শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১
ইসির সঙ্গে মতবিনিময়

ইভিএমে জোর অবস্থান শাসক দলের

রাখঢাক করার কিছু নেই। উলেস্নখ্যযোগ্য হারে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিনের (ইভিএম) ব্যবহার বাড়াতে হবে। আমরা ইভিএমের পক্ষে এবং এটি জোরালো ও স্পষ্ট। -ওবায়দুল কাদের
সোহেল হায়দার চৌধুরী
  ২৯ জুন ২০২২, ০০:০০
আপডেট  : ২৯ জুন ২০২২, ১০:৪১

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন কোন পদ্ধতিতে হবে বা ওই নির্বাচন সব দলের অংশগ্রহণে হবে কিনা তা নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা বা হিসাব-নিকাশ শুরু হয়েছে অনেক আগে থেকেই। বর্তমান নির্বাচন কমিশন দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই এ দু'টি বিষয় নিয়ে ব্যাপক আলোচনা চলছে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও নির্বাচন কমিশন আগামী নির্বাচন সুষ্ঠু-নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক করার ওপর গুরুত্ব দিচ্ছে। কিন্তু দেশের অন্যতম দল বিএনপি বরাবরই বলছে, নিরপেক্ষ সরকার ছাড়া নির্বাচনে যাবে না। একই সঙ্গে তারা ইভিএমে নির্বাচন পদ্ধতি নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে। যদিও নারায়ণগঞ্জ ও কুমিলস্না সিটি করপোরেশন নির্বাচনসহ স্থানীয় সরকারের বহু নির্বাচন ইভিএম পদ্ধতিতে অনুষ্ঠিত হয়েছে। এর মধ্যে নারায়ণগঞ্জ সিটি নির্বাচন অধিকাংশ নির্বাচন নিয়ে কোনো প্রশ্ন ওঠেনি। তবে ভোটাররা কিছু সংকটে পড়েছেন বলে জানা গেছে। এর আগে একাদশ সংসদ নির্বাচনে তৎকালীন ইসি ছয়টি আসনে ইভিএম ব্যবহার করে। ওই সময়ও আওয়ামী লীগ ইভিএমের পক্ষে অবস্থান নিয়েছিল। পরস্পরবিরোধী এ পরিস্থিতির মধ্যেও আগামীতে ব্যালট পেপার না ইভিএমে (ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিন) নির্বাচন হবে তা নিয়ে নির্বাচন কমিশন নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে মতবিনিময় করেছে। তিন ধাপে এ আলোচনায় ১৩টি করে দলকে আমন্ত্রণ জানানো হলেও বিএনপিসহ ১২টি দল অংশ নেয়নি। মতবিনিময়ের শেষ ধাপে মঙ্গলবার ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগসহ ১০টি দল অংশ নেয়। ওই বৈঠকে আওয়ামী লীগ, ওয়ার্কার্স পার্টিসহ একাধিক দল ইভিএমের পক্ষে অবস্থান নেয়। এদিনের মতবিনিময়ে শাসকদল আওয়ামী লীগ ইভিএমের পক্ষে কঠোর অবস্থান নিয়ে বলেছে, 'রাখঢাক করার কিছু নেই। উলেস্নখ্যযোগ্য হারে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিনের (ইভিএম) ব্যবহার বাড়াতে হবে। আমরা ইভিএমের পক্ষে এবং এটি জোরালো ও স্পষ্ট।' প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়ালের সভাপতিত্বে শুরু হওয়া মতবিনিময় সভার শুরুতেই স্বাগত বক্তব্য রাখেন সিইসি। রাজনৈতিক দলগুলোর মতামত নেওয়া শুরু হলে প্রথমেই আওয়ামী লীগের প্রতিনিধি দলের পক্ষে দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, আসন্ন সংসদ নির্বাচনে ইভিএমের ব্যবহার উলেস্নখযোগ্য হারে বাড়াতে হবে। জনপ্রিয় ও