পুঁজি ফিরেছে সাড়ে ২৯ হাজার কোটি টাকা

প্রকাশ | ২৭ এপ্রিল ২০২১, ১৭:৪৭

যাযাদি ডেস্ক

বিমা খাতে তালিকাভুক্ত বাংলাদেশ ন্যাশনাল ইনস্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড প্রতিটি শেয়ারের দাম গত ৪ এপ্রিল ছিল ৭৪ টাকা ৩ পয়সা। সেখান থেকে ৩৭ টাকা ৯০ পয়সা বেড়ে সর্বশেষ দিন সোমবার (২৬ এপ্রিল) লেনদেন হয়েছে ১১২ টাকা ২ পয়সায়। তাতে চার কোটি ৪২ লাখ ৫০ হাজার শেয়ারধারী বিনিয়োগকারীদের ১৬৭ কোটি ৭০ লাখ ৭৫ হাজার টাকা পুঁজি ফিরেছে।

 

একইভাবে ৯৩ টাকা ৯৮ পয়সার এশিয়ার ইনস্যুরেন্সের শেয়ার ১৪ টাকা ৫২ পয়সা বেড়ে ১০৮ টাকা ৫ পয়সায় সোমবার লেনদেন হয়েছে। তাতে ৪ কোটি ৭০ লাখ ৬৯ হাজার ৮৫৮টি শেয়ারধারী বিনিয়োগকারীদের ৬৮ কোটি ৩৪ লাখ ৫৪ হাজার ৩৩৮ টাকা পুঁজি ফিরেছে।

 

শুধু বাংলাদেশ ন্যাশনাল ও এশিয়া ইনস্যুরেন্সই নয় পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত প্রায় সব বিমা, ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠানসহ বেশির ভাগ কোম্পানির শেয়ারের দাম বেড়েছে। তাতে লকডাউনে পুঁজিবাজারের বিনিয়োগকারীদের ২৯ হাজার ৪৩১ কোটি ৬৫ লাখ ৯৪ হাজার টাকার পুঁজি অর্থাৎ মূলধন ফিরেছে। দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

 

সরকারের ভাষ্য অনুসারে, দ্বিতীয় দফা করোনোভাইরাসের প্রকোপ রোধে গত ৪ এপ্রিল থেকে কয়েক দফায় দেশজুড়ে কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে। এ লকডাউনে সরকারি-বেসরকারি অফিস আদালত বন্ধ রয়েছে। ফলে বেকার হয়ে পড়েছে নিম্ন ও মধ্যম আয়ের মানুষগুলো। হাসপাতালগুলোতে বাড়ছে রোগী। দিন দিন মারাত্মক বিপর্যয়ে দিকে যাচ্ছে দেশ।

 

তবে বিপরীত চিত্র দেখা গেছে পুঁজিবাজারে। বাজারের ব্রোকারেজ হাউজগুলোতে বিনিয়োগকারীদের উপস্থিতি না থাকলেও মোবাইল অ্যাপস, মোবাইল ফোন এবং সামাাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