রাজনৈতিক নেতৃত্ব বনাম স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব-বাংলাদেশ প্রেক্ষিত

প্রকাশ | ০৯ এপ্রিল ২০২৫, ১৩:০৩

ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) মো. নাসিমুল গনি
ফাইল ছবি

যখন বিষয়টি নিয়ে তাত্ত্বিক ও ব্যবহারিক আলোচনা করতে যাচ্ছি তখন আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি একটি কঠিন সময় ও বাস্তবতার মুখোমুখি। আমার চিত্ত অস্থির ও ভারাক্রান্ত, কেননা দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও অখণ্ডতা চরমভাবে হুমকির সম্মুখীন যা দেশে ও বিদেশে অবস্থানরত সাধারণ গণমানুষকে শসংকিত, বেদনাহত এবং মনস্তাত্ত্বিক দ্বন্ধের মধ্যে ফেলে দিয়েছে। জুলাই বিপ্লবের পরবর্তীতে জনমানুষের অবারিত প্রত্যাশা ও আকাঙ্ক্ষাকে সামনে নেবার অফুরন্ত সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচিত করার জন্য ছাত্র-জনতা-সেনা সম্মিলিতভাবে প্রিয় বিশ্ববরেণ্য ড. মোহাম্মদ ইউনূসকে নেতা হিসাবে বেচে নেয়। প্রায় দুই হাজার শহীদ, পয়ত্রিশ হাজারের উপর আহত এবং গণমানুষের অপরিসীম ত্যাগ, তিতীক্ষা, সহায়তা এবং সর্বোপরী সৃষ্টিকর্তার ঐশ্বরিক হস্তক্ষেপে প্রাপ্ত বাংলাদেশে ছাত্র ও জনগণের সফলতা আজ প্রশ্নবিদ্ধ। ১৯৭১ মুক্তিযুদ্ধের ফলকে জনগণের কল্যাণে বাস্তবায়িত করার ব্যর্থতার ফসল হিসাবে যখন দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব চরমভাবে বিপর্যস্ত তখনই স্বৈরাচার হাসিনা সৃষ্ট ধ্বংসস্তুপ হতে ফিনিক্স পাখী/আবাবিল পাখীর গল্পের মত ঐশ্বরিক সহায়তা এসেছিল। রক্ষা পেয়েছিল দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও অখণ্ডতা। কিন্তু বিপ্লবের প্রায় আট মাস অতিক্রান্ত হবার পর কেন এই পথহারা জনগণের আর্তি ও জিজ্ঞাসা? 

তাত্ত্বিকভাবে যে কোন দেশের পরিচালনা ও নেতৃত্বের অধিকার জনগণ দ্বারা নির্বাচিত এবং জনগণের কল্যাণের জন্য নিবেদিতপ্রাণ, দেশপ্রেমিক, সৎ এবং দক্ষ রাজনীতিবিদের। ন্যায়নীতি ও যৌক্তিক বুদ্ধিমত্তার অধিকারী রাজনীতিবিদরা তাদের জীবন ও যৌবন বির্সজনের মাধ্যমে জনগণকে ভালোবাসে ও আনুগত্যে প্রদান করে। জনগণ বিনিময়ে রাজনীতিবিদদের নেতৃত্ব ও আনুগত্যকে মেনে নেয়। রাজনীতিবিদরা জনগণের এই বোঝাপড়ার ফসল হিসাবে দেশের আভ্যন্তরীণ ও বৈশ্বিক ভূরাজনীতির আলোকে দেশ ও জাতিকে উন্নতি ও সম্মানের অগ্রযাত্রায় শরিক করান ও নেতৃত্ব দেন। এ জন্যই গণমানুষের এই রাজনৈতিক নেতারা মানুষের ভালোবাসায় সিক্ত হয়ে বিভিন্নভাবে ও স্তরে মানুষের মধ্যে বেঁচে থাকেন। কিন্তু যদি তারা দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব এবং জনগণের অধিকার নিশ্চিত করতে অক্ষম বা ব্যর্থ হন তখন ইতিহাসের আস্তাকুঁড়ে তাদের স্থান হয়। 

