বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

মাস্টারপ্ল্যান নিয়ে মাঠে জামায়াত

লক্ষ্য ২০৪৮ সালে ক্ষমতায় যাওয়া সরকারি ২৫ সেক্টরে ২ লাখ দলীয় লোকের নিয়োগের ব্যবস্থা করা ট্রেড ইউনিয়নের মাধ্যমে কৃষক ও শ্রমিকদের দলে ভেড়ানো
সাখাওয়াত হোসেন
  ২৭ অক্টোবর ২০২১, ০০:০০
আপডেট  : ২৭ অক্টোবর ২০২১, ০৯:৪৮

নিবন্ধন হারানোর পর ২০১৮ সাল থেকে ৩০ বছরের মাস্টারপস্ন্যান নিয়ে মাঠে নেমেছে জামায়াতে ইসলামী। তাদের পস্ন্যানের মধ্যে রয়েছে- ২০৪৮ সালে ক্ষমতায় যেতে সরকারি ২৫ সেক্টরে ২ লাখ দলীয় লোকের নিয়োগের ব্যবস্থা করা। পাশাপাশি চার শতাধিক ট্রেড ইউনিয়নের মাধ্যমে কৃষক-শ্রমিকদের দলে ভেড়ানো, জামায়াত পরিচালিত শিক্ষা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বাড়ানোর টার্গেট রয়েছে দলটির। এ ছাড়া কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া মেধাবী শিক্ষার্থী এবং বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার তরুণদের দলে টানতে নেওয়া হয়েছে বড় ধরনের কৌশলী পরিকল্পনা। সম্প্রতি রাজধানী থেকে গ্রেপ্তার হওয়া ৯ জামায়াত নেতা গোয়েন্দা জিজ্ঞাসাবাদে এ সব তথ্য দিয়েছে। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের উত্তর বিভাগের যুগ্ম কমিশনার হারুণ-অর-রশিদ জানান, গত ৬ সেপ্টেম্বর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা থেকে জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার, অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি জেনারেল হামিদুর রহমান আজাদ, রফিকুল ইসলাম খান, নির্বাহী পরিষদের সদস্য ইজ্জত উলস্নাহ, মোবারক হোসেন, আব্দুর রউফ, ছাত্র শিবিরের সাবেক সভাপতি ইয়াসিন আরাফাত ও জামায়াত কর্মী মনিরুল ইসলাম ও আবুল কালামকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের দুই দফা রিমান্ডে নিয়ে চাঞ্চল্যকর তথ্য পাওয়া গেছে। গ্রেপ্তারকৃতরা জানিয়েছেন, দলের মাস্টারপস্ন্যান বাস্তবায়নে বিপুল পরিমাণ অর্থের জোগান দিচ্ছে দলটির বিদেশে থাকা কর্মীরা। বিভিন্ন এনজিওর আড়ালে তারা দেশে অর্থ আনছেন। প্রসঙ্গত, ১৯৪৮ সালে পূর্ব পাকিস্তানে জন্ম নেয় দলটি। একাত্তরে যুদ্ধাপরাধের দায়ে অভিযুক্ত হওয়ায় ২০১৩ সালে একটি রিটে রাজনৈতিক দল হিসেবে জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন বাতিল করেন হাইকোর্ট। এরপর ২০১৮ সালে এটি গেজেট আকারে প্রকাশ করে নির্বাচন কমিশন। বিগত নির্বাচনে বিএনপির সঙ্গে জোটবদ্ধ দলটি ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচন করে; কিন্তু বর্তমানে নানা টানাপড়েনে নিজস্ব ধারার রাজনীতিতে ফেরার চেষ্টা করছে দলটি। এর আগে সরকারবিরোধী আন্দোলনে জামায়াত-শিবির সারা দেশে ব্যাপক তান্ডব চালায়। পেট্রোল বোমা, বাসে আগুন দিয়ে সাধারণ নিরীহ মানুষ হত্যার মতো অভিযোগ ওঠে দলটির বিরুদ্ধে। অভিযোগ রয়েছে, নির্বাচনকালীন ভোট কেন্দ্র পুড়িয়ে দেওয়া, প্রিজাইডিং অফিসারকেও হত্যা করার মতো কাজ করতে দ্বিধাবোধ করেনি তারা। গোয়েন্দাদের দেওয়া তথ্যমতে, একক সংখ্যাগরিষ্ঠ দল হিসেবে ২০৪৮ সালে ক্ষমতায় যাওয়ার পরিকল্পনা এঁটেছে মুক্তিযুদ্ধের যুদ্ধাপরাধের দায়ে অভিযুক্ত জামায়াতে ইসলামী। গোয়েন্দাদের হাতে গ্রেপ্তারকৃত নেতাদের ল্যাপটপ থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, সারা দেশে প্রায় ৪০০ ট্রেড ইউনিয়ন গড়ে উঠেছে জামায়াতে ইসলামীর ব্যানারে। এ ছাড়া তাদের একটি শ্রমিক সংগঠনও রয়েছে। কৃষক-শ্রমিকসহ খেটে খাওয়া মানুষ ওই সংগঠনের ব্যানারে নিয়ে আসার চেষ্টা করছে দলটি। জামায়াত পরিচালিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সংখ্যাও বৃদ্ধির পরিকল্পনা রয়েছে তাদের। সেখানে টার্গেট করা হচ্ছে তরুণ প্রজন্মকে। চাকরির বিনিময়ে কর্মী সংগ্রহ করার চেষ্টা করা হচ্ছে। যুগ্ম কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ জানান, দেশে বিভিন্ন সংগঠন তৈরি করেছে জামায়াতে ইসলামী। যেখানে বিদেশ থেকে ফান্ড এনে তারা মূলত দলের জন্য ব্যবহার করছে। তাদের মূল উদ্দেশ্য কর্মী তৈরি করে ছাত্রলীগের মধ্যে ঢুকিয়ে দেওয়া এবং পরে সুযোগ বুঝে দলীয় ব্যানারে তাদের সরকারি চাকরির ব্যবস্থা করিয়ে দেওয়া। গোয়েন্দা সূত্রগুলো জানায়, সরকারের বিভিন্ন উন্নয়নকে ম্স্নান করতে নেতাকর্মীদের দিয়ে দেশি-বিদেশি মিডিয়ায় অপপ্রচার চালানোরও পরিকল্পনা রয়েছে জামায়াতে ইসলামীর। এ জন্য বিদেশে তাদের একটি শক্তিশালী সাইবার ইউনিট তৈরি করেছে। তারা বিদেশে বসে জামায়াতের হয়ে সরকারবিরোধী অপপ্রচার চালিয়ে যাচ্ছে। জানা গেছে, সম্প্রতি গ্রেপ্তারকৃত জামায়াত নেতাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে দেশব্যাপী একটি তালিকা তৈরি করে জামায়াত নেতাদের ওপর নজরদারি চালানো হচ্ছে। দেশের প্রতিটি জেলার এসপির কাছে এ তালিকা পাঠানো হয়েছে। এ ছাড়া অপতৎপরতামূলক নানা ছক তৈরির সঙ্গে জড়িতদের ধরপাকড় অভিযান শুরু করা হয়েছে। এরই অংশ হিসেবে নোয়াখালীতে অভিযান চালিয়ে জামায়াতে ইসলামীর জেলা আমিরসহ তিন নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়। জামায়াতের কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য, নোয়াখালী জেলা আমির মাওলানা আলাউদ্দিনকে তার চৌমুহনীর বাসা থেকে এবং একইভাবে জেলা জামায়াতের শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক নাসিমুল গনি মহল চৌধুরী ও চৌমুহনী ৯ নম্বর ওয়ার্ড জামায়াত কর্মী মো. ফখরুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করে। অন্যদিকে চট্টগ্রাম নগরের পাঁচলাইশ থানা পুলিশ জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্র শিবিরের সাত নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করে। গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- নগর জামায়াতের বায়তুল মাল বিষয়ক সম্পাদক আব্দুল কাইয়ুম, নগর জামায়াতের সহ-প্রচার সম্পাদক মোহাম্মদ আলী, নগর শিবিরের শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক মিফতাহুল আলম, নগর শিবিরের সাথী ইরফান ইউনুস, জামায়াত কর্মী ইমরান আলী, মো. দেলোয়ার ও মো. আবু বক্কর সিদ্দিক। রাজশাহীতে অভিযান চালিয়ে গ্রেপ্তার করা হয় জামায়াতে ইসলামীর রুকন হুমায়ুন কবিরকে। পুলিশ জানিয়েছে, গ্রেপ্তার হুমায়ুন কবিরের নামে নগরীর বিভিন্ন থানায় ৯টি নাশকতার মামলা রয়েছে। গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার শান্তিরাম ইউনিয়ন জামায়াতের সভাপতি সুজা মিয়া, বেলকা ইউনিয়ন সভাপতি আব্দুল ওয়াহেদ মিয়া, জামায়াত কর্মী মিজানুর রহমান ও মনোয়ারুল ইসলামকেও গ্রেপ্তার করা হয়। নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলার চৌমুহনীতে হিন্দুদের মন্দির ও পূজামন্ডপে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে ২৪ অক্টোবর জামায়াত সমর্থক সাবেক ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যানকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ২৫ অক্টোবর জয়পুরহাটের কালাই পৌর শহরের আব্দুস সামাদ তালুকদার মার্কেট এলাকায় গোপন বৈঠক করার সময় জেলা ও উপজেলা জামায়াতে ইসলামীর আমীরসহ ৪ নেতাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন, জামায়াতে ইসলামীর জয়পুরহাট জেলা শাখার আমীর মো. ফজলুর রহমান সাঈদ, সেক্রেটারি মো. আবু আলস্নামা গোলাম কিবরিয়া, জেলা কমিটির সদস্য মো. নুরুজ্জামান সরকার ও কালাই উপজেলা শাখার আমীর মো. মুনছুর রহমান। চট্টগ্রামের হাটহাজারী থানা এলাকায় মন্দির ভাঙচুর ও সহিংসতার ঘটনায় ২০ অক্টোবর মিরসরাই সদর ইউনিয়ন জামায়াতের সাবেক আমির মো. কফিল উদ্দিন লতিফীকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে