ্রীয় পাবলিক লাইব্রেরির ধূলিধূসর একটা সেল্কের এক কোণে। ওই সময় আমি ওই গ্রন্থাগারের সদস্য ছিলাম। ইতোপূর্বে হথর্ন, হোমিংওয়ে, ফিটজিরাল্ড, সলবেলো প্রমুখ কয়েকজন জগৎখ্যাত মার্কিন কথাসাহিত্যিকের লেখার সঙ্গে আমার কম বেশি পরিচয় ছিল। কিন্তু আপডাইকের লেখালেখি বিষয়ে কোনো ধারণাই ছিল না। স্পষ্ঠ মনে আছে, ঈড়ঢ়ষবং পড়তে শুরু করে ১০/১২ পৃষ্ঠা এগোনোর পর আমি রীতিমতো আটকে গিয়েছিলাম ওই বইয়ে। শহরতলির তিন / চার জোড়া সদ্যবিবাহিত দম্পতির ভেতরকার জটিল সম্পর্ক নিয়ে গড়ে উঠেছে উপন্যাসটি। এই গ্রন্থে অনেক খোলামেলাভাবে আমেরিকার পারিবারিক-সামাজিক জীবনের ভেতরের ক্ষত-আর্থিক পছন্দ ও বিলাস চিহ্নিত ভোগবাদী মার্কিনিদের একান্ত অস্বস্তির জায়গাটি লেখক চিত্রিত করেছেন। এই কাজ সৎভাবে, সমধর্মী সমাজে বেঁচে থেকে নানা ধরনের ক্রিয়া প্রতিক্রিয়ার তরঙ্গে দুলেও যতদূর সম্ভব সৎ ও আন্তরিকভাবে সম্পন্ন করতে পেয়েছেন এর লেখক। ফলে ১৯৬৮ সালে প্রকাশিত নবেলটি স্বভাবতই তুমুল আলোচনার সূত্রপাত করে। তর্ক-বির্তক দীপ্ত এসব আলাপের ঢেউ বৃদ্ধিকৃত্তিক সাহিত্যের পরিমন্ডল পেরিয়ে সাহিত্যমোদি বিচিত্র সব পারিবারিক বৃত্তে এমনটি নানা রকম পেশাজীবী বৃত্তের গিয়ে লাগে। কেননা, আপডাইক শুধু মানসলোকের টানাপড়েনের ছবিই আঁকেননি, ঐশ্বর্য ও ক্ষমতা দর্পে প্রায়ান্ধ একটি সাম্রাজ্যবাদী রাষ্ট্রের ভেতরের গলদ নানাবিধ অসঙ্গতি ও ভন্ডামির চেহারাও চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছেন। ঈড়ঢ়ষবং-কে কেন্দ্র করে জমে ওঠা বিতর্ক একদিকে মননজীবী অগ্রসর সমাজের চিত্তবিনোদনের উৎস হয়েছে, অন্যদিকে তা বিপুলভাবে সাহায্য করেছে গ্রন্থটিকে বেস্ট সেলার হতে। উলেস্নখ্য, প্রকাশিত হওয়ার পর থেকে একটানা চার বছর এই উপন্যাস ছিল সর্বোচ্চ বিক্রির তালিকায়। আপডাইক জন্ম ও বেড়ে ওঠার সূত্রেই রক্ষণশীল পরিবারের রীতিনীতিগুলোর সঙ্গে পরিচিত ছিলেন। তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছিল শিলিউটন (পেনসিলভেনিয়ার ছোট্ট শহর)সহ যুক্তরাষ্ট্রের আরো