পদ্মা সেতুর খরচ নিয়ে বিরোধীদের আয়নাবাজি

প্রকাশ | ১৬ জুলাই ২০২২, ২০:৫৪

ইঞ্জিনিয়ার ফকর উদ্দিন মানিক

পদ্মা সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর থেকে উদ্ভোদন পর্যন্ত দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রের কারণে  অনেক জল ঘোলা হয়েছে। বিশেষত বিশ্ব ব্যাংকের কল্পিত দুর্নীতির অভিযোগে পদ্মা সেতুতে অর্থায়ন বন্ধের প্রেক্ষিতে বিভিন্ন সময় অনেক তর্ক-বিতর্ক হয়েছে। সেই সময় অনৈতিক প্রভাব বিস্তারের জন্য বিশ্বব্যাংক পদ্মা সেতুতে কল্পিত দুর্নীতির মিথ্যা অভিযোগ আনে । তবে বিশ্বব্যাংককে বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন করে কানাডার আদালতে  তাদের দূর্নীতির অভিযোগ মিথ্যা প্রমাণ করে রাষ্ট্রের নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ইস্পাত কঠিন মনোবল ও দৃঢ়   সিদ্ধান্ত বাংলাদেশকে আত্মবিশ্বাসী করেছে এবং বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছে।

সংশ্লিষ্টদের তথ্য মতে, পদ্মা সেতু ও এ সংশ্লিষ্ট সব অবকাঠামো নির্মাণে ৩০ হাজার ১৯৩ কোটি টাকা ব্যয় হচ্ছে। পুরো প্রকল্পের ব্যয় এই অংকের হলেও মূল সেতু নির্মাণে এর তিন ভাগের এক ভাগ অর্থাৎ ১২ হাজার কোটি টাকা  খরচ হয়েছে।  অথচ মির্জা  ফখরুল ইসলাম আলমগীর এবং আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বিভিন্ন সময়ে বলেছেন, পদ্মা সেতু প্রকল্পে ব্যয় হয়েছে ৪০ হাজার কোটি টাকা আর বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন আরো বেশি  ৫০ হাজার কোটি টাকা। সবার জানা উচিৎ অনেক টাকা খরচ হয়েছে নদীশাসন, সংযোগ সড়ক নির্মাণ, ভূমি অধিগ্রহণ,  পুনর্বাসন, সার্ভিস এরিয়া, গ্রামীণ সড়ক উন্নয়ন , বৃক্ষরোপণ, পদ্মা সেতু জাদুঘর, জলাবদ্ধতা দূরীকরণ  প্রকল্পসহ অন্যান্য খাতে।

বিস্তারিত খরচের খাতের হিসাব এবার জানা যাক-

ভায়াডাক্টসহ মূল পদ্মা সেতুতে খরচ -
বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের তথ্য অনুসারে -  ভায়াডাক্টসহ পদ্মা সেতুর মোট দৈর্ঘ্য ৯.৩০ কি.মি.। এর মধ্যে জলভাগ পদ্মা নদীতে ৬.১৫ কি.মি,  স্থলভাগে অর্থাৎ মাওয়া ও জাজিরা প্রান্তে পড়েছে মোট  ৩.১৫ কি.মি.।সেতুর পাশ দিয়ে ৪০০ কেভি বিদ্যুৎ লাইনের জন্য  খরচ ১ হাজার কোটি এবং রেললাইনের পাশ দিয়ে গ্যাস লাইন  নির্মাণে খরচ হচ্ছে আরও ৩০০ কোটি টাকা।প্রকল্পে মূল সেতু নির্মাণে প্রকৃত  খরচ হচ্ছে ১২ হাজার ১৩৩ কোটি ৩৯ লক্ষ  টাকা।

নদী শাসনে খরচ -
পদ্মা সেতুতে প্রায় ১৪ কি.মি নদী শাসনের জন্য  চীনের কোম্পানি সিনোহাইড্রো করপোরেশন লিমিটেডকে দিতে হয়েছে  ৯ হাজার ৪০০ কোটি  টাকা।

