ভগবান শ্রীকৃষ্ণ কে পাওয়া একমাত্র পথ শ্রীমতি রাধারাণী"র আরাধনা 

"তপ্ত কাঞ্চন গৌরাঙ্গী রাধে বৃন্দাবনে শ্বরী। বৃষভানুসুতে দেবী প্রণমামি হরি প্রিয়ে।

প্রকাশ | ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২২, ১৫:৫৪

মন্তোষ চক্রবর্তী

রাধাষ্টমী ব্রত পালনের সনাতন ধর্মের বেশ আনন্দ মুখর দিন। সুখশান্তি ও মঙ্গল কামনায় এই ব্রত পালন করেন । ভাদ্র মাসের শুক্লপক্ষে রাধাষ্টমী তিথিতে শ্রী মতি রাধিকার পূজার অংশ হিসাবে পালন করা হয়।হিন্দু ধর্ম অনুসারে জন্মাষ্টমীতে কৃষ্ণের আবির্ভাব দিবস পালনের কয়েক দিন পরেই এবার শ্রী মতি রাধিকার জন্মদিবস।


প্রপঞ্চ লীলায় পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের অন্তরঙ্গা স্বরূপশক্তি গোলোকেশ্বরী শ্রীমতি রাধারাণী ভাদ্র মাসে শুক্লা অষ্টমী তিথিতে অনুরাধা নক্ষত্রে সোমবারে মধ্যাহ্ন কালে ব্রজমণ্ডলে শ্রীগোকুলের  রাভেল নামক গ্রামে শ্রীবৃষভানু রাজা ও কীর্তিদা মায়ের ভবনে সকলের হৃদয়ে আনন্দ দান করে আবির্ভূত হন।
শ্রী মতি রাধারাণী প্রাননাথ স্বয়ং ভগবান শ্রীকৃষ্ণ ব্যাথীত এই রাধাষ্টমী তিথীর সম্যক মাহাত্ম্য কেউই বনর্ণা করা সম্ভব নয়। সনাতন ধর্মানুসারীরা এই দিনটিকে রাধাষ্টমী হিসেবে পালন করেন।


সনাতনী ধর্মীয় গ্রন্থে বলা আছে। শ্রীহরি বলেছিলেন,   "এই ত্রিলোকে আমি একমাত্র শ্রী রাধিকারই বশীভূত থাকবো" রাধা ও আমার মধ্যে কোনো প্রভেদ থাকবে না। আমি সবাইকে আকর্ষণ করি কিন্তু একমাত্র শ্রীমতি রাধিকাই আমাকে আকর্ষণ করবে। এরপর শ্রীহরি নন্দালয়ে জন্মগ্রহণ করেন। সূর্যদেব বৈশ্যকুলে জন্মগ্রহণ করে বৃষভানু রাজা হলেন এবং কীর্তিদার সঙ্গে তার বিবাহ হল। তারপর ভাদ্রমাসের শুক্লপক্ষে অষ্টমী তিথিতে ধরিত্রী কে আলোকিত করে কীর্তিদার গর্ভে শ্রীমতি রাধারানী। এই রাধারানীর আবির্ভাব তিথিই রাধাষ্টমী নামে পরিচিত। শুদ্ধ ভক্তরা সৰ্ব প্রকার পরিস্থিতেই ভগবান শ্রীকৃষ্ণ কে পাবার আশায় সব কিছুই করতে পারে।এমনকি নিজের প্রাণও বিসৰ্জন দিতে দ্বিধা বোধ করেনা। আর তখন সে ভগবান শ্রীকৃষ্ণকে দৰ্শন পায়। যেমন শ্রীমতি রাধারাণী। 


