বরিশালের ৩০ ওয়ার্ডে দুই মেয়র অনুসারী ছাত্রলীগের ৬০ কমিটি

প্রকাশ | ১৩ জুলাই ২০২৩, ২২:৩৬ | আপডেট: ১৩ জুলাই ২০২৩, ২২:৪৩

বরিশাল অফিস

বরিশালে মহানগর ছাত্রলীগের কমিটি না থাকলেও নগরীর ৩০ টি ওয়ার্ডে একযোগে কমিটি দিয়েছেন সদ্য বিলুপ্ত মহানগর কমিটির নেতৃবৃন্দ। অন্যদিকে এর আগে নগরীর ৩০ টি ওয়ার্ড ও বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়সহ চার কলেজে ছাত্রলেিগর কমিটি ঘোষনা দেয় নবনির্বাচিত মেয়র খোকন সেরনিয়াবাত অনুসারী ছাত্রলগি নেতৃবৃন্দ।

বরিশাল মহানগর ছাত্রলীগের কমিটি নেই, কার্যকারীতাও নেই। তারপরও ছাত্রলীগের নামে গত কয়েকদিন বিবাদমান দুইপক্ষের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছে। তারা যে যার মতো করে নগরীর ওয়ার্ড ও কলেজ শাখার কমিটি ঘোষণা দিচ্ছেন। বরিশাল ব্রজমোহন কলেজেই পৃথক ১১টি কমিটি ঘোষনা দেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। কমিটি ঘোষনার পর অভিনন্দন ও প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে হুংকার দিয়ে ষ্টাটাস দেয়া হচ্ছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।

জানা গেছে, ছাত্রলীগ নিয়ে বিবাদমান দুইপক্ষের একপক্ষ গত ১৫ মে বিলুপ্ত হওয়া মহানগর ছাত্রলীগের নেতারা। তারা সিটি মেয়র ও মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহর সমর্থক। অপরপক্ষ নবনির্বাচিত মেয়র আবুল খায়ের আবদুল্লাহ সমর্থক ছাত্রলীগ নেতা। সেইসব ছাত্রলেিগর নেতৃত্ব যারা দিচ্ছেন তারা ২০১২ সাল থেকে ছাত্রলীগের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। তৎকালীন প্রয়াত মেয়র শওকত হোসেন হিরন অনুসারী ছিলেন তারা। ২০১৮ সালে সদিক আবদুল্লাহ মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পর হিরণ সমর্থক ছাত্রলীগ নেতারা কোনঠাসা হয়ে রাজনীতিতে নিস্ক্রীয় ছিলেন। খোন সেরনিয়াবাত মেয়র নির্বাচিত হওয়ার নতুন করে উজ্জীবিত সাবেক এই ছাত্রলীগ নেতারা।  

খোকনপন্থী সাবেক ছাত্রলীগ নেতাদের অভিযোগ, নির্বাচনের পর সাদিক আবদুল্লাহ নগর রাজনীতি নিয়ন্ত্রনে রাখার উদ্দেশ্যে বিলুপ্ত ছাত্রলীগ নিয়ে নতুন ষড়যন্ত্র করছেন। বিলুপ্ত কমিটির আহ্বায়ক রইছ আহমেদ মান্না ও যুগ্ন আহ্বায়করা পেছনের তারিখে (বিলুপ্ত হওয়ার আগে) স্বাক্ষর দেখিয়ে কিছুদিন আগে ৩ নম্বর ওয়ার্ড কমিটি ঘোষণা দেন। এরপরেই নড়েচড়ে বসে খোকনপন্থী ছাত্রলীগ নেতারা। বিএম কলেজ ছাত্র সংসদের সাবেক ভিপি মঈন তুষার তার ফেসবুক পেজে সাদিক আবদুল্লাহকে ইঙ্গিত করে লিখেন, ‘ব্যাক ডেটে কমিটি দেওয়ার চেষ্টা করলে মহানগর আওয়ামী লীগ কমিটিও থাকবেনা’।

মঈন তুষার বলেন, সাদিক অনুসারীরা ভুয়া কমিটি গঠন করে বিএম কলেজ, হাতেম আলী কলেজ, বরিশাল কলেজ, পলিটেকনিক কলেজসহ ৩০টি ওয়ার্ড কমিটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশ করেছে। এর জবাবে সকল ওয়ার্ড ও কলেজ শাখায় পাল্টা কমিটি দেয়া হয়েছে। মুলত দুইপক্ষের কারো কমিটিরই বৈধতা নেই। প্রতিপক্ষকে চাপে রাখতে তারা যে যার মতো ওয়ার্ড ও কলেজ কমিটি ঘোষণা দিচ্ছে। এনিয়ে অস্থিরতা চলছে।

বিএম কলেজ ছাত্র কর্মপরিষদের সাবেক ক্রীড়া সম্পাদক ফয়সাল আহমেদ মুন্না বলেন, সাদিক অনুসারী বিলুপ্ত ছাত্রলীগ নেতারা ভুয়া কমিটি দিচ্ছেন। পাল্টা প্রতিক্রিয়া দেখালে এখন ফেসবুকে কমিটি দেয়া হচ্ছে।  বিএম কলেজে এস.আর আকাশকে আহ্বায়ক ও সোহানকে সদস্য সচিব করে কমিটি দিয়েছে সাদেকপন্থীরা। খোকনপন্থীরা রিফাত ও কামরুলকে যথাক্রমে আহ্বাযক ও সদস্য সচিব করে পাল্টা কমিটি ঘোষণা দেয়। খোকনপন্থী আরও কয়েকজন সাবেক ছাত্রলীগ নেতা নিজ অনুসারীদের নিয়ে পাল্টা কমিটি দেয়ায় এখন কমিটির সংখ্যা দাড়িয়েছে ১১টি। ওয়ার্ডগুলোতেও একই ঘটনা ঘটেছে বলে জানান মুন্না।

এসব বিষয়ে সাদিক অনুসারী বিলুপ্ত মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক আহ্বায়ক রইছ আহমেদ মান্নাকে একাধিকবার কল দেয়া হলেও তিনি রিসিভ করেননি। একই কমিটির সাবেক যুগ্ন আহ্বায়ক মাইনুল ইসলাম বলেন, মহানগর কমিটি বিলুপ্ত হওয়ার আগে তারা নগরীর ৩০টি ওয়ার্ড এবং সবগুলো কলেজ ইউনিট কমিটি গঠন সম্পন্ন করেছিলেন। ১ থেকে ৪ নম্বর ওয়ার্ড কমিটি প্রকাশও করা হয়েছিল। এরপরে সিটি নির্বাচন নিয়ে স্থানীয় বিরোধে বাকি কমিটিগুলো ঘোষণা দেয়া হয়নি। মাইনুল দাবী করেন, প্রকাশ না করা কমিটিগুলো তারা প্রকাশের উদ্যোগ নিয়েছেন। এতে একটি পক্ষ পাল্টা কমিটি ঘোষণার নামে ছাত্রলীগ নিয়ে তামাশা করছে।

প্রসঙ্গত, সম্প্রতি সম্পন্ন হওয়া সিটি নির্বাচনে মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন সাদিক আবদুল্লাহর চাচা আবুল খায়ের আবদুল্লাহ (খোকন সেরনিয়াবাত)। সাদিক আবদুল্লাহ মনোনয়নবঞ্চিত হলে চাচা-ভাতিজার পুরানো পারিবারিক বিরোধ প্রকাশ্যে আসে। আবুল খায়েরকে ঘিরে বরিশাল আওয়ামী লীগে নতুন বলয়ের সৃষ্টি হয়।

যাযাদি/এস