মায়ের জন্য অগোছালো কিছু কথা

প্রকাশ | ১৫ মে ২০২৩, ০৯:৫৯

জান্নাতুন নাঈম প্রমী

মা শব্দটা এক অক্ষরের পৃথিবীর সবচেয়ে শ্রুতিমধুর শব্দ।এর মূল্য ও সম্মান জমিন থেকে আসমান পর্যন্ত!পৃথিবীর সব মায়া মমতা আর স্নেহ ভালোবাসার খাঁটি ও নিখাদ অংশটুকু যেন এখানেই লুকায়িত।

বাংলা অভিধানে আমার সবচেয়ে প্রিয় শব্দের শীর্ষে এটি।এবং ধরনীর বুকে এই শব্দের ধারক ও বাহক রুপে যত মা আছেন আমি রোজ রোজ পাঁচ বেলা প্রার্থনায় তাদের রাখি।পৃথিবী ও আরশের অধিপতির নিকট আর্জি জানাই তারা যেন ভালো থাকে।

সয়ং জান্নাত জাহান্নামের মালিক এক সন্তান সন্তান দের জান্নাত কে সমর্পন করেছেন মায়ের পদতলে।এবং পৃথিবীর সব ধর্মেই মায়ের সম্মান আকাশসম।মা হলো আমাদের সবার জীবনের এক বড় শক্তি।

সন্তানের মাইট্রোকন্ডিয়া।জন্মের পর থেকে মা আমাদের যে শক্তির যোগান দিয়ে যায় তার সঙ্গে পৃথিবীর কোনো জিনিশের তুলনা চলে না।প্রতিটি বাবা যদি হয় কর্মজীবি।তবে প্রতিটি মা হলো স্বপ্নজীবি।মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়।তবে প্রতিটি মা তার ত্যাগেই বড়।যুগে যুগে মায়েরা সম্মানের উচ্চ শিখরে আরোহন করেছেন।সয়ং মহান রব মাকে রেখেছেন উপরে!পৃথিবীতে যত বড় ও বিখ্যাত মানুষ রয়েছে। 

মায়ের দোয়াতেই হয়েছে।সবচেয়ে ধনী ব্যক্তিটির ও একজন সহজ সরল ও মমতাময়ী  মা থাকে।দুনিয়াী সব ভালোবাসার মাঝে অবিশ্বাস আর অচেনা রুপ বাসা বাঁধলেও মায়ের ভালোবাসাী চীর চেনা স্বর্গীয়  সে রুপ কখনোই ভিন্ন রুপে রুপান্তরিত হয়না।মায়ের ছায়াতলে সন্তানদের জীবনে বেঁচে থাকার শেকড় আসে,ডাল-পালা প্রসারিত হয়,সাফল্য রুপে ফুল ফলে ভরে যায় জীবন বৃক্ষ।মায়ের তুলনা শুধুই সে!

কিন্তু এই অতুলনীয় মানুষটিকে অনেক সময় তার সন্তানেরা দুনিয়ার মোহ  মায়ায় পরিবেষ্টিত হয়ে সঠিক প্রতিদান দিতে প্রতিনিয়ত ব্যর্থ হয়।মা কিন্তু তখনো আগের রুপে সন্তানের কল্যান কামনায় দিন রাত রত থাকেন।জোয়ান হেরিস বলেছেন-“সন্তানেরা ধারালো চাকুর মত, তারা না চাইলেও মায়েদের কষ্ট দেয় আর মায়েরা তাদের শেষ রক্তবিন্দু পর্যন্ত সন্তানদের সঙ্গে লেগে থাকে।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের কল্যানে কিংবা অকল্যানে আজ নানান দিন দিবসের ছড়াছড়ি।এর মধ্যে ভালো ভাবে পালিত হওয়া দিবস গুলোর একটি হলো “মা দিবস”।কিন্তু এই রঙিন ছবির জগতের উদযাপিত মা দিবসের চেয়ে বাস্তব জীবনের নিত্য দিনের যাপিত ৩৬৫ দিনের মা দিবস গুলো কতটা দায়িত্বের সঙ্গে পালিত হয়?

সেটি এই স্মার্ট ফোন হাতের স্মার্ট জেনারেশনের কাছে আমার একটি ছোট্ট প্রশ্ন হতে পারে?পার্থিব উপন্যাসে -শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় বলেছেন,”মানুষ যখন ভয় পায়,যখন বিপদে পড়ে,যখন মনে হয় একা,তখন ভয়ার্ত শিশুর মতোই মাকেই আঁকড়ে ধরে।“সন্তান এর জন্য মায়ের এই নিখাদ ভালোবাসা মহাকালের।

আমি ভাবি -পরিস্তিতির বিপাকে পড়ে যারা মাকে ছেড়ে দূর দূরান্তে জীবন যাপন করছে তাদের মতো অসহায় হয়তো আর হয়না।আমি এমন অসহায় হতে চাইনা মাবুদ,আমি এমন অসহায় হতে চাইনা।এই বয়স পর্যন্ত জীবনের সবগুলো বসন্ত মায়ের সঙ্গেই ছিল আমার।কিন্তু যাদের মা রবের ডাকে সাড়া দিয়ে জান্নাতুল ফেরদাউছে পাড়ি জমিয়েছে।

এই নিষ্ঠুর আর মিথ্যে পৃথিবীতে তাদের কষ্ট ভয়ানক।তাদের বুক ভরা দীর্ঘশ্বাস মহা সাগরের প্রবল গর্জনের  চেয়েও গভীর।যাদের মা নেই তাদের কষ্ট গুলো যদি ফুলের উপর ছিঁটিয়ে দেওয়া হয় তবে ফুলের সৌন্দর্য হবে ম্লান।তাদের কষ্ট গুলো যদি চাঁদের বুকে মেখে দেওয়া হয় অধিক তবে শোকে চাঁদ ও আলোহীন হয়ে পড়বে।তাদের কষ্ট গুলো যদি ধরণীর বুকে ছেড়ে দেওয়া হয় তবে প্রতিবার অক্সিজেন গহণে,প্রতিটি নিশ্বাসে মানুষ কষ্টের গন্ধ পাবে।

তাই বেঁচে থাকতে আমরা যেন মায়েদের কষ্টের কারণ না হই।বরং মায়ের কষ্টগুলোকে মুছে দেবার দায়িত্ববান চেষ্টায় যেন মায়ের মুখে হাসির কারণ হতে পারি।জর্জ ওয়াশিংটন বলেছেন-“আর দেখা সবচেয়ে সুন্দরী মহিলা আমার মা।মায়ের কাছে আমি চীরঋণী।আমার জীবনের সমস্ত অর্জন তারই কাছ থেকে পাওয়া নৈতিকতা, বুদ্ধিমত্তা আর শারীরিক শিক্ষার ফল।আমি বলবো –“আমার জীবনে দেখা  ঈমানে আমলে ভরপুর এক নারী আমার মা।পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর হাসিটি আমার মায়ের মুখে আমি দেখতে পাই”

মা কে নিয়ে খুনসুটির আবেগ মাখা স্বর্গীয় এই সময় গুলো পার করতে করতে  মা আমায় প্রশ্ন করে তুই আমাকে এত অর্ডার করিস কেন?এটা করা যাবে না ওটা করা যাবেনা।এটা খাওয়া মানা,ওটা খাওয়া মানা।এই খাবার বেশী বেশী খেতে হবে।

কেন এত হুকুম করিস?
তুই কি আমার মা?
উত্তরে আমি হেসে উঠে বলি-
মায়েরা যখন বৃদ্ধ হয়-তখন মেয়েরা তাদের মা হয়।
তাদের কথা শুনতে যে হয়!

লেখক : সমাজকর্মী, সংগঠক, নারী উদ্যোক্তা, ডিরেক্টর-বর্ণিল আভা, প্রতিষ্ঠাতা-WIN,,বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রী।ইংরেজী বিভাগ।

যাযাদি/ এস