বিএনপির এক দফার আন্দোলনের ছক চূড়ান্ত

প্রকাশ | ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০৯:৫৬

যাযাদি রিপোর্ট

অক্টোবরের মাঝামাঝি সময়ের মধ্যে এক দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্য স্থির করেছে বিএনপি। আগামী মাসের প্রথম ১৫ দিনে সফলতা পাওয়ার টার্গেট নিয়ে আন্দোলনের চূড়ান্ত ছক সাজানো হয়েছে। তা বাস্তবায়নে অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহ থেকে ঘেরাওসহ লাগাতার কর্মসূচি দেওয়া হতে পারে। 


রোববার রাতে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে উচ্চ পর্যায়ের এক বৈঠকে এসব বিষয়ে আলোচনা হয় বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে। যা স্থায়ী কমিটিতে চূড়ান্ত হতে পারে। 

দলটির আন্দোলনের খসড়া পরিকল্পনা অনুযায়ী, আগামী শুক্রবার থেকে পুনরায় মাঠে গড়াতে পারে এক দফার যুগপৎ আন্দোলন। আগামী তিন সপ্তাহে প্রতি শুক্র ও শনিবার মানববন্ধন, পদযাত্রা, গণমিছিল ও সমাবেশের মতো কর্মসূচি দেওয়া হতে পারে। এই কর্মসূচি হতে পারে যৌথভাবে ঢাকা ও ঢাকার বাইরে। আর সেপ্টেম্বরের শেষ সপ্তাহে গিয়ে কর্মসূচির ধরনে পরিবর্তন আসবে। সেই সময় ঢাকায় ফের মহাসমাবেশ, গণসমাবেশ বা বড় ধরনের কর্মসূচি দেওয়া হবে। এর মধ্য দিয়ে চূড়ান্ত আন্দোলনের ‘শেষ ধাপ’ শুরু হবে। তখন কর্মসূচি হবে ঢাকাকেন্দ্রিক। আদালতের সামনে অবস্থান কর্মসূচি দিয়ে শেষ ধাপের সেই আন্দোলন শুরু হবে। এরপর ধারাবাহিকভাবে নির্বাচন কমিশন, গণভবন, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, সচিবালয়ের মতো বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ঘেরাওয়ের কর্মসূচি আসবে। সেইসঙ্গে টানা অবস্থানের কর্মসূচি দেওয়ারও চিন্তা রয়েছে দলটির হাইকমান্ডের।


আগামী জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে ইতোমধ্যে আনুষ্ঠানিক প্রস্তুতি শুরু করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। সংবিধানে জাতীয় সংসদের মেয়াদ পূর্তির আগের ৯০ দিনের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন করার বাধ্যবাধকতা আছে। আগামী বছরের ২৯ জানুয়ারি চলতি একাদশ জাতীয় সংসদের পাঁচ বছরের মেয়াদ পূর্ণ হবে। তার আগের ৯০ দিনের মধ্যে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন করতে হবে। সে হিসাবে, ১ নভেম্বর থেকে ২৯ জানুয়ারির মধ্যে এই নির্বাচন করতে হবে। বিএনপির সিদ্ধান্ত হচ্ছে, আন্দোলনে দাবি আদায় করেই আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে তারা। আর সরকার যদি এই দাবি উপেক্ষা করে একতরফা নির্বাচনের উদ্যোগ নেয়, বিএনপি সেই নির্বাচনে অংশ নেবে না এবং তা প্রতিহত করবে।

জানা গেছে, চলমান এক দফার আন্দোলনের কর্মকৌশল ঠিক করতে রোববার রাতে দলের ভাইস চেয়ারম্যান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব এবং যুগ্ম মহাসচিবদের মতামত নেওয়া হয়। ওই বৈঠকে লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত ছিলেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। এছাড়া সেখানে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য জমির উদ্দিন সরকার, ডক্টর আব্দুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খানও উপস্থিত ছিলেন। তাদের সঙ্গে ছিলেন ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক এবং যুবদলের সভাপতি ও ছাত্রদলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতিও।

বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, আগামী জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগে এবং অক্টোবরের মাঝামাঝি সময়ে এক দফার চলমান আন্দোলনকে সফল পরিণতি দেওয়ার জন্য বেশিরভাগ নেতা মত দেন। তারা ঘেরাওয়ের ওপর গুরুত্ব দেন। এজন্য দলের মধ্যে সুদৃঢ় ঐক্য নিশ্চিত এবং রাজধানী ঢাকা ও তার আশপাশের জেলাগুলোকে সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী করতে তারা বিশেষ পরিকল্পনা গ্রহণের পরামর্শ দিয়েছেন। বৈঠকে হাইকমান্ডের পক্ষ থেকেও আন্দোলন সফলে কড়া নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। বলা হয়েছে সামনের আন্দোলনে আর কোনো ভুল করার সুযোগ নেই। সমন্বিতভাবে ঘোষিত কর্মসূচি পালন করতে হবে।
 
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির সিনিয়র এক নেতা বলেন, ‘আন্দোলন অনন্তকাল চলতে পারে না। সরকারকে অনেক সময় দেওয়া হয়েছে। আর নয়। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগেই চলমান আন্দোলন সফল পরিণতি দিকে নিতে হবে। তফসিল ঘোষণা হয়ে গেলে নির্বাচন ঠেকানো কঠিন হয়ে যাবে। তাই তফসিল ঘোষণা পর্যন্ত আন্দোলনকে টেনে নেওয়া যাবে না। এবারের আন্দোলনের মাঝখানে আর বড় ধরনের বিরতি থাকবে না। শান্তিপূর্ণভাবে ধারাবাহিক ও টানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে আমরা আন্দোলনকে সফল পরিণতির দিকে নিয়ে যেতে পারব।’

বিএনপির আন্দোলনের লক্ষ্য প্রসঙ্গে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘লক্ষ্য একটাই আন্দোলন, সংগ্রামে বিজয় অর্জন করে ফিরে আসতে হবে। এর আগে ফিরে আসার সুযোগ নেই।’

যাযাদি/ এস