বঙ্গবন্ধুর প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন ভাবনা

প্রকাশ | ১৭ আগস্ট ২০২২, ১৪:২৭

মোঃ হারুন-অর-রশিদ

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যার শিক্ষা দর্শন ও প্রাথমিক শিক্ষা একই সূত্রে গাঁথা। বাঙালি জাতিসত্তার ইতিহাসে বঙ্গবন্ধু শুধু স্বাধীনতার জনকই নয়। তিনি একাধারে প্রজ্ঞাবান নেতা ও সমাজ সংস্কারক। স্বাধীনতা পরবর্তী মাত্র কয়েক বছরে বঙ্গবন্ধু শিক্ষাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে ঢেলে সাজিয়েছিলেন উপনিবেশিক শাসনামলে প্রবর্তিত পূর্ব বাংলার বঞ্চিত শিক্ষা ব্যবস্থাকে। প্রাথমিক শিক্ষাকে যুগোপযোগী করার লক্ষ্যে ১৯৭৩ খ্রিষ্টাব্দে ৩৬ হাজার ১৬৫টি প্রাথমিক বিদ্যালয়কে জাতীয় করণ এবং ১ লাখ ৫৭ হাজার ৭২৪ জন শিক্ষককের চাকরি সরকারি করণের মাধ্যমে তিনি প্রাথমিক শিক্ষার অগ্রগতির সোপান রচনা করেন। তারই ধারাবাহিকতায় ২০১৩ খ্রিষ্টাব্দে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২৬ হাজার ১৯৩টি প্রাথমিক বিদ্যালয়কে জাতীয়করণসহ ১ লাখ ৫ হাজার ৬১৬ জন শিক্ষকের চাকরি সরকারিকরণ করেন। প্রাথমিক শিক্ষার অগ্রগতির ক্ষেত্রে এটি আরেকটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ। 

২০৪১ খ্রিষ্টাব্দের মধ্যে বাংলাদেশ একটি উন্নত রাষ্ট্রে পরিণত হতে চায়। শিক্ষার গুণগত মান নিশ্চিত করা, গবেষণা ও উদ্ভাবনের সুযোগ বৃদ্ধি ছাড়া কোনো দেশ উন্নত রাষ্ট্র হিসেবে মাথা তুলে দাঁড়াতে পারেনি। তাই বঙ্গবন্ধুর শিক্ষা দর্শন বাস্তবায়নের মাধ্যমেই আলোকিত মানুষ তৈরি ও উন্নত দেশে উন্নীত হওয়া সম্ভব। প্রাথমিক শিক্ষা সরকারিকরণ, সংবিধানে শিক্ষা বাধ্যতামূলক, শিক্ষা কমিশন গঠনসহ নানা কার্যক্রম বাস্তবায়ন করেছেন। সেই ষাটের দশক থেকেই জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান স্বাধিকারের পথ ধরে স্বাধীন রাষ্ট্রের স্বপ্ন দেখিয়েছেন এ জনপদের মানুষকে। বঙ্গবন্ধু  শুধু একটি স্বাধীন ভূখণ্ডই উপহার দেননি বরং উন্নত বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে দেশের সামগ্রিক শিক্ষাপ্রক্রিয়াকে সময়োপযোগী ও প্রয়োজনীয় শিক্ষার ওপর জোর দিয়েছিলেন।

বঙ্গবন্ধুর প্রাথমিক শিক্ষা ভাবনা সম্পর্কে একটি ধারণা পাওয়া যায় ১৯৭০ এর নির্বাচনের সময় টেলিভিশনে দেওয়া এক ভাষণে। সেই ভাষণে তিনি সুস্পষ্ট কিছু প্রস্তাব রেখেছিলেন। যথা- প্রথমত, সুষ্ঠু সমাজ ব্যবস্থা গড়ে তোলার জন্য শিক্ষাখাতে পুঁজি বিনিয়োগের চেয়ে উৎকৃষ্ট বিনিয়োগ আর কিছু হতে পারে না। দ্বিতীয়ত, নিরক্ষতা অবশ্যই দূর করতে হবে। পাঁচ বছর বয়স্ক শিশুদের বাধ্যতামূলক অবৈতনিক প্রাথমিক শিক্ষাদানের জন্যে একটি ক্র্যাশ প্রোগ্রাম চালু করতে হবে। তৃতীয়ত, দারিদ্র্য যেন উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে মেধাবীদের জন্য বাধা হয়ে না দাঁড়ায়, সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। বঙ্গবন্ধু শিক্ষা নিয়ে ১৯৭০ সালে যে ভাষণ দিয়েছিলেন তা তিনি শুধু ভাষণের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখেননি। বাস্তবে রূপদান করেছিলেন ক্ষমতায় যাওয়ার পর। তিনি প্রাথমিক শিক্ষা সবার জন্য বিনামূল্যে উন্মুক্ত করেন। বঙ্গবন্ধুর এ ভাষণই শিক্ষাখাতে তার আন্তরিক আগ্রহ ও প্রচেষ্টার স্পষ্ট ছবি ভেসে ওঠে।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার, অষ্টগ্রাম, কিশোরগঞ্জ।