ফার্মেসি: একটি যুগোপযোগী, বাস্তবধর্মী ও কর্মমুখী প্রোগ্রাম 

প্রকাশ | ১৮ মে ২০২৩, ১৮:১১

যাযাদি ডেস্ক

মানব সভ্যতার শুরুর দিকে রোগচর্চা এবং রোগের প্রতিষেধক-ঔষধ তৈরি/ব্যবহার একজনের হাতেই ন্যস্ত ছিলো। কালক্রমে বিজ্ঞান যত আধুনিকতার দিকে অগ্রসর হয়েছে তত দেখা গিয়েছে- একজনের পক্ষে অসুখ এবং ঔষধ- এই উভয় শাখার জ্ঞানকে একসাথে ধারণ করা সম্ভব নয়। এই সমস্যার সমাধানে উৎপত্তি হয়  ‘চিকিৎসাবিজ্ঞান’ ও ‘ঔষধবিজ্ঞান’ নামে দুটি আলাদা শাখার। 

একজন ডাক্তারকে যদি সবাই 'মাস্টার অফ ডিজিজ' হিসেবে অবিহিত করে, তাহলে একজন ফার্মাসিস্ট হচ্ছেন 'মাস্টার অফ মেডিসিন'। সৃষ্টিলগ্ন থেকে প্রকৃতির নিয়মে আমরা প্রতিনিয়ত বিভিন্ন রোগ দ্বারা আক্রান্ত হই। এসময় একজন রোগীর ভরসার পাত্র হয়ে ওঠেন একজন ডাক্তার, যিনি রোগের ধরণ বুঝে ঔষধ দিয়ে থাকেন। সুস্থ হতে হলে ঔষধ গ্রহণ ছাড়া বিকল্প পথ নেই। এই ঔষধের সামগ্রিক বিষয়ের সাথে জড়িত ব্যক্তিরাই হলেন ফার্মাসিস্ট।

তাই চিকিৎসা ব্যবস্থার পরিপূর্ণতায় ডাক্তার এবং ফার্মাসিস্ট একে অন্যের পরিপূরক। এজন্য সারা পৃথিবীতে ফার্মাসিস্টদের আলাদা একটা সম্মানের আসন আছে। ঔষধ তৈরি থেকে শুরু করে যথাযথ ব্যবহারের ক্ষেত্রে একজন ফার্মাসিস্ট নৈতিকতাকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়ে থাকেন বলেই তারা মানুষের মনে তাদের জন্যে আলাদা একটা সম্মান এবং বিশ্বাসের জায়গা তৈরি করে নিয়েছেন, হয়ে উঠেছেন স্বাস্থ্যসেবার 'রোল মডেল'।

ফার্মেসি একটি পেশাগত শাস্ত্র। বর্তমানে বিভিন্ন পেশাগত বিষয়ের মাঝে বিশ্বব্যাপী ফার্মেসি একটি অপরিহার্য জায়গা দখল করে আছে। সুস্থ–স্বাভাবিক জীবনযাপনের সঙ্গে এটি ওতপ্রোতভাবে জড়িত। জীবনকে সুন্দর, সুঠাম ও রোগমুক্ত রাখতে প্রয়োজনীয় ও মানসম্মত ঔষধ তৈরির চ্যালেঞ্জিং কাজ করে থাকেন ফার্মাসিস্টরা। আর ফার্মাসিস্ট হতে হলে ফার্মেসি পড়া ছাড়া বিকল্প নেই। পড়াশোনার বিষয় হিসেবে ফার্মেসি একটি আধুনিক, উন্নত ও যুগোপযোগী বিষয়। স্বাধীনতার পূর্বে ১৯৪৮ সালে সর্বপ্রথম লাহোর বিশ্ববিদ্যালয়ে ফার্মেসি বিভাগ চালু হয়। কিন্তু বাংলাদেশে ফার্মেসি শিক্ষা শুরু হয় প্রফেসর ডক্টর আব্দুল জব্বারের হাত ধরে। তাঁরই অদম্য ইচ্ছা ও ঐকান্তিক চেষ্টায় ১৯৬৪ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সর্বপ্রথম স্নাতক পর্যায়ে ফার্মেসি বিভাগের পথচলা শুরু হয়। বর্তমানে ১৩ টি সরকারি ও ২৮ টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে (সূত্র - বাংলাদেশ ফার্মেসি কাউন্সিল) ফার্মেসি বিষয়ে স্নাতক ডিগ্রি চালু আছে। এদের মধ্যে অন্যতম অতীশ দীপঙ্কর ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স এন্ড টেকনোলজি। 