ইতিহাস ও বাস্তবতা তাত্ত্বিকভাবে নিশ্চিত করে, যে কোন দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের প্রতীক হলো সশস্ত্রবাহিনী। দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও অখণ্ডতা রক্ষার দায়িত্ব একই গণমানুষ সশস্ত্র বাহিনীকে প্রদান করেছে। সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা জীবন, যৌবনকে উৎসর্গ করে স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও অখণ্ডতাকে রক্ষা করে। এ ক্ষেত্রে সকল সময় জনগণই তাদের ক্ষমতা, আশা ভরসা এবং কার্যদক্ষতার উৎস। সশস্ত্র বাহিনী প্রয়োজনে জনগণের স্বার্থে এবং প্রদত্ত ক্ষমতাবলে শাস্তি ও যুদ্ধকালীন সময়ে যে কোন ধরণের পদক্ষেপ নিতে পিঁছুপা হয় না। এই সিদ্ধান্ত অত্যন্ত জটিল এবং হতে হয়ে পরিশীলিত ও পেশাদারীত্বের অপূর্ব সমন্বয়। দেশ ও জাতির পরাধীনতা, অর্থনৈতিক বিপর্যয় ও জাতিগত অনৈক্য সম্পূর্ণতা লাভ করে সশস্ত্র বাহিনীর অপরাগতা, ব্যর্থতা এবং অপেশাদারী আচরণের ফলাফল হিসাবে। এই ঐতিহাসিক ও তাত্ত্বিক দৃষ্টিকোণ হতে পৃথিবীর কোন দেশই তাদের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও উন্নয়ন নিশ্চিত করতে পারে না যদি সশস্ত্র বাহিনীর এই অবস্থানকে সঠিকভাবে সংজ্ঞায়িত ও বাস্তবায়িত না করে। ঐতিহাসিকভাবে এ কথা প্রণীধাণযোগ্য যে, সকল সময় (যুদ্ধ ও শান্তিকালীন) গণমানুষ রাজনৈতিক নেতৃত্ব বা সশস্ত্র বাহিনীর নেতৃত্বের মধ্যে স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার ক্ষেত্রে সশস্ত্র বাহিনীর নেতৃত্বকে বেছে নেয়। যে দেশ বা সমাজ এই সত্যকে গ্রহণ করে না তারা পথ পরিক্রমায় দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব, অখণ্ডতা, উন্নয়ন এবং জাতীয় সম্মান রক্ষা করতে ব্যর্থ হয়। ফলাফল অনিবার্যভাবে গণমানুষের আশা ও আকাঙ্খার ধ্বংস এবং জাতি রাষ্ট্রের ক্রমশ বিলুপ্তি। গণমানুষের এই উপলদ্ধি, রাজনৈতিক নেতৃত্ব এবং সশস্ত্র বাহিনীর নেতৃত্বের মধ্যে নৈতিক ও স্বতঃস্ফূর্ত পেশাদারীত্বের অপূর্ব সম্মানজনক সমন্বয় একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্রকে সংজ্ঞায়িত করে। এ ক্ষেত্রে কারোরই সীমা অতিক্রম করার সুযোগ নেই।

এখন বাংলাদেশের দিকে দৃষ্টিপাত করা যাক। বিশ্বের একটি বিস্ময়কর রাষ্ট্র বাংলাদেশ যা বারবার প্রমাণিত হয়েছে। ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধ ও তার চেতনা একটি ঐতিহাসিক সত্য ভাষণ। স্বাধীনতা পূর্ববর্তীতে রাজনৈতিক নেতৃত্ব এবং সশস্ত্র বাহিনীর নেতৃত্বের মূল্যবান সমন্বয় ও সমঝোতার পরিস্ফুঠন ঘটে যখন সশস্ত্র বাহিনীর প্রত্যক্ষ নেতৃত্বে স্বাধীনতা পরিচালিত হয়েছিল। রাজনৈতিক ও সশস্ত্র বাহিনীর নেতৃত্বের মধ্যে অলিখিত দ্বন্দ্ব থাকা সত্ত্বেও গণমানুষের আস্থা ও বিশ্বাসের ভিত্তিতে সশস্ত্র বাহিনীর নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধারা এই দেশকে স্বাধীন ও সার্বভৌম দেশ হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করে। 

