মাদারীপুরে ছাত্রনেতাকে কুপিয়ে জখম: এনসিপি কমিটি স্থগিত, দুই নেতা বহিষ্কার
প্রকাশ | ২৬ জুন ২০২৫, ১৬:৪৩

মাদারীপুরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সদস্য সচিব মাসুম বিল্লাহকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে জখমের ঘটনায় জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) জেলা ও সদর উপজেলায় গঠিত সমন্বয় কমিটি স্থগিত করা হয়েছে।
বুধবার রাত দুইটার দিকে এনসিপির ভেরিফাইড ফেসবুক পেজে প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এ তথ্য জানায় দলটির কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সদস্যসচিব (দপ্তর) সালেহ উদ্দিন সিফাত।
মাদারীপুর জেলা ও সদর উপজেলা এনসিপির সমন্বয় কমিটি স্থগিতের ঠিক আধা ঘন্টা আগে জেলা এনসিপির ৫ নম্বর সদস্য মো. আব্দুল্লাহ আদিল ওরফে টুটুল ও ৬ নম্বর সদস্য রাতুল হাওলাদারকে গুরতর শৃঙ্খলাভঙ্গের দায়ে সদস্য পদসহ সকল সাংগঠনিক পদ থেকে বহিষ্কার করার ঘোষণা দেয় কেন্দ্রীয় কমিটি। বহিষ্কারের একটি বিজ্ঞপ্তিও এনসিপির ভেরিফাইড ফেসবুক পেজে জানায় দলটির কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সদস্যসচিব (দপ্তর) সালেহ উদ্দিন সিফাত।
দুটি আলাদা বিজ্ঞপ্তির সূত্র জানায়, দলীয় শৃঙ্খলাভঙ্গের ভঙ্গের অভিযোগ তুলে এনসিপির মাদারীপুর জেলা সমন্বয় কমিটি ও মাদারীপুর জেলার অধীনে থাকা সদর উপজেলা সমন্বয় কমিটির কার্যক্রম স্থগিত করার অনুমোধন করেন দলটির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সচিব আখতার হোসেন ও মূখ্য সংগঠক (দক্ষিণাঞ্চল) হাসনাত আব্দুল্লাহ। পরে দলটির কেন্দ্রীয় কমিটির আহ্বায়ক মো. নাহিদ ইসলাম ও সদস্যসচিব আখতার হোসেনের নির্দেশনা অনুসারে মাদারীপুরে এনসিপির দুটি কমিটি স্থগিতের ঘোষণা করেন। এর আগে এনসিপির মাদারীপুর জেলা সমন্বয় কমিটির ওই দুই সদস্যকে বহিষ্কারের ঘোষণা দেওয়া হয়।
সদ্য স্থগিত হওয়া মাদারীপুর জেলা এনসিপির সমন্বয় কমিটির যুগ্ম সমন্বয়কারী মোহাম্মদ হাসিবুল্লাহ বলেন, অপরাধী যেই হোক তার শাস্তি হতে হবে। আর যারা ইচ্ছা প্রণোদিত এই ঝামেলার বন্দবস্ত করেছে তাদেরকেও সকলের সামনে আনতে হবে। কিন্তু খারাপ লাগে যখন দেখি একজন আন্দোলনকারীকে আওয়ামী ট্যাগ দেওয়া হয়। আওয়ামী সন্ত্রাসী ট্যাগ দিয়ে এনসিপির দুই নেতাকে বহিষ্কার করা হয়েছে। অথচ ওই দুই নেতা ৫ আগস্ট পৃর্ববর্তী সৈরাচার পতনে অতুলনীয় ভূমিকা ছিল। এনসিপির দুটি কমিটি স্থগিত করেছে কেন্দ্রীয় কমিটি। আমরা আশা করবো, সুষ্ঠু তদন্ত করে ন্যায় প্রতিষ্ঠা করা হোক।
এদিকে মাদারীপুরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সদস্য সচিব মাসুম বিল্লাহকে কুপিয়ে জখমের ঘটনায় বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত কাউকে আটক করতে পারেনি পুলিশ। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা-কর্মীদের অভিযোগ, এনসিপির কমিটি গঠনকে কেন্দ্র করে মোহাম্মদ হাসিবুল্লাহ সঙ্গে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়েন মাসুম বিল্লাহসহ উল্লেখযোগ্য অনেকেই।
এ কারণে মাসুম বিল্লাহকে এনসিপির জেলা ও উপজেলার কমিটিতে না রাখায় পরিস্থিতি আরও বিরোধপূর্ণ হয়ে ওঠে। এসব নিয়ে বেশ কয়েকদিন ধরেই একে অন্যকে দায়ী করে হুমকি ধামকি দেওয়া হচ্ছিল বলে জানায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা-কর্মীরা।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সম্প্রতি এনসিপির ৩১ সদস্যের সমন্বয় কমিটি গঠন করা হয়। এই কমিটি গঠন নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে তা প্রত্যাখান করেন জেলার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সদস্যসচিব মাসুম বিল্লাহ, আহ্বায়ক নেয়ামত উল্লাহসহ অনেকেই। জেলা কমিটি হওয়ার তিন দিন পরই জেলা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা–কর্মীদের সমন্বয়ে সদর উপজেলায় ২৬ সদস্যের এনসিপি আরও একটি কমিটি গঠন করে।
পুলিশ, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা-কর্মী ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, এনসিপির সদর উপজেলা সমন্বয় কমিটির আয়োজনে বুধবার বিকেলে শহরের ভুঁইয়া কমিউনিটি সেন্টারে এক কর্মিসভার আয়োজন করা হয়। এতে অতিথি ছিলেন জেলা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সদস্যসচিব মাসুম বিল্লাহ।
কর্মিসভায় মাসুম বিল্লাহ যোগ দেওয়ার পরই জেলা এনসিপির যুগ্ম সমন্বয়কারী হাসিবুল্লাহর অনুসারি এনসিপির সদস্য রাতুল হাওলাদার, আদিল মাহামুদ (টুটুল)সহ বেশ কয়েকজন অর্তকিতে তাঁর ওপর হামলা চালান। এ সময় ধারালো অস্ত্র দিয়ে মাসুম বিল্লাহকে কুপিয়ে জখম করা হয়।
পরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা–কর্মীরা মাসুম বিল্লাহকে গুরুতর আহত অবস্থায় উদ্ধার করে মাদারীপুর ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেলা হাসপাতালে পাঠান। অবস্থা গুরুতর হওয়ায় প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে তাঁকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করেন কর্তব্যরত চিকিৎসক। বর্তমানে তিনি ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসাধীন রয়েছন।