বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

একক প্রার্থীতে নজর আ'লীগ বিএনপি ও জামায়াতের

আরিফ আহমেদ সিদ্দিকী, পাবনা
  ৩০ জানুয়ারি ২০২৩, ১২:৫৪

পাবনা-৫ আসন মূলত জেলা সদরের আসন। এই আসনের নির্বাচনী হিসেব-নিকেশ সবসময় একটু ভিন্ন হয়। দলীয়ভাবেও ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা চলে এ আসন ঘিরে। ক্ষমতাসীন দলের নির্বাচিত সংসদ সদস্য বরাবরই মাঠে আছেন এবং নির্বাচনী এলাকার প্রতিটি ইউনিয়ন, গ্রাম, পাড়া ও মহলস্নায় বিচরণ করছেন।

আসনটিতে বিএনপি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে কি না এ নিয়ে রয়েছে দ্বিধাদ্বন্দ্ব। তারপরও দু-একজন শীর্ষ নেতার নাম নেতাকর্মীদের মুখে ঘুরে ফিরছে। অন্যদিকে সুকৌশলে ও প্রকাশ্য মন্থরগতিতে নির্বাচনী মাঠ তৈরি করছে জামায়াতে ইসলামী। আর নির্বাচনে অংশগ্রহণের কথা জানান দিচ্ছে জাতীয় পার্টি, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি। নির্বাচনী প্রচার প্রচারণা না থাকলেও আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে ইতোমধ্যে চায়ের দোকান, আড্ডাখানায় চলছে রসালো আলাপচারিতা।

আওয়ামী লীগ ও বিএনপির কে হচ্ছেন আসন্ন নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী এ নিয়েও বেশ বাক চর্চা শুরু হয়েছে, গরম চায়ের ঝড়ের সঙ্গে সকালের রোদ্দুর গ্রহণকারী মানুষগুলোর মধ্যে। পাবনা সদর আসনটি ১০টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা নিয়ে গঠিত। রাজনীতিতে এটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ আসন। আসনটিতে আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জামায়াত তিন দলেরই রয়েছে ভোট ব্যাংক।

১৯৯১ সালে আওয়ামী লীগের রফিকুল ইসলাম বকুল ও বিএনপির অ্যাডভোকেট আবুল আহসানকে হারিয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থী (যুদ্ধাপরাধের দায়ে মৃতু্যদন্ডপ্রাপ্ত) মাওলানা আব্দুস সোবহান। ১৯৯৩ সালে আওয়ামী লীগ থেকে বিএনপিতে যোগ দেন রফিকুল ইসলাম বকুল। পরে ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের এ কে খন্দকার ও জামায়াতে ইসলামীর মাওলানা আব্দুস সোবহানকে পরাজিত করে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন বিএনপির রফিকুল ইসলাম বকুল।

২০০০ সালের নির্বাচনে রফিকুল ইসলাম বকুল মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেলে চারদলীয় জোট থেকে জামায়াত নেতা মাওলানা আব্দুস সোবহানকে মনোনয়ন দেওয়া হয়। তিনি আওয়ামী লীগের ওয়াজি উদ্দিন খানকে হারিয়ে সংসদ সদস্য হন। ২০০৮ সালে মাওলানা আব্দুস সোবহানকে হারিয়ে চমক দেখান আওয়ামী লীগের সাবেক জনপ্রিয় ছাত্রনেতা গোলাম ফারুক প্রিন্স। ২০১৪ সালে তিনি আবারও বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় এমপি নির্বাচিত হন। একইভাবে ২০১৮ সালের একাদশ সংসদ নির্বাচনে চারদলীয় জোটের ধানের শীষের প্রার্থী জামায়াতে ইসলামীর নেতা অধ্যক্ষ মুহাম্মদ ইকবাল হোসাইনকে হারিয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী গোলাম ফারুক প্রিন্স।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চাইবেন এবং প্রার্থী হবেন বর্তমান সংসদ সদস্য, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম ফারুক প্রিন্স। বীর মুক্তিযোদ্ধা প্রয়াত রফিকুল ইসলাম বকুলের মৃতু্যর পর এ পর্যন্ত প্রায় সব নির্বাচনেই প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়েছে জোটগত জামায়াত প্রার্থী আর আওয়ামী লীগের মধ্যে। এ আসন থেকে একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলায় মৃতু্যদন্ডপ্রাপ্ত জামায়াতের প্রয়াত নায়েবে আমির মাওলানা আব্দুস সোবহান নিজ দল ও জোট থেকে পাঁচবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন।

জামায়াত ইসলামীর নেতাকর্মীরা মনে করেন, এই আসনটি সারা দেশের মধ্যে জামায়াতের অন্যতম দুর্গ। ফলে জোটগত হোক আর এককভাবে হোক; আসনটিতে জামায়াতের প্রার্থী আশা করেন তারা। আব্দুস সুবহানের মৃতু্যদন্ড কার্যকর হওয়ার পর এই আসনটির হাল ধরতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন পাবনা জেলা জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা মুহাম্মদ ইকবাল হোসাইন। নিজের গ্রহণযোগ্যতা জানান দিতে ইতোমধ্যে তিনি উপজেলা নির্বাচন ও পৌর নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছিলেন। কিন্তু দুই নির্বাচনেই আওয়ামী লীগ প্রার্থীর কাছে ধরাশায়ী হয়েছেন।

এদিকে বিএনপির কোনো নেতা প্রার্থী হিসেবে আত্মপ্রকাশ না করলেও দলীয়ভাবে একক প্রার্থী হিসেবে নাম শোনা যাচ্ছে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার বিশেষ সহকারী অ্যাডভোকেট শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাসের। এ জেলায় বিএনপির রাজনীতিতে কিছুটা কোন্দল রয়েছে। যে কারণে একটি গ্রম্নপ একক প্রার্থী হিসেবে শিমুল বিশ্বাসকে দাবি করলেও অপর গ্রম্নপ আরও দু-একজনের নাম বলছেন। তারাও এ আসন থেকে মনোনয়ন চাইবেন বলে দাবি করছেন ওই গ্রম্নপটি।

এদিকে জেলা কাউন্সিল হওয়ার পর থেকে সদর আসনে আওয়ামী লীগের আসন অনেকখানি শক্ত হয়ে গেছে। বর্তমান সংসদ সদস্য গোলাম ফারুক প্রিন্স এবারও আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চাইবেন এটা নিশ্চিত করেছেন তার বিশ্বস্তজনেরা। দলে প্রকাশ্য কোনো দলাদলি নেই। দলটির সিনিয়র নেতারা মনে করেন, প্রকাশ্য দলাদলি বা কোন্দল না থাকায় এই আসনে মনোনয়ন নিয়ে দলীয় নেতাদের মধ্যে বিভেদ বা দূরত্ব সৃষ্টি হওয়ার আশঙ্কা নেই। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বর্তমান সংসদ সদস্য গোলাম ফারুক প্রিন্সের মনোনয়ন প্রাপ্তিকে একরকম নিশ্চিতই ধরে রেখেছেন তারা। তবে প্রিন্সকে খালি মাঠে গোল দিতে নারাজ দলের কিছু তরুণ ও প্রবীণ নেতা। নৌকার মাঝি হতে দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশা করছেন কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ নেতা, দুদকের সাবেক কমিশনার সাহাবুদ্দিন চুপপু।

এছাড়াও পাবনা সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ মোশারফ হোসেন, সাধারণ সম্পাদক সোহেল হাসান শাহীনসহ কয়েকজনের নাম শোনা যাচ্ছে। অন্যদিকে আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর বাইরেও প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে মাঠে থাকবেন জেলা জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল কাদের কদর, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি কমরেড জাকির হোসেন ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের পাবনা জেলা শাখার সভাপতি সহকারী অধ্যাপক মোহাম্মদ আরিফ বিলস্নাহ। কারাগারে থাকায় দলীয় নেতাকর্মীদের প্রত্যাশিত বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী অ্যাডভোকেট শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাসের বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি। তবে জেলা বিএনপির একাধিক শীর্ষ নেতা দাবি করছেন, বিএনপি যদি নির্বাচনে যায় তাহলে শিমুল বিশ্বাস প্রার্থী হবেন এমনটি নিশ্চিত।

এ ছাড়াও জাতীয় পার্টি, জামায়াতে ইসলামী, ওয়ার্কার্স পার্টি ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থীরা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবেন। আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, বর্তমান সংসদ সদস্য গোলাম ফারুক প্রিন্স বলেন, 'টানা তিনবার সংসদ সদস্য হিসেবে এ আসনের জনগণের সেবা করে আসছি। দলীয় প্রধানের কাছে এবারও নৌকা প্রতীক চাইব। দল আমাকে মনোনয়ন দিলে আমি আশাবাদী আমার আসনের সর্বস্তরের মানুষের ভালোবাসায় আবারও নির্বাচিত হয়ে সেবা করার সুযোগ পাব।

যাযাদি/ এস

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে