‘তৌহিদী জনতা ও মুক্তিযুদ্ধের পরবর্তী রাজনৈতিক অঙ্গনে ইসলামের ভূমিকা’

প্রকাশ | ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১৫:৪৬

ইঞ্জিনিয়ার এ কে এম রেজাউল করিম
ফাইল ছবি

বর্তমানে বাংলাদেশে রাজনৈতিক ভূচিত্রে উত্তেজনা ও বিভাজন দৃশ্যমান। বিশেষ করে, ‘তৌহিদী জনতা’ নামক শক্তি সম্প্রতি তাদের অবস্থান স্পষ্ট করেছে, কিন্তু এ বিষয়ে অনেকের মনে প্রশ্ন রয়েছে। যারা নিজেদের বাম ও প্রগতিশীল দাবি করছেন, তারা ‘তৌহিদী জনতাকে’ মব ও সন্ত্রাসের সঙ্গে তুলনা করছেন এবং আইনের শাসনের কথা বলছেন। কিন্তু এই পরিস্থিতির গভীরে যাওয়া এবং শিরোনামের প্রশ্নের উত্তর খোঁজার জন্য কিছু বিষয় পুনর্বিবেচনা করা উচিত।

১৯৯২ সালের ২৬ মার্চ, মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের পরিবার এবং জাহানারা ইমামের নেতৃত্বে ‘একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি’ ঢাকায় গণআদালত (People’s Tribunal) আয়োজন করে, যা মূলত বিদ্যমান সংবিধান ও আদালতের বাইরে একটি স্বতন্ত্র কার্যক্রম ছিল। তখনকার ‘মব জাস্টিস’ অবশ্যই প্রতিক্রিয়া ও বিদ্বেষের ফল, কিন্তু সে সময়েই তা ছিল। তবে আজকের দিনে তৌহিদী জনতা তাদের আন্দোলন গড়ে তুলেছে যা তুলনামূলকভাবে শান্তিপূর্ণ এবং গণতান্ত্রিক বলে মনে হচ্ছে। তাদের একটি একমাত্র দাবি ছিল একুশে বই মেলায় গণ-অভ্যুত্থান বিরোধী লেখিকার বই প্রত্যাহার করা—এটিই ছিল তাদের প্রতিবাদ। 

প্রথম প্রশ্ন হলো, কেন এই প্রতিবাদকে অযথা ‘মব জাস্টিস’ বলা হচ্ছে? যেহেতু মুক্তিযুদ্ধের পর অনেক পিরামিডের ভেতর জনগণের ক্ষোভ এবং প্রয়োজনীয়তা ছিল, সুতরাং প্রগতিশীল ও বামপন্থীরা জাতীয় রাজনীতির মধ্যে ইসলামবিদ্বেষী অবস্থান নিয়েছেন, যা বাংলাদেশের সমাজব্যবস্থা এবং শ্রমিক-কৃষক আন্দোলনের সঙ্গে সম্পর্কিত নয়। কিন্তু শ্রীঘ্রই, ‘মব জাস্টিস’ ভয় দেখানো হচ্ছে এবং সরকার মঞ্চ থেকে একেবারে পালিয়ে যাচ্ছে।

তবে, অন্যান্য সময়ে তৌহিদী জনতার রণধ্বনির সঙ্গেই কথা বললে এবং বিশ্লেষণ করলে তা ‘মব জাস্টিস’ বা ‘ফ্যাসিস্ট রাজনীতি’র বিপরীতে দাঁড়িয়ে একেবারে নাগরিক সমাজের কাছে নতুন রণকৌশল প্রকাশ পায়।

বাংলাদেশের রাজনীতি বর্তমান বাম এবং প্রগতিশীলদের হাতে বিপদজ্জনক পথ অনুসরণ করছে, যেখানে ধর্মীয় জাতিবাদী রাজনীতির উত্থান ঘটছে। ইতিহাসের এই পালাবদলে, উভয় পক্ষ একে অপরকে ‘মব’ কিংবা ‘ফ্যাসিস্ট’ বলে চিহ্নিত করছে, কিন্তু জনগণের ত্যাগ এবং দাবিগুলো অনেক গভীরে বিরাজমান। স্বাধীনতা সংগ্রামের দৃষ্টিকোণ থেকে, তৌহিদী জনতা ইসলামবিদ্বেষী রাজনীতির বিপরীতে দাঁড়িয়েছে এবং তাদের প্রতিবাদ জনগণের অধিকারের অঙ্গীকার হিসেবে দেখা উচিত। 

এক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো—একজন লেখক কিংবা প্রতিবাদকারী হিসেবে আমাদের অবশ্যই দেশের একক এবং মুক্ত সংস্কৃতি সৃষ্টি করার দিকে মনোনিবেশ করতে হবে। সরকারকে অবশ্যই এই পরিবর্তনগুলো বুঝতে হবে, বিশেষ করে জনগণের শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদগুলো যত্নসহকারে মূল্যায়ন করতে হবে।

লেখক : চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী গবেষণা কেন্দ্র

যাযাদি/এস