কিছু ছোট শহরের মানুষের মূল্যবোধ ও জীবনযাপনরীতি সম্বন্ধে স্পষ্ট ধারণা। ওইসব ছোট শহরের মানুষ ছিলেন প্রটেস্ট্যান্ট মতবাদের অনুসারী এবং তারা ছিলেন মধ্যবিত্ত মূল্যবোধে আচ্ছন্ন। কিন্তু শত শত বছর ধরে অক্ষুণ্ন ওই মূল্যবোধে চিড় ধরে যায় বিশ্বযুদ্ধোত্তর আর্থসামাজিক পরিস্থিতি প্রভাবে। কেননা, ততদিন যৌনতা সম্পর্কিত নতুন চেতনা এবং নারী পুরুষের বিবাহ বহির্ভূত দৈহিক মানসিক সম্পর্ক ধীরে ধীরে মাথা চাড়া দিয়ে উঠেছে। ঞযব চড়ড়ৎ যড়ঁংব ঋধরৎ-এ লেখক এসব বিষয়কেই উপজীব্য করেছেন। এই উপন্যাসে দেখা যাচ্ছে যৌনতার খোলামেলা প্রকাশ আর পাত্র পাত্রীদের গস্নানিহীন ফুরফুরে মানসতার ছবি। এই গ্রন্থই আপডাইককে শহরতলির ব্যভিচারী জীবনের রূপকার হিসেবে পরিচিত ও প্রতিষ্ঠিত করে তোলে। এটা লেখকের প্রথম উপন্যাস। পাঠকপ্রিয় হওয়ার ফলে বইটি যে কেবল লেখককে প্রতিষ্ঠা এনে গিয়েছিল তা-ই নয়, গ্রন্থটির সাফল্য তাকে গুরুত্বপূর্ণ গগেনহাইম ফেলোশিপ পেতেও সাহায্য করেছিল। আপডাইক ওই আর্থিক অনুদান পাওয়ার পর উৎসাহী হয়ে তার বিখ্যাতর্ যাবিট সিরিজের বইগুলো ( মোট চারটি) লিখতে আরম্ভ করেন। চার পর্বে সমাপ্ত উপন্যাস চতুষ্টয়ের প্রথমটির অর্থাৎ জধননরঃ জঁহ-এর প্রকাশকাল ১৯৬০। ১০ বছরের বিরতির পর প্রকাশিত হয় জধননরঃ ৎবফীঁ (১৯৯১) এরও ১০ বছর পর জধননরঃ রং জরপয (১৯৮১)। শেষেরটি প্রকাশ পায় নয় বছর পর। নাম দিয়েছেন জধননরঃ ধঃ জবংঃ (১৯৯১)।র্ যাবিট হচ্ছে ছোট শহরের একজন খেলোয়াড়ের নাম। এ ধরনে মানুষের সঙ্গে আমাদের মাঝে-মধ্যেই সাক্ষাৎ হয়। পুরো নাম হ্যারল্ডর্ যাবিট অ্যাংস্টম। চরিত্রটি মোটেই বুদ্ধিদীপ্ত নয়। অন্ত্যজ শ্রেণির প্রতিনিধি এই র্'যাবিট'কে নিরাসক্তভাবে কিন্তু দরদ দিয়ে ফুটিয়ে তুলেছেন আপডাইক। তার অর্থনৈতিক অবস্থা, আকাঙ্ক্ষা অভিরুচি, স্বপ্ন-কল্পনা ও মানসিক পরিস্থিতি চমৎকারভাবে বর্ণিত হয়েছে এখানে। কাহিনীর কুশীলবরা মেধাবী না হলেও এ জাতীয় নিচু শ্রেণির মানুষকে নিয়ে রচিত গল্পেও লেখক বুদ্ধিদীপ্ত মননের ছবি আঁকতে পারতেন। লেখকের নিজের