লিঙ্গ নিরপেক্ষ সমাজের স্বপ্নে জসীমুদ্দিন মাসুমের ‘কে তুমি চিত্রকর’

প্রকাশ | ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ১৬:৩০

যাযাদি ডেস্ক

আধুনিকযুগে সমৃদ্ধ সমাজ ও রাষ্ট্রকাঠামো গঠন করতে হলে সামাজিক ও পারিবারিক পর্যায়ে লিঙ্গবোধ নিরপেক্ষতা অর্জন জরুরী বলে এক মনঃসামাজিক উপন্যাসের গল্প সাজিয়েছেন লেখক জসীমুদ্দিন মাসুম।

এবারের একুশে বইমেলায় প্রকাশিত ‘কে তুমি চিত্রকর’ উপন্যাসে দুই নারী পুরুষের চিন্তার পরিজগত ভ্রমনের চেষ্টা করেছেন লেখক। সমাজে নারী পুরুষের আলাদা পরিচয়কে প্রগ্রতির পথে বাধা হিসেবে উল্লেখ করেন তিনি।

নতুন বই প্রসঙ্গে, লেখক জসীমুদ্দিন মাসুম বলেন, আমাদের সামাজিক প্রগতির পথে অন্যতম বাধা হলো লিঙ্গ পরিচয়ের মাধ্যমে নারী পুরুষকে আলাদা করা। আমরা যদি উন্নত বিশ্বের দিকে তাকাই, জাপানের মত দেশ নারী পুরুষের পরিচয়ের উর্ধে গিয়েই প্রথমে অর্থনীতিকে বড় একটা গতিবেগ অর্জন করেছে। তিনি বলেন, আমাদের পারিবারিক ও সামাজিক কার্যক্রমে লিঙ্গ নিরপেক্ষতা জরুরী । সচেতন পাঠক যারা সমাজের নীতি নির্ধারণী পর্যায়ে কাজ করছেন তাদের জন্য একটি পজেটিভ বার্তা দেয়ার চেষ্টা করেছি এই মনঃসামাজিক উপন্যাসের মাধ্যমে।

উপন্যাসের শুরুটা হয় একজন নদী গবেষক অনুপ্রভা চৌধুরীর একজন নারী হিসেবে সামাজিক বঞ্চনার ভাবনা দিয়ে। একটি উন্নয়ন সংস্থায় কাজ করতে গিয়ে যিনি খুঁজে পেয়েছেন তার মেধার স্বীকৃতি কিন্তু পরিবার সহ সামাজিক পরিমন্ডলে বিভিন্ন পর্যায়ে নারী হিসেবে প্রতিবন্ধকতার স্বীকার হয়েছেন।
 
পারিবারিক পর্যায়ে এক নিকট পারিবারিক বন্ধুর কাছে যৌন নিগ্রহের শিকার অনু হারিয়ে ফেলে নারী হিসেবে জন্মানোর আহ্লাদ, আনন্দ- গৌরব।

লেখক গল্পের বিভিন্ন ধাপে একজন সাহসী নারী হিসেবে ‘অনু’কে পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন। নারী অনুর কাছে ‘পুরুষ প্রধান’ সমাজে বেঁচে থাকাটা কষ্টকর মনে হয়। উন্নয়ন সংস্তায় কাজের সুত্রেই অনুর সাথে পরিচয় হয় চিত্রকর সাদমান সাদিকের সাথে। প্রেমের গল্পটা না বললেও লেখক জসীমুদ্দিন মাসুম উপন্যাসের বিভিন্ন পর্যায়ে অনু-সাদমানের একে অপরের প্রতি ‘দুর্বলতার’ জায়গা ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করেছেন। ভালবাসা মনের অন্দরে গুমরে মরেছে। কথা বলাটাই হয়ে উঠেনি।
 
একজন চিত্রকর হিসেবে একটা মানবিক সমাজের কথা চিন্তা করেন সাদমান। তার কাছেও একজন মানুষের লিঙ্গপরিচয়কে তুচ্ছ মনে হয় ব্যাক্তিক পরিচয়ের বাইরে। নিজের পুরুষ পরিচয়কে নারী থেকে দূরত্ব তৈরীর অনুঘটক হিসেবে দেখে সাদমান। এক্ষেত্রে অনুর সাথে একই চিন্তাধারা পাওয়া যায় সাদমান চরিত্রে।
উপন্যাসের এক পর্যায়ে সমাজ ও পরিবারের প্রতি বিতৃষ্ণ হয়ে অনুপ্রভা চৌধুরী তার নিকটজন মালা খন্দকারের সাথে একসাথে বসবাস করেন। দুই নারীর একসাথে থাকাটা আমাদের সমাজে নেতিবাচক হিসেবে নেয়া হয়, সেটাকে ভাঙ্গার চেষ্টা করেছেন প্রগতিশীল লেখক জসীমুদ্দিন মাসুম ।

বাস্তবতার প্রতিরূপ হিসেবে উপন্যাসের নায়ক সাদমান ও অনুকে নিয়ে ভিন্ন চিন্তা করতে শুরু করে। সন্দেহে ভাসে। ডুবে যায় হতাশার সাগরে। এক পর্যায়ে চিত্রকর সাদমান পরিবেশবিদ ইশতিয়াকের শরণাপন্ন হলে ইসতিয়াক স্যার প্রয়োগ করেন তার অনুপম কৌশল। লিঙ্গকাতরতা থেকে মুক্ত হয় সাদমান। সে এক অসীম ভাবনার জগত। ইসতিয়াক স্যার সাদমানকে লিঙ্গ নিরপেক্ষ ভাবনার জগতে নিয়ে যায়।

চিত্রকর সাদমানের ‘লিঙ্গ নিরপেক্ষ’ হয়ে ওঠা ও অনুর সাথে পুন:মিলনের সঠিক তিথির মাঝামাঝি গল্পের ইতি টেনেছেন লেখক জসিমুদ্দীন মাসুম। গল্পের প্রবাহে তিনি যবনিকা টানতে চাননি। যে কারণেই হয়তো অনু-সাদমানের সম্পর্কের সুতো বাঁধা হয়েছে কিনা সে বার্তা পরিস্কার করেননি লেখক।

একজন কর্পোরেট পেশাজীবী জসীমুদ্দিন মাসুম ছাত্রজীবনেই সাহিত্যে আত্মপ্রকাশ করেন। পেশাগত জীবনের প্রথম দিকে কবিতা ও বেশ কিছু নাটক লিখেছেন। তার কথায় প্রকৃতির ভাবনা, সমাজের সুবিধাবঞ্চিত শ্রেনী ও নারীদের জীবনকে তুলে ধরার চেষ্টা থাকে।

তার কবিতা সংকলন ‘বাইরে কোখনও বৃষ্টি হয়নি’ ২০১৯ সালে প্রকাশিত হয় এবং ২০২০ সালে সবচেয়ে বেশি বিক্রিত বই ‘ক্রান্তিকাল’ তাকে নতুন পরিচয় এনে দেয়। পাঠকদের পছন্দের তালিকায় ২০২১ সালে যুক্ত হয় ‘দুই পুরুষ’ এবং ২০২২  সালে আসে আলোচিত বই 'চন্দ্রস্নান'। ‘কে তুমি চিত্রকর’ তাঁর লেখা চতুর্থ উপন্যাস।

যাযাদি/এস এস