আন্দোলন-নির্বাচনী কর্মপরিকল্পনা ঠিক করছে বিএনপি

ফের শুরু সাংগঠনিক কার্যক্রম ডাকা হয়েছে নির্বাহী কমিটির সভা জাসাস কেন্দ্রীয় কমিটি বিলুপ্ত

প্রকাশ | ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২১, ০০:০০ | আপডেট: ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২১, ০৯:১০

হাসান মোলস্না

সরকার-বিরোধী আন্দোলন বেগবান করা ও দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে শক্তিশালী প্রস্তুতির কর্মপরিকল্পনা ঠিক করছে বিএনপি। এর অংশ হিসেবে করোনা সংক্রমণের কারণে স্থগিত থাকা দলের সাংগঠনিক কার্যক্রম ও পুনর্গঠন প্রক্রিয়া ফের শুরু করেছে। সাড়ে তিন বছর পর ডাকা হয়েছে দলের জাতীয় নির্বাহী কমিটির সভা। এ ছাড়া সাংগঠনিক কার্যক্রম পুনরায় চালু হওয়ার সিদ্ধান্তের প্রথম দিন রোববার দলটির অন্যতম অঙ্গসংগঠন মেয়াদোত্তীর্ণ জাতীয়তাবাদী সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠন-জাসাস কেন্দ্রীয় কমিটি বিলুপ্ত করা হয়েছে। আর দ্রম্নত সময়ের মধ্যে অন্যান্য মেয়াদোত্তীর্ণ অঙ্গসংগঠন ও বিভিন্ন কমিটি বিলুপ্ত করে পুনর্গঠন করারও পরিকল্পনা রয়েছে। বিএনপি সূত্রমতে, এরই মধ্যে দুই ইসু্য নিয়ে তৈরি হয়েছে বিএনপির কর্মপরিকল্পনা। সেটা হচ্ছে- দলীয়প্রধান খালেদা জিয়ার স্থায়ী মুক্তি এবং নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সরকারকে বাধ্য করতে কার্যকর আন্দোলন গড়ে তোলা। এ জন্য সরকার বিরোধী দলগুলোতে থাকা সমমনাদের নিয়ে বৃহৎ জোট গড়ারও চেষ্টা চলছে। এ ছাড়া দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে দলের প্রস্তুতির কর্মপরিকল্পনাও ঠিক করা হচ্ছে। রোববার ফের সাংগঠনিক কার্যক্রম চালুর সিদ্ধান্ত জানিয়ে দলের সাংগঠনিক সম্পাদক ও দপ্তরের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্সের পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে দলীয় এই সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়েছে। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, বিশ্বব্যাপী কোভিড-১৯ মহামারির পরিপ্রেক্ষিতে বিএনপির সাংগঠনিক কার্যক্রম ও পুনর্গঠন প্রক্রিয়া ইতোপূর্বে স্থগিত করা হয়েছিল। দেশে করোনা মহামারি এখনো বিরাজমান। বাস্তবতার নিরিখে দলীয় কার্যক্রমের অগ্রগতির জন্য সাংগঠনিক কার্যক্রম/সাংগঠনিক গঠন ও পুনর্গঠন পুনরায় চালু করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। দলের নেতাকর্মীদের সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনা করতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। অপর এক বিজ্ঞপ্তিতে জাতীয়তাবাদী সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংস্থা (জাসাসের) মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি বিলুপ্ত করা হয়েছে। এদিকে দীর্ঘ সাড়ে তিন বছর পর বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সভার বিষয়ে এমরান সালেহ প্রিন্স জানান, আগামী ১৪ সেপ্টেম্বর ভাইস চেয়ারম্যান ও উপদেষ্টাদের সঙ্গে বৈঠক হবে। ১৫ সেপ্টেম্বর যুগ্ম মহাসচিব ও সম্পাদকমন্ডলীর সদস্য এবং ১৬ সেপ্টেম্বর নির্বাহী কমিটির সদস্য ও বিএনপির অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের সঙ্গে বৈঠক হবে। বিকাল সাড়ে ৩টা থেকে গুলশান কার্যালয়ে এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। বৈঠকে সভাপতিত্ব করবেন তারেক রহমান। তিনি জানান, সাধারণত বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির বৈঠক বড় কোনো জায়গায় একসঙ্গে হয়। কিন্তু এমন স্থান না পাওয়ায় গুলশান কার্যালয়ে সভা করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সর্বশেষ খালেদা জিয়ার কারাগারে যাওয়ার আগে ২০১৮ সালের ৩ ফেব্রম্নয়ারি বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির বৈঠক হয়েছিল। নির্বাহী কমিটির সভার বিষয়ে বিএনপির সিনিয়র এক নেতা জানান, বৈঠক আরও আগেই হতো। বৈশ্বিক মহামারি করোনা এবং দেশের সার্বিক পরিস্থিতির কারণে দেরি হয়েছে। দলের সবাই অপেক্ষায় আছে এই পুনর্মিলনের জন্য। ফোরামে সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হবে, দিকনির্দেশনা আসবে। তবে খালেদা জিয়া অংশ নিতে পারবেন না বলে নেতাকর্মীরা অত্যন্ত ব্যথিত। সভার আলোচনা কি থাকতে পারে? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বিএনপির একদফা দাবি। নিরপেক্ষ ও অবাধ নির্বাচন। এ জন্য নিরপেক্ষ ব্যক্তিদের দিয়ে কমিশন পুনর্গঠন করতে হবে, প্রশাসনকে নিরপেক্ষ হতে হবে। সর্বোপরি খালেদা জিয়াকে নিঃশর্ত মুক্তি দিতে হবে। এসব বিষয়ে সভায় আলোচনা প্রাধান্য পাবে। আগামী নির্বাচনের বিষয়ে দলের অবস্থান প্রসঙ্গে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, বিএনপির নির্বাচন কমিশন গঠন ইসু্যতে স্থায়ী সমাধান চায়। সব রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানে এই সমাধান হতে হবে। এ জন্য দেশের গণতান্ত্রিক সব রাজনৈতিক দল ও বিশিষ্ট নাগরিকদের মতামত নিতে হবে। কাজটি এমনভাবে করতে হবে, যা সবার কাছেই গ্রহণযোগ্য হয়। বিগত দিনের মতো একতরফা হলে কেউ মেনে নেবে না। এ ছাড়া দলীয় ফোরামে আলোচনার পর নির্বাচন কমিশন গঠন ইসু্যতে বিএনপি রাষ্ট্রপতির কাছে প্রস্তাব দেবে। নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার ও নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন যতক্ষণ পর্যন্ত না হবে, ততক্ষণ আন্দোলন চলবে। কারণ, দেশের জনগণ এই সরকারের অধীনে কোনো গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হতে পারে বলে মনে করে না। বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠক গত শনিবার রাতে দলটির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির সভায় প্রধানমন্ত্রী আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে যে প্রস্তুতির কথা বলেছেন, তা নিয়ে গুরুত্বের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। সরকারের মেয়াদ এখনো দুই বছরের বেশি বাকি! এত আগে ক্ষমতাসীনদের দিক থেকে নির্বাচনের কথা বলা না হলেও কেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নির্বাচনের কথা বলছেন, সে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়। এ অবস্থায় আগামী বছরের ১৫ ফেব্রম্নয়ারি বর্তমান নির্বাচন কমিশনের মেয়াদ শেষ হচ্ছে। এরই মধ্যে নতুন নির্বাচন কমিশন নিয়েও আলোচনা শুরু হয়েছে। সরকার নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন নিয়ে চলতি বছরে প্রক্রিয়া শুরু করতে পারেন। বৈঠকে স্থায়ী কমিটির সব নেতাই একমত হন, দেশে নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করতে হলে একটি নিরপেক্ষ সরকারের প্রয়োজন। সে ক্ষেত্রে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি ও ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচন প্রমাণ করে, বর্তমান সরকারকে ক্ষমতায় রেখে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন সম্ভব নয়। এই অবস্থায় আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন, নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার, নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন ও বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে করণীয় ঠিক করতে দলের সবার মতামত নিতে জাতীয় নির্বাহী কমিটির বৈঠক ডাকা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে অন্যান্য রাজনৈতিক দল ও বিশিষ্টজনদের মতামতও নেওয়া হবে। এ নিয়ে বিএনপি দলীয়ভাবে একটি প্রস্তাবনাও তুলে ধরবে। পরে রাষ্ট্রপতি সময় দিলে তার সঙ্গেও বৈঠক করতে চায়। বিএনপি সেখানেও নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার ও নির্বাচন কমিশন গঠন নিয়ে বিএনপির দাবিগুলোও পুস্তক আকারে তুলে ধরা হবে। প্রত্যাহার হচ্ছে ১২ ছাত্রদল নেতার বহিষ্কারাদেশ : স্থায়ী কমিটির বৈঠকে চলমান পরিস্থিতির কথা বিবেচনা করে ১২ ছাত্রদল নেতার বহিষ্কার আদেশ প্রত্যাহারেরও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। খুব শিগগিরই তাদের বহিষ্কারাদেশ তুলে নেওয়ার চিঠি দেওয়া হবে। ১২ ছাত্র নেতা হলেন- বাশার সিদ্দিকি, জহির উদ্দিন তুহিন, এজমল হোসেন পাইলট, ইকতিয়ার কবির, মামুন বিলস্নাহ, আসাদুজ্জামান আসাদ, বায়েজিদ আরেফিন, দবির উদ্দিন তুষার, গোলাম আজম সৈকত, আব্দুল মালেক ও আজীম পাটেয়ারী।