জলবায়ু ন্যায্যতার লড়াই আন্তর্জাতিক পর্যায়ে তুলে ধরার আহ্বান
প্রকাশ | ২৭ জুন ২০২৫, ২০:৪৬

বাংলাদেশ ক্রমবর্ধমান প্রাকৃতিক দুর্যোগের মুখে একটি গভীর জলবায়ু সংকটের ভেতর দিয়ে যাচ্ছে। গাবুরা, আশাশুনি ও মহেশখালীর মতো উপকূলীয় এলাকাগুলোর মানুষ ঘনঘন দুর্যোগের মুখোমুখি হচ্ছে।
অথচ বৈশ্বিক কার্বন নিঃসরণে বাংলাদেশের অবদান মাত্র ০.৫৬ শতাংশেরও কম। এ প্রেক্ষাপটে জলবায়ু সংকটে ক্ষতিগ্রস্ত প্রান্তিক মানুষের অভিজ্ঞতা ও কণ্ঠস্বর জাতীয় নীতিনির্ধারণে অন্তর্ভুক্ত করা এবং তা আন্তর্জাতিক জলবায়ু আলোচনা ও বৈশ্বিক ফোরামে তুলে ধরার তাগিদ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
এ আহ্বান উঠে আসে বৃহস্পতিবার রাজধানীর দৃকপাঠ ভবনে অনুষ্ঠিত ‘জলবায়ুর প্রান্তে জীবন: সংগ্রাম, আশাবাদ ও ভবিষ্যৎ’ শীর্ষক এক অনুষ্ঠানে।
ওক্সফ্যাম ইন বাংলাদেশ, ব্রেকিং দ্য সাইলেন্স (বিটিএস) এবং দৃক যৌথভাবে এ আয়োজন করে। অনুষ্ঠানে নীতি-সংলাপ, বই প্রকাশনা, প্রদর্শনী এবং ৪৯টি জলবায়ু-সম্পর্কিত উন্নয়ন প্রকল্পের কৌশলগত মূল্যায়ন প্রতিবেদন উপস্থাপন করা হয়।
অনুষ্ঠানে সাতক্ষীরার শ্যামনগরের দৌলতুন্নেছা বলেন, ‘প্রতি বছর আমরা বন্যা ও দুর্যোগে ঘর হারাই, আবার নতুন করে গড়ি। কিন্তু ভয় লাগে ভবিষ্যতের কথা—আমার সন্তানেরাও কি এই কষ্ট সইবে?
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তন এখন প্রতিদিনকার বাস্তবতা। উপকূলীয় মানুষের কণ্ঠস্বর শুধু দুর্যোগের বর্ণনা নয়, এটি বৈশ্বিক অন্যায়ের প্রামাণ্য দলিল।
এই অভিজ্ঞতাগুলো নীতিমালায় অন্তর্ভুক্ত করে বিশ্বমঞ্চে তুলতে হবে।’ ওক্সফ্যাম ইন বাংলাদেশ-এর কান্ট্রি ডিরেক্টর আশীষ দামলে বলেন, ‘আশাশুনিতে বাঁধ ভাঙে, কইখালীর পানিতে লবণ বাড়ে, কিন্তু মানুষ লড়াই ছাড়ে না।
তবে কতদিন এই চক্র চলবে? জলবায়ু ন্যায্যতা নিশ্চিত করতে হলে এই কণ্ঠস্বর শুনতে হবে।’
বিটিএস-এর চেয়ারপারসন ও দৈনিক ইত্তেফাক-এর সম্পাদক তাসমিমা হোসেন বলেন, ‘যারা সবচেয়ে কম দায়ী, তারাই সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত। এটি শুধু জলবায়ু সংকট নয়, এটি এক অসাম্য ও অবহেলার সংকট।’
অনুষ্ঠানে মূল প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন ওক্সফ্যাম ইন বাংলাদেশ-এর হেড অব প্রজেক্ট ম্যানেজমেন্ট ইউনিট দেবরাজ দে। আলোচনায় আরও অংশ নেন ড. শহিদুল আলম (ব্যবস্থাপনা পরিচালক, দৃক), জ্যাকব ডি লিওন (সেকেন্ড সেক্রেটারি, অস্ট্রেলিয়ান হাইকমিশন), রোকসানা সুলতানা (নির্বাহী পরিচালক, বিটিএস) ও মাহমুদা সুলতানা (প্রোগ্রাম ডিরেক্টর, ওক্সফ্যাম)।
অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন ওক্সফ্যাম ইন বাংলাদেশ-এর ইনফ্লুয়েন্সিং, কমিউনিকেশনস, অ্যাডভোকেসি অ্যান্ড মিডিয়া বিভাগের প্রধান মো. শরিফুল ইসলাম। স্থানীয় অভিজ্ঞতা ও বাস্তব কাহিনি শুনিয়ে উপকূলীয় জনগণ আরও অন্তর্ভুক্তিমূলক পদক্ষেপের আহ্বান জানান।
অনুষ্ঠানটি অস্ট্রেলিয়ান সরকারের ডিপার্টমেন্ট অব ফরেন অ্যাফেয়ার্স অ্যান্ড ট্রেড (DFAT)-এর সহায়তায় ‘ব্লু ইকোনমি অ্যান্ড ইনক্লুসিভ ডেভেলপমেন্ট ফর ক্লাইমেট জাস্টিস (BID4CJ)’ প্রকল্পের আওতায় অনুষ্ঠিত হয়।
অনুষ্ঠান শেষে বই উন্মোচন ও প্রদর্শনীর উদ্বোধন করা হয়। প্রদর্শনীটি ২৬ থেকে ২৮ জুন প্রতিদিন বিকেল ৩টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত দৃকপাঠ ভবনে সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত থাকবে। - বিজ্ঞপ্তি