বিসিসির নৌকার নির্বাচনী পরিচালনা কমিটি গঠন, স্থান পায়নি সাদিক আব্দুল্লাহর অনুসারীরা

প্রকাশ | ০১ মে ২০২৩, ১৯:৪৪

বরিশাল অফিস

আসন্ন বরিশাল সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে নির্বাচন পরিচালনা কমিটির তালিকা প্রকাশ করেছেন নৌকার প্রার্থী আবুল খায়ের আব্দুল্লাহ ওরফে খোকন সেরনিয়াবাত। প্রার্থীর স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এ তথ্য নিশ্চিত হওয়া গেছে। যেখানে ১৬ সদস্যর পরিচালনা কমিটি গঠন করা হয়েছে। তবে পরিচালনা কমিটির অধিকাংশ সদস্যই নেই জেলা বা মহানগর আওয়ামীলীগ কমিটিতে। মেয়র সাদিক আবদুল্লাহ অনুসারীরা নির্বাচনী কার্যক্রমে জড়িত না হওয়ায় বর্তমান কমিটির সদস্যরা বাদ পড়েছেন বলে একাধিক সূত্র জানিয়েছে।

বলা হয় প্রায় একই সময় অনুষ্ঠিতব্য সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের মধ্যে বরিশাল সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন পুরো দেশবাসীর কাছে আলাদা চমক নিয়ে এসেছে। কেননা এখানকার বর্তমান মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ তিনি একদিকে যেমন বঙ্গবন্ধুর নাতি তেমনি অন্যদিকে আওয়ামীলীগের একজন প্রভাবশালী রাজনীতিবিদ আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহর ছেলে।  কিন্তু আগামী নির্বাচনে বর্তমান এই মেয়রকে না দিয়ে দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনা প্রার্থী হিসেবে তারই (সাদিক আব্দুল্লাহ) চাচা আবুল খায়ের আবদুল্লাহ ওরফে খোকন সেরনিয়াবাতকে মনোনয়ন দেন। যা দেশব্যাপী আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিনত হয়।

মনোনয়ন পেয়ে খোকন সেরনিয়াবাত বরিশালে আসলেও এখনও আসেননি বর্তমান মেয়র সাদিক আবদুল্লাহ। খোকন সেরনিয়াবাতের নির্বাচনী প্রস্তুতি শুরু হলেও কোথাও দেখা মেলেনি সাদিক আবদুল্লাহ অনুসারী নেতাকর্মীদের। যা খোকন সেরনিয়াবাতের নির্বাচন পরিচালনা কমিটিতেও এর প্রতিফলন পড়েছে। একদিন আগে প্রকাশ পাওয়া নির্বাচন পরিচালনা কমিটি থেকে জানা গেছে, ১৬ সদস্য বিশিষ্ট হয়েছে এ কমিটি।

এরা হলেন, এ্যাডভোকেট কে বি এস আহম্মেদ কবীর, বরিশাল আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট লস্কর নুরুল হক, মহানগর আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট আফজালুল করিম, অ্যাডভোকেট আনিস উদ্দিন আহমেদ শহীদ, শহর আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মীর আমিন উদ্দিন মোহন, রেজাউল হক হারুন, বরিশাল জেলা শ্রমিক লীগ সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা শাহজাহান হাওলাদার, মহানগর যুবলীগের আহ্বায়ক নিজামুল ইসলাম নিজাম, মহানগর শ্রমিক দলের সভাপতি আফতাব হোসেন, সাবেক ছাত্রনেতা অ্যাডভোকেট বলরাম পোদ্দার, মো. হুমায়ুন কবির, মহানগর যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক মাহমুদুল হক খান মামুন, যুগ্ম আহ্বায়ক শাহীন সিকদার, মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক অসীম দেওয়ান, সাবেক সভাপতি জসিম উদ্দিন ও বরিশাল সরকারি ব্রজমোহন (বিএম) কলেজ ছাত্র কর্মপরিষদের ভিপি মঈন তুষার। আওয়ামীলীগের দলীয় বেশ কয়েকজন নেতা জানিয়েছেন এ কমিটির তালিকায় থাকা সদস্যরা সাদিক আবদুল্লাহ মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পর রাজনৈতিকভাবে কোনঠাসা ছিলেন। তাই তাদের মুল্যায়িত করেই আগামী নির্বাচনে আওয়ামীলীগের মনোনীত প্রার্থী খোকন সেরনিয়াবাত তার নির্বাচনী পরিচালনা কমিটি গঠন করেছেন। জানা গেছে, নির্বাচন পরিচালনা কমিটির প্রথম সদস্য অ্যাডভোকেট কে বি এস আহম্মেদ কবীর বিগত সময় বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও সাবেক মেয়র প্রয়াত শওকত হোসেন হিরনের প্রধান নির্বাচনী এজেন্ট ছিলেন। শুধু তিনিই নন এদের মধ্যে বেশিরভাগই সাবেক মেয়র প্রয়াত শওকত হোসেন হিরনের ঘনিষ্টজন ছিলেন।

কমিটিতে স্থানীয় আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতাদের নাম না থাকার বিষয়ে জানতে চাইলে নৌকার প্রার্থী আবুল খায়ের আব্দুল্লাহ ওরফে খোকন সেরনিয়াবাত বলেন, এখানে আমি কোনো বিভাজন বা কাউন্টার পার্ট করতে চাই না। জননেত্রী শেখ হাসিনা আমাকে মনোনায়ন দিয়েছেন। যারা নির্বাচনী কাজে এখনও আসেননি তাদের কিভাবে রাখবো। তারা যদি আসেন অবশ্যই সবাই মিলে নির্বাচনী কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে। তিনি আরো বলেন, আমাকে তো নির্বাচন পরিচালনা করতে হবে, সেজন্য আমার একটি কমিটি দরকার। নির্বাচন পরিচালনা করতে গেলে অনেক রকম কাজ আছে, সেখানে তো একজন প্রার্থী হয়ে আমার একার পক্ষে সব করা সম্ভব না। আমাকে একটি কাঠামো তৈরি করতেই হবে।  

সাদিক আবদুল্লাহ অনুসারী কাউকে খোকন সেরনিয়াবাতের নির্বাচনী পরিচালনায় না দেখা গেলেও বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট কে এম জাহাঙ্গীরকে শুরু থেকেই নৌকার প্রার্থীকে সংবর্ধনা ও প্রধান নির্বাচনী কার্যালয়ের অনুষ্ঠানে দেখা গেছে। এছাড়া সর্বশেষ ঢাকায় থেকে বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে একটি ভিডিও কনফারেন্সে তিনি বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী যে সিদ্ধান্ত দিয়েছেন এবং নৌকার মনোনায়ন যাকে দিয়েছেন আমরা তার পাশে থাকব। আমরা নির্বাচন পরিচালনা কর্মকাণ্ড থেকে বিরত নেই, যার যার মতো করে নৌকার পক্ষে ভোট দেওয়ার জন্য সবাইকে বলছি। তিনি আরো বলেন, আমরা আগেই বলেছি জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ সবাইকে নিয়ে একত্রিত হয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবো। যেখানে এ নির্বাচনে আমরা বিজয়ের লক্ষ্যে কীভাবে কর্মকাণ্ড পরিচালনা করবো সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে। যৌথ সভার সিদ্ধান্তের মাধ্যমে সাংগঠনিকভাবে আমরা নির্বাচন পরিচালনায় মাঠে নেমে পড়বো। আমরা আওয়ামী লীগে যারা আছি তারা ঐক্যবদ্ধ থাকলে কেউ পরাজিত করতে পারবে না।

যাযাদি/ এস