সরকারের ‘মতিগতি’ পর্যবেক্ষণে বিএনপি

প্রকাশ | ১৬ মে ২০২৫, ২০:০৫

হাসান মোল্লা
বিএনপির লগো

নির্বাচন ইস্যূতে এখনি রাজপথে নেমে সরকারকে ‘বিব্রতকর’ পরিস্থিতিতে ফেলতে চায় না বিএনপি। আরও কয়েক মাস পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করবে দলটি। আগামী দুই থেকে তিন মাস তারা সরকারের ‘মতিগতি’ দেখবে। এরপরও নির্বাচন নিয়ে সরকারের পক্ষ থেকে সুনির্দিষ্ট দিনক্ষণ না পেলে, সেক্ষেত্রে দলীয় অবস্থানে পরিবর্তন আসতে পারে। তখন মাঠের কর্মসূচিতেও যেতে পারে দলটি। 

আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধকরণসহ নানা ইস্যুতে বিভিন্ন সেক্টর এখন প্রতিদিনিই নানা ধরনের দাবি-দাওয়া নিয়ে মাঠে নামছে। জাতীয় নাগরিক পার্টিসহ (এনসিপি) কয়েকটি রাজনৈতিক দল ও সংগঠনের আন্দোলনের মুখে গত সোমবার আওয়ামী লীগের যাবতীয় কার্যক্রম নিষিদ্ধ করে প্রজ্ঞাপন জারি করে সরকার। 

এর পরপরই শুরু হয় আবাসন সংকট নিরসনসহ তিন দফা দাবিতে জগন্নাথ বিশ্বব্যিালয় (জবি) শিক্ষার্থীদের আন্দোলন, যা চলমান রয়েছে। এর মধ্যেই গত মঙ্গলবার রাতে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের ভেতরে দুর্বৃত্তের ছুরিকাঘাতে নিহত হন ঢাকা বিশ্বব্যিালয়ের স্যার এএফ রহমান হল শাখা ছাত্রদলের সাহিত্য ও প্রকাশনাবিষয়ক সম্পাদক শাহরিয়ার আলম সাম্য। 

এসব ঘটনায় ইতোমধ্যে রাজনীতি ও রাজপথ উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। এই পরিস্থিতি আরো উত্তপ্ত হবে যদি বিএনপি সরকারের বিরুদ্ধে শক্তিশালী অবস্থান নেয়। এমন পরিস্থিতিতে বিএনপির নীতি নির্ধারনী পর্যায়ের নেতাদের অনেকেই মনে করেন, সরকারের এমন কোনো পরিস্থিতি তৈরি করা উচিত নয়, যেখানে নির্বাচনের দাবিতে রাজনৈতিক দলগুলোকে আবার রাস্তায় নামতে হয়। সেটা হবে খুবই বিব্রতকর। সরকার যেন কোনো বিব্রতকর পরিস্থিতিতে না পড়ে, বিএনপি সেটা চায়। 

জানা গেছে, গত ১০ মে রাতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকেও আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধকরণ ইস্যূতে দলের অবস্থান নির্ধারণের পাশাপাশি নির্বাচন নিয়ে আলোচনা করেন শীর্ষ নেতারা। 

ওই বৈঠকের পরদিন স্থায়ী কমিটির অন্যতম সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘তিনি আশঙ্কা করছেন-গণতান্ত্রিক যাত্রাপথে, গণতান্ত্রিক উত্তরণের পথপরিক্রমায় যদি দীর্ঘায়িত পদক্ষেপ নেওয়া হয়, কৌশল অবলম্বন করা হয়- হয়তো সরকার বিব্রত হতে পারে সামনে।’ 

আওয়ামী লীগকে আইনী পন্থায় নিষিদ্ধ করা নিয়ে দলের মহাসচিবের দেওয়া বিবৃতিতেও বলা হয়, ‘নির্বাচনের সুনিদিষ্ট রোডম্যাপ (রূপরেখা) ঘোষিত না হওয়ায় জনমনে যে ক্ষোভের সৃষ্টি হচ্ছে, সে ব্যাপারে সচেতন হওয়ার জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহবান জানাচ্ছি।’ 

দলটি এ ধরনের বক্তব্যের মধ্য দিয়ে নির্বাচন ইস্যুতে সরকারকে এক ধরনের ‘বার্তা’ দিয়েছে বলে মনে করেন অনেকে।

এদিকে, আন্দোলনের মুখে আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধের মধ্যে বিভিন্ন পক্ষের নানা দাবি এবং আইনশৃঙ্খলার অবনতিতে দেশের অস্থিতিশীল পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বিগ্ন বিএনপি। 

দলটি মনে করে, অবনতিশীল ও অস্থিতিশীল পরিস্থিতি থেকে উত্তোরণে নির্বাচনই একমাত্র পথ। দলটির নেতারা বলছেন, সামগ্রিক অবস্থা বিবেচনা করে সরকারের উচিত সংকট উত্তোরণে দ্রুত সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ দিয়ে দেশকে নির্বাচনমুখী করা। সেই নির্বাচন চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যেই করা সম্ভব। এর বেশি হলে সেটা হবে সময়ক্ষেপন করা।

এ প্রসঙ্গে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেন, দেশের মানুষ গত ১৫-১৬ বছর ধরে ভোটাধিকার বঞ্চিত। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে তারা এখন ভোট দিতে উন্মুখ, এ জন্য তারা দ্রত নির্বাচন চায়। রাজনৈতিক দলগুলোও দ্রুত নির্বাচনের দাবি জানাচ্ছে। কিন্ত সরকার এখনো নির্বাচনের সুনির্ষ্টি রোডম্যাপ ঘোষণা করেনি। রোডম্যাপ দিতে বিলম্ব হওয়ায় দেশে নানা অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে। তাই সরকারের উচিত দ্রুত সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ দিয়ে দেশকে নির্বাচনমুখী করা। তখন এসব দাবি-দাওয়া আর অগ্রাধিকার পাবে না। অন্তর্বর্তী সরকার তখন যার যা দাবি-দাওয়া আছে, নির্বাচিত সরকারের কাছে জানানোর আহবান জানাতে পারবে।