পুলিশ-বিজিবির বাধা পেরিয়ে সারাদেশে যেভাবে ‘মার্চ ফর জাস্টিস’ পালিত
প্রকাশ | ০১ আগস্ট ২০২৪, ০৯:০৩ | আপডেট: ০১ আগস্ট ২০২৪, ০৯:১২

র্যাব-পুলিশ-আনসারের পাশাপাশি সেনাবাহিনী ও বিজিবির টহলের মধ্যেই বুধবার ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ‘মার্চ ফর জাস্টিস’ কর্মসূচি পালিত হয়েছে।
এসময় আন্দোলনকারীদের বিক্ষোভ-সমাবেশ, আদালত প্রাঙ্গণে অবস্থান ও সড়ক অবরোধে বাধা দিতে গিয়ে সংঘাত-সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী লাঠিচার্জ, ফাঁকা গুলি, রাবার বুলেট, সাউন্ড গ্রেনেড ও টিয়ারশেল ছুড়েছে। এতে অর্ধশতাধিক আন্দোলনকারী আহত হন। ঘটনাস্থল থেকে পুলিশ শতাধিক আন্দোলনকারীকে গ্রেপ্তার করেছে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রগুলো জানায়, সিলেটে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ-মিছিল নিয়ে শহরের দিকে রওনা হওয়ার সময় পুলিশ রাবার বুলেট ও টিয়ারশেল নিক্ষেপ এবং সাউন্ড গ্রেনেড ব্যবহার করে তাদের ছত্রভঙ্গ করে। এক পর্যায়ে ফাঁকা গুলিও ছোড়া হয়। বগুড়ায় শিক্ষার্থীদের পদযাত্রা পুলিশি বাধায় আদালত চত্বর পর্যন্ত যেতে না পেরে সড়ক অবরোধ করে দুই ঘণ্টা বিক্ষোভ করেন। খুলনা ও বরিশালে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশের দফায় দফায় ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। রাজশাহী কোর্ট এলাকার একটি গলি থেকে আন্দোলনকারীরা পুলিশের গাড়ি লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল ছুড়লে তারা সাউন্ড গ্রেনেড ও শর্টগানের গুলি ছুড়ে তাদের ছত্রভঙ্গ করে।
এদিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ‘মার্চ ফর জাস্টিস’ কর্মসূচির অংশ হিসেবে শিক্ষার্থীরা ঢাকায় পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙে সুপ্রিম কোর্ট চত্বরে মিছিল করেন। সেখানে অবস্থান নিয়ে ছাত্র হত্যার বিচার এবং ৬ সমন্বয়কারী ও আটক অন্য শিক্ষার্থীদের মুক্তির দাবিতে নানা স্লোগান দেন তারা।
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবীরা জানান, বুধবার বেলা ২টার দিকে মাজার গেটে পুলিশের ব্যারিকেড পেরিয়ে আন্দোলনকারীরা আদালত চত্বরে প্রবেশ করেন। এ সময় তারা সমবেত কণ্ঠে গান পরিবেশন করেন। প্রায় আধাঘণ্টার মতো সুপ্রিম কোর্ট চত্বরের সামনে অবস্থান করেন শিক্ষার্থীরা। এরপর তারা সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণ ত্যাগ করেন।
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, বিপুলসংখ্যক পুলিশের উপস্থিতিতে দুপুরে শতাধিক শিক্ষার্থী মাজার গেটের সামনে অবস্থান নেন। এর মধ্যে ঢাবি, বুয়েট, নর্থ সাউথ, ব্র্যাক, গ্রিন ইউনিভার্সিটি ও ঢাকা কলেজসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা ছিলেন। এ সময় সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণ থেকে বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা মিছিল নিয়ে মাজার গেটের সামনে যান। এর আগেই মাজার গেট বন্ধ করে দেওয়া হয়। তখন গেটের বাইরে শিক্ষার্থীরা এবং গেটের ভেতরে আইনজীবীরা স্লোগান দিতে থাকেন। এক পর্যায়ে কয়েকজন শিক্ষার্থীকে আটকের খবর শুনে কিছু আইনজীবী গেটের পাশের ব্যারিকেড টপকে শিক্ষার্থীদের পাশে গিয়ে দাঁড়ান। পরে কিছু শিক্ষার্থীকে ভেতরে নিয়ে আসেন তারা।
এ সময় আইনজীবী ও শিক্ষর্থীরা বিভিন্ন স্লোগান দেন। ‘তোর কোটা তুই নে, আমার ভাইকে ফেরত দে’, ‘ছাত্রদের ওপর গুলি কেন, প্রশাসন জবাব দে’ ইত্যাদি স্লোগান দিয়ে আদালত প্রাঙ্গণ প্রকম্পিত করে তোলেন। কিছুক্ষণ পর আইনজীবীদের সঙ্গে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি ভবনের সামনে চলে আসেন শিক্ষার্থীরা। সেখানে গিয়ে একটানা ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস, উই ওয়ান্ট জাস্টিস’ স্লোগান দিতে থাকেন শিক্ষার্থীরা। প্রায় আধাঘণ্টা পর তারা শিক্ষা ভবনের দিকে চলে যান।