সহজে ব্যবহারের লক্ষ্যে এখন থেকেই ইভিএমের প্রচার-প্রচারণার উদ্যোগ নিতে হবে।' পরে ওবায়দুল কাদের সাংবাদিকদের বলেন, আমরা মনে করি, দেশে ইভিএম পদ্ধতি অধিকতর জনপ্রিয়। এটি সহজে ব্যবহার করার লক্ষ্যে ইসি এখন থেকেই প্রচার-প্রচারণায় প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করবেন।' ওবায়দুল কাদের বলেন, আওয়ামী লীগ মনে করে, ইসির কার্যক্রমে ইভিএমসহ প্রযুক্তি বৃদ্ধির কারণে স্বচ্ছ ও জবাবদিহিতা বৃদ্ধি পেয়েছে। ইভিএম ব্যবহারের ফলে ভোট ডাকাতি, কেন্দ্র দখল, নির্বাচনে জালিয়াতি ও ভোট চুরি বন্ধ হবে। তিনি আরও বলেন, আওয়ামী লীগ মনে করে সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের জন্য ইসির গ্রহণযোগ্যতা, নিরপেক্ষতা ও সক্ষমতা গুরুত্বপূর্ণ। এ ছাড়া ইসির দায়িত্বশীল নিরপেক্ষ আচরণ ও সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিতের জন্য ইভিএমে ভোটগ্রহণ জরুরি। বর্তমান সরকারের অধীন নয়, বরং ইসির অধীনেই নির্বাচন হবে উলেস্নখ করে সেতুমন্ত্রী বলেন, এ সময় নির্বাচন সম্পর্কিত সব ধরনের কর্তৃত্ব থাকবে স্বাধীন কমিশনের। 'একটা কথা কেউ কেউ বলে থাকে বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচনে যাবে না। বর্তমান সরকারের অধীনে কিন্তু নির্বাচন হচ্ছে না, নির্বাচন হবে ইসির অধীনে। ইসিকে স্বাধীন ও কর্তৃত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনের জন্য বর্তমান সরকার ফ্যাসিলেটেড করবে, সম্পূর্ণ সহযোগিতা আমরা দেব।' বৈঠকে বিতর্কিত কাউকে পর্যবেক্ষক হিসেবে নিয়োগ না দেওয়া এবং প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীদের রিটার্নিং কর্মকর্তা থেকে পোলিং এজেন্ট নিয়োগসহ একগুচ্ছ দাবি তুলে ধরে আওয়ামী লীগ। বৈঠকে আমন্ত্রণ পাওয়া ১৩ দলের মধ্যে ১০টি দলের প্রতিনিধি অংশ নেন। দলগুলো হলো- বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশন, বাংলাদেশের সাম্যবাদী দল-এমএল, গণতন্ত্রী পার্টি, বাংলাদেশ ওয়ার্কার্স পার্টি, বিকল্প ধারা বাংলাদেশ, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ, বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি- ন্যাপ, বাংলাদেশ বিপস্নবী ওয়ার্কার্স পার্টি ও বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তিজোট। তবে, আমন্ত্রণ পেয়েও ৪টি দল বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টি, লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি-এলডিপি, বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল- বাসদ বৈঠকে অংশ নেয়নি। এদিকে গত ২১ জুন আমন্ত্রণ পাওয়া গণফোরামের প্রতিনিধিও বৈঠকে অংশ নেন মঙ্গলবার। এর আগে দুই ধাপে ২৬টি রাজনৈতিক দলকে সংলাপে আমন্ত্রণ জানায় ইসি। গত ১৯ ও ২১ জুন দুই ধাপে ২৬টি রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিকে ইভিএম যাচাই বিষয়ক সভা করে ইসি। এই দুই ধাপে ১৮টি দল উপস্থিত থাকলেও সাড়া দেয়নি বিএনপিসহ অন্য আটটি দল।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে