কোটা সংস্কার আন্দোলন

ডিবি অফিস থেকে কর্মসূচি প্রত্যাহারের ঘোষণা : প্রত্যাখ্যান অন্য সমন্বয়কদের

প্রকাশ | ২৮ জুলাই ২০২৪, ২২:৫০ | আপডেট: ২৮ জুলাই ২০২৪, ২৩:৩৩

যাযাদি ডেস্ক
ফাইল ছবি

ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) হেফাজত থেকেই সকল কর্মসূচি প্রত্যাহারের ঘোষণা দিয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ছয় সমন্বয়ক। তারা হলেন মো: নাহিদ ইসলাম, মো: সারজিস আলম, হাসনাত আব্দুল্লাহ, মো: আবু বাকের মজুমদার, আসিফ মাহমুদ ও নুসরাত তাবাসসুম।

রোববার (২৮ জুলাই) রাতে ডিবির সাথে আলোচনা শেষে ডিবি কার্যালয় থেকে এ ঘোষণা দেন আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম। এ সময় অন্য পাঁচ সমন্বয়ক তার সাথে ছিলেন।


ভিডিও বার্তায় নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘কোটা সংস্কার আন্দোলন ও তার পরিপ্রেক্ষিতে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে অনেকে অপ্রত্যাশিতভাবে আহত এবং নিহত হয়েছেন। এছাড়া রাষ্ট্রীয় স্থাপনায় অগ্নিসংযোগসহ নানা সহিংস ঘটনা ঘটেছে। আমরা এসব ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাই। সুষ্ঠু-তদন্ত সাপেক্ষে দ্রুত বিচারের দাবি জানাচ্ছি।’

তিনি আরো বলেন, ‘আমাদের প্রধান দাবি ছিল কোটার যৌক্তিক সংস্কার, যা এরই মধ্যে পূরণ করেছে সরকার। এখন শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে দ্রুত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার জন্য সরকারের প্রতি জোর আহ্বান জানাই। এ মুহূর্ত থেকে আমরা আমাদের কর্মসূচি প্রত্যাহার করছি।’

প্রত্যাখ্যান অন্য সমন্বয়কদের

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক আব্দুল কাদের বলেন, সমন্বয়কদের জিম্মি করে স্টেটমেন্ট দেওয়া হয়েছে। সমন্বয়করা ভয়ভীতির মুখে গোয়েন্দা সংস্থার লিখে দেওয়া বক্তব্য রিডিং পড়েছে, আমরা সেই বক্তব্য প্রত্যাখ্যান করছি এবং জোরপূর্বক বক্তব্য আদায় করার প্রতিবাদ জানাচ্ছি। আমাদের আন্দোলন চলবে।

আরেক সমন্বয়ক আব্দুল হান্নান মাসুদ বলেন, ডিবি কার্যালয়ে সমন্বয়কদের ব্ল্যাকমেইল করে লিখিত বক্তব্য পাঠ করানো হয়েছে। এই বিবৃতি ছাত্রসমাজ মেনে নেবে না।

সহ-সমন্বয়ক হাসিব আল ইসলাম বলেন, তারা কেন এমন সিদ্ধান্ত নিল আমরা জানি না। এমন সিদ্ধান্ত শোনার জন্য আমরা প্রস্তুত ছিলাম না।

পরবর্তী কর্মসূচি সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, তারা আগে ফিরুক। যেহেতু তারাই এই আন্দোলনের মূল শক্তি। তাদের সঙ্গে সবাই বসে আমরা জানতে পারব কী কারণ ছিল এর পেছনে। এরপর আমরা আমাদের সিদ্ধান্ত জানাব।

এদিকে নাহিদ ইসলামের বক্তব্যের কিছুক্ষণ পরে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক আব্দুল কাদের একটি বিবৃতিতে বলেছেন, ‘’সমন্বয়কদের জিম্মি করে নির্যাতনের মুখে যে স্টেটমেন্ট দেওয়ানো হইছে, সেটা কখনোই জাতির নিকট গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। আটককৃত সমন্বয়করা ভয়ভীতির মুখে গোয়েন্দা সংস্থার লিখে দেওয়া যে বক্তব্য কেবল রিডিং পড়ে গেছে, আমরা সেই বক্তব্য প্রত্যাখ্যান করছি এবং একইসাথে জোরপূর্বক বক্তব্য আদায় করার মতো সরকারের এমন জঘন্য কাজের তীব্র নিন্দা এবং প্রতিবাদ জানাচ্ছি।‘’

অন্যদিকে আরেকজন সমন্বয়ক আব্দুল হান্নান মাসুদ একটি ক্ষুদে বার্তায় বলেছেন, ‘’ডিবি কার্যালয়ে সমন্বয়কদের জিম্মি করে ব্ল্যাকমেইল করে এই লিখিত বক্তব্য পাঠ করানো হয়েছে। অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে বিবৃতি আদায় ছাত্রসমাজ মেনে নিবে না।‘’

গত তিনদিনে নাহিদ ইসলামসহ কোটা আন্দোলনের প্রধান ছয় জন সমন্বয়ককে সমর্থককে তুলে নেয় মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ বা ডিবি। তাদের কাউকে নেয়া হয়েছে হাসপাতাল থেকে চিকিৎসারত অবস্থায়, কাউকে বাসার গেট ভেঙ্গে তুলে আনা হয়েছিল ডিবি কার্যালয়ে।

রোববার দুপুরে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) প্রধান হারুন-অর রশীদ নিশ্চিত করেছেন, 'নিরাপত্তার স্বার্থে' সমন্বয়কদের ডিবির হেফাজতে আনা হয়েছে।

এভাবে প্রায় দুইদিন গোয়েন্দা হেফাজতে থাকার পর রোববার রাতে একটি খাবার টেবিলে তাদের সামনে খাবার দিয়ে ছবি তোলেন ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার হারুনুর রশীদ।

একই সময় দুটি ভিডিও করা হয়। সেই ছবি ও ভিডিও মি. রশীদ প্রকাশ করে তার ফেসবুক পেজে।

এই ছবি প্রকাশ করে তিনি তার ফেসবুক পেজে লেখেন, “কোটা সংস্কার আন্দোলনের প্ল্যাটফর্ম বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়করা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছিলেন। তাই ওদের ডিবি কার্যালয়ে এনে তাদের সাথে কথা বললাম”। বিবিসি বাংলা

যাযাদি/ এস