শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

কৃষকের ভাগ্য উন্নয়নে কোনো উদ্যোগ সরকারের: ফখরুল

যাযাদি ডেস্ক
  ১৭ মে ২০২২, ১৩:৩২

বর্তমান সরকারের আমলে কৃষি কৃষকের ভাগ্য উন্নয়নে তেমন কোনো উদ্যোগ নেই বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর

আজ মঙ্গলবার সকালে জাতীয়তাবাদী কৃষক দল আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি কথা বলেন

ফখরুল বলেন, ‘সুনামগঞ্জ অঞ্চলে একটিই ফসল সেটা হলো বোরো ফসল যদি নষ্ট হয় তাহলে এই অঞ্চলের লাখ লাখ কৃষক চরম অর্থনৈতিক দুরাবস্থার মধ্যে পড়ে যান আমাদের সামগ্রিক শস্য উৎপাদনের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে আজকের পত্রিকার দিকে তাকালেই দেখা যাবে, ভরা মৌসুমে চালের দাম বাড়ছে

তিনি আরও বলেন, ‘আজ আমরা এমন এক বিষয় নিয়ে আপনাদের সামনে হাজির হয়েছি যখন দেশের লাখ লাখ কৃষককুল বিপর্যস্ত দিশেহারা ১৮ কোটি জনসংখ্যা অধ্যুষিত এই দেশে মানুষের খাদ্যের যোগানদাতা কৃষক পরিবারের সার্বিক অবস্থা খুবই নাজুক এবং দুর্বিষহ এর মধ্যে চলতি মৌসুমে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে ভেসে গেছে সিলেট, সুনামগঞ্জ, নেত্রকোণা এবং কিশোরগঞ্জসহ কয়েকটি জেলার হাওরের লাখ লাখ হেক্টর জমির ফসল সেই সঙ্গে ভেসে গেছে প্রান্তিক সেসব জনগোষ্ঠীর বেঁচে থাকার স্বপ্ন হাওর এলাকার সাড়ে ১২ লাখ হেক্টর জমিতে বছরে কেবলমাত্র একটি ফসল হয় কিন্তু পাহাড়ি ঢলের কারণে কোনো বছর সেটি তলিয়ে গেলে সারা দেশে খাদ্য নিরাপত্তা ঝুঁকিতে পড়ে হুমকিতে পড়ে জীবন-জীবিকার স্বাভাবিক প্রক্রিয়া

ফখরুল বলেন, ‘ভারতের চেরাপুঞ্জি থেকে নেমে আসা বৃষ্টির পানি বাংলাদেশের সুনামগঞ্জের যাদুকাটা সুরমা নদী দিয়ে ঢুকে পড়েছে সুনামগঞ্জ জেলায় বছর লাখ ২২ হাজার ৮০৫ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়েছে জেলায় পাহাড়ি ঢলে ফসল রক্ষা বাঁধ ভেঙে হাওরের বোরো ফসলের ক্ষয়ক্ষতি বেড়েই চলেছে পাশাপাশি ঢলের পানির চাপে ভাটি এলাকার বাঁধও এখন ঝুঁকিতে পড়েছে পর্যন্ত সুনামগঞ্জে ১৯টি হাওড়ে বাঁধ ভেঙে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে জেলার তাহিরপুর, শাল্লা, দিরাই, ধর্মপাশা, মধ্যনগর উপজেলায় ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ সবচেয়ে বেশি বছরের একটি মাত্র ফসল পানিতে ডুবে যাওয়ায় এখন সর্বশান্ত দিশেহারা হাওরের কৃষিজীবী মানুষ সংশ্লিষ্ট উপজেলা কৃষি অধিদপ্তর জানিয়েছে, এসব উপজেলায় ৫৫ হাজার ৮০০ হেক্টর জমির ফসল ডুবে গিয়ে পর্যন্ত ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৬০০ কোটি টাকা তবে কৃষকদের উদ্ধৃতি দিয়ে বিভিন্ন গবেষণা সংস্থা, হাওর বাঁচাও আন্দোলন কমিটির নেতা ইউপি চেয়ারম্যানরা জানান, এই ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে নেত্রকোণায় মেঘালয় থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল বৃষ্টির কারণে খালিয়াজুরির ধনু নদীর পানিতে ডুবে গেছে প্রায় ২১ হাজার হেক্টর জমির ফসল

তিনি আরও বলেন, ‘চলতি বছরে সুনামগঞ্জে বাঁধ নির্মাণে সরকারি বরাদ্দ ছিল ১২২ কোটি টাকা গত বছরে এই টাকার পরিমাণ ছিল ৬২১ কোটি টাকা, যা বাঁধ রক্ষায় তেমন কোনো কাজেই আসেনি বরং এই বরাদ্দকৃত টাকা ব্যাপক অনিয়ম লুটপাট হয়েছে আওয়ামী লীগের নেতা-মন্ত্রী-এমপি, সরকারিরী কর্মকর্তা পানি উন্নয়ন বোর্ডের সংশ্লিষ্ট কর্মকতারা এই টাকা ভাগাভাগি করে হরিলুট করেছে যেসব বাঁধ নির্মাণ করা হয়েছে তা এতই দুর্বল যে, মাত্র ২৪ ঘণ্টার পানির চাপ সামাল দিতে পারেনি প্রতি বছর এভাবে বাঁধ নির্মাণের নামে হাওর অঞ্চলে সরকারি অর্থ লুটের মহোৎসব চলে এর ফলে কৃষকরা হয় সর্বশান্ত, অপরদিকে সরকারি দলের লোকজন তাদের আত্মীয়স্বজনরা হয় আঙুল ফুলে কলাগাছ

পরিসংখ্যান তুলে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘সুনামগঞ্জের হাওর বাঁচাও আন্দোলন কমিটির গবেষণা সূত্র অনুযায়ী, বিভিন্ন উপজেলায় ৭২২টি বাঁধের মধ্যে দৈবচয়ন (্যানডম) পদ্ধতিতে ১০৮টি বাঁধের ওপর পরিচালিত জরিপের ফল অনুযায়ী মাত্র শতাংশ বাঁধে মাটির কাজ সম্পন্ন হয়, ঘাস লাগানো হয় মাত্র শতাংশ বাঁধে সংশোধিত কাবিটা (কাজের বিনিময়ে টাকা) নীতিমালা অনুযায়ী ৫০ মিটার দুর থেকে বাঁধ নির্মাণের মাটি আনার কথা থাকলেও ৩৫ শতাংশ বাঁধেই এই নিয়মের তোয়াক্কা করা হয়নি সরকারি হিসাব অনুযায়ী, সুনামগঞ্জে মোট হাজার ৭১৮ কিলোমিটার বাঁধ রয়েছে

বর্তমান অবৈধ সরকারের আমলে সিন্ডিকেট চাঁদাবাজির কারণে কৃষকরা তাদের উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্য মূল্য থেকে বঞ্চিত উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘শুধু দেশের হাওর অঞ্চলই নয়, এই চিত্র দেশের সার্বিক কৃষি খাতের উত্তরাঞ্চলসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের আলু চাষিরা তাদের আলুর ন্যূনতম মূল্য না পেয়ে রাস্তায় আলু ফেলে প্রতিবাদ জানানোর খবরও কেউ ভুলে যায়নি এর আগে কৃষকরা ধানের ন্যায্য মূল্য না পাওয়ার প্রতিবাদে পাকা ধানের জমিতে আগুন লাগিয়ে দিয়েছে কিছু দিন আগে ফসলের জমিতে সেচের পানি না পেয়ে শেরপুরের নালিতাবাড়ীতে ফসলের ক্ষেতে ফাঁসির মঞ্চ বানিয়ে হতাশাগ্রস্ত কৃষক শফিউদ্দিন আত্মহত্যা করে এক মরমান্তিক ইতিহাস সৃষ্টি করে গেছেন একই দাবিতে রাজশাহীর গোদাগাড়ীতে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর কৃষক রবি মারন্ডী অভিনাথ মারন্ডী কীটনাশক পানে আত্মহত্যার কথাও দেশবাসী ভুলে যায়নি

তিনি আরও বলেন, ‘কৃষক বাঁচলে দেশ বাঁচবে দেশের ৬০ থেকে ৭০ ভাগ মানুষ এখনো সরাসরি কৃষির ওপর নির্ভরশীল কৃষি আমাদের অর্থনীতির মূল চালিকা শক্তি কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য, বর্তমান সরকারের আমলে কৃষি কৃষকের ভাগ্য উন্নয়নে তেমন কোনো উদ্যোগ বা তৎপরতা নেই আওয়ামী সরকার জনগণের ভোটে নির্বাচিত নয় বলে জনগণের কাছে তাদের কোনো জবাবদিহিতা নেই তারা সব সময় ক্ষমতা পাকাপোক্ত নিজেদের আখের গোছাতে ব্যস্ত থাকে বলেই জনকল্যাণে কোনো কাজ করে না ফলে তাদের শাসন আমলে বাংলাদেশের কৃষক সমাজ সব সময়ই বঞ্চিত, অবহেলিত উপেক্ষিত থেকেছে

সময় দফা দাবি তুলে ধরেন ফখরুল তিনি বলেন, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী কৃষকদলের সভাপতি সাধারণ সম্পাদকসহ কৃষক দলের একটি প্রতিনিধি দল সম্প্রতি সুনামগঞ্জের ক্ষতিগ্রস্ত হাওরাঞ্চল সরেজমিনে পরিদর্শন কৃষকদের দুর্দশার চিত্র দেখে এসেছেন সরকারি দুর্নীতিরোধ, হাওরের কৃষকদের দুর্দশা লাঘব শস্য নিরাপত্তা রক্ষায় তাদের কিছু সুপারিশ আমি এখন আপনাদের মাধ্যমে জাতির সামনে তুলে ধরছি

দাবিগুলো হলোহাওর রক্ষা বাঁধ নির্মাণে সীমাহীন দুর্নীতি লুটপাট বন্ধ করতে হবে এই দুর্নীতির সঙ্গে জড়িতদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক বিচারের ব্যবস্থা করতে হবে; বছর বছর বাঁধ নির্মাণ না করে সিমেন্ট বালু দিয়ে তৈরিকৃত ব্লক ফেলে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ করতে হবে; ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের বিনা সুদে বিশেষ ঋণের ব্যবস্থা করতে হবে; ঋণগ্রস্ত কৃষকের ঋণের সুদ মওকুফ এবং স্বাভাবিক অবস্থা না ফেরা পর্যন্ত ঋণের কিস্তি নেওয়া বন্ধ করতে হবে; হাওর অঞ্চলে শস্য বীমা চালু করতে হবে; হাওর অঞ্চলের কৃষকের আর্থ-সামাজিক অবস্থা পরিবর্তনের জন্য গণমূখী কর্মসূচি বাস্তবায়ন করতে হবে; দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে প্রাকৃতিক দুর্যোগসহ নানা কারণে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের জন্য রেশনিং ব্যবস্থা চালু করতে হবে এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে বিশেষ প্রকল্প গ্রহণ করতে হবে

যাযাদি/এসএইচ

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে