গাজীপুর মহানগর বিএনপি: দুজনের কমিটিতেই দুবছর পার
প্রকাশ | ১৪ জুন ২০২৫, ১৬:১৯

গাজীপুর মহানগর বিএনপির দুই সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করার ১৫ দিনের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করার কথা থাকলেও দুই বছরেও পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা হয়নি।
দীর্ঘদিনে কমিটি দিতে না পরায় মহানগর বিএনপির নেতা-কর্মীদের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে। অনেক নেতা-কর্মী বলছেন, যেহেতু তারা পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করতে ব্যর্থ হয়েছে, তাই দুই সদস্যের ওই কমিটি ভেঙে দিয়ে নতুনদের হাতে দায়িত্ব দিতে হবে। বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য মাজহারুল ইসলাম বলেন, দুই বছর আগে সভাপতি ও সম্পাদকের নাম ঘোষণা করে একটি কমিটি দেওয়া হয়।
কেন্দ্রীয় কমিটি তাদের ১৫ দিন সময় দিয়েছিল পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করতে। কিন্তু দুই বছরেও তারা পূর্ণাঙ্গ কমিটি দিতে ব্যর্থ হয়েছে। এটি খুবই দুঃখজনক। এতে নেতা-কর্মীরাও হতাশ। বিএনপির নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ২০২৩ সালের ১১ জুন গাজীপুর মহানগরের তেলিপাড়া এলাকার একটি কনভেনশন সেন্টারে বিএনপির দ্বিবার্ষিক সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
সেখানে মহানগর ও জেলার বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন। সেখানে বিএনপি নেতা শওকত হোসেন সরকারকে সভাপতি এবং প্রয়াত সাবেক ধর্ম মন্ত্রী ও গাজীপুর সিটি করপোরেশনের প্রথম মেয়র এম এ মান্নান সাহেবের ছেলে এম মঞ্জুরুল করিম রনিকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়।
ওই দ্বিবার্ষিক সম্মেলনে প্রধান অতিথি ছিলেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। সম্মেলনে ভার্চুয়ালি যুক্ত ছিলেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। সেখানে গাজীপুর মহানগর বিএনপির সভাপতি পদে তিনজন এবং সাধারণ সম্পাদক পদে পাঁচজন প্রার্থী মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেন। পরে দুজন বাদে সবাই মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করলে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় শওকত হোসেন সরকার সভাপতি এবং এম মঞ্জুরুল করিম সম্পাদক নির্বাচিত হন।
এরপর দুই বছর হয়ে গেলেও আজ পর্যন্ত মহানগর বিএনপির কমিটি গঠন করতে পারেননি তাঁরা। গাজীপুর মহানগর বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক রাকিব উদ্দিন সরকার. পাপ্পু বলেন, কমিটি করতে না পরায় মহানগরের রাজনীতি স্থবির হয়ে আছে। মহানগরের রাজনীতি গতিশীল করা প্রয়োজন। এটি গতিশীল করতে না পারায় গাজীপুর বারে বিএনপির প্রার্থীদের পরাজয়ের একটি বড় কারণ।
বর্তমান কমিটির দুজন পুরোপুরি ব্যর্থ। মহানগর বিএনপির অন্তত ১০ জন নেতার সঙ্গে কমিটি নিয়ে কথা হয়েছে এই প্রতিবেদকের। তাঁরা জানিয়েছেন, সভাপতি ও সম্পাদকের দায়িত্ব দেওয়ার পর তাঁদের নিজেদের মধ্যে নানা বিষয় নিয়ে বিরোধ হয়। এ ছাড়া সাধারণ সম্পাদক কমিটি ঘোষণার পরপর দেশের বাইরে চলে যান। এ কারণে মহানগর বিএনপির কমিটি ঘোষণা হলেও তা নিয়ে দলের মধ্যে চাঙ্গা ভাব আসেনি।
পরে মহানগরের বিভিন্ন ওয়ার্ডের নেতা-কর্মীদের চাপের মধ্যে থানা ও ওয়ার্ডের কমিটি ঘোষণা করা হয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত মহানগরের পূর্ণাঙ্গ কমিটি আর হয়নি। দলের কেন্দ্রীয় কর্মসূচি থাকলে সেখানে দেখা গেছে, মহানগরে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক আলাদা আলাদাভাবে কর্মীদের নিয়ে অংশ নেন। তাঁদের বিরোধ অনেকটাই স্পষ্ট হয়ে উঠেছিল। তবে ৫ আগস্টের পর চিত্র পাল্টে গেছে। দলীয় অনেক অনুষ্ঠান হয়েছে, যেখানে সভাপতি আর সম্পাদককে একসঙ্গে দেখা গেছে।
মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এম মঞ্জুরুল করিম বলেন, 'আমরা অনেক আগেই কমিটি জমা দিয়েছিলাম কিন্তু অনুমোদন হয়নি। পরে ২৮ অক্টোবরের আন্দোলনের পর বলা হলো আন্দোলন-সংগ্রামে যাদের ভূমিকা বেশি ছিল তাদের প্রাধান্য দিয়ে আরেকটি কমিটি গঠন করতে।
সেটিও করা হয়েছে। পরে আবার আন্দোলন, ৫ আগস্ট, জুলাই গণ-অভ্যুত্থান সবকিছু মিলিয়ে আবার একটু স্লো হয়ে গেছে। আমাদের হাইকামান্ড একটু ব্যস্ততার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে।
মহানগর বিএনপির সভাপতি শওকত হোসেন সরকার বলেন, আমাদের মধ্যে কোনো দ্বন্দ্ব নেই। আমরা একসঙ্গে দলীয় কর্মকাণ্ড করে যাচ্ছি।