সংযোগ সড়ক ও সার্ভিস এরিয়া নির্মাণে খরচ -
বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের তথ্য মতে  - পদ্মা সেতুর দুই পাশের সাথে সংযোগ সড়ক মোট  ১২.৩২ কি.মি এবং  ১৫ কি.মি  সার্ভিস এরিয়া  নির্মাণে মোট ব্যয় হয় ১ হাজার ৯০৭ কোটি ৬৭ লক্ষ টাকা।

জমি অধিগ্রহণে খরচ -
পদ্মা সেতু প্রকল্প এলাকায় অধিগ্রহণকৃত  ২ হাজার ৬৯৩ দশমিক ২১ হেক্টর জমির জন্য ব্যয় হয় প্রায় দুই হাজার ৬৯৮ কোটি ৭৩ লাখ টাকা ।

পুনর্বাসনে খরচ -
পদ্মা সেতু নির্মাণে সাতটি পুনর্বাসন সাইট নির্মাণ  এলাকায় তিন জেলার ২২ হাজার ৫৯৩ জন ক্ষতিগ্রস্তদের আবাসিক প্লট বরাদ্দ বাবদ ও ভিটা উন্নয়নে এ পর্যন্ত প্রায়  ৭৮৪ কোটি ৭৫ লাখ টাকা খরচ হয় ।

ম্যানেজমেন্ট সাপোর্ট কনসালটেন্সি খাতে ব্যয় সর্বমোট  ৬৭৮ কোটি ৩৭ লাখ টাকা।

পরিবেশ খাতে ব্যয়
পদ্মা সেতু এলাকায় জীববৈচিত্র সংরক্ষণ ও অভয়ারণ্য ব্যবস্থাপনা কর্মসূচি খাতে এ পর্যন্ত সর্বমোট ব্যয় ১২৯ কোটি ৩ লক্ষ টাকা।

অন্যান্য খাতে খরচ
৪ হাজার কর্মকর্তা - কর্মচারীদের বেতন-ভাতা, যোগাযোগে খরচ , ভ্যাট - ট্যাক্স, পদ্মা সেতুর জাদুঘর নির্মাণ, বৃক্ষরোপণ, গ্রামীণ সড়ক নির্মাণ  অন্যান্য খরচ যেমন মসজিদ, বিদ্যালয়, কবরস্থান,পদ্মা সেতু প্রকল্পের পুনুর্বাসন এলাকায় চারটি প্রাথমিক বিদ্যালয়,  ১৩টি নতুন মসজিদ নির্মাণ, তিনটি কবরস্থান নির্মাণ ও তিনটি মসজিদও সংস্কার, যশোলদিয়া ও কুমারভোগ এলাকার জলবদ্ধতা দূরীকরণের লক্ষ্যে আউট-লেট ড্রেন নির্মাণ,  ৪৮ টিউবওয়েল স্থাপনসহ বিভিন্ন খাতে প্রায় ১ হাজার ৭৬৭ কোটি ১৭ লক্ষ  টাকা ব্যয় হয়েছে।

পদ্মা সেতুর ২০০৭ সালের প্রাথমিক  খরচ ১০ হাজার কোটি টাকা  থেকে ৩০ হাজার কোটি  কিভাবে হলো?
*  ২০০৭ সালের প্রাথমিক পরিকল্পনায় সেতুটি ছিল একতলা। পরবর্তীতে সেতুর নকশা পরিবর্তন করে রেললাইন সংযুক্ত করে সেতুটিকে দোতলা করায় সেতুর খরচ বেড়ে যায় প্রায় দ্বিগুণ।

* ২০০৭ সালের  পরিকল্পনায় সেতুর দৈর্ঘ্য ধরা হয়েছিল ৫.৫৮ কি.মি. যা পরে বেড়ে দাঁড়ায় ৬.১৫ কি.মি । মূল সেতুর দৈর্ঘ্য  ০.৫৭ কি.মি বেড়ে যায়। কিন্তু  ভায়াডাক্ট ৩.১৫ কি.মি. সহ পুরো সেতুর দৈর্ঘ্য হয় ৯.৩০ কি.মি । ফলে স্বাভাবিক কারণেই খরচ বেড়ে যায়।  