শিক্ষার্থীদের প্রতি সংহতি প্রকাশ করা আইনজীবীদের মধ্যে ছিলেন ব্যারিস্টার মাহবুবউদ্দিন খোকন, তৈমুর আলম খন্দকার, রুহুল কুদ্দুস কাজল, গাজী কামরুল ইসলাম সজল ও মোহাম্মদ আলী প্রমুখ। মাজার গেটের ভেতরে দৃক গ্যালারির প্রতিষ্ঠাতা শহিদুল আলম, শারমিন মুরশিদ, রেহেনুমা আহমেদ আন্দোলনের প্রতি সংহতি জানিয়ে বক্তব্য দেন। পুলিশ হাইকোর্টের সামনে থেকে বেশ কয়েকজনকে আটক করেছে বলে আন্দোলনকারীরা দাবি করেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) শিক্ষক ও বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ‘মার্চ ফর জাস্টিস’ কর্মসূচিতে অংশ নিতে জমা হন কার্জন হল এলাকায়। সেখান থেকে তারা হাইকোর্টের দিকে যেতে চাইলে পুলিশ বাধা দেয়। পরে তারা ঢাবি ক্যাম্পাস থেকে শহীদ মিনার এলাকায় বিক্ষোভ করেছেন।
বুধবার দুপুর পৌনে ১টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের একটি মিছিল হাইকোর্ট অভিমুখে রওনা হলে কার্জন হলের বিপরীত পাশের রাস্তায় পুলিশ তাদের বাধা দেয়। পুলিশের সঙ্গে এসময় তাদের বেশ কিছুক্ষণ বাগবিতণ্ডা হয়। এরপর ঢাবি, বুয়েট এবং বেশ কয়েকটি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজের শিক্ষার্থীরা শিক্ষকদের সঙ্গে যোগ দেন। পুলিশ তাদের হাইকোর্টের দিকে যেতে না দিলে বেশ কিছুক্ষণ তাদের সঙ্গে ধস্তাধস্তি ও কথা কাটাকাটির পর তারা দোয়েল চত্বরে আসেন। সেখানে কিছুক্ষণ বিক্ষোভের পর তারা একটি মিছিল নিয়ে শহীদ মিনারে যান। সেখানে সংক্ষিপ্ত সমাবেশের মাধ্যমে কর্মসূচি শেষ করেন।
এসময় শিক্ষার্থীরা ‘আমার ভাই মরল কেন, প্রশাসন জবাব দে’, ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’ স্লোগান দেন।
‘মার্চ ফর জাস্টিস’ কর্মসূচি পালনে মিরপুরে মিছিল করেছে একদল আন্দোলনকারী। বুধবার দেড়টায় মিরপুরের বেনারসি পল্লীর একটি সড়কে মিছিল করেছে তারা। এ সময় ২০ জনের একটি পুলিশ দল তাদের মোটর সাইকেল দিয়ে ঘিরে রাখে। পরে পুলিশ আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে তাদের ফিরিয়ে দেয়। এর কয়েক মিটার দূরে মিরপুর-১০ নম্বরের প্রধান সড়কে অবস্থান নেয় ছাত্রলীগ-যুবলীগ নেতাকর্মী। তারা আন্দোলনকারীদের দেখে প্রতিহত করতে এগিয়ে গেলে মাঝখানে পড়ে পুলিশের ওই দল। পরে দুই পক্ষকেই সরিয়ে দেয় পুলিশ।
ঘটনাস্থলে মিরপুর মডেল থানার এক উপ-পরিদর্শক (এসআই) বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা আজকে কিসের আন্দোলনে নেমেছে তারা বলতেই পারে না। তারা (শিক্ষার্থীরা) প্রায় ১৫ থেকে ২০ মিনিট ধরে রাস্তায় ছিল। আমরা তাদের বুঝিয়ে যার যার বাসায় পাঠিয়ে দিয়েছি। আজকে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটতে দেইনি আমরা। ছাত্র-ছাত্রীদের ওপর সরকারি দলের নেতাকর্মীদের হামলা, ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া সংঘটিত হতে দিইনি।’
এদিকে চলমান কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করে ঢাকার নিম্ন আদালতে ‘মার্চ ফর জাস্টিস’ কর্মসূচি পালন করছে আইনজীবীরা। তাদের অধিকাংশই জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সদস্য।
স্থানীয় সূত্রগুলো জানায়, দুপুর ১২টা ৪০ মিনিটের দিকে ঢাকা আইনজীবী সমিতির ভবনের সামনে তাদের কর্মসূচি শুরু হয়। এরপর বিক্ষোভ-মিছিল ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের সামনে আসে। এসময় আদালতে পুলিশ ও বিজিবি মোতায়েন থাকতে দেখা যায়। তবে আইনজীবীদের আদালত প্রাঙ্গণে বাধা দিতে দেখা যায়নি।
এর আগে দুপুর ১২টা থেকেই ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত, চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত ও ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের প্রাঙ্গণে বাড়তি পুলিশ সদস্য ও বিজিবি মোতায়েন করতে দেখা গেছে। আদালত প্রাঙ্গণের প্রত্যেক মোড়ে মোড়ে ও ফটকের সামনে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়। চলে তল্লাশি অভিযানও।
এ বিষয়ে আদালতে দায়িত্ব পালন করা লালবাগ জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ ইমরান হোসেন মোল্লা বলেন, ঊর্ধŸতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে আদালতে কয়েক স্তরের নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। যেন নাশকতা না হয়।
টাঙ্গাইলে সড়ক অবরোধ: আদালত এলাকায় বিক্ষোভ-মিছিল করেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে যুক্ত শিক্ষার্থীরা। পরে শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে আন্দোলন ঘিরে গত কয়েকদিনে সংঘটিত ‘গণহত্যা ও নির্যাতনের’ ঘটনার তদন্তসহ বিভিন্ন দাবি জানানো হয়। এসব দাবি জানিয়ে টাঙ্গাইলের জেলা প্রশাসক বরাবর একটি স্মারকলিপিও দেন শিক্ষার্থীরা। এরপর তারা শহরের পুরনো বাসস্ট্যান্ড এলাকার সড়ক আধাঘণ্টা অবরোধ করে রাখেন। এসময় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী।
দিনাজপুরে আটক ১০ : দিনাজপুরে ‘মার্চ ফর জাস্টিসে’ অংশ নেওয়া ৯ শিক্ষার্থী ও এক অভিভাবককে আটক করেছে পুলিশ। দিনাজপুর শহীদ মিনার সংলগ্ন এলাকা থেকে তাদের আটক করা হয়। পরে পুলিশ তাদের দিনাজপুর কোতোয়ালি থানায় নিয়ে যায়। দিনাজপুর কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফরিদ হোসেন এ তথ্য নিশ্চিত করেন। পুলিশ জানায়, দিনাজপুরের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্রছাত্রী সকাল ১১টায় শহরের গোর-ই-শহীদ বড় মাঠে জড়ো হয়।
এসময় তাদের কয়েকজনের সঙ্গে অভিভাবকও কর্মসূচিতে অংশ নেন। এ খবর পেয়ে ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে সশস্ত্র বাহিনীর একটি দল ও পুলিশ দিনাজপুর জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নেয়। পরে শিক্ষার্থীরা মাথায় লাল ফিতা বেঁধে শহীদ মিনারের সামনে গিয়ে জড়ো হয়ে ‘তোমার কোটা তুমি নাও, আমাদের ভাইকে ফিরিয়ে দাও’সহ বিভিন্ন স্লোগান দেওয়া শুরু করে। সেসময় ডিবির সদস্যসহ পুলিশের একটি দল সেখানে গিয়ে ৯ শিক্ষার্থীকে আটক করে। আটক এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক এগিয়ে গেলে পুলিশ তাকেও আটক করে।
স্লোগানে উত্তাল চট্টগ্রাম: চট্টগ্রাম ব্যুরো জানায়, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে ‘মার্চ ফর জাস্টিস’ পদযাত্রা কর্মসূচির অংশ হিসেবে চট্টগ্রামে বিক্ষোভ করেছে আন্দোলনকারীরা। ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’ স্লোগানে উত্তাল ছিল আদালত চত্বরসহ পুরো এলাকা। আন্দোলনকারীদের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে বিক্ষোভে যোগ দেন আইনজীবীদের একাংশ।
বুধবার সকাল থেকেই আদালত ভবনের সব ফটকে বিপুলসংখ্যক পুলিশ, বিজিবিসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনীর সদস্যদের উপস্থিতি ছিল। আদালতে কোনো গাড়ি যেতে দেওয়া হয়নি। বিচারপ্রার্থীরাও হেঁটে গিয়েছেন। এ সময় শিক্ষার্থীরা প্রথমে জেলা পরিষদ ভবনের সামনে সড়ক অবরোধ করে আন্দোলন শুরু করে। আধাঘণ্টার মধ্যে সড়ক থেকে সরে আসতে আন্দোলনকারীদের আল্টিমেটাম দেয় পুলিশ। এ সময় আইনজীবীরা মিছিল নিয়ে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে যোগ দেন। পরে শিক্ষার্থী ও আইনজীবীদের সম্মিলিত দলটি মিছিল নিয়ে আইনজীবী ভবনের সামনে অবস্থান নেয়। পরে আইনজীবী ভবনের সামনে অবস্থান নিয়ে স্লোগান দেয় শিক্ষার্থী ও তাদের সমর্থক আইনজীবীরা।
এদিকে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে সমর্থন দিয়েছেন বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা। সরাসরি বিক্ষোভ অংশ না নিলেও বিএনপিপন্থি আইনজীবী হিসেবে পরিচিত আব্দুস সাত্তারের নেতৃত্বে ৫০ থেকে ৬০ জনের একটি দল আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের পাশে অবস্থান নেন।