বাংলাদেশের পরিচালিত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে স্থায়ী সনদপ্রাপ্ত ৫ম বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় এটি। রাজধানী প্রাণকেন্দ্র উত্তরায় স্থায়ী ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের করানো হয়। ২০০৪ সালে প্রতিষ্ঠার পর ২০০৫ সালেই দেশের ফার্মেসি শিল্পের অবাধ সম্ভাবনা ও বিপুল সুযোগ বিবেচনায় তরুণ প্রজন্মের পেশাজীবীদের উদ্বুদ্ধ করতে ফার্মেসি বিভাগ চালু করা হয় এই বিশ্ববিদ্যালয়ে। বর্তমানে বিভাগটিতে স্নাতক ৩৬ তম ব্যাচ চলমান। সেই সাথে ২২ জুলাই, ২০২২ তারিখে এম.ফার্ম ক্লাস শুরুর মাধ্যমে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি বিভাগ হয়েছে আরো বেশি প্রাচুর্যপূর্ণ। 

কেন ফার্মেসি বিভাগে পড়বেন? 

গত ১৭ বছরে প্রায় ১,১০০ শিক্ষার্থী বিভাগটি থেকে সফলভাবে স্নাতক সম্পন্ন করে দেশ এবং দেশের বাহিরে ইউএস-এফডিএ (US-FDA)-র মতো বিশ্বমানের আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানে তাদের মেধার স্বাক্ষর রেখে চলেছেন। এছাড়াও দেশের নামকরা ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানি যেমন স্কয়ার, ইনসেপ্টা, এসকেএফ, একমি, বিকন, এরিস্ট্রোফার্মা, রেনেটা, এসেনশিয়াল ড্রাগ সহ বিভিন্ন  প্রতিষ্ঠানে অতীশ দীপংকর বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি বিভাগের  নিজেদের মেধা ও পরিশ্রমের প্রমাণ রেখে চলছেন।  ঔষধ শিল্পের সাথে সাথে স্বাস্থ্যসেবা খাতের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদেও অনেকে  দায়িত্ব পালন করছেন। শুধু দেশেই নয়, এই বিভাগের শিক্ষার্থীরা স্ব স্ব যোগ্যতার বলে স্কলারশিপ নিয়ে আমেরিকা, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, কোরিয়াসহ বিভিন্ন দেশে পিএইচডিতে কর্মরত আছেন, যা আমাদের জন্য অত্যন্ত গর্বের বিষয়। 

এখানে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) ও ফার্মেসি কাউন্সিলের নির্দেশনা অনুযায়ী একাডেমিক কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়। শিক্ষার্থীদের ব্যবহারিক জ্ঞান সমৃদ্ধ করার জন্য এ বিভাগে আধুনিক ও উন্নত সুযোগ-সুবিধাসংবলিত আটটি ল্যাব রয়েছে। প্রতি সেমিস্টারে ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে বিভিন্ন ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানিতে ইন্ডাস্ট্রিয়াল ভিজিট করা হয়।

এ বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি বিভাগে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ে রয়েছে ফাইটোকেমিক্যালস, ফার্মাকোলজিক্যাল ও ফার্মাসিউটিক্যাল টেকনোলজির ওপর গবেষণার সুযোগ। গবেষণার কাজকে আরও সময়োপযোগী করে তুলতে গড়ে তোলা হয়েছে সুবিন্যস্ত এনিমেল হাউজ। এ ছাড়া এখানে বিভাগের পক্ষ থেকে বিভিন্ন বিষয়ে প্রতিনিয়ত গবেষণামূলক সেমিনার ও কর্মশালার আয়োজন করা হয়। শিক্ষার্থীদের গবেষণামূলক কাজে উৎসাহ দিতে বিভিন্ন সময়ে পরিচালনা করা হয় প্রশিক্ষণ কর্মশালা। আর প্রশিক্ষণ প্রদানে জড়িত থাকেন দেশ-বিদেশের বিভিন্ন নামকরা গবেষকবৃন্দ।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মাসিউটিক্যাল কেমিস্ট্রি বিভাগের অধ্যাপক এবং এ বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি বিভাগের উপদেষ্টা প্রফেসর ডক্টর মো: আসলাম হোসেন জানান, “বর্তমান বিশ্বে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো গবেষণায় ফোকাস করার মাধ্যমে উন্নত জ্ঞান সৃষ্টির প্রয়াস চালাচ্ছে। সেই লক্ষ্যে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি বিভাগের ল্যাবগুলোকে যথেষ্ট যুগোপযুগী করে সাজানো হয়েছে এবং প্রতি সেমিস্টারেই ল্যাবগুলোর মানোন্নয়ন ও আধুনিকায়ন অব্যাহত আছে। আমাদের লক্ষ্য প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে গুণগত, মানসম্মত ও গবেষণামুখী শিক্ষার মাধ্যমে একজন দক্ষ ও দায়িত্বশীল ফার্মাসিস্ট হিসেবে গড়ে তোলা। অতি সম্প্রতি বিভাগটি  এম. ফার্ম কোর্স চালুর  করার ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)-এর অনুমোদন পেয়েছে এবং  সফলভাবে  ক্লাস পরিচালনা শুরু করেছে।” নিঃসন্দেহে বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি বিভাগ অতি দ্রুত আরো সমৃদ্ধ হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

