এলাকায় শোকের মাতম

সড়ক দুর্ঘটনায় একই পরিবারের ৩জন নিহত

প্রকাশ | ২১ মার্চ ২০২৫, ১৩:৩৮ | আপডেট: ২১ মার্চ ২০২৫, ১৩:৪৯

ঈশ্বরদী (পাবনা) প্রতিনিধি
ছবি: যায়যায়দিন

ঈশ্বরদীতে সড়ক দূর্ঘটনায় শিশুসহ একই পরিবারের ৩ জনকে হারানোর পরিবারে বইছে শোকের মাতম। প্রিয়জনদের হারিয়ে দিশেহারা পরিবারসহ পুরো এলাকাবাসী। পিতৃহারা পরিবারে একমাত্র কর্মক্ষম ব্যাক্তি ছিল রাব্বি হোসেন। তার মৃত্যুতে অনিশ্চিত গন্তব্যে এখন তার পরিবার।

গতকাল বৃহস্পতিবার ( ২০ মার্চ ) বিকেল সোয়া ৫ টায় ঈশ্বরদী-ঢাকা মহাসড়কের বহরপুর কান্দিপাড়া এলাকায় ঈদের কেনাকাটা শেষে শ্বশুরবাড়ীতে যাওয়ার সময় এক মর্মান্তিক সড়ক দূর্ঘটনায় স্ত্রী ও একমাত্র সন্তানসহ নিহত হন রাব্বি হোসেন।

রাব্বি হোসেন ঈশ্বরদী উপজেলার পাকশী ইউনিয়নের দিয়ার বাঘইল এলাকার মৃত বাবু হোসেনের ছেলে। সে রুপপুর পারমানবিক এলাকায় একটি মুদি দোকান চালাত। তার অকাল মৃত্যুতে স্তব্ধ হয়ে গেছে পুরো পরিবার ও এলাকাবাসী।

শুক্রবার (২০ মার্চ) সকাল ১০ ঘটিকায় পাকশী ইউনিয়নের দিয়ার বাঘইল কেন্দ্রীয় মসজিদ মাঠে নামাযে জানাযা শেষে মসজিদ সংলগ্ন কেন্দ্রীর কবরস্থানে তাদের তিনজনেরই দাফন সম্পন্ন করা হয়।

শুক্রবার সকালে রাব্বির বাাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, ছেলে, পুত্রবধু ও একমাত্র নাতিকে হারিয়ে পাথর প্রায় রাব্বির মা। একই সাথে তাদের হারিয়ে নানা বিলাপ করছে পরিবারের সদস্যরা। তাদের মৃত্যুর খবর শুনে রাব্বির বাড়িতে এসে ভিড় করছে এলাকাবাসী।

নিহতের পরিবার ও এলাকাবাসী সূত্রে জানাযায়, প্রায় ৩ বছর আগে ভালোবাসার সম্পর্কের পর পারিবারিক ভাবে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয় রাব্বি দম্পত্তি। বিয়ের দেড় বছরের মাথায় একটি ফুটফুটে পুত্র সন্তানের জন্মদেন মুক্তা খাতুন।  এরপর পারিবারিক কলহের জেরে গত ৫ মাস যাবৎ বাবার বাড়িতেই অবস্থান করছিল মুক্তা। 

পারিবারিক বিবাদ শেষে আজ শুক্রবার (২১ মার্চ) শ্বশুর বাড়ীতে যাওয়ার কথা ছিলো মুক্তা খাতুনের। সেই লক্ষেই গতকাল ঈশ্বরদী বাজার থেকে কেনাকাটা শেষে বাবার বাড়ী উপজেলার নওদাপাড়া গ্রামে ফেরার পথেই সড়ক দূর্ঘটনায় স্বামী ও সন্তানসহ মারা যান মুক্তা খাতুন। এ দূর্ঘটনায় মোট ৫ জনের মৃত্যু হয়।

উল্লেখ্য, গতকাল ঈশ্বরদীতে বেপরোয়া বাসের ধাক্কায় একই পরিবারের ৩ জনসহ মোট পাঁচ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় গুরুতর আহত হয়েছে আরও ২ জন। বৃহস্পতিবার ( ২০ মার্চ) বিকেল সোয়া ৫ টার দিকে উপজেলার ঈশ্বরদী-পাবনা আঞ্চলিক সড়কের বহরপুর কান্দিপাড়া (বাঁশ হাট) সংলগ্ন এলাকায় এ দূর্ঘটনা ঘটে।

এ দূর্ঘটনায় নিহতরা হলেন ঈশ্বরদী পিয়ারপুর এলাকার রানার ছেলে মোস্তফা জামান তোহা (২৫) বাঘইল  এলাকার মৃত বাবু হোসেনের ছেলে রাব্বি হোসেন (৩০), রাব্বির সহধর্মীনী মুক্তা খাতুন (২৭) ও তাদের একমাত্র সন্তান মুস্তাকিম (২) এবং ঝিনাইদহ শৈলকুপা উপজেলার রতিডাভা এলাকার আশরাফুল ইসলামের ছেলে রাতুল হোসেন (৩০)। তবে আহতদের বিস্তারিত এখনো পাওয়া যায়নি।

স্থানীয় ও ভুক্তভোগীর পরিবার সূত্রে জানা যায়, ঈশ্বরদী বাজার থেকে ঈদের কেনাকাটা শেষ করে স্ত্রী সন্তান নিয়ে অন্যান্য যাত্রীর সাথে শ্বশুরালয়ে যাত্রার উদ্দেশ্য রওনা দেন রাব্বি হোসেন। ঘটনার সময় কান্দিপাড়া এলাকায় সিএনজিটি পৌঁছালে পাবনা থেকে দ্রæত গতিতে ধেয়ে আসা একটি বাস তাদের সামনে থেকে সজোরে ধাক্কা দেয়। এতে সিএনজিতে থাকা যাত্রীসহ গাড়ীটি দুমড়ে মুচড়ে যায়। এতে ঘটনাস্থলেই সিএনজি চালক মোস্তফা জামান তোহার মৃত্যু হয়। এসময় স্থানীয়রা আহতদের উদ্ধার করে ঈশ্বরদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে সেখানে ২ জনের এবং গুরুতর অবস্থায় রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়ার সময় পথিমধ্যে আরও ২ জনসহ মোট ৫ জনের মৃত্যু হয়।

ঈশ্বরদী থাসার অফিসার ইনচার্জ শহিদুল ইসলাম শহীন বলেন, এ ঘটনায় মোট ৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। ঘাতক বাসটিকে জব্দ করা হয়েছে। মৃতদেহগুলো ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। মামলা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

যাযাদি/ এমএস