* ২০০৭ সালের প্রাথমিক পরিকল্পনায় সেতুর ৪১টি স্প্যানের মধ্যে ৩টি স্প্যান একটি নির্দিষ্ট উচ্চতায় রাখার ব্যবস্থা ছিল (Navigation) জাহাজ চলাচলের জন্য। পরবর্তী সময়ে সংশোধিত বাজেটে খরস্রোতা পদ্মার কথা চিন্তা করে  জাহাজ চলাচলের জয় ৪১টি স্প্যানেরই উচ্চতা বাড়ালে খরচ বেড়ে যায় অনেক বেশি।

*  ২০০৭ সালের প্রাথমিক পরিকল্পনায় ভূমি অধিগ্রহণের আনুমানিক পরিকল্পনা ছিল ২ হাজার ৭৭৭ একর জমি, যা পরে বাস্তবে গিয়ে দাঁড়ায় ৬ হাজার ৬৫৫ একর। অর্থাৎ আড়াইগুণ বেড়ে যায় এবং জনস্বার্থে ভূমি অধিগ্রহণ বাবদ ক্ষতিপূরণের পরিমাণও তিনগুণ বাড়িয়ে দেওয়া হয়।

* ২০০৭ সালের  প্রাথমিক পরিকল্পনায় ফেরিঘাট স্থানান্তরের ব্যয় ধরা ছিল না, যা পরে সংশোধিত বাজেটে ধরা হয়।

*  ২০০৭ এর  প্রাথমিক পরিকল্পনায় পদ্মা সেতুর নিরাপত্তার জন্য সেনাবাহিনীর নিরাপত্তা দল নিয়োগ ও তাদের নৌযান সংগ্রহের বিষয়টি ছিল না, যা পরে সংশোধিত বাজেটে যুক্ত হওয়ায় খরচ বেড়ে যায়।

* ২০০৭ এ পদ্মা সেতুর ব্যয় যখন প্রথমে প্রাক্কলন করা হয়েছিল, তখন ডলারের মূল্য ৬৮/৬৯ টাকার মতো ছিল। কিন্তু ২০১৮ সালে ব্যয় প্রাক্কলনের সময় ডলার প্রতি  ব্যয় করতে হয়েছে ৮৪.৮০ টাকা। অর্থাৎ প্রতি ডলার কিনতে প্রায় ২৪ থেকে ২৫ শতাংশ বেশি ব্যয় করতে হয়েছে। ফলে বিদেশি কনসালট্যান্টদের বেতন  ও পদ্মা সেতুর তৈরির কাঁচামাল উর্ধগতির জন্য সঙ্গত কারণেই প্রাক্কলিত ব্যয়ের বেশি ব্যয় হয়েছে পদ্মা সেতু নির্মাণে।

পদ্মার সেতুর খরচের সাথে  ভূপেন হাজারিকা সেতুর খরচের  তুলনা বোকামি কেন?

* পদ্মা সেতু দোতলা কিন্তু ভূপের হাজারিকা সেতু একতলা।

*  পদ্মা সেতুর প্রস্থ ১৮.১০ মিটার হলেও ভূপেন হাজারিকা সেতুর প্রস্থ ১৩ মিটার।

*  পদ্মা সেতুর পাইল লোড ক্ষমতা ৮ হাজার ২০০ টন অন্যদিকে  ভূপেন হাজারিকা সেতুর পাইল লোড ক্ষমতা মাত্র ৬০ টন অর্থাৎ পদ্মা সেতুর তুলনায় প্রায় ১৩৬ গুন কম।

*  পদ্মা সেতুর ওজন নেওয়ার ক্ষমতা ১০ হাজার টন। অন্যদিকে ভূপেন হাজারিকা সেতুর ওজন নেওয়ার ক্ষমতা মাত্র ৬০ টন  অর্থাৎ  প্রায় ১৬৭ গুন কম।

* পদ্মা সেতুর পিলারের ওজন ৫০ হাজার টন হলেও  ভূপেন হাজারিকার পিলারের ওজন মাত্র ১২০ টন। অর্থাৎ পদ্মা সেতুর তুলনায়  প্রায় ৪১৬ গুন কম।

