এসএসসি পরীক্ষার্থীদের কাছে খোলা চিঠি

প্রকাশ | ০৫ এপ্রিল ২০২৫, ১২:৫৪

মশিউর রহমান
ফাইল ছবি

সুপ্রিয় এসএসসি পরীক্ষার্থীবৃন্দ, 

তোমাদের এসএসসি পরীক্ষা অতি নিকটে, সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে আগামী ১০ এপ্রিল, তোমরা জীবনের গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষায় বসতে যাচ্ছ। যারা পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে, সকলেরই প্রত্যাশা থাকে কাঙ্ক্ষিত ফলাফল করার। কেউ পারে আবার কেউ বা পারেনা। তাহলে সফলতার মূলমন্ত্র কি? এটা জানা অত্যন্ত জরুরী। তার আগে একটি প্রশ্ন এসে যায় , কে সফল হতে পারেন? যিনি মেধাবী? যিনি পড়ুয়া ? যিনি পরিশ্রমী ? সঠিক উত্তর হবে, যিনি পড়াশোনার পাশাপাশি অধিক পরিমাণে কৌশলী। 

শুধু এসএসসি পরীক্ষা নয়,জীবনের সকল যুদ্ধেই, সফল হতে হলে চাই কৌশলী হওয়া। মেধা কিংবা পড়াশোনা দিয়ে সফল হওয়া যাবে না।যেহেতু তোমাদের সামনে এসএসসি পরীক্ষা, এবার আসা যাক তোমাদের করণীয় নিয়ে । তোমাদের প্রথমই একটা বিষয় মনে রাখতে হবে, পরীক্ষার আগের রাতে অধিক রাত জেগে কিংবা পরীক্ষা শুরু ১ ঘণ্টা আগে পড়াশোনা করে, যতটা লাভ হবে তার চেয়ে ক্ষতিই  বেশি হবে। সুতরাং পরীক্ষার আগের রাতে অধিক রাত জেগে পড়াশোনা করা, পরীক্ষার হলে যেতে যেতে যানবাহনে পড়াশোনা করা, কিংবা হলে  ঘন্টা বাজার আগ পর্যন্ত বই নিয়ে পড়াশোনা করা পরিহার করতে হবে। পরীক্ষার আগের রাতে পূর্বে পঠিত বিষয়গুলো একটু চোখ বুলিয়ে নেওয়া যেতে পারে। খুব বেশি রাত না করে, বরং রাতের খাবার সেরে তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়তে হবে। যদিও পরের দিন পরীক্ষার হলে পরিবেশ কেমন হয় ? কোন বেঞ্চে সিট পড়ে ?  পাশে কার  কার সিট থাকে? ইত্যাদি ইত্যাদি চিন্তায়  ঘুম নাও আসতে পারে। মনে রাখতে হবে এসব বিষয়গুলো চিন্তা করে কোন সমাধান করা যাবে না। সুতরাং একটু যাতে  ভালো ঘুম আসে , সেজন্য এসব অবান্তর চিন্তা পরিহার করতে হবে। পরীক্ষার আগের রাতে ভালো ঘুম খুবই জরুরি। 

এবার আসা যাক পরীক্ষার হলে যাওয়া নিয়ে,পরীক্ষার হল বাড়ি থেকে কত দূরত্বে ? যানজটের সম্ভাবনা না থাকলেও ধরে নিতে হবে হতে পারে, কারণ পরীক্ষা কেন্দ্রে একসাথে অনেক লোকের সমাগম ঘটে। সুতরাং আগে থেকেই সকল প্রস্তুতি নিয়ে রাখতে হবে। পরীক্ষার প্রথম দিন একটু আগে বের হতে হবে কারণ সিট খোজার বিষয় রয়েছে। পরের দিনগুলোতে  একটা নির্দিষ্ট সময় যাতে পরীক্ষার হলে পৌঁছতে কোন তাড়াহুড়া করতে না হয়  এমন সময় হাতে নিয়ে বের হতে হবে। বাসা থেকে বের হওয়ার সময় প্রবেশপত্র, রেজিস্ট্রেশন কার্ড, কলম পেন্সিল নিয়েছ কিনা চেক করে নিতে হবে। প্রবেশপত্র আর রেজিস্ট্রেশন কার্ডের কয়েকটা ফটোকপি করে বাসায় রেখে দিতে হবে। পরীক্ষা কক্ষে প্রবেশের পূর্বেই  প্রয়োজনীয় কাজগুলো সেরে নিতে হবে।যাতে পরীক্ষার অতি মূল্যবান সময় নষ্ট করে তোমাকে বের হতে না হয়। পরীক্ষার হলে  কক্ষ পরিদর্শকগন উত্তরপত্র দিলে তুমি তোমার প্রবেশপত্র  দেখে  ধীরে সুস্থে প্রয়োজনীয় তথ্যগুলো পূরণ করবে , লক্ষ্য রাখবে কোনো ভাবেই যাতে  ভুল না হয়। একান্তই ভুল হয়ে গেলে বিনয়ের সাথে কক্ষ পরিদর্শকগনের দৃষ্টি আকর্ষণ করবে।