রাজনৈতিক নেতৃত্বের অসচেতনতা এবং জনগণের প্রতি তাদের আনুগত্যের দোদুল্যমানতায় আমরা তেপ্পান্ন বৎসর কাটিয়েছি জুলাই ২৪ বিপ্লবের মাধ্যমে দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের আদর্শিক বাস্তবতা পুনঃজীবিত হয়েছে যাকে আমরা তাত্ত্বিকভাবে দ্বিতীয় রিপাবলিক হিসেবে আলোচনা ও উল্লেখ করছি। ছাত্র নেতৃত্বের অভূতপূর্ব প্রত্যয়, সকল স্তরের গণমানুষের অংশগ্রহণ এবং স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের প্রতীক হিসেবে সশস্ত্র বাহিনী এই অভ্যূত্থান ও বিপ্লবে অংশগ্রহণ করে দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বকে পুনঃস্থাপিত করেছে। তাই সারা বিশ্ব এই বিপ্লবকে প্রত্যক্ষ করেছে এবং গণমানুষের অধিকার ও ন্যায্যতার সংগ্রামকে অভিনন্দন জানিয়েছে। গণমানুষের জন্যে সশস্ত্র বাহিনীর অংশগ্রহণ ও দায়িত্ব প্রমান করার প্রচেষ্টা নিশ্চিত করে যে, যুদ্ধ ও শান্তিকালীন দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের একমাত্র প্রতীক সশস্ত্র বাহিনী। স্বৈরাচারী হাসিনা সরকারের পতন এবং স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার এই বিশেষ সন্ধিক্ষণে সশস্ত্র বাহিনীর এই নেতৃত্বেকে গণমানুষ জাতীয় দায়িত্বের অংশ, সহজাত ও ঐতিহাসিক সত্য হিসেবে গ্রহণ করেছে। 

আমরা সবাই তাত্ত্বিক ও ঐতিহাসিকভাবে জানি যে, গণঅভ্যূত্থান ও বিপ্লবের মূলনীতি ও কার্যধারাকে যথাযথভাবে ও সঠিক সময়ে বাস্তবায়িত না করলে বিপ্লবের বিপরীতে বিভিন্ন রূপ ও পর্বে প্রতিবিপ্লব সংগঠিত হয়। ফলশ্রুতিতে, পুনরায় দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব অনিশ্চিত হয়ে পড়ে। বিপ্লবের সফলতা চলমানতা পেলে স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব স্থায়ী হয় এবং অসফল হলে স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব বিলীন হয়ে যায়। এখন বাংলাদেশে বাস্তবে কি ঘটছে? ড. মোহাম্মদ ইউনুসের নেতৃত্বাধীন অন্তবর্তীকালীন সরকার এবং সশস্ত্র বাহিনীকে ছাত্র ও জনগণ সমিন্বতভাবে দেশে সঠিক, যোগ্য ও সৎ রাজনৈতিক নেতৃত্বে প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত দায়িত্ব দিয়েছে স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব, অখণ্ডতা এবং উন্নয়নকে সামনে এগিয়ে নেবার জন্য। একটি সম্পূর্ণ ধ্বংসপ্রাপ্ত অর্থনীতি, সামাজিক ও রাজনৈতিক ব্যবস্থাপনা এবং বিশ্ব ভূরাজনীতির স্বকীয়তার এই দায়িত্ব ও কর্তব্য সমন্বিতভাবে সামনে নেবার আপ্রাণ প্রচেষ্টা চলমান রয়েছে। কিন্তু তাত্ত্বিক ও ঐতিহাসিকভাবে এই সমন্বিত নেতৃত্ব গণঅভ্যুত্থান ও বিপ্লবের কিছু মূলনীতিকে উপেক্ষা ও অনাদর করে অযথা সময়ক্ষেপন করেছেন যা গণমানুষের মধ্যে হতাশা ও প্রত্যাশা বঞ্চিত হবার প্রবণতা সৃষ্টি করেছে। কারণ হিসেবে বলা যায় আল্লাহর উপর আস্থাহীনতা, বিভীষন ও মীরজাফরদের উপস্থিতি, সংবিধান বাতিল, স্বৈরাচারের প্রতিনিধিত্বকারী রাষ্ট্রপতি, আমলা ও বিচারকদের অপসারণ, বিপ্লবে নিহত ও আহতদের সঠিক নথিভূক্ত করণ ও ব্যবস্থাপনা, আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর উপর যথোপযুক্ত নিয়ন্ত্রণ, জুলাই বিপ্লবের ঘোষণাপত্র, হত্যা, গুম, খুন, স্বৈরাচারী, দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ ইত্যাদি মোটাদাগে কিছু ব্যত্যয়দের যা বিপ্লবের সফলতাকে ক্রমান্বয়ে প্রতিবিপ্লবের বলয়ের মধ্যে নিয়ে গিয়েছে। যথাসময়ে ও যথাযথভাবে রাজনৈতিক নেতৃত্ব, বিপ্লবী ছাত্র নেতৃত্ব এবং সশস্ত্র বাহিনীর নেতৃত্বের মধ্যে সমন্বয়হীনতা ক্রমান্বয়ে প্রতিটি নেতৃত্বকে প্রশ্নের সম্মুখীন করে মুখোমুখী দাঁড় করাতে চাচ্ছে। বিপরীতে অন্তবর্তীকালীন সরকার ও সশস্ত্র বাহিনী অতীব ধৈর্য্য ও বুদ্ধিমত্তার সাথে সকল বাধাকে অতিক্রম করে আভ্যন্তরীণ ও বহিঃনীতিমালাকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। 