প্রস্থ, পাইল লোড ক্ষমতা, পিলারের ওজন, সেতু ওজন নেওয়ার ক্ষমতা– এগুলো সবকিছু হিসাব করলে পদ্মা সেতু ভূপেন হাজারিকা সেতুর থেকে ১৩৩ গুণ ভারী এবং শক্তিশালী । সেই হিসেবে পদ্মা সেতু নির্মাণের ব্যয় হওয়া উচিত ছিল ভূপেন হাজারিকা সেতু নির্মাণ ব্যয়ের থেকে ১৩৩ গুণ বেশি। কিন্তু তা হয়নি, কারণ এই হিসাবগুলো সাধারণ ঐকিক নিয়মে হয় না।

পদ্মা সেতুতে ব্যয় বৃদ্ধি সম্পর্কে পদ্মা সেতু কারিগরি টিমের প্রধান  প্রফেসর জামিলুর রেজা চৌধুরী বলেছিলেন ২০১১ সালে বিশ্ব ব্যাংক-এশিয়া উন্নয়ন ব্যাংক-জাইকা যখন পদ্মাসেতুতে যুক্ত ছিল, তখন ঠিক হয়েছিল কাস্টমস শুল্ক ও ভ্যাট পরিশোধ করবে সরকার। এ হিসেব থাকত কাগজে-কলমে। সে কারণে ব্যয় কিছুটা কম দেখা গেছে। এখন তা দেবে ঠিকাদার। তবে তারা এ অর্থ তো আমাদের সরকারের কাছ থেকে নেবে। প্রকৃতপক্ষে আগের সঙ্গে বর্তমান ব্যয়ের তেমন পার্থক্য নেই। কিছু ব্যয় মূল্যস্ফীতির কারণে বেড়েছে (সমকাল, ১০ ডিসেম্বর, ২০১৫)।

পদ্মা সেতুর ব্যয় প্রসঙ্গে প্রকল্পের পরিচালক মো. শফিকুল ইসলাম  বলেন, পদ্মা সেতু শুধু সেতু নয়। নদীশাসন, মূল সেতু, পুনর্বাসন ও অ্যাপ্রোচ সড়কের কাজ করতে হয়েছে। বিদ্যুৎ লাইন ও গ্যাস লাইনও আছে। আমাদের মূল সেতুর খরচ কিন্তু ১২ হাজার কোটি টাকার মতো। এর মধ্যে বিদ্যুৎ লাইনের জন্য  প্রায় এক হাজার কোটি টাকা এবং গ্যাস লাইনের জন্য ৩০০ কোটি টাকার উপরে চলে খরচ হয়েছে । শুধু ব্রিজে ১২ হাজার কোটি টাকা নেই। এটা অনেকে বুঝতে পারে না। এটা কিন্তু রেলসেতুসহ, মানে দুইটা সেতু। মেঘনা সেতু একটা, ভৈরব সেতু একটা। পদ্মা কিন্তু দুইটা সেতু। এই ছয় লেনের সেতুর মধ্যদিয়ে  ১৬০ কি.মি. গতির হাইস্পিড ট্রেন যাবে। এটা ট্রান্স এশিয়ান রেলওয়ের একটা অংশ। এই লোডটা সেতুর ওপর দিতে হয়েছে। এই সেতুর ১০০ বছরেও কিছু হবে না।

তিনি আরও বলেন, সেতুর খরচ অনেকেই ভুলভাবে দেখাচ্ছে । তুলনা করলে বাংলাদেশের অন্যান্য সেতু থেকে খরচ কম। মেঘনা ও দাউদকান্দি সেতুতে কত খরচ করেছি। রেলওয়ে সেতুর খরচ কত? সব মিলিয়ে দেখলে খরচ বেশি হয়নি।

বুয়েটের অধ্যাপক ড. শামসুল হক বলেছেন, “সেতু নির্মাণের যত সরঞ্জাম প্রয়োজন, আমরা তার সবকিছু বিদেশ থেকে আমদানি করি। কাজেই অন্য দেশের সেতু নির্মাণের খরচের সাথে হুবহু তুলনা করা যায় না এবং খরচ কম-বেশি হয় নদীশাসনের ওপর ভিত্তি করে।”