ফার্মেসি বিভাগের চেয়ারম্যান আসমা কবির তার বিভাগ নিয়ে বলেন, “ফার্মেসি বিভাগের সকল কার্যক্রম বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) ও বাংলাদেশ ফার্মেসি কাউন্সিলের নির্দেশনা অনুযায়ী পরিচালনা করা হয়। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই এই বিভাগে রয়েছে আধুনিক মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম, অভিজ্ঞ, যোগ্য ও মেধাসম্পন্ন শিক্ষকমন্ডলী এবং আধুনিক ল্যাব। এছাড়াও গেস্ট ফ্যাকাল্টি হিসেবে রয়েছেন দেশবরেণ্য ও প্রখ্যাত অধ্যাপকগণ এবং শীর্ষস্থানীয় ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানির উচ্চপদস্থ পেশাজীবী ফার্মাসিস্টগণ - যারা প্রতিনিয়ত যোগ্য ফার্মাসিস্ট তৈরির প্রচেষ্টায় নিরলস পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। ফার্মেসি বিভাগের রয়েছে আধুনিক যন্ত্রপাতি ও উন্নত সুযোগ সুবিধা সমৃদ্ধ ৮ টি ল্যাব; যেখানে বিভিন্ন গবেষণা কাজের মাধ্যমে শিক্ষকমন্ডলী শিক্ষার্থীদের নতুন কিছু জানার ইচ্ছাকে অনেকগুণ বাড়িয়ে দেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের গবেষণা কাজের ফলাফল নিয়মিতভাবে পিয়ার রিভিউড জার্নালে প্রকাশিত হয়। গবেষণা ও শিক্ষা সংক্রান্ত বিভিন্ন কার্যক্রমে শিক্ষার্থীদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ নিয়ে আমরা গর্বিত। ’’

ফার্মেসি বিভাগের শিক্ষার্থীরা কেবলমাত্র পড়াশোনাই নয়, দেশের একজন যোগ্য নাগরিক হিসাবে গড়ে ওঠার জন্য বিভিন্ন কো-কারিকুলার কার্যক্রমের আয়োজন করে থাকে। উদাহরণস্বরূপ সমসাময়িক বিষয়ের উপর সেমিনার, ওয়েবিনার, বিভিন্ন ফার্মাসিউটিক্যালস কোম্পানিতে ইন্ডাস্ট্রিয়াল ভিজিট, ক্রীড়া প্রতিযোগিতা, ছবি প্রদর্শনী, চলচ্চিত্র উৎসব, বনভোজন, বিশ্ব ফার্মাসিস্ট দিবস উদযাপন এবং এই উপলক্ষে বিনামূল্যে মেডিক্যাল ক্যাম্পেইন, রচনা প্রতিযোগিতা, পোস্টার প্রদর্শনী, কুইজ ও বিবিধ ।  

এছাড়াও বিভাগের শিক্ষার্থীদের নিয়ে গঠিত এডাস্ট ফার্মা ক্লাব নিয়মিত দুস্থ ও অসহায় মানুষের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ, করোনা মহামারি লকডাউনকালীন সময়ে প্রয়োজনীয় খাবার ও ঔষধ বিতরণ ইত্যাদি কার্যক্রম পরিচালনা করেছে। নৈতিকতাকে অবলম্বন করে ঔষধ তৈরি, বিপনন এবং ঔষধের সুষ্ঠু ব্যবহারের নির্দেশনা প্রদানের মাধ্যমে ফার্মাসিস্টরা হয়ে উঠুক স্বাস্থ্যসেবার রোল মডেল।’ফার্মাসিস্টরা হোক জাতির বিশ্বাসের কেন্দ্রবিন্দু, ঔষধ হোক সবার নিরাপদ পথ্য’।


আসমা কবির 
চেয়ারম্যান, ফার্মেসি বিভাগ
অতীশ দীপঙ্কর ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স এন্ড টেকনোলজি

যাযাদি/ এম