অন্যদিকে আন্দোলনের বিপক্ষে মিছিল বের করেন আওয়ামীপন্থি আইনজীবীরা। চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের আইনবিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট ইফতেখার সাইমুল চৌধুরীর নেতৃত্বে ৩০ থেকে ৪০ জনের একটি দল মিছিল নিয়ে আইনজীবী ভবনের দিকে আসে। এসময় দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়।
ঘটনাস্থলে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (প্রশাসন ও অর্থ) আ স ম মাহতাব উদ্দিন, কোতোয়ালি জোনের সহকারী কমিশনার (এসি) অতনু চক্রবর্তী, কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ওবায়দুল হক উপস্থিত ছিলেন। আন্দোলনের বিষয়ে কথা বলার চেষ্টা করা হলে কেউ মন্তব্য করতে রাজি হননি।
বরিশাল অফিস জানায়, ‘মার্চ ফর জাস্টিস’ কর্মসূচিতে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে পুলিশের দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে।
বুধবার বেলা সাড়ে ১১টায় বামপন্থি ছাত্রসংগঠন সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট ও সরকারি ব্রজমোহন কলেজের (বিএম) শিক্ষার্থীরা সদর রোডের দিকে আসছিল। কিন্তু পুলিশ সেখানে বাধা দেয় এবং বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হয়। এর বাইরে বরিশাল জজ কোর্টের দিকেও শিক্ষার্থীরা জড়ো হতে গেলে সেখানেও বাধা দেয় পুলিশ। এই দুই ঘটনায় অন্তত ১০-১৫ জন আহত হয়েছেন বলে জানা যায়। এর মধ্যে তিনজন সাংবাদিক রয়েছেন। ঘটনাস্থল থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে ১৩ জন শিক্ষার্থীকে।
এ ব্যাপারে বরিশাল কোতোয়ালি মডেল থানার সহকারী কমিশনার নাফিসুর রহমান বলেন, ‘পরিস্থিতি তাদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। ঘটনাস্থল থেকে এ পর্যন্ত ১৩ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এদের মধ্যে তিন নারী শিক্ষার্থীকে মুচলেখা রেখে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।’
সিলেটে ফাঁকা গুলি-টিয়ারশেল: সিলেট অফিস জানায়, সিলেটে শিক্ষার্থী ও পুলিশের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। মহানগরের সুবিদবাজার এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। এসময় পুলিশ ফাঁকা গুলি ও টিয়ারশেল ছুড়ে শিক্ষার্থীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়।
কোটা ইস্যুতে শিক্ষার্থীদের বুধবারের কর্মসূচি ‘মার্চ ফর জাস্টিস’ অনুযায়ী দুপুর ১২টায় সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় গেট থেকে শিক্ষার্থীরা পায়ে হেঁটে মিছিল নিয়ে মহানগরের বন্দরবাজারের দিকে রওনা হন।
পথিমধ্যে সুবিদবাজার এলাকায় এলে সড়কে পুলিশ ব্যারিকেড দেয়। শিক্ষার্থীরা তখন ব্যারিকেড ভেঙে বন্দরবাজার আসতে চাইলে পুলিশ ফের বাধা দেয়। এসময় পুলিশের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হয় এবং শিক্ষার্থীরা ইট-পাটকেল ও পুলিশ টিয়ারশেল-ফাঁকা গুলি নিক্ষেপ করে। এতে ছত্রভঙ্গ হয়ে যায় শিক্ষার্থীরা। তবে কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি।
লক্ষ্মীপুরে কর্মসূচি পণ্ড: লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি জানান, প্রতিপক্ষের বাধায় পণ্ড হয়ে যায় লক্ষ্মীপুরে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন সমর্থিত আইনজীবীদের কর্মসূচি। জেলা গণঅধিকার পরিষদের আহ্বায়ক আইনজীবী নুর মোহাম্মদের নেতৃত্বে কয়েকজন আইনজীবী কর্মসূচি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে হাতে লেখা ফেস্টুন নিয়ে মানববন্ধনে দাঁড়ান। এতে কয়েকজন শিক্ষার্থী অংশ নিলে পুলিশ তাদের সরে যেতে বলে। পরে আওয়ামীপন্থি আইনজীবীদের বাধায় উভয়পক্ষ বাকবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়ে। এক পর্যায়ে আইনজীবীদের মধ্যে হট্টগোল সৃষ্টি হয়। পরে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
