বায়ু দূষণ : ঢাকার নীরব ঘাতক এবং এর প্রতিকার

প্রকাশ | ১০ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৯:২৪ | আপডেট: ১০ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:৫৯

ইঞ্জিনিয়ার এ কে এম রেজাউল করিম
ফাইল ছবি

ঢাকার বাতাসে আজকাল খুকখুক শব্দ যেন স্থায়ী হয়ে গেছে। কাশি যেন নাগরিক জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। অথচ এই সমস্যাকে আমরা দায়ী করছি ‘ঋতু পরিবর্তনের’ ওপর। বাস্তবে, বায়ু দূষণের প্রকট প্রভাব ঢাকার মানুষের স্বাস্থ্য ও জীবনে এতটাই গভীর হয়ে দাঁড়িয়েছে যে, আমরা এটিকে স্বাভাবিক বলে মেনে নিয়েছি।  

বায়ু দূষণের প্রকৃত কারণ কী?

আমাদের ধারণা, "বায়ু দূষণের প্রধান কারণ গাড়ি।" কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন। একটি সাম্প্রতিক গবেষণা বলছে, ঢাকার বায়ু দূষণের মাত্র ২০ ভাগেরও কম আসে যানবাহন থেকে। তাহলে ঢাকার বাতাসে দূষণের মূল উৎস কী?  

মূলত ঢাকার দূষণের বড় অংশ আসে...

1. অনিয়ন্ত্রিত ও অপরিকল্পিত নির্মাণকাজ।  
2. কল-কারখানার দূষিত ধোঁয়া ও বর্জ্য।  
3. ইটভাটার অনিয়ন্ত্রিত কার্যক্রম।  

নিউ ইয়র্ক বা লন্ডনের মতো শহরেও অনেক গাড়ি চলে, কিন্তু সেসব শহরের বায়ু কেন ঢাকার তুলনায় পরিষ্কার? এর উত্তর লুকিয়ে আছে আমাদের অব্যবস্থাপনা ও উদাসীনতায়।  

বায়ু দূষণ নিয়ন্ত্রণ কি সম্ভব?
  
অনেকেই বলে থাকেন, "এটা তো স্বাভাবিক, বায়ু দূষণ বন্ধ করা অসম্ভব।" কিন্তু চীনের রাজধানী বেইজিঙের দিকে তাকালে এই ধারণা বদলাতে বাধ্য। ২০১৩ সালে বেইজিঙের বায়ু দূষণ এমন পর্যায়ে পৌঁছেছিল যে, স্বাভাবিক কার্যক্রম বন্ধ করতে হয়েছিল। কিন্তু ২০২১ সালে তাদের দূষণের মাত্রা অর্ধেকে নামিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে।  

কীভাবে?  

- কঠোর নীতিমালা প্রণয়ন।  
- নির্মাণকাজের সময় ধূলিকণা নিয়ন্ত্রণে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার।  
- কল-কারখানায় কার্বন নিঃসরণ নিয়ন্ত্রণে কার্যকর ব্যবস্থা।  
- পরিবেশবান্ধব ইট তৈরির পদ্ধতি চালু।  

চীন প্রমাণ করেছে, দূষণের দায় স্বীকার করে উদ্যোগ নিলে এটি নিয়ন্ত্রণ সম্ভব।  

বায়ু দূষণের বিপদ

বায়ু দূষণ শুধু শারীরিক নয়, মানসিক স্বাস্থ্যের ওপরও প্রভাব ফেলে। এক গবেষণায় দেখা গেছে, দীর্ঘমেয়াদি বায়ু দূষণ মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা কমিয়ে দেয়। এর প্রভাবে ঢাকা শহরে বড় এক প্রজন্ম শ্বাসকষ্ট, অ্যাজমা, এবং অন্যান্য শারীরিক ও মানসিক সমস্যার শিকার হয়ে বেড়ে উঠছে।  

উপায় কী?
ঢাকার বায়ু দূষণ নিয়ন্ত্রণে আমাদের নিতে হবে কার্যকর ব্যবস্থা—  
1. *নির্মাণ শিল্পে নিয়মিত নজরদারি:* ধূলিকণা নিয়ন্ত্রণে আধুনিক প্রযুক্তি ও শুদ্ধিকরণ প্রক্রিয়া চালু করতে হবে।  
2. *ইটভাটার বিকল্প:* পরিবেশবান্ধব ইট তৈরির উদ্যোগ নিতে হবে।  
3. *সবুজায়ন বাড়ানো:* শহরে নতুন করে গাছ লাগানো এবং পার্ক তৈরি করতে হবে।  
4. *কঠোর আইন প্রয়োগ:* নির্মাণ কাজ এবং শিল্প কারখানার ওপর কঠোর নিয়ম আরোপ করতে হবে।  
5. *গবেষণার উদ্যোগ:* বায়ু দূষণের প্রকৃত উৎস এবং তার সমাধানে প্রযুক্তি ব্যবহারের জন্য গবেষণা বাড়াতে হবে।  

উপসংহার

আমাদের শহরের মানুষ খুকখুক করে কাশতে কাশতে হাঁপিয়ে উঠেছে। অথচ আমরা এ সমস্যাকে গুরুত্ব দিচ্ছি না। ঢাকার বায়ু দূষণ যদি এখনই নিয়ন্ত্রণ করা না হয়, তাহলে আগামী প্রজন্ম এক গভীর স্বাস্থ্যঝুঁকির মুখে পড়বে।  

এই সমস্যার সমাধানে আমাদের সচেতন হতে হবে। শুধু সমালোচনা নয়, চাই সঠিক পরিকল্পনা ও বাস্তবায়ন। বায়ু দূষণ থেকে মুক্ত একটি শহর গড়ে তুলতে পারলেই ঢাকার মানুষের হাসি আবার ফিরে আসবে।  

লেখক : সমাজ সচেতন ও গবেষক

যাযাদি/ এস