একদিন শ্রীমতি রাণী ভগবান শ্রীকৃষ্ণের প্রেমে কাতর হয়ে বিরহ ভাব নিয়ে বনে বনে ঘুরছিল। আর তার পায়ের নুপুরের ধ্বনিতে সমস্ত বন চমকাচ্ছিল।ভগবান শ্রীকৃষ্ণ রাধা রাণীর এই বিরহ ভাব দেখে,আরো কষ্ট দেওয়ার জন্য তার থেকে দুরত্ব বজায় রাখল,আর দূর থেকে শ্রীকৃষ্ণ সব দেখতে লাগলো। কিন্তু কি আর করার রাধা রাণীও আকুল হৃদয়ে ভগবান শ্রীকৃষ্ণকে ব্যাকুল ভাবে ডাকতে লাগলো,কিন্তু কৃষ্ণের কোন সাড়া শব্দ নেই।হঠাৎ করে মধ্যে বন থেকে অতিব শীতল শব্দের এক বিষ্ময় কর ধ্বনি রাধা রাণীর কৰ্ণে প্রবেশ করল।সেই ধ্বনির শব্দ ছিল  খুব ভয়ানক।কে জানি বলছে,হে রাধে আমি তোমার কৃষ্ণকে বন্দি করে রেখেছি।আর তাকে আমি বধ করব।যদি তুমি তাকে বাঁচাতে চাও তাহলে তোমায় প্রাণ বিসর্জন করতে হবে।


এই বাক্য শুনে শ্রীমতি রাধা রাণী আর সময় বিলম্ব না করে সে হৃদয় থেকে অত্যন্ত খুশির সঙ্গে বলল যে- আমি আমার প্রাণ ত্যাগ করার জন্য প্রস্তুত।কিন্ত আমার একটি শেষ ইচ্ছা ছিল,খুব ছোট।রাখবেন কি?


কিছুক্ষণ  পর আবার শীতল স্বরে মধ্যে বন থেকে ছোট একটা আওয়াজ বাতাশের সাথে রাধা রাণীর কৰ্ণে ধ্বনিত হল।সেই ধ্বনির ছিল, হ্যা বল! তখন রাধা রাণী অশ্রুপ্লুত নয়নে হৃদয় ভরা খুশি নিয়ে ক্রন্দনরত ভাবে বলতে লাগলো,  আমি জানিনা আপনি কে? কিন্তু আমার এই নয়ন অশ্রুর প্রত্যেক বিন্দু শুধু একবার প্রাণ ত্যাগের আগে আমি আমার শ্রীকৃষ্ণকে দেখতে চায়,আমার অঙ্গ - প্রত্যঙ্গ মন,প্রাণ,হৃদয় শুধু অন্তিম বার এক পলকের জন্য শ্রীকৃষ্ণকে দেখতে করতে চায়।কৃপা করে এই  পূরণ করে দিন আমি আর কিছু চাইবোনা ।এ কথা বলেই অভাগিনী রাধারাণী ভূমিতে পড়ে ক্রন্দন করতে লাগল, আর অন্তিম প্রাৰ্থনা করতে লাগল শুধু একবার ভগবান শ্রীকৃষ্ণকে দেখার জন্য। 


এই কাতর আর বিরহ ভাব দেখে মধ্যে বনের শীতল ধ্বনির যে মূল কারণ ছিল সে আর কেউ নয় সে সাক্ষাত ভগবান শ্রীকৃষ্ণই ছিল।আর শ্রীমতি রাধারাণীর এই ভাব দেখে মধ্যে বন থেকে ক্রন্দন করতে করতে শ্রীকৃষ্ণ রাধারাণীর সম্মুখে এসে দাড়ালো। রাধা রাণী যখন তার মাথা উপর দিকে উঠাল ,সে দেখল অশ্রুপ্লোত নয়নে দুহাত জোড় করে তার সম্মুখে সাক্ষাত ভগবান শ্রীকৃষ্ণ দাড়িয়ে আছেন। আর এই দৃশ্য  দেখে সমস্ত বন ক্রন্দন করতে লাগল৷তখন শ্রীমতি রাধা রাণী বলতে লাগল- এবার আমি মরেও শান্তি পাব!


কৃষ্ণ তখন ক্রন্দনরত ভাবে বলল- না ওটা আমিই ছিলাম,তোমাকে দেখার জন্য,তোমার কি ভাব হয়।কিন্তু তোমার ভক্তির আর ভালোবাসার কাছে আমি সবসময় পরাজিত। 


তাই ভগবান শ্রীকৃষ্ণ কে পাওয়া একমাত্র পথ হচ্ছে শ্রীমতি রাধারাণীর আরাধনা। শ্রীমতি রাধারাণীই একমাত্র বলতে পারে কিভাবে ভগবান শ্রীকৃষ্ণের দর্শন করা যায়। 


সাংবাদিক ও লেখক