প্রশ্নপত্র পাওয়ার সাথে সাথেই লেখা শুরু করবে না , আগে একবার প্রশ্ন পত্রটিতে  ভালো করে চোখ বুলিয়ে নিবে । যে প্রশ্নগুলোর উত্তর তুমি ভালো পারো সেগুলো আগে লিখবে , যেগুলোর  ব্যাপারে তোমার একটু কনফিউশন রয়েছে, হবে কি হবে না ?  একটু চিন্তার বিষয় আছে, সেগুলোর জন্য অযথা সময় নষ্ট না  করে পরে লিখবে। মনে রাখবে পরীক্ষার হলে প্রতিটি মুহূর্ত তোমার অত্যন্ত মূল্যবান। লেখার পূর্বে অবশ্যই খাতায় বামদিকে এবং উপরে মার্জিন দিতে হবে।খাতায় কালো কালি ছাড়া অন্য কালি,যেমন-  নীল কালি বা যেকোন রঙিন কালি  ব্যবহার না করাই ভালো। মোটকথা কালো কালির  বাইরে অন্য কোন কালি ব্যবহারের দরকার নেই।পরীক্ষার জন্য নির্ধারিত সময়ের ১০/১৫ মিনিট পূর্বে লেখা শেষ করতে হবে। লেখা শেষ করে, পুরো উত্তর পত্রটি  চোখ বুলিয়ে নিতে হবে । অতিরিক্ত উত্তরপত্রগুলো  ঠিকভাবে সেলাই করা হয়েছে কিনা ?  অতিরিক্ত উত্তরপত্রের সংখ্যাগুলো  যথাযথ ভরাট করা হয়েছে কিনা  ভালোভাবে দেখতে হবে । পরীক্ষা সমাপ্তির  ঘন্টা বাজার সাথে সাথে  কক্ষ পরিদর্শক এর কাছে উত্তরপত্র জমা দিয়ে  প্রবেশপত্র, রেজিস্ট্রেশন কার্ড, নিজের ব্যবহৃত কলম পেন্সিল  ফাইলে ঢুকিয়ে  সতর্কতার সাথে হল ত্যাগ করতে হবে।নিজের ভবিষ্যৎ  চিন্তা করে, নিজের মাতা -পিতার মান সম্মানের কথা চিন্তা করে  পরীক্ষায় কোন প্রকার অসৎ  উপায় অবলম্বন  করা থেকে বিরত থাকবে। 

একটা কথা তোমাকে মনে রাখতে হবে , তুমি নকল করে, কিংবা কারোটা দেখে পরীক্ষায় কিছুটা নম্বর পেতে পারো, কিন্তু জীবনযুদ্ধে এই বিদ্যা কাজে লাগানো যাবে না। অর্থাৎ ধার করা বিদ্যা জীবনে কাজে লাগে না । সুতরাং এ ধরনের  অনৈতিক কাজ থেকে দূরে থাকতে হবে। 

পরিশেষে তোমাদের সবার প্রতি রইল অনেক অনেক শুভকামনা। তোমরা যাতে তোমাদের প্রত্যাশিত ফলাফল করতে পারো।

লেখক : ইংরেজি শিক্ষক, আছমত আলী  খান ইনস্টিটিউশন, বরিশাল। 

যাযাদি/ এসএম