রাজনীতি প্রসঙ্গে মুখ খুললেন জেমস
দেশের কিংবা বিদেশের শোবিজ অঙ্গনের অনেক তারকাই নাম লিখিয়েছেন রাজনীতিতে। দেশের অনেক তারকা রাজনীতিতে যোগ দিয়ে হয়েছেন আলোচিত-সমালোচিত। তবে রাজনীতিতে শিল্পীদের জড়ানোর বিপক্ষে নগর বাউল'খ্যাত ব্যান্ড তারকা জেমস। আর তাই সবসময় নিজেকে রাজনীতির বাইরে রেখেছেন এই রকস্টার।
সম্প্রতি এক গণমাধ্যমে দেওয়া সাক্ষাৎকারে জেমসের কাছে প্রশ্ন রাখা হয়, দেশ-বিদেশের অনেক শিল্পী রাজনীতিতে জড়িয়ে আলোচিত-সমালোচিত হয়েছেন। কিন্তু আপনাকে সবসময় রাজনীতি থেকে দূরে দেখা গেছে, বিষয়গুলো নিয়ে কখনো কথাও বলতে চাননি। রাজনীতি নিয়ে আপনার জীবনদর্শন কী?
উত্তরে জেমস বলেন, 'আমি একজন শিল্পী, শিল্পীরা রাজনীতিসচেতন হতে পারেন, কিন্তু তাদের রাজনীতিতে যোগ দেওয়া উচিত বলে মনে করি না। আর যদি রাজনীতিই করতে হয়, সব ছেড়ে ফুলটাইম রাজনীতি করা উচিত।' রাজনীতিতে যোগ দেওয়ার প্রস্তাব পেয়েছিলেন কি-না জানতে চাইলে জনপ্রিয় এই ব্যান্ড তারকা বলেন, 'ও আসেই। জীবনে অনেক এসেছে। '
সবশেষ নিজের ব্যস্ততা প্রসঙ্গে জেমস জানান, দেশে ব্যস্ততা আছে। বেশ কিছু আয়োজন আছে। আর আগামী মাসে সৌদি সরকারের আমন্ত্রণে দাম্মাম আর জেদ্দায় যাচ্ছি, ২ ও ৯ মে সেখানে গান শোনাব। এরপর লম্বা সফরে যুক্তরাষ্ট্রে যাচ্ছি, ২০২৫ টু্যর নিয়ে।
১৯৬৪ সালের ২ অক্টোবর নওগাঁয় জন্মগ্রহণ করেন জেমস। তার বেড়ে ওঠা চট্টগ্রামে। জেমসের বাবা একজন সরকারি কর্মকর্তা হওয়ায় সব সময়ই চাইতেন ছেলে লেখাপড়ায় মনোযোগী হোক। কিন্তু ছেলের ইচ্ছা গায়ক হবেন। অনেকটা পরিবারের বিরুদ্ধে গিয়েই শুরু করলেন সঙ্গীত চর্চা। বাবার সঙ্গে গান নিয়ে অভিমান করে বাড়ি ছাড়েন ছোট কিশোর জেমস। সঙ্গীতের নেশায় ঘর ছেড়ে এক অনিশ্চিত জগতে পাড়ি দেন। চট্টগ্রামের আজিজ বোর্ডিংয়ে থাকা শুরু করেন। সেখানে থেকেই তার সঙ্গীতের ক্যারিয়ার শুরু। গানপাগল জেমস বন্ধুদের নিয়ে ১৯৮০ সালে প্রতিষ্ঠা করেন 'ফিলিংস' নামে একটি ব্যান্ড। শুরু থেকেই গিটার বাজানোয় দারুণ পটু ছিলেন জেমস। আর তার কণ্ঠের মোহ সে তো অদ্বিতীয়। শুধু গানই গাওয়াই নয়, গান লেখার পাশাপাশি সুরও করেন এই মহান শিল্পী। দীর্ঘ ক্যারিয়ারে নিজের লেখা গানের পাশাপাশি কবি শামসুর রাহমান, প্রিন্স মাহমুদ, সিবলির লেখা গানে কণ্ঠ দিয়েছেন। বাংলা চলচ্চিত্রের গানেও কণ্ঠ দিয়েছেন জেমস। দেশ : দ্য লিডার, সত্তা সিনেমার জন্য গান করে পেয়েছেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার। প্রথম অ্যালবাম 'স্টেশন রোড' দর্শকের কাছে পৌঁছাতে না পারলেও ১৯৮৮ সালে 'অনন্যা' নামের অ্যালবাম দিয়ে সুপারহিট হয়ে যান ঝাঁকড়া চুলের সেই স্বপ্নচারী ছেলেটা। পরবর্তী সময়ে 'ফিলিংস' ব্যান্ডের নাম পরিবর্তন করে রাখেন নগরবাউল। নব্বইয়ের বিখ্যাত সব গান। সুপারহিট সেই গানগুলো আজও মুগ্ধতা ছড়ায় চারপাশে। জেমসের গানের জনপ্রিয়তা শুধু দেশে নয়, পৌঁছেছে আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলেও। ক্যারিয়ারের সেরা সময় শুরু হয় বলিউডে আত্মপ্রকাশ করার পর।
জেমসের গাওয়া একক অ্যালবামগুলোর মধ্যে রয়েছে- অনন্যা (১৯৮৮), পালাবি কোথায় (১৯৯৫), দুঃখিনী দুঃখ করো না (১৯৯৭), ঠিক আছে বন্ধু (১৯৯৯), আমি তোমাদেরই লোক (২০০৩), জনতা এক্সপ্রেস (২০০৫), তুফান (২০০৬), কাল যমুনা (২০০৯)। ২০০৪ সালে কলকাতার সঙ্গীত পরিচালক প্রিতমের সঙ্গে গান নিয়ে কাজ করেন জেমস। ২০০৫ সালে বলিউডে গ্যাংস্টার চলচ্চিত্রে পেস্নব্যাক করেন। চলচ্চিত্রে তার গাওয়া ভিগি ভিগি গানটি ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায় এবং এক মাসেরও বেশি সময় গানটি বলিউড টপচার্টের শীর্ষে ছিল। গায়ক জেমসের জনপ্রিয়তা দেখে যেতে পারেনি তার বাবা-মা। ব্যথিত হৃদয়ে শতবার তাই গানের মধ্য দিয়েই শিল্পী খুঁজেছেন তার প্রিয়জনদের। গায়কের গাওয়া 'মা' ও 'বাবা' শিরোনামের গান দু'টি তারই প্রমাণ। অপূর্ণতার চাদরে মোড়ানো জেমস নিজেকে আড়ালে রাখতেই ভালোবাসেন। জেমসের গাওয়া সেরা ১০ গান এর মধ্যে বাংলাদেশ, জেল থেকে আমি বলছি, মা, দুখিনী দুঃখ করো না, লেইস ফিতা লেইস, বাবা কত দিন, বিজলী, দুষ্টু ছেলের দল, মিরাবাঈ, পাগলা হাওয়া, গুরু ঘর বানাইলা কি দিয়া উলেস্নখযোগ্য।
১৬ এপ্রিল, ২০২৫