ছয় মাসে কর্মস্থলে দুর্ঘটনায় নিহত ৪২২ শ্রমিক
সেইফটি অ্যান্ড রাইটস সোসাইটির প্রতিবেদন
প্রকাশ | ০১ জুলাই ২০২৫, ১৫:৩৮

চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে (জানুয়ারি-জুন) দেশে বিভিন্ন খাতের কর্মস্থলে দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন ৪২২ জন শ্রমিক। ২০২৪ সালের একই সময়ে ৪৭৫ জন শ্রমিক নিহত হয়েছিলেন ৪২০ টি দুর্ঘটনায়।
জাতীয় ও স্থানীয় ২৬টি সংবাদপত্রে প্রকাশিত তথ্য বিশ্লেষণ করে সংবাদমাধ্যমে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই চিত্র তুলে ধরেছে বেসরকারি সংগঠন সেইফটি অ্যান্ড রাইটস সোসাইটি (এসআরএস)।
জরিপে দেখা গেছে, সবচেয়ে বেশি প্রাণহানি ঘটেছে পরিবহন খাতে- মোট ২০৭ জন শ্রমিক। এরপর রয়েছে সেবামূলক খাত (৬৫ জন), কৃষি খাত (৫৯ জন), নির্মাণ খাত (৫৯ জন) এবং কলকারখানা ও উৎপাদনশীল খাত (৩২ জন)।
মৃত্যুর কারণ বিশ্লেষণে দেখা গেছে, সড়ক দুর্ঘটনায় ২৬৭ জন, বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে ৪০ জন, বজ্রপাতে ৫৬ জন, ওপর থেকে পড়ে ২৩ জন, ভারি বস্তুর আঘাতে ৯ জন, বিষাক্ত গ্যাসে ১ জন, পানিতে ডুবে ৫ জন, আগুন ও বিস্ফোরণে ১২ জন, মাটি ও দেয়াল ধসে ৮ জন এবং অন্যান্য কারণে ১ জনের মৃত্যু হয়েছে।
সংগঠনের পর্যবেক্ষণে শ্রমিক মৃত্যুর পেছনে একাধিক কারণ উঠে এসেছে। এর মধ্যে অবকাঠামোগত দুর্বলতা, ঝুঁকিপূর্ণ যন্ত্রপাতির ব্যবহার এবং কারিগরি ত্রুটি অন্যতম।
পাশাপাশি অনিয়ন্ত্রিত পরিবহন ব্যবস্থা, অদক্ষ চালক, শ্রমিকদের ঝুঁকি সচেতনতা ও নিরাপত্তা প্রশিক্ষণের অভাব, সুরক্ষা সরঞ্জামের ঘাটতি এবং মালিকপক্ষের শ্রম আইন ও নিরাপত্তা নীতিমালার প্রতি উদাসীনতাও শ্রমিকদের জন্য মৃত্যুঝুঁকি বাড়িয়ে তোলে।
এছাড়া, অতিরিক্ত কাজের চাপ, পর্যাপ্ত বিশ্রামের অভাব, প্রাকৃতিক দুর্যোগ এবং দুর্ঘটনার পর জরুরি ও প্রাথমিক চিকিৎসা ব্যবস্থার অনুপস্থিতি অনেক সময় শ্রমিকের মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
সংগঠনের নির্বাহী পরিচালক সেকেন্দার আলী মিনা বলেন, প্রযুক্তির উন্নতি হয়েছে, শিল্পের ধরন পরিবর্তন হয়েছে। কিন্তু শ্রমক্ষেত্রে দুর্ঘটনা চলমান রয়েছে এবং মৃত্যুর মিছিল বড় হচ্ছে। শ্রম সংস্কার কমিশন হয়েছে, সেখানে স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা বিষয়ে সুপারিশ রয়েছে। চারদিকে সংস্কারের কথা বলা হচ্ছে।
এসব সংস্কারের সুফল শ্রমিক ও তার পরিবার পাবে না, যদি কর্ম-পরিবেশের মান উন্নয়ন করে দুর্ঘটনা কমিয়ে আনা না যায়। কর্মক্ষেত্র দুর্ঘটনা প্রতিরোধে সেক্টর ভিত্তিক দীর্ঘ পরিকল্পনা ও এর বাস্তবায়ন দরকার। এক্ষেত্রে শ্রমিক ও মালিকের কার্যকর সমন্বয় এবং পরিদর্শন ব্যবস্থার ব্যাপক উন্নয়ন ঘটাতে হবে।
তিনি আরও বলেন, দেশে নিরাপত্তার সংস্কৃতি গড়ে তোলার জন্য শ্রমিক, মালিক, সরকারসহ সব অংশীজনদের দায়িত্ববান হতে হবে। প্রতিটি সেক্টরের জন্য পৃথক নিরাপত্তা নির্দেশনা থাকতে হবে, যার ভিত্তিতে প্রত্যেক মালিক তার নিজস্ব নিরাপত্তা নীতি তৈরি করবে।
নিরাপদ কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করা কারও একক দায়িত্ব নয়, এটি মালিক, সরকার এবং শ্রমিক- তিন পক্ষের সমন্বিত দায়িত্ব। এসআরএস মনে করে, শ্রমিকদের জন্য একটি নিরাপদ কর্মপরিবেশ গড়ে তোলার প্রথম দায়িত্ব মালিকের, যিনি ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জাম প্রদানসহ নিরাপত্তা নিশ্চিত করবেন।
সরকারের দায়িত্ব হলো নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিধি বিধান প্রণয়ন ও তা পালনে সবাইকে বাধ্য করার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় তদারকি ও মনিটর করা।
অন্যদিকে, শ্রমিকদের দায়িত্ব হলো মালিকের দেওয়া নির্দেশনা ও নিরাপত্তাবিধি মেনে চলা। এই ত্রিপাক্ষিক সহযোগিতা ছাড়া কর্মক্ষেত্র দুর্ঘটনা প্রতিরোধ করা সম্ভব নয়।
সেইফটি অ্যান্ড রাইটস সোসাইটি (এসআরএস) একটি বেসরকারী উন্নয়ন সংস্থা, যারা দীর্ঘদিন ধরে কর্মস্থলের নিরাপত্তা বিষয়ক সচেতনতা, প্রশিক্ষণ,গবেষনা এবং পরামর্শ কার্যক্রম পরিচালনা করছে।
এছাড়াও, দুর্ঘটনায় আহত বা নিহত শ্রমিকদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ ও সরকারিভাবে প্রদেয় সহায়তা প্রাপ্তিতে বিনামূল্যে আইনি সহায়তা দিয়ে থাকে সংস্থাটি।