সংস্কার, নির্বাচন, রাজনীতিবিদদের ভূমিকা, বিল্পবী-ছাত্র সমন্বয়কদের আচরণ ও নেতৃত্বগুণ, সরকারের আমলাতন্ত্র ও বিচার ব্যবস্থাপনা, আইনে শৃংখল পরিস্থিতিরি অবনতি, সশস্ত্র বাহিনীর নেতৃত্বের প্রতি অমানবিক, অসৌজন্যমূলক ব্যবহার ও অনাস্থা প্রচার, গণমানুষের অধিকার ও দায়িত্ব সম্পর্কে অসচেতনতা, বৈশ্বিক ভূরাজনীতির প্রতি বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের অবমূল্যায়ন ইত্যাদি বাংলাদেশ ও বাংলাদেশীদের জুলাই বিপ্লবের আদর্শিক চেতনা, প্রত্যাশা এবং সম্মানকে মিয়ম্রাণ করেছে। সাধারণ জনগণ, সুশীল সমাজ, সরকারি আমলাতন্ত্র ইত্যাদি অপপ্রচার, আত্মঘাতী বিবাদ ইত্যাদিতে জডিয়ে পড়েছে। স্বৈরাচারীকে সমর্থনকারী প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারতের রাজনৈতিক নেতৃত্ব অবিশ্বাস্যভাবে অপপ্রচার ও মিথ্যাচার করে বিপ্লবের সফলতাকে ম্লান ও প্রতিবিল্পবে সহায়তা করতে উঠে পড়ে লেগেছে। দেশের এই বিপর্যয়ের মুহুর্তে  ড. মোহাম্মদ ইউনুস এবং জেনারেল ওয়াকারুজ্জামান এর সমন্বিত ও নৈতিকভাবে দৃঢ় চমৎকার নেতৃত্বকে অসত্য, অন্যায় এবং চাণক্য শঠতার কুট কৌশলের মাধ্যমে দেশের অভ্যন্তরের বিভীষণদের দিয়ে আঘাতের পর আঘাত হেনে পর্যুদস্ত করার  সর্বাত্মক প্রচেষ্টা নিয়েছে। উদেশ্য দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বকে চিরতরে পর্যুদস্ত করা। 

যুগে যুগে বাংলাদেশের মানুয় শত বাধা ও বিপত্তি সত্ত্বেও ঘুরে দাঁড়িয়েছে এবং দেশের ক্লান্তিলগ্লকে সামাল দিয়েছে। স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের প্রতীক  সশস্ত্রবাহিনীর একইভাবে দেশের এই ক্লান্তি লগ্নে বিভীষণ, মীর জাফরদের পরাস্ত করবে। গণ মানুষের নিকট হতে প্রাপ্ত এই দায়িত্ব ও কর্তব্য সশস্ত্রবাহিনী কোনভাবেই অসৎ, দূর্নীতিবাজ, অদক্ষ, পরজীবি রাজনৈতিক নেতৃত্বের হাতে হস্তান্তরিত করবেনা। ড. মোহাম্মদ ইউনুস ও সশস্ত্রবাহিনী মনে প্রাণে বিশ্বাস করে যে, দেশে বিপ্লব পরবর্তী যুদ্ধাবস্থা বিরাজমান। সুতরাং এই যুদ্ধাবস্থায় সকল সময় সশস্ত্রবাহিনীর নেতৃত্বের প্রয়োজনীয়তা ও অগ্রগণ্যতা থাকবেই। অন্তবর্তীকালীন সরকার ও সশস্ত্রবাহিনীর নেতৃত্ব এখন একই সূত্রে বাঁধা এবং একত্রেই তাদের পথ চলতে হবে। এই বাস্তবতায় বিভীষণ ও মীর জাফরদের অপচেষ্টা এবং ভারতের চানক্য নীতি কখনই সকল হবে না। একটি কথা না বললেই নয়, ভারতের বর্তমান রাজনৈতিক নেতৃত্ব জনমানুষের প্রত্যাশা কখনই সমর্থন দেয়নি বিধায় সমগ্র ভারতবাসী ক্রমান্বয়ে তাদের হিন্দুত্ববাদের অপশক্তির বিরুদ্ধে জেগে উঠছে। 

৩৬০ জন আওলিয়ার পবিত্র স্পর্শে সজ্জীবিত এবং হাজার বছরের ভ্রাতৃত্বের বন্ধনের বিশ্বের চমক বাংলাদেশ ড. মোহাম্মদ ইউনুসের নেতৃত্বে বর্তমান সীমাবদ্ধতাসহ কাঁটিয়ে উঠতে পারবে বলে আমাদের সম্পূর্ণ বিশ্বাস ও আস্থা আছে। বিপ্লব পরবর্তী ভূলগুলো শোধরানের জন্য অতি জরুরি ভিত্তিতে একটি “বিপ্লবী জাতীয় সরকার” গঠনের প্রয়োজনীয়তা এখন সময়ের চাহিদা। এই “বিপ্লবী জাতীয় সরকার” জনগণের আস্থাকে দ্রুততম সময়ে পুনঃস্থাপিত করে শান্তিকালীন পরিস্থিতি সৃষ্টি করবে। যতদিন পর্যন্ত শান্তিকালীন অবস্থা ফিরে না আসে ততদিন তারা কার্য পরিচালনা করবেন। বিশেষ পরিস্থিতির এই “বিপ্লবী জাতীয় সরকার” গঠন করা হলে দেশের বিভীষণ, মীর জাফর এবং ভারত সরকারের সকল প্রতিবিপ্লব প্রচেষ্টা ক্রমান্বয়ে দুর্বল হয়ে পড়বে। ফলশ্রুতিতে দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব প্রতিস্থাপিত এবং আরো সুসংহত হবে। দ্বিতীয় স্বাধীনতা বা দ্বিতীয় বিপ্লবের এই প্রত্যাশা পূরণের মাধ্যমে বাংলাদেশ বিশ্ব দরবারে একটি অজেয় নরম  (soft) শক্তির রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হবে। এই বিপ্লবী সরকারে রাজনৈতিক নেতৃত্ব, সশস্ত্র বাহিনী, সুশীল সমাজ, প্রবাসী ইত্যাদির উপস্থিতি থাকতে হবে। তারা ঐক্য ও ন্যায্যতার ভিত্তিতে এই সমাজ ও দেশ গড়ার শক্ত ভিত্তি স্থাপন করবে। পরবর্তীতে দেশপ্রেমিক, সৎ এবং দক্ষ রাজনৈতিক নেতৃত্ব ভবিষ্যতের বাংলাদেশ ধীরে ধীরে গড়ে তুলবে। 

যাযাদি/ এসএম