বুয়েটের অধ্যাপক ড. সাইফুল আমিন বলেছেন, পদ্মার তলায় মাটির বিশেষ চারিত্রিক বৈশিষ্টের জন্য কিছু কিছু জায়গায় পাইল ড্রাইভ করতে গিয়ে পৃথিবীর সবচেয়ে শক্তিশালী হ্যামার দিয়ে ড্রাইভ করেও ১২০ মিটারের থেকে বেশি ড্রাইভ করা সম্ভব হয়নি। সেক্ষেত্রে প্রকৌশলীদের নকশায় পরিবর্তন করে পাইলের সংখ্যা বাড়াতে হয়েছে। এই পরিকল্পনা থেকেই খরচ কিছুটা বেড়েছে। ২০০৭ সালের প্রাথমিক পরিকল্পনায় রেল সংযোগ, বিদ্যুৎ, গ্যাস ও ফাইবার অপটিক্যাল কেবল সংযুক্ত করা ছিল না যা পরবর্তিতে সংযুক্ত করায় দুইতলা সেতুর কারণে  খরচ অনেক বেড়ে যায়  ।বিশ্ব ব্যাংকের অধীনেই তো (২০১১ সালে) পদ্মা সেতুর বাজেট প্রথম সংশোধিত হয় এবং প্রকল্প খরচ ৩০০ কোটি ডলার তথা ২০ হাজার ৫০০ কোটি টাকা করা হয়। এই ৩০০ কোটি ডলারই পরবর্তিতে ডলারের বিপরীতে ৮৪.৮০ টাকা বিনিময় হারে হিসেব করলে ২৫ হাজার ৪৪০ কোটি টাকা হয়ে যায়। বিশ্ব ব্যাংককে পদ্মা সেতু প্রকল্প থেকে বাদ দেওয়ার পর থেকে মোট বাজেটে খরচ বেড়েছে ৪ হাজার ৭৫৩ কোটি টাকা।

২০০৭ সালে ১০ হাজার ১৬১ কোটি ৭৫ লাখ টাকা ব্যয়ে পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্প একনেক সভায় অনুমোদন পায়। পরে নকশা ব্যাপক  পরিবর্তন হয়ে দৈর্ঘ্য বেড়ে যায়, রেল সংযোগ যুক্ত হয়, গ্যাসলাইন, বিদ্যুৎ লাইস সহ বিভিন্ন পরিকল্পনা যুক্ত হওয়ায় নির্মাণ ব্যয়ও বাড়ে। বিশ্বব্যাংক ও অন্যান্য দাতা সংস্থার বাজেটের ২০১১ সালে ২০ হাজার ৫০৭ কোটি ২০ লাখ টাকার সংশোধিত প্রকল্প একনেকে অনুমোদন পায়। ডলারের মূল বেড়ে যাওয়ায়  ২০১৬ সালে  আরও আট হাজার ২৮৬ কোটি টাকা ব্যয় বাড়ালে মোট ব্যয় দাঁড়ায় ২৮ হাজার ৭৯৩ কোটি ৩৯ লাখ টাকা। সবশেষ প্রকল্পের মোট ব্যয় ৩০ হাজার ১৯৩ কোটি ৩৮ লাখ ৭৬ হাজার টাকায় দাঁড়িয়েছে। এর পুরো টাকাই সরকারি অর্থায়ন।

সম্প্রতি বিবিসি বাংলাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, যেভাবে পদ্মা সেতু প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হয়েছে এবং যে ধরনের নির্ভরযোগ্য তথ্য পাওয়া গেছে তাতে বলার কোনও সুযোগ নেই যে এই প্রকল্পে দুর্নীতি হয়েছে।

সব মিথ্যাচার, কুৎসা আর শত ষড়যন্ত্রের জবাব এই পদ্মা সেতু। আসলে পদ্মা সেতু কেবল ইট-পাথর-লোহা-সিমেন্টের তৈরি শুধু  সেতু নয়। এর সঙ্গে মিশে আছে অসংখ্য মানুষের দীর্ঘদিনের স্বপ্ন, আবেগ ও ভালোবাসা।  এটি আমাদের আত্নমর্যাদা, গর্ব - অহংকার, সক্ষমতা,  উন্নয়ন, হার না মানা ও সব ষড়যন্ত্রের জাল ছিন্ন করে ঘুরে দাঁড়ানোর প্রতীক।

 


যাযাদি/এসএস