অতিরিক্ত জেলা পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) হাসান মোস্তফা স্বপন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মোহাম্মদ সোহেল রানা ও সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইয়াছিন ফারুক মজুমদারের নেতৃত্বে আদালত প্রাঙ্গণে পুলিশ অবস্থান নেয়। এসময় আদালত প্রাঙ্গণ থেকে বহিরাগতদের বের করে দেওয়া হয়। আইনজীবীদের মধ্যে হট্টগোলের পর আইনজীবী সমিতি ভবনের ভেতরে মাইকিং করে বহিরাগত ও অপ্রয়োজনে অবস্থান নেওয়া লোকজনকে বের করে দেয় পুলিশ।
অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে মাদাম ব্রিজ ও ঝুমুরসহ গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন থাকতে দেখা গেছে। সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইয়াছিন ফারুক মজুমদার বলেন, ‘আইনজীবীরা কে কোন দলের তা জানা নেই। তাদের নিজেদের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। আমরা ঘটনাস্থল ছিলাম। পরে তারা শান্ত হয়ে যার যার কাজে চলে গেছেন।’
নরসিংদীতে বিক্ষোভ: নরসিংদী প্রতিনিধি জানান, কোটাবিরোধী আন্দোলনে শিক্ষার্থী হত্যার দায় স্বীকার, সুষ্ঠু বিচার ও যেসব এলাকায় শিক্ষার্থী হত্যার ঘটনা ঘটেছে, সেখানকার পুলিশের ডিআইজি ও পুলিশ সুপারকে বরখাস্ত করাসহ ৯ দফা দাবিতে বিক্ষোভ করেছে নরসিংদীর সাধারণ শিক্ষার্থীরা। বুধবার দুপুর ১টা থেকে দেড়টা পর্যন্ত নরসিংদী শহরের উপজেলা মোড় এলাকায় বিক্ষোভ করেন তারা।
এ সময় আন্দোলনকারীদের সঙ্গে নরসিংদী সরকারি কলেজের বাংলা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক নাদিরা ইয়াসমিন এবং নরসিংদী জেলা ও দায়রা জজ আদালতের আইনজীবী শিরিন সুলতানা উপস্থিত ছিলেন।
জাবিতে পদযাত্রা ও গণস্বাক্ষর কর্মসূচি: এদিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক আরিফ সোহেল ও আন্দোলনরত শিক্ষার্থী লিয়নসহ গ্রেপ্তারকৃত সব শিক্ষার্থীর মুক্তির দাবিতে পদযাত্রা কর্মসূচি করেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। পরে তারা গণস্বাক্ষর কর্মসূচিও পালন করেন।
বুধবার জাবির মুরাদ চত্বর থেকে পদযাত্রাটি বের হয়ে রেজিস্ট্রার ভবন ঘুরে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে গিয়ে জমায়েতে পরিণত হয়। এ সময় শিক্ষার্থীরা বক্তব্য দেন।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক জিতু বলেন, ‘আমাদের সারা বাংলার ছাত্রসমাজ ন্যায্য ও যৌক্তিক দাবির পক্ষে রাজপথে আছে। আমাদের সঙ্গে সরকার বিভিন্ন প্রহসনমূলক ঘটনা ঘটিয়ে আমাদের যৌক্তিক ও ন্যায্য দাবির পক্ষে আন্দোলন করার জন্য অনেকে শিক্ষার্থীদের ইতোমধ্যে নিহত করেছে। নিহত শিক্ষার্থীদের প্রতি সমবেদনা জানাচ্ছি। এর পেছনে যারা জড়িত তাদের আইনের আওতায় এনে যাতে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া হয় সেজন্য আমরা কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছি।’
শিক্ষার্থীদের এ কর্মসূচিতে সংহতি জানিয়ে জাবি শিক্ষকরাও গণস্বাক্ষর করেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ২ শতাধিক শিক্ষার্থীসহ শিক্ষকের একাংশ।
বগুড়ায় সড়ক অবরোধ, পুলিশের বাধা: বগুড়ায় শিক্ষার্থীদের ‘মার্চ ফর জাস্টিস’ পদযাত্রা পুলিশি বাধায় আদালত চত্বর পর্যন্ত যেতে না পেরে সড়ক অবরোধ করে ২ ঘণ্টা বিক্ষোভ করেন। এ সময় শহরের আলতাফুন্নেছা খেলার মাঠ সড়ক, শহীদ আবদুল জব্বার সড়ক, রোমেনা আফাজ সড়ক ও বীর মুক্তিযোদ্ধা রেজাউল বাকি সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকে।
বুধবার সকাল থেকেই বগুড়া আদালত ভবনের সব ফটকে বিপুলসংখ্যক আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা অবস্থান নেন। এ সময় জেলা জজ আদালতের প্রধান ফটক বন্ধ করে পকেট ফটক খোলা রাখা হয়। ভেতরে কোনো কোনো গাড়ি যেতে দেওয়া হয়নি। বিচারপ্রার্থীরা ও আইনজীবীরাও হেঁটে গেছেন আদালত চত্বরে।
