সাবেক সিইসিকে এভাবে লাঞ্ছনা রাষ্ট্রীয় মর্যাদার অবমাননার শামিল: আসক
প্রকাশ | ২৩ জুন ২০২৫, ১৭:১৩

সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নূরুল হুদার মবকাণ্ডের ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক)।
আজ সোমবার (২৩ জুন) গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে এ নিন্দা জানানো হয়।
বিবৃতিতে আসক জানায়, সাবেক সিইসি কে এম নূরুল হুদা রাষ্ট্রের একজন নাগরিক ও বীর মুক্তিযোদ্ধা। তাকে এভাবে সংঘবদ্ধ সহিংস গোষ্ঠীর দ্বারা হামলার শিকার করে লাঞ্ছিত করা শুধু ব্যক্তির অপমান নয়, এটি রাষ্ট্রীয় মর্যাদা ও আইনের শাসনের প্রতি অবমাননার শামিল।
বিবৃতিতে বলা হয়, গত ২২ জুন রাজধানীর উত্তরায় সাবেক সিইসি কে এম নুরুল হুদাকে কিছু উচ্ছৃঙ্খল ব্যক্তি বেআইনি সমবেত হয়ে গলায় জুতার মালা পরিয়ে মারধর করে এবং পরে তাকে পুলিশে সোর্পদ করা হয়।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচারিত ভিডিও ফুটেজে প্রকাশতি এই দৃশ্য শুধু একজন ব্যক্তির প্রতি নয় বরং দেশের সংবিধান, মানবাধিকারের ন্যূনতম মূল্যবোধ ও আইনের শাসনের প্রতি সরাসরি আঘাতের নামান্তর।
আসক মনে করে, একজন নাগরিকের বিরুদ্ধে যদি কোনো গুরুতর অভিযোগ থেকেও থাকে, তা নিষ্পত্তির একমাত্র পথ হচ্ছে সংবিধান ও প্রচলিত আইনের নির্ধারিত প্রক্রিয়া।
বিচারব্যবস্থার বাইরে গিয়ে যে কোনো অপমানজনক ও সহিংস আচরণ শুধু ব্যক্তি অধিকারকেই লঙ্ঘন করে না- তা একটি সভ্য ও গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থার মূল ভিত্তিকে প্রশ্নবিদ্ধ করে।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে দুষ্কৃতকারী ব্যক্তিরা যদি এ ধরনের ন্যাক্কারজনক ঘটনা ধারাবাহিকভাবে ঘটিয়ে থাকে, তা বিচারহীনতার একটি বিপজ্জনক দৃষ্টান্ত তৈরি করে।
যা ভবিষ্যতে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার পথকে আরও জটিল করে তুলতে পারে এবং আইনের শাসনের পরিবর্তে ‘মব সংস্কৃতি’কে যেন প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়ার প্রচ্ছন্ন সংকেত দেয়
যদিও প্রধান উদেষ্টার কার্যালয় থেকে এ ঘটনায় দেওয়া এক বিবৃতিতে দায়ী ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করবে বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
আইন ও সালিশ কেন্দ্র মনে করে, এ জাতীয় পরিস্থিতিতে আগেও এ ধরনের বিবৃতি লক্ষ্য করা গেলেও কার্যত দায়ী ব্যক্তিদের আইনের আওতায় আনার কোনো নজির দেশের জনগণ দেখতে পারেনি।
কাজেই এ ধরনের ঘটনাগুলোতে সরকারের দায় এড়ানোর সুযোগ নেই। নাগরিকের ব্যক্তিগত নিরাপত্তা, সম্মান ও ন্যায়বিচার পাওয়ার অধিকার বাংলাদেশ সংবিধানের ৩১ ও ৩২ অনুচ্ছেদে সুরক্ষিত।
অতীত দায়িত্ব বা রাজনৈতিক পরিচয়ের কারণে কেউ আইন অমান্য করেছেন কি না, তা নির্ধারণের এখতিয়ার কেবল আদালতের, কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর নয়।
আসক জানায়, শুধু ২০২৫ সালের জানুয়ারি মাস থেকে জুনের এ পর্যন্ত এ ধরনের অরাজকতায় উচ্ছৃঙ্খল জনতার হাতে কমপক্ষে ৮৩ জন নিহত হয়েছেন, যা একটি সভ্যরাষ্ট্রে ঘোরতর নৈরাজ্যের ইঙ্গিত বহন করে।
সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে দু-একবার সতর্কতা উচ্চারণ করা হলেও, সরকারের পক্ষ থেকে এ ধরনের সংঘবদ্ধ সহিংসতার বিরুদ্ধে এখনো পর্যন্ত কোনো কার্যকর ও জোরালো পদক্ষেপ দেখা যায়নি। বরং আপাতদৃষ্টিতে সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নীরবতা ও নিষ্ক্রিয়তা এসব সহিংস গোষ্ঠীগুলোর অপকর্মে পরোক্ষভাবে প্রভাব জোগাচ্ছে বলে মনে হচ্ছে।
আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক) মনে করে, এমন ঘটনা দেশের গণতান্ত্রিক কাঠামো, আইনের শাসন এবং মানবাধিকারের মৌলিক মূল্যবোধের ওপর গভীর আঘাত হানে। উগ্র সহিংস গোষ্ঠীর আক্রমণের এই সংস্কৃতি অতিদ্রুত প্রতিহত করা না গেলে আইনি শৃঙ্খলা বিনষ্ট হবে।
আসক রাষ্ট্রের প্রতি আহ্বান জানায়, এ ধরনের উগ্র সহিংসতার মাধ্যমে রাষ্ট্রের নাগরিকের নিরাপত্তা লঙ্ঘনের ঘটনা যাতে আর না ঘটে, সে বিষয়ে সতর্ক নজরদারি ও প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে।