সাতক্ষীরার পৌরসভা নির্বাচনে জটিল সমীকরণ মাঠে আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জামায়াত

প্রকাশ | ১৯ জানুয়ারি ২০২১, ১৮:৫৯

সাতক্ষীরা প্রতিনিধি

সাতক্ষীরা পৌরসভায় আওয়ামী লীগের প্রথম চেয়ারম্যান ছিলেন শেখ আশরাফুল হক। মেয়রও তিনি প্রথম। পরপর দুইবার তিনি নির্বাচিত হন নিরপেক্ষ ভোটে। এর আগে বা পরে আওয়ামী লীগ ঘরারানার কেউ নির্বাচিত হতে পারেননি সাতক্ষীরা পৌরসভায়। এবারে আওয়ামী লীগের টিকিট পেয়েছেন মেয়র প্রার্থী শেখ আশরাফুল হকের ছেলে শেখ নাসেরুল হক। আওয়ামী লীগসহ মহাজোটভুক্ত দলের আর কোনো প্রার্থী নেই সাতক্ষীরা পৌরসভায়।

 

অপরদিকে সরকারবিরোধী পক্ষের প্রার্থী রয়েছেন ৪ জন। প্রার্থীরা হলেন, বিএনপি মনোনীত বর্তমান মেয়র তাসকিন আহমেদ চিশতি, জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি মো. নুরুল হুদা, স্বতন্ত্র  প্রার্থী হিসেবে সাতক্ষীরা চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি নাসিম ফারুক খান মিঠু এবং ইসলামী আন্দোলনের ডা. এসএম মুসতাফীজ উর রউফ। ফলে ভোটের হিসাব যেমন অনেকে জটিল বলছেন, আবার অনেকে বলছেন খুবই সহজ।

 

বিগত ২০১৫ সালের সাতক্ষীরা পৌরসভা নির্বাচনে মোট ৭৯ হাজার ছয়শত ৩৪ জন ভোটারের মধ্যে ৫১ হাজার ৬২০ জন তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন। নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী (ধানের শীষ প্রতীক) তাজকিন আহমেদ চিশতি ১৬ হাজার ৪৭০ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন জাতীয় পার্টির শেখ আজহার হোসেন ও  স্বতন্ত্র প্রার্থী নাছিম ফারুক খান মিঠু এবং আওয়ামী লীগের (নৌকা প্রতীক) মো. সাহাদাৎ হোসেন ছিলেন সবেেচয়ে দুর্বল অবস্থানে।

 

 

এবার সাতক্ষীরা পৌরসভা নির্বাচনে মোট ভোটার ৮৯ হাজার ২২৪ জন।

এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ৪৩ হাজার ৪১৮ জন ও নারী ভোটার ৪৫ হাজার ৮০৬ জন। আগামী ১৪ ফেব্রুয়ারি সাতক্ষীরা পৌরসভা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে ইভিএম পদ্ধতিতে।

 

উল্লেখ্য, এ বছর জাতীয় পার্টির পক্ষে কোনো প্রার্থী নেই। ফলে জাতীয় পার্টির এক সময়ের শক্তিশালী ঘাঁটি সাতক্ষীরা পৌরসভার সেই ভোট কোন প্রার্থীর প্রতীকে পড়বে তার ওপর নির্ভর করছে অনেক হিসাবনিকাশ।

 

অনেকেই মনে করেন পুরাতন ভোটাররা যে পক্ষেই থাক না কেন নতুন ভোটারদের অধিকাংশই ঝুঁকবে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীর পক্ষে। কারণ গত ১২ বছর দেশে যেমন ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে, আবার মাঠে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের একচেটিয়া সুযোগটাও পেয়েছে সরকারদলীয় পক্ষের লোকজন। ফলে প্রথমবাবের মতো যে ১০ হাজার নতুন ভোটার এবার ভোটকেন্দ্রে যাবেন তাদের অধিকাংশের ঝোঁকটা থাকবে নৌকার পক্ষেই। সাবেক মেয়র শেখ আশরাফুল হক দলমতের ঊর্ধ্বে উঠে পৌর এলাকার আমজনতার কাছে ব্যাপক জনপ্রিয় ছিলেন। তাকে নতুন করে স্মরণ করার প্রবণতা দেখা দিয়েছে তার ছেলেকে ঘিরে।

 

তাছাড়া শেখ নাসেরুল হক ব্যক্তিগতভাবে ক্লিন ইমেজের মানুষ। কোনো বদনাম নেই তার। এছাড়া সরকারের শরিক জাতীয় পার্টির ভোটের বড় অংশটাই নৌকায় যেতে পারে বলে মনে করেন অনেকে। তবে যেগুলো নৌকায় যাবে না সেগুলো বাকি চার প্রার্থীর প্রতীকে ভাগ হতে পারে। সব মিলিয়ে নৌকার অবস্থান এবার অনেক শক্তই হবে বলে মনে করেন অনেকে।

 

বিগত ২০১৫ সালের নির্বাচনে বিএনপির মনোনীত প্রার্থী তাসকিন আহমেদ চিশতি বিজয়ী হন। এবার তার সম্বল মানুষের সঙ্গে সদালাপ। পৌরসভায় গেলেই মিষ্টিমুখের কথা ভোলেননি কেউ। যদিও আশানুরূপ উন্নয়ন করতে পারেননি সরকারবিরোধী মেয়র হওয়ায় বলে মনে করেন অনেকে। অপরদিকে স্বতন্ত্র প্রার্থী নাসিম ফারুক খান মিঠু তারই ভোটে ভাগ বসাতে পারেন বলে মনে করছেন অনেকে।

 

স্বতন্ত্র প্রার্থী নাসিম ফারুক খান মিঠু গত নির্বাচনে বিজয়ী মেয়র প্রার্থী তাসকিন আহমেদ চিশতির থেকে তিন হাজার নয়শ ৩৮ ভোটের ব্যবধানে তৃতীয় অবস্থানে ছিলেন। ভোটের পর থেকে বসেছিলেন না। এলাকায় এলাকায় গেছেন সব সময়। ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে ব্যাপক সাহায্য সহায়তা করেছেন। যুবসমাজের মধ্যে তার নিজস্ব একটা বলয় রয়েছে। ব্যবসায়ী নেতা হিসেবেও তিনি অনেকেরই আস্থাভাজন। তাছাড়া রাজনৈতিক-অরাজনৈতিক অপশক্তির বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে তিনি চেম্বার অব কমার্সের সভাপতির চেয়ারে বসে আছেন। ফলে তাকে কেউ ছোট করে দেখছেন না।

 

স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে রয়েছেন জেলা জামায়াতের সাধারণ সম্পাদক মো. নুরুল হুদা। বর্তমানে জামায়াতের অবস্থান দুর্বল হয়ে গেছে বলে মনে করলেও এবারের পৌর নির্বাচনে অংশগ্রহণের মধ্যদিয়ে তাদের অবস্থান জানান দিচ্ছেন। তাদের ভোট ব্যাংক অক্ষত রয়েছে বলে মনে করেন অনেকে। এমনকি নারীদের মধ্যে তাদের ভোট বেড়েছে বলেও অনেকের ধারণা। তাদের অবস্থান দুর্বল হয়েছে, না কি ভালো হয়েছে সে প্রমাণ পাওয়া যাবে এই নির্বাচনে।

 

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ মনোনীত প্রার্থী ডা. এসএম মুসতাফীজ উর রউফ। দলীয় প্রতীক হাতপাখা নিয়ে তিনি লড়ছেন সাতক্ষীরা পৌরসভা নির্বাচনে। ধীর কদমে এগিয়ে যাচ্ছে দলটি। ভোটও বাড়ছে বলে মনে করেন অনেকে। কতটা বেড়েছে সেই পরীক্ষার ফলের জন্য অপেক্ষা করতে হবে ১৪ ফেব্রুয়ারি ফলাফল ঘোষণা পর্যন্ত।

 

যাযাদি/এস