বেলা ১১টায় জলেশ্বরীতলা আলতাফুন্নেছা খেলার মাঠ থেকে শিক্ষার্থীদের মিছিল নিয়ে জেলা জজ আদালত অভিমুখে রওনা দেয়। পুলিশ, বিজিবি ও সেনা সদস্যরা রোমেনা আফাজ সড়কের মোড়ে তিনস্তরের নিরাপত্তা ঢাল তৈরি করে শিক্ষার্থীদের মিছিলে বাধা দেয়। এ সময় দুই পক্ষের মধ্যে সামান্য ধাক্কাধাক্কি হয়। তবে কোনো সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেনি।
নোয়াখালীতে প্রতিবাদ সমাবেশ: ডিবি হেফাজত থেকে অবিলম্বে ৬ সমন্বয়কের মুক্তিসহ ৯ দফা দাবি বাস্তবায়নে নোয়াখালীতে ‘মার্চ ফর জাস্টিস’ পালন করেছেন বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের শিক্ষার্থীরা। বুধবার দুপুর ১২টায় জেলা শহরের মাইজদী বাজার এলাকা থেকে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কয়েক হাজার শিক্ষার্থী জাতীয় পতাকা, ব্যানার, ফেস্টুন ও বাঁশের লাঠি নিয়ে হাতে হাত রেখে বিভিন্ন স্লোগানে প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে নোয়াখালী জজকোর্ট প্রাঙ্গণে এসে সমবেত হন।
পরে সেখানে নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, নোয়াখালী সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ, চৌমুহনী সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কয়েক হাজার শিক্ষার্থী ঘণ্টাব্যাপী বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেন।
শিক্ষার্থীদের কর্মসূচি শুরুর আগেই মাইজদী বাজার, জেলা শহরের প্রধান সড়ক, জজকোর্ট প্রাঙ্গণে র্যাব, পুলিশ ও গোয়েন্দা পুলিশের সদস্যদের অবস্থান নিতে দেখা যায়। তবে পুলিশ শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ সমাবেশ কোনো ধরনের বাধা দেয়নি। এসময় সড়কে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হলে বিভিন্ন যানবাহন বিকল্প রাস্তায় চলাচল করে।
জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান জানান, শিক্ষার্থীরা যখন আমাদের জানায় তারা শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করবেন। এজন্য বাধা না দিয়ে তাদের সুযোগ দেওয়া হয়েছে। তবে পুলিশ সতর্ক অবস্থায় রয়েছে।
নারায়ণগঞ্জে প্রতিবাদী গ্রাফিতি: কোটা আন্দোলনে নিহতদের স্মরণে নারায়ণগঞ্জে প্রতিবাদী গ্রাফিতি আঁকা হয়েছে। মঙ্গলবার রাতের কোনো এক সময় শহরের মাসদাইর কেন্দ্রীয় ঈদগাহ ময়দানের দেওয়ালে গ্রাফিতিগুলো আঁকা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ঈদগাহে থাকা মানুষজন।
ঈদগাহে থাকা উজ্জ্বল নামে একজন বলেন, ‘আমি সকালে এটি দেখেছি। মঙ্গলবার বিকালে এ মাঠ দিয়ে যাওয়ার সময় দেখিনি। তাহলে রাতে এগুলো আঁকা হয়েছে। এখন সবাই প্রতিবাদী, এতগুলো প্রাণের বিনিময়ে এতটুকু লিখে তো প্রতিবাদ করাই যায়!’
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নারায়ণগঞ্জে ১৭ জনের নিহত হওয়ার তথ্য বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, নিহতদের মধ্যে শিশুসহ পুলিশ পরিদর্শক, শিক্ষার্থী, শ্রমিক ও ব্যবসায়ী রয়েছেন।
ময়মনসিংহে বিক্ষোভ: কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে গণহত্যার বিচার, মামলা ও হয়রানি বন্ধ এবং ছাত্রসমাজের ৯ দফা দাবিতে ময়মনসিংহে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছেন শিক্ষার্থীরা। সমাবেশে আনন্দমোহন কলেজ, মুমিনুন্নিসা সরকারি মহিলা কলেজ, নাসিরাবাদ কলেজসহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা অংশ নেন।
এ সময় সমাবেশে কোটা সংস্কার আন্দোলনের সমন্বয়ক আশিকুর রহমান, আরিফুল ইসলাম, রাকিবসহ আরও অনেকেই ছিলেন। শিক্ষার্থীরা জানান, গণহত্যার বিচারসহ সব দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত তারা রাজপথ ছাড়বেন না। অনেক শিক্ষার্থীর সঙ্গে তাদের অভিভাবকদেরও অংশ নিতে দেখা যায়।
এ বিষয়ে ময়মনসিংহ কোতোয়ালি মডেল থানার ওসি মোহাম্মদ মাঈন উদ্দিন বলেন, শিক্ষার্থীরা তাদের অধিকার আদায়ে আন্দোলন করবে, সেটা সবাই সমর্থন করে। তবে কেউ যেন তাদের আন্দোলনের সুযোগ নিয়ে নাশকতা করতে না পারে, সেজন্য নগরীতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সতর্ক অবস্থানে রয়েছে বলে জানান পুলিশের এই কর্মকর্তা।
