সদরপুরে বালুবাহী ড্রাম ট্রাক চাপায় গৃহবধূর মৃত্যু

প্রকাশ | ১৮ মার্চ ২০২৫, ১৫:২৬

সদরপুর(ফরিদপুর)প্রতিনিধি
প্রতীকি ছবি

ফরিদপুরের সদরপুরে অবাধে চলে দিনরাত অবৈধভাবে বালুর ব্যবসা। স্থানীয়রা বাধা দিলেও প্রশাসনের নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করেই বরং প্রশাসন কে আঙুল দেখিয়ে চালিয়ে যাচ্ছে বালুর ব্যবসা। অনেকের অভিযোগ স্থানীয় বিএনপি ও আ’লীগের লোকজন যোগসাযোগে মিলিত হয়ে অবাধে লুটে নিচ্ছে পদ্মা-আড়িয়াল খাঁ নদ নদী থেকে বালুমাটি। 

তাদের বেপরোয়ারা ও খামখেয়ালী পনায় সোমবার অবৈধ বালুবাহী ড্রাম ট্রাকের চাকায় পৃষ্ট হয়ে এক গৃহবধুর নির্মম মৃত্যু হয়েছে। পরিবারের অভিযোগ ওই ঘাতক ড্রামচালক ক্ষিপ্ত হয়ে তাকে চাপা দিয়ে হত্যা করেছে। সোমবার রাত ১০টার দিকে ভাষানচর ইউনিয়নের আদু বেপারীর ডাঙ্গী গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। 

ওই গৃহবধু উপজেলার ভাষানচর ইউনিয়নের আদু বেপরীর ডাঙ্গী গ্রামের বাচ্চু বেপারীর স্ত্রী রোজিনা বেগম(৩৫)। তার সংসারে দুই পুত্র ও এক কন্যা সন্তান রয়েছে।  তার বড় ছেলে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যায়নরত ও প্রথম কন্যার বিয়ে হয়েছে।

পরিবার সুত্রে জানা যায়, নিহত পরিবারের নিচু ভিটা বালু দিয়ে ভরাটের জন্য স্থানীয় বালু ব্যবসায়ী রিংকু খানের সাথে চুক্তি করে তার স্বামী বাচ্চু বেপারী। এক সপ্তাহ ধরে ওই বাড়ির ভিটায় বালু ফেলানোর কার্যক্রম চলছে।  ওইদিন রোজিনার স্বামী বাচ্চু ও রিংকু খানের সাথে ভরাটের টাকা নিয়ে মনমানিল্য সৃষ্টি হয়।

সোমবার (১৭মার্চ) রাত ১০টার দিকে রোজিনা বাড়ির উঠানের পাশে দাঁড়িয়ে ছিলো রোজিনা বেগম ও বালু ব্যবসায়ী রিংকু খান। বালুর ট্রাকের ড্রাইভার সোহেল মাতুব্বর(২৭) অন্যত্র অর্ধেক ট্রাক বালু ফেলায় রোজিনার সাথে ড্রাইভারের ও কথাকাটাকাটি হয়। এক পর্যায় ড্রাইভার ক্ষিপ্ত হয়ে রোজিনার শরীরের উপর দিয়ে ড্রাম ট্রাক চালিয়ে চাপা দেয় ড্রাইভার সোহেল চাপরাশি।  ওই সময় রোজিনার স্বামী বাচ্চু চিৎকার শুরু করলে ড্রাইভার ও রিংকু খান ট্রাক রেখে পালিয়ে যায় বলে অভিযোগ করেন বাচ্চু বেপারী। 

ঘটনাস্থলেই রোজিনার শরীরের বুকের নিচের অংশ পৃষ্ট হয়ে দেহের বিভিন্ন অংশ বের হয়ে নিহত হয়। এ ঘটনায় বাদী হয়ে রোজিনা স্বামী বাচ্চু বেপারী ৫জন কে আসামী করে হত্যা মামলা দায়েরের প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। সদরপুর থানা পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে বালুবাহী  ড্রাম ট্রাক জব্দ করে ওই গৃহবধুর মরদেহ উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসা হয়।

ঘটনার বিষয়ে সদরপুর থানার এস আই মামুন জানান, রোজিনার স্বামী বাদী হয়ে ঘাতকদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করবেন। থানায় মামলা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। আজ মঙ্গলবার সকালে নিহতের মরদেহ ফরিদপুর মর্গে পাঠানো হয়েছে।

বালু ভরাট প্রসঙ্গে জানা যায়, ঢেউখালী ইউনিয়নের পিয়াজখালী গ্রামের আকবর আলী খানের পুত্র বালু ব্যবসায়ী রিংকু খানকে চুক্তি দেওয়া হয় ভরাটের জন্য। প্রতি গাড়ি দুই হাজার টাকা দরে। রিংকু খান দিনে বালু মাটি দিতে পারবেনা, দিতে পারবে শুধু রাতে। ওই কারনে রিংকু খান রাতে অবৈধভাবে নলেরটেক আকোটেরচর থেকে বালু এনে ভরাট করছিল। ঘাতক ড্রাইভার সোহেল চাপরাশি ঢেউখালী ইউনিয়নের বাবুরচর নতুন ডাঙ্গী গ্রামের নুরু চাপরাশির পুত্র। সোহেল একই ইউনিয়নের চরবলাশিয়া গ্রামের হায়দার বেপারীর ট্রাক চালক।

রিংকু প্রসঙ্গে এলাকাবাসীর অভিযোগ, তার পিতা আলী আকবর খা স্থানীয় ইউনিয়ন বিএনপির নেতা হওয়ার কারনে তার দাপটে অবাধে বালুর ব্যবসা করে যাচ্ছেন।  

এ ব্যাপারে রিংকু খানের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান আমার বিরুদ্ধে অহেতুক অভিযোগ দেওয়া হচ্ছে। বাবা বিএনপির নেতা প্রসঙ্গে জানান, আ’লীগের পোলাপান তো এখন কথা বরতে পারে না তাই এমন অভিযোগ।

যাযাদি/ এমএস