চেহারা-চরিত্রই এক্ষেত্রে প্রভাব বিস্তার করত বলে মনে হয়। দেখা যাচ্ছে, র্'যাবিট' সিরিজের প্রথম বই বেরোয় ১৯৬০ সালে আর শেষ বইটির প্রকাশকাল ১৯৯০। মাঝখানে ত্রিশ বছরের ব্যবধান। এই দীর্ঘ সময়ের ভেতর মানুষের চিন্তা ধারা ও লাইফস্টাইল অনেকখানিই বদলে গিয়েছিল। মার্কিন সমাজের পটভূমিতে পৃষ্ঠ এই পরিবর্তনের জীবনঘনিষ্ঠ পরিচয় ধৃত আছে সিরিজের তৃতীয় ও চতুর্থ উপন্যাসে। ঞযব চড়ড়ৎ যড়ঁংব ঋধরৎ আপডাইককে এনে দিয়েছিল জনপ্রিয়তা। র্'যাবিট' সিরিজের উপন্যাসগুলো তাকে দেয় সত্যিকার প্রতিষ্ঠা ও খ্যাতি। আর 'রেচ' সিরিজের উপন্যাসমালা সেই খ্যাতিতে যোগ করে বর্ণাঢ্যতা। যে বৈচিত্র্যের অন্বেষণ তিনি সারা জীবন ধরে করেছেন, তার অনেকটাই পূরণ হয়েছে এই সিরিজের দ্বিতীয় বই জধননরঃ ৎবফীঁ প্রকাশ পাওয়ার এক বছর আগেই, অর্থা ১৯৭০ সালে জন আপডাইকের 'বেচ' সিরিজের প্রথম বই ইবপয, ধ ইড়ড়শ প্রকাশিত হয়। সম্পূর্ণ নতুন এক চরিত্রের মুখোমুখি হলো পাঠক। কাল্পনিক এক ঔপন্যাসিক ঐবহৎু ইবপয-কে নিয়ে এই উপন্যাস। বেচের আশা-উচ্চাশা, মানসবিভ্রান্তি, স্বপ্ন-কল্পনা, নিঃসঙ্গতা ও অনিরামেয় মনোবেদনা অসাধারণ দক্ষতায় ফুটিয়ে তুলতে পেরেছেন লেখক এখানে। সমকালের মূল্যবোধ, সুযোগের আরও নানা বৈশিষ্ট্য যুক্ত হয়েছে লিপিকুশলতা ওই মুনশিআনার সঙ্গে। সিরিজের দ্বিতীয় গ্রন্থ ইবপয রং ইধপশ-এর প্রকাশকাল ১৯৮২। শেষ বই ইবপয ধঃ ইধু আলোর মুখ দেখে ১৯৯৮-এ। দুই যুগের বেশি সময় ধরে লেখক বই তিনটি লেখা শেষ করেছেন। তার খ্যাতির পালে জোর হাওয়া লাগিয়েছে সিরিজের শেষ গ্রন্থটি। এই সমস্ত কাজের জন্য জন আপডাইককে আধুনিক মার্কিন কথাসাহিত্যের অন্যতম পুরোধা ব্যক্তিত্ব হিসেবে গণ্য করা হয়। পরিণত বয়সে তার কথাগদ্য হয়ে উঠেছিল মেদহীন স্বাতন্ত্র্যচিহ্নিত এবং ভাবনা স্বচ্ছল। দেখুন কী ধরনের গদ্য তিনি ব্যবহার করেছেন তার গল্প উপন্যাসে-ক. ওহ :যব ফধুং যিবহ ইবপয ধিং ংঃরষষ ধঃঃবসঢ়ঃরহম :ড় পড়সঢ়ষবঃব ঞযরহশ ইরম, :যবৎব পধসব :ড় যরস ধ ভবসধষব পযধৎধপঃবৎ যিড় সরমযঃ ৎবফববস :যব ঢ়ৎড়লবপঃ, ৎবংঃড়ৎব রঃং ষড়ংঃ সড়সবহঃঁস ধহফ ভড়পঁং. ঝযব ধিং ধঃ ভরৎংঃ :যব সবধমবৎবংঃ রিংঢ় ড়ভ ধ ারংরড়হ, ধ 'সড়ড়হ ভধপব' ংযরহরহম রিঃয ধ পবৎঃধরহ ষরমযঃষু ঢ়বৎংঢ়রৎরহম নৎরমযঃহবংং ড়াবৎ :যব ষড়ংঃ যড়ৎরুড়হ ড়ভ যরং ঢ়ষড়ঃ. ঞযব ঢ়ধষষড়ৎ ড়ভ :যরং ভধপব ধিং ধ এবহঃরষব ঢ়ধষষড়ৎ, নবধৎরহম :যব শরংং ড়ভ ঘড়ৎফরপ ভড়মং ধহফ ভৎড়ংঃং, যিরপয রষষ পড়হংড়ৎঃবফ রিঃয :যব ঁৎনধহ, ধহফ ঢ়বৎভড়ৎপব ঔবরিংয, যঁৎষু-নঁৎষু যব ধিং :ৎুরহম :ড় ড়ৎমধহরুব. (পৃষ্ঠা-১০, পরিচ্ছেদ- ঞযৎবব রষষঁসরহধঃরড়হং রহ :যব ষরভব ড়ভ ধহ অসবৎরপধহ ধঁঃযড়ৎ, উপন্যাস- ইবপয রং ইধপশ) ক. ডরঃযড়ঁঃ ংড় সধহু রহফঁপবসবহঃং :ড় ভষবব ঁঢ়ংঃধরৎং, ইবপয সরমযঃ হবাবৎ ংবঃঃষবফ রহঃড় যরং ংরষাবৎ ৎড়ড়স. ইঁঃ রঃ ধিং :যব ড়হব ংঢ়ড়ঃ রহ :যব াধংঃ যড়ঁংব যিবৎব যব ফরফ হড়ঃ ংববস :ড় নব রহ :যব সরফফষব ড়ভ ধ :ঁংংষব, ড়ৎ ধ ঢ়ধৎঃু, ড়ৎ ধ পড়হপবৎঃ. ঞযব :রিহ মরৎষং বংঢ়বপরধষষু পড়ঁষফ হড়ঃ নবধৎ :ড় নব ড়ঁঃ ড়ভ ৎধহমব ড়ভ ধসঢ়ষরভরবফ সঁংরপ. ঞযবু বিৎব ভরভঃববহ যিবহ ইবপয নবপধসব :যবরৎ ঝঃবঢ়ভধঃযবৎ-ৎধঃযবৎ নড়ু, ংধষষড়ি মরৎষং রিঃয জড়ফহবু্থং নৎড়ধফ ভড়ৎবযবধফ ধহফ ংড়ষবসহ, ংষরমযঃষু নঁষমরহম মৎধু বুবং. (পৃষ্ঠা-১০৬, পরিচ্ছেদ- ইবপয ডবফ; উপন্যাস- ইবপয রং ইধপশ) প্রথম স্ত্রী মেরির কাছ থেকে আলাদা হয়ে আপডাইক বস্টনে পাড়ি দেন ১৯৭৪ সালে। সেখানে বস্টন বিশ্ববিদ্যালয়ে আরম্ভ করেন অধ্যাপনা। দু'বছর পর মেরির সঙ্গে বিবাহবিচ্ছেদ ঘটে। ১৯৭৭-এ তিনি দ্বিতীয় বার বিয়ে করেন তিন সন্তানের জননী মার্থা বার্নাডকে। জীবনের শেষ বছরগুলো আপডাইক কাটিয়েছেন ম্যাচাচুসেটস রাজ্যে জর্জটাউনে। ওই শহরেরই একটি হাসপাতালে মৃতু্যবরণ করেন ২০০৯ সালের ২৭ জানুয়ারি। মৃতু্যর আগে প্রায় তিন দশক ধরে খ্যাতি ভোগ করেছেন এই অসাধারণ প্রতিভাধর ব্যক্তি। ১৯৫০/৫১ সালের দিকে লেখালেখি শুরু করেছিলেন জন আপডাইক। পঞ্চান্ন বছরের সাহিত্যিক জীবনে বই লিখেছেন ষাটটি। বিচিত্র বিষয় নিয়ে লিখেছেন। তবে দাম্পত্য সম্পর্কের জটিলতা, অবাধ যৌনতা, নারী-পুরুষের মানসিক অবসাদ ও