খুলনায় সংঘর্ষ, আটক: আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা মিছিল করতে চাইলে পুলিশের বাধার মুখে পড়ে। এ সময় পুলিশের সঙ্গে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। আন্দোলনকারীদের ঘটনাস্থল ত্যাগ করতে বাধ্য করে পুলিশ। এ সময় ১৭ জন শিক্ষার্থী আটকের অভিযোগ উঠেছে।
বুধবার ১২টায় মহানগরের রয়্যাল মোড়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকা ‘মার্চ ফর জাস্টিস’ কর্মসূচি সফল করতে জড়ো হন শিক্ষার্থীরা। এসময় পুলিশের বাধার মুখে পড়েন তারা। পুলিশ মিছিলরত ছাত্রছাত্রীদের ছত্রভঙ্গ করে দিলে মহানগরের আহসানউল্লাহ কলেজের ভেতরে ছাত্রছাত্রী ঢুকে গেট বন্ধ করে দেন।
ময়লা পোতার মোড়ে শিক্ষার্থীরা পুলিশের বাধা উপেক্ষা করে বিক্ষোভ মিছিল করতে চাইলে পুলিশের সঙ্গে আবারও ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এ সময় সিটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সামনে ইট-পাটকেল নিক্ষেপের ঘটনাও ঘটে। পরে দুপুর ২টায় শিক্ষার্থীরা আবারও জড়ো হয়ে ময়লা পোতা থেকে পুলিশের বাধা উপেক্ষা করে বিক্ষোভ-মিছিল নিয়ে রয়্যালের মোড়ে যান।
দুপুর ১২টা থেকে ২টা পর্যন্ত এসব এলাকার দোকানপাট বন্ধ রয়েছে। এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের টহল দেখা গেছে।
পুলিশের হাতে আটক আইডিয়াল কলেজের ছাত্রী অপরূপার মা দাবি করেন, তার মেয়ে বাসা থেকে না বলে রয়্যালের মোড়ে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আন্দোলন করতে আসে। পরে পুলিশ ১৭ জন শিক্ষার্থীকে আটক করে সদর থানায় নিয়ে যায়। সেখানে আমার মেয়েসহ ১১ জন মেয়ে রয়েছে।
আটকের বিষয়ে জানতে চাইলে খুলনা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. কামাল হোসেন খান বলেন, দায়িত্ব পালনে ব্যস্ত রয়েছি। কতজন শিক্ষার্থী আটক হয়েছে এখন বলতে পারব না।
ঠাকুরগাঁওয়ে লাঠিচার্জ: ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি জানান, শিক্ষার্থীদের ‘মার্চ ফর জাস্টিস’ কর্মসূচিতে লাঠিচার্জ করেছে পুলিশ। এতে দুই শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। বুধবার সকাল সাড়ে ১১টার দিকে ঠাকুরগাঁও টাঙ্গন ব্রিজসংলগ্ন অপরাজেয় একাত্তর চত্বর থেকে বিক্ষোভ-মিছিল বঙ্গবন্ধু সড়ক দিয়ে আদালত চত্বরে যাওয়ার সময় পুলিশি বাধার মুখে পড়ে। বাধা অতিক্রম করে শিক্ষার্থীরা জেলা দায়রা জজ আদালতের গেটের সামনে পৌঁছালে আবারও পুলিশ বাধা দেয়। এসময় শিক্ষার্থীরা বাধা অতিক্রম করে কোর্ট চত্বরের দিকে যেতে থাকলে পুলিশ লাঠিচার্জ করে তাদের ছত্রভঙ্গ করার চেষ্টা করে। তাতে দুই শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন বলে জানান আন্দোলনকারীরা।
পরে ঠাকুরগাঁও পৌরসভার ও জেলা দায়রা জজ আদালতের গেটের সামনের সড়কে প্রায় ২ ঘণ্টা অবস্থান করেন শিক্ষার্থীরা।
রাবির প্রগতিশীল শিক্ষকদের অবস্থান কর্মসূচি: রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও মূল্যবোধে বিশ্বাসী প্রগতিশীল শিক্ষকরা অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন। তারা সরকার ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে ১০ দফা দাবির কথা জানিয়েছেন।
বুধবার সকাল সাড়ে ১০টায় প্রগতিশীল শিক্ষকরা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্যারিস রোডসংলগ্ন সিনেট ভবনের পাশে রাস্তায় অবস্থান করেন। অপরদিকে তার পাশেই শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিফলকের পাশ থেকে মিছিল বের করেন বিএনপিপন্থি শিক্ষকরা। তারা মিছিল শেষ করে প্যারিস রোডে বেলা সাড়ে ১১টায় সমাবেশে মিলিত হন।
