নেত্রকোনা-৩ আসনে আ’লীগ-বিএনপিতে একাধিক প্রার্থী

প্রকাশ | ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ১০:০৬

চন্দন চক্রবর্তী, স্টাফ রিপোর্টার, নেত্রকোনা
ছবি-যাযাদি

নেত্রকোনার কেন্দুয়া ও আটপাড়া উপজেলা নিয়ে গঠিত নেত্রকোনা-৩ আসনে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগ এবং বিএনপির একাধিক মনোনয়ন প্রত্যার্শী প্রার্থীর এলাকায় তৎপরতা শুরু হয়েছে। প্রার্থীদের ছবি সম্বলিত ব্যানার, ফেস্টুন শোভা পাচ্ছে দুই উপজেলা সদর থেকে শুরু করে প্রত্যন্ত অঞ্চলের হাটবাজারেও। দেশের বড় দুই রাজনৈতিক দল থেকে কে পাচ্ছেন দলীয় মনোনয়ন এনিয়ে সরব আলোচনা শুরু হয়েছে । দীর্ঘদিন ধরেই দলীয় মনোনয়ন চাওয়াকে কেন্দ্র করে আ’লীগ এবং বিএনপির অভ্যন্তরে কোন্দল রয়েছে। 

স্থানীয় ও দলীয় সুত্রে জানা গেছে, এ আসনে আওয়ামীলীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী প্রার্থীদের মধ্যে আলোচনায় রয়েছেন বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সাংস্কৃতিক সম্পাদক ৯০’র গণআন্দোলনের অন্যতম সাবেক ছাত্রনেতা অসীম কুমার উকিল এমপি, সাবেক এমপি বিশিষ্ট শিল্পপতি ইফতিকার উদ্দিন তালুকদার পিন্টু, জেলা আওয়ামীলীগের সাবেক সহ-সভাপতি সাবেক এমপি মঞ্জুর কাদের কোরায়শী, বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ কেন্দ্রীয় উপ-কমিটির সাবেক সহ-সম্পাদক সাবেক ছাত্রনেতা অ্যাডভোকেট মো. আব্দুল মতিন। বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী প্রার্থীরা হলেন, জেলা বিএনপির সাবেক উপদেষ্টা ও জিয়া মঞ্চ কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি বিশিষ্ট শিল্পপতি রোটরিয়ান এম. নাজমুল হাসান, কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সম্মানিত সদস্য ও জেলা বিএনপির সদস্য সচিব ড. রফিকুল ইসলাম হিলালী, জেলা বিএনপির আহবায়ক কমিটির সদস্য ও সাবেক কেন্দুয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. দেলোয়ার হোসেন ভুইয়া দুলাল। জাতীয় পার্টির একক হেভিওয়েট প্রার্থী হিসেবে আলোচনায় রয়েছেন কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক জসীম উদ্দিন ভুইয়া। 

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জেলার গুরুত্বপূর্ন এ আসনে জননেত্রী শেখ হাসিনার স্নেহধন্য ৯০’র গণআন্দোলনের অন্যতম সাবেক ছাত্রনেতা অসীম কুমার উকিল এমপি নৌকা প্রতিকে বিপুল ভোটে জয়লাভ করেন। কেন্দুয়া-নেত্রকোনা সড়ক প্রশস্তকরণে শতকোটি টাকা বরাদ্ধসহ দুই উপজেলায় শিক্ষার প্রসারে স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসার আধুনিক ভবন নির্মাণ, স্বাস্থ্যসেবা খাতের উন্নয়ন, অসংখ্য ব্রীজ, কালভাট নির্মাণসহ এলাকায় অবকাঠামোগত ব্যাপক উন্নয়ন কাজের বাস্তবায়ন করেছেন। করোনাকালীন সময়ে কেন্দুয়া-আটপাড়াবাসীর পাশে থেকে সার্বিক সহযোগিতা প্রদানকালে অসীম কুমার উকিল এমপি এবং তার সহধর্মীণি সাবেক এমপি অধ্যাপিকা অপু উকিল দুইবার করোনায় আক্রান্ত হন। ওই সময় নির্বাচনী এলাকাসহ জেলার বিভিন্ন মন্দির, উপাসনালয়ে তাদের রোগমুক্তি কামনায় বিশেষ প্রার্থনা হয়েছে। বিগত নির্বাচনে জয়লাভের পর থেকে অসীম কুমার উকিল দম্পত্তি দুই উপজেলায় আ’লীগের তৃনমূলের নেতাকর্মীদের মূল্যায়নসহ জেলার প্রতিটি প্রাকৃতিক দূর্যোগে মানবিক সহায়তা প্রদান অব্যাহত রেখেছেন। কেন্দুয়াস্থ সাংসদের উকিল বাড়িতে নিয়মিত নেতাকর্মীদের সাথে মতবিনিময় এবং এলাকার উন্নয়নে করনীয় সম্পর্কে অসীম কুমার উকিল এমপি সকলকে দিকনির্দেশনা প্রদান করছেন। সাবেক ছাত্রনেতা অসীম কুমার উকিল এমপি ১৯৮০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় হতে পরিসংখ্যান বিভাগে বি.এস.সি এবং একই বিশ^বিদ্যালয় হতে ১৯৮১ সালে এম.এস.সি ডিগ্রী লাভ করেন। অসীম কুমার উকিল এমপি ১৯৭৮ সালে জগন্নাথ হল শাখা ছাত্রলীগের প্রচার সম্পাদক, ১৯৮০ সালে ডাকসুর নির্বাচিত সদস্য, ১৯৮১ সালে জগন্নাথ হল শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি, ১৯৮৩ সালে ঢাকা বিশ^বিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের যুগ্ম আহবায়ক, ১৯৮৪ সালে ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-প্রচার সম্পাদক এবং ১৯৮৬ সালে প্রচার সম্পাদক, ১৯৮৯ সালে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাধারন সম্পাদক, ১৯৯৩ সালে আওয়ামীলীগ কেন্দ্রীয় উপ-কমিটির সহ-সম্পাদক, ২০০২ সাল থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত  বাংলাদেশ আ’লীগের টানা উপ-প্রচার সম্পাদক এবং পরবর্তীতে কেন্দ্রীয় আ’লীগের সাংস্কৃতিক সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। বিগত ২০০২ সালে বিএনপি-জামাত জোট সরকারের সময়ে অসীম কুমার উকিল গ্রেপ্তার হয়ে অমানুষিক নির্যাতনের শিকার হয়ে দীর্ঘদিন কারাবরণ এবং ২০০৭ সালের ১/১১ চলাকালীন পুনরায় গ্রেপ্তার হয়ে ৭ মাস কারাবণ করেছেন। সাবেক ছাত্রনেতা অসীম কুমার উকিল এমপি ইতিমধ্যে প্রধানমন্ত্রীর সফর সঙ্গী হিসেবে জাপান, ছাত্রনেতা হিসেবে চেকোশ্লভিকিয়া এবং ভারত, আওয়ামীলীগ নেতা হিসেবে চীন, ভারত, বৃটেন, অষ্ট্রেলিয়া, কানাডা, জার্মানী, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স, সুইজারল্যান্ড, ইটালী, বেলজিয়াম, নেদারল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, শ্রীলংকা ভ্রমন করেছেন। 
 এ আসনে আ’লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী সাবেক এমপি বিশিষ্ট শিল্পপতি ইফতিকার উদ্দিন তালুকদার পিন্টু দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এ আসনে জয়লাভ করেন্  তিনি নির্বাচিত হয়ে এলাকায় অসংখ্য রাস্তাঘাট, ব্রীজ-কালভাট, বিদ্যুতায়নসহ শিক্ষার প্রসার এবং স্বাস্থ্যখাতের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ন অবদান রেখেছেন।  

এ আসনে আ’লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী জেলা আ’লীগের সাবেক সহ-সভাপতি সাবেক এমপি মঞ্জুর কাদের কোরায়শী ১৯৬৮ সালে ছাত্রলীগের রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হন। তিনি ১৯৭২ সালে ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি, ১৯৭৪ সালে জেলা ছাত্রলীগের কোষাধ্যক্ষ, ১৯৭৭ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় স্যার এফ রহমান হল শাখা ছাত্রলীগের সাধারন সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। বিগত ২০০৮ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এ আসনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে তিনি এলাকার রাস্তাঘাট, স্কুল কলেজসহ বিভিন্ন খাতের ব্যাপক উন্নয়ন কাজ করেছেন। 
    
এ আসনে আ’লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী কেন্দ্রীয় আ’লীগ উপ-কমিটির সাবেক সহ-সম্পাদক সাবেক ছাত্রনেতা অ্যাডভোকেট আব্দুল মতিন। তিনি বিগত ২০০৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পূর্বে তৃনমূল থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশী ৫ জনের মধ্যে তিনি নির্বাচিত হন। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে সাবেক ছাত্রনেতা অ্যাডভোকেট আব্দুল মতিন এলাকায় ঘন ঘন জনসংযোগ করছেন। 

এ আসনে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী কেন্দুয়ার কৃতিসন্তান জেলা বিএনপির সাবেক উপদেষ্ঠা রোটারিয়ান এম. নাজমুল হাসান বিগত দুইটি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির মনোনয়ন চেয়েছিলেন। তিনি ১৯৯৬ সালে ঢাকা বিশ^বিদ্যালয় থেকে এম.এস.সি এবং ২০০৪ সালে স্ট্যামফোর্ড ইউনির্ভাসিটি থেকে এম.বি.এ ডিগ্রী লাভ করেন। আর্ন্তজাতিক সেবামূলক প্রতিষ্ঠান রোটারি ইন্টারন্যাশনাল, ঢাকা চেম্বার অব কমার্সের সদস্য ডাইনামিক গ্রুপ অব কোম্পানিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রোটারিয়ান এম নাজমুল হাসান বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদের সার্বিক সহযোগিতার পাশাপাশি এলাকায় শিক্ষার প্রসারে  কাজ করে যাচ্ছেন। বৃহত্তর ময়মনসিংহের বিভাগীয় গণসমাবেশে সকল প্রতিবন্ধকতা উপেক্ষা করেই মনোনয়ন প্রত্যাশী এম.নাজমুল হাসানের নেতৃত্বে কর্মী সমর্থকরা বিশাল শোডাউন করে সমাবেশে যোগদান করার মিছিলটি ওইদিন বিভিন্ন চ্যানেলে প্রচার-প্রচারনাসহ ব্যাপক আলোচনার সৃষ্টি করে। জিয়া মঞ্চ কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি রোটরিয়ান এম. নাজমুল হাসান ১৯৯২ সালে তেজগাঁও কলেজ শাখা ছাত্রদলের ভারপ্রাপ্ত সাধারন সম্পাদক হিসেবে সফলভাবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি ব্যাক্তিগত তহবিল হতে সম্প্রতি নির্বাচনী এলাকার দুই উপজেলায় প্রায় ৬ হাজার অসহায় শীতার্থ মানুষের মাঝে কম্বল বিতরন এবং বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা নাজমুল-আইরিন ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে প্রায় ৩০ লক্ষ টাকা অসহায়দের মাঝে বিতরন করেছেন। 

   এ আসনে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সম্মানিত সদস্য ও জেলা বিএনপির সদস্য সচিব ড. রফিকুল ইসলাম হিলালী বিগত অষ্টম এবং দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ধানের শীর্ষ প্রতিকে প্রতিদ্বন্ধিতা করেছেন। তিনি অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জেলার ৫টি আসনে বিএনপি প্রার্থীদের মধ্যে সর্বোচ্চ ভোটপ্রাপ্ত হয়েছিলেন। সাবেক ছাত্রনেতা ড. রফিকুল ইসলাম হিলালী চট্রগ্রাম বিশ^বিদ্যালয় ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি এবং কেন্দুয়া উপজেলা বিএনপির সাবেক সফল সভাপতি। তিনি নির্বাচনী এলাকার কেন্দুয়া এবং আটপাড়ায় বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদের মাঝে শহীদ জিয়াউর রহমানের আদর্শের একজন পরীক্ষিত সৈনিকের ভুমিকা রেখে চলেছেন। বার বার নির্যাতিত সাবেক ছাত্রনেতা ড. রফিকুল ইসলাম হিলালী কেন্দুয়ায় পুলিশ এসল্ট থেকে শুরু করে একাধিক মামলার আসামী হয়ে বেশ কয়েকবার কারাবরণ করেছেন। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ড. রফিকুল ইসলাম হিলালী বিএনপিকে সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী করার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছেন। তিনি বিগত নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চারদলীয় ঐক্যজোটের প্রার্থী হিসেবে জেলার ৫টি আসনের মধ্যে সর্বোাচ্চ ভোটপ্রাপ্ত এবং বৃহত্তর ময়মনসিংহ অঞ্চলে নবম স্থান লাভ করেন। কেন্দুয়া এবং আটপাড়া উপজেলার তৃনমূলে দলের নেতা এবং কর্মীদের মাঝে কেন্দ্রীয় বিএনপি নেতা ড. রফিকুল ইসলাম হিলালী বেশ জনপ্রিয়। 

এ আসনে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী জেলা বিএনপির সাবেক সহ-সভাপতি ও কেন্দুয়া উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারন সম্পাদক মো. দেলোয়ার হোসেন ভুইয়া দুলাল। তিনি কেন্দুয়া ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক দুইবারের চেয়ারম্যন, ১৯৯০ সালে কেন্দুয়া উপজেলা পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান, ২০০৫ সালে কেন্দুয়া পৌরসভার মেয়র, ২০১৪ সালে কেন্দুয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। 

এ আসনে জাতীয় পার্টির হেভিওয়েট প্রার্থী হিসেবে বেশ সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছেন কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক জসীম উদ্দিন ভুইয়া। তিনি এলাকায় ঘন ঘন যাতায়াত করছেন।  

যাযাদি/ এস