নতুন কর্মসূচি নিয়ে রাজপথে ফিরছে বিএনপি
প্রকাশ | ১৩ জুলাই ২০২৪, ০৯:৩২

পদযাত্রা, বিক্ষোভ, সমাবেশের মতো কর্মসূচি নিয়ে চলতি মাসেই বড় পরিসরে রাজপথে ফিরছে বিএনপি। কেন্দ্রীয় পর্যায়ে নতুন করে দায়িত্ব দেওয়া নেতাদের এরই মধ্যে প্রস্তুতি নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। নিজ দলের পাশাপাশি শরিক রাজনৈতিক দলগুলো নিয়ে যুগপৎ আন্দোলনে ফেরার বিষয়ে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।
বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, খালেদা জিয়ার মুক্তি দাবির আন্দোলনকে বিএনপি এখন সবচেয়ে বেশি গুরত্ব দিচ্ছে। এরই মধ্যে এই ইস্যুতে দুদফা কর্মসূচি পালন করেছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে আরও কর্মসূচি দেওয়া হবে। আর দুর্নীতি-অনিয়ম ও ভারতের সঙ্গে সরকারের চুক্তি-সমঝোতার ইস্যুতেও কর্মসূচি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি। এই ইস্যূতে কর্মসূচি যুগপৎভাবে পালনের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে শরিক রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ধারাবাহিক বৈঠক শুরু করেছে দলটি। চলতি সপ্তাহের মধ্যে সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বৈঠক করে কর্মসূচি চূড়ান্ত করা হবে।
বিএনপির উচ্চ পর্যায়ের একাধিক নেতা জানান, মূলত আসন্ন আন্দোলনের সফলতার বিষয়টি মাথায় রেখে কেন্দ্রীয় কমিটির অনেকগুলো পদে রদবদল করা হয়েছে। এ ছাড়া ঢাকা চট্টগ্রাম বরিশালসহ মহানগর কমিটিতে নতুন নেতৃত্ব আনা হয়েছে। আন্দোলন সফলের অন্যতম হাতিয়ার হিসেবে পরিচিত যুবদলেরও নতুন কমিটি দেওয়া হয়েছে। নতুন নেতাদের এরই মধ্যে আসন্ন আন্দোলনের জন্য প্রস্তুত হওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
সূত্রমতে, সেপ্টেম্বরের আগে হরতাল অবেরোধের মতো কর্মসূচিতে যাওয়ার কোনো পরিকল্পনা নেই। শোডাউন নির্ভর কর্মসূচির প্রতি বেশি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। পদযাত্রা, বিক্ষোভ-সমাবেশ, মানববন্ধন, অনশন, অবস্থানের মতো কর্মসূচি আসতে পারে। এ ছাড়া দুর্নীতি ও ভারত-বাংলাদেশের ‘অসম’ চুক্তি-সমঝোতার বিষয়ে জনগণকে জানাতে বিভাগীয় শহরে সেমিনার করার বিষয়েও ভাবা হচ্ছে।
ঢাকা মহানগরে আন্দোলন বেগবানে শক্তি-সামর্থ্যরে কমতি নেই দাবি করেন নবগঠিত কমিটির নেতারা। ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির সদস্য সচিব আমিনুল হক ও দক্ষিণ বিএনপির সদস্য সচিব তানভীর আহমেদ রবিন জানান, আজ শনিবার দলের প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের মাজার জিয়ারত করে তারা আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু করবেন। এরপর হাইকামন্ডের নির্দেশনা অনুযায়ী বিএনপির চলমান আন্দোলন বেগবান করার জন্য ঝাঁপিয়ে পড়বেন।
যুবদলের নতুন সভাপতি আব্দুল মোনায়েম মুন্না জানান, হামলা-মামলা নির্যাতনে নেতাকর্মীর পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে। এরপরও ধারাবাহিকভাবে আন্দোলনের কর্মসূচি চান নেতাকর্মী। সরকারের পতন না হওয়া পর্যন্ত যুবদলের নেতাকর্মী ঘরে ফিরে যাবেন না।
সূত্র জানায়, দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের পর বিএনপির সমমনা দলগুলোর অনেক নেতা হাল ছেড়ে দিয়েছিলেন। দলের অভ্যন্তরীণ কোন্দলের কারণে কেউ কেউ নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছেন। তবে নতুন করে আবারও আশার আলো দেখছেন তারা। ইস্যুভিত্তিক কর্মসূচির মধ্য দিয়ে আবার মাঠে নামতে চান তারা। সে লক্ষ্যে শুরু হয়েছে সাংগঠনিক তৎপরতাও।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নিজ দলের পাশাপাশি শরিকদের সঙ্গে নিয়ে আন্দোলন আরও জোরদার করার বিষয়ে এখন সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছে বিএনপি। নতুন কর্মসূচি ঠিক করতে আবার যুগপৎ আন্দোলনের শরিকদের সঙ্গে বৈঠক শুরু করেছে তারা। বৃহস্পতিবার ৪টি দলের নেতার সঙ্গে বিএনপির লিয়াজোঁ নেতাদের বৈঠক হয়েছে। আর শুক্রবার জাতীয়তাবাদী সসমনা জোটের সঙ্গে বৈঠক হয়। লিয়াজোঁ কমিটি বৈঠকে বিএনপি নেতাদের মধ্যে ছিলেন স্থায়ী কমিটি সদস্য নজরুল ইসলাম খান, সেলিমা রহমান, ভাইস-চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহজাহান ও আব্দুল আউয়াল মিন্টু।
বৈঠকে জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট নেতাদের মধ্যে ছিলেন এনপিপি চেয়ারম্যান ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, জাগপা সভাপতি খন্দকার লুৎফর রহমান, গণদল চেয়ারম্যান এটিএম গোলাম মাওলা চৌধুরী, বাংলাদেশ ন্যাপ চেয়ারম্যান এমএন শাওন সাদেকী, ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টি চেয়ারম্যান ক্বারী মো. আবু তাহের, বাংলাদেশের সাম্যবাদী দল সাধারণ সম্পাদক কমরেড ডা. সৈয়দ নুরুল ইসলাম, এনপিপি মহাসচিব মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তফা, এনডিপি মহাসচিব আব্দুল্লাহ আল হারুন সোহেল, জাগপা সাধারণ সম্পাদক এসএম শাহাদাত হোসেন। এরপর এলডিপি নেতাদের সঙ্গেও বৈঠক করেন বিএনপি নেতারা।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, যুগপৎ আন্দোলনের সব শরিক দল ও জোটের সঙ্গে বৈঠক শেষে নতুন করে মাঠের কর্মসূচি ঘোষণা করবে বিএনপি। তবে প্রায় সব ইস্যুতে যুগপৎ আন্দোলন করলেও খালেদা জিয়ার মুক্তির ইস্যুতে একাই মাঠে নামতে চায় দলটি। এর বাইরে নিত্যপণ্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি, সরকারের দুর্নীতি ও ভারতের সঙ্গে দেশের ‘স্বার্থবিরোধী’ চুক্তি বা সমঝোতা স্মারকের প্রতিবাদে কর্মসূচি দেওয়ার আলোচনা হয়েছে।
যাযাদি/ এসএম