প্রগতিশীল শিক্ষকদের অবস্থান কর্মসূচি সঞ্চালনা করেন সমাজবিজ্ঞান অনুষদের ডিনএসএম এক্রাম উল্লাহ। এতে বক্তব্য রাখেন প্রগতিশীল শিক্ষক সমাজের আহ্বায়ক আব্দুল্লাহ আল মামুন, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক দুলাল চন্দ্র বিশ্বাস, আইন অনুষদের ডিন অধ্যাপক আবু নাসের মো. ওয়াহিদ, আইন বিভাগের অধ্যাপক হাসিবুল আলম প্রধান প্রমুখ।
জাতীয়তাবাদী শিক্ষক ফোরামের মিছিল: রাবির বিএনপিপন্থি শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের ৯ দফা দাবি মেনে নেওয়ার দাবিতে সমাবেশ করেছেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের অধ্যাপক হাছানাত আলী বলেন, ‘সরকার আমাদের বোকা ভেবেছে। আইনমন্ত্রী কয়েক দিন আগে বলেছেন, আমার দেশের ছেলেমেয়ে কোনো ভাঙচুর করেনি। তাহলে কেন প্রতিদিন রাতে ব্লক রেইড দিয়ে আইডি কার্ড দেখে শিক্ষার্থীদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। সরকারের এই দ্বিচারিতাকে তারা ঘৃণা করেন। সরকার তার কর্তৃত্ববাদী শাসনকে দীর্ঘায়িত করতে সারাদেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দিয়েছে। ছাত্র আন্দোলন পরাজিত হতে পারে না। তারা জয়ী হবেই।’
যশোরে পুলিশের লাঠিচার্জ, আটক : স্টাফ রিপোর্টার, যশোর জানান, পুলিশের বাধা উপেক্ষা করে বিক্ষোভ মিছিল করায় শিক্ষার্থীদের ওপর লাঠিচার্জ করেছে পুলিশ। এ সময় অন্তত ৬ শিক্ষার্থীকে আটক করা হয়েছে।
‘মার্চ ফর জাস্টিস’ কর্মসূচি পালনের সময় বুধবার দুপুরে পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের সামনে এ লাঠিচার্জের ঘটনা ঘটে। আটক ছাত্ররা হলেনÑ রনি, আকাশ, রানা, তৌহিদুল, রিয়াজ ও ইব্রাহিম। এদিকে শিক্ষার্থীদের ওপর লাঠিচার্জ ও আন্দোলনকে ঘিরে গোটা শহরে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছিল। শহরের বিভিন্ন পয়েন্টে মোতায়েন করা হয় অতিরিক্ত পুলিশ।
বুধবার সকাল থেকে যশোর শহরের বিভিন্ন স্থানে শিক্ষার্থীরা জড়ো হতে থাকেন। একপর্যায়ে তারা যশোর পৌরসভার সামনে জড়ো হন। এ সময় মিছিলের চেষ্টা করলে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয় পুলিশ। এরপর শহরের ঈদগাহ মোড় থেকে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে পুলিশ সুপার কার্যালয়ের দিকে অগ্রসর হন। সময় পুলিশ বাধা দিলে তারা সেটা উপেক্ষা করে মিছিল নিয়ে অগ্রসর হতে থাকেন। এরপর যশোর পুলিশ সুপার কার্যালয়ের সামনে চার রাস্তার মোড়ে মিছিলটি পৌঁছায়। সেখানে একাধিক কর্মকর্তা ও পুলিশ সদস্য ও ডিবি পুলিশের সদস্যরা এলোপাতাড়ি লাঠিচার্জ করে ছাত্রদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এর আগে শহরের ঈদগাহ মোড় এলাকা থেকে রনি, আকাশ, রানা, তৌহিদুল, রিয়াজ ও ইব্রাহিম নামে ৬ শিক্ষার্থীকে আটক করে পুলিশ।
ছয় শিক্ষার্থীকে আটকের বিষয়ে যশোর জেলা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জুয়েল ইমরান জানান, তাদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য হেফাজতে নেওয়া হয়েছে।
ঝিনাইদহে পুলিশের বাধা : ঝিনাইদহ প্রতিনিধি জানান, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মার্চ ফর জাস্টিস বিক্ষোভ কর্মসূচি পুলিশের বাধায় পণ্ড হয়েছে। বুধবার দুপুরে শহরের সার্কিট হাউজ সড়কে সাধারণ শিক্ষার্থীরা জড়ো হয়। বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে শহরে প্রবেশ করার চেষ্টা করলে পুলিশ বাধা দেয়। পরে সেখানেই আন্দোলনকারীরা প্রায় ১ ঘণ্টা অবস্থান করে দাবি আদায়ে বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকে। এক পর্যায়ে পুলিশের বাধায় সেখানেই তারা তাদের কর্মসূচি শেষ করে।
এ সময় ছাত্রনেতারা কোটা সংস্কার আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়কদের মুক্তি, সারাদেশে শিক্ষার্থী হত্যার বিচার ও গণগ্রেপ্তারের শিকার শিক্ষার্থীদের মুক্তিসহ ৯ দফা বাস্তবায়নের দাবি তুলে ধরেন।
এদিকে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে ঝিনাইদহ জেলা শহরের বিভিন্ন মোড়ে মোড়ে বিজিবি ও পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
যাযাদি/ এস