নৈঃসঙ্গ থিম হিসেবে ঘুরে ফিরে এসেছে তার লেখায়। উপন্যাস ও ছোটগল্প ছাড়াও লিখেছেন কবিতা, সাহিত্য সমালোচনা, স্মৃতিকথা ইত্যাদি। এমনকি বিখ্যাত বেসবল খেলোয়াড় টেড উইলিয়ামস ও তার গল্পের বিষয়বস্তু হয়েছিলেন। যুদ্ধপরবর্তী সময়ে লিখিত আপডাইকের প্রধান উপন্যাসগুলোতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ষাটের ও সত্তরের দশকের জীবনধারা নিখুঁতভাবে প্রতিফলিত হয়েছে। ভোগবাদী জীবনের অন্তঃসারশূন্যতা এবং মানব সম্পর্কের টানাপড়েনজনতি উদ্বেগ স্থান পেয়েছিল লেখকের মনোযোগের কেন্দ্রে। তার ছিল তরুণ লেখকসুলভ কৌতূহল ও বৈচিত্র্যবিলাস। সৃষ্টিশীল ছিল সারাজীবনই। জন আপডাইক ছিলেন তার সময়ের চেয়ে এগিয়ে থাকা লেখক। যৌনতাবিষয়ক ধ্যান-ধারণার ক্ষেত্রে তিনি অনেকটাই ভস্নাদিমির নভোকব, আলবার্তো মোরাভিয়া প্রমুখের কাছাকাছি। তিনি পঞ্চাশের দশকের শেষ দিক থেকেই যৌনতা নিয়ে খোলা মেলা মন্তব্য করতে থাকেন যখন আমেরিকার শিল্প-সাহিত্য বোধ এখনকার মতো এতখানি উদার ছিল না। নোবেল পুরস্কার করায়ত্ত করতে না পারলেও আপডাইক দু'বার পুলিৎজার পুরস্কারে ভূষিত হন। প্রথমবার জধননরঃ রং জরপয উপন্যাসের জন্য, ১৯৮১ সালে, দ্বিতীয়বার ১৯৯১-এ জধননরঃ ধঃ জবংঃ উপন্যাসের জন্য। টমাস হার্ডি, ন্যাথনিয়েল হথর্ন প্রমুখ উনিশ শতকের লেখকদের মতো আপডাইক এমন এক শৈলীর অধিকারী হয়েছিলেন- যা তাকে একইসঙ্গে সিরিয়াস এবং জনপ্রিয় লেখকে পরিণত করেছে। জন স্টেইনবেক, আর্নেস্ট হোমিংয়ে, জ্যাক লন্ডন প্রভৃতি লেখকের গল্প উপন্যাস পড়লে তাদের জীবনদৃষ্টির দার্শনিক ভিত্তি অনুভব করা যায়। আপডাইকের কথাসাহিত্য আমাদের মনে ওই ধরনের কোনো অনুভূতির জন্ম দেয় না বটে; কিন্তু বোঝা যায় এই ব্যক্তি জীবনপিয়াসী লেখক। যে ধরনের অভিজ্ঞতা গদ্য আর শিল্পদৃষ্টির সুষম মিশ্রণ ঘটেছে তার লেখায় তা খুব সুলভ নয়। ইংরেজি ভাষার কথাশিল্পীদের মধ্যে সুলেখক অনেক পাওয়া যাবে। কিন্তু জন আপডাইকের রচনা আমাদের নানান জিজ্ঞাসার মুখে দাঁড় করিয়ে দেয়। তেমনটা ঘটে খুব অল্প সংখ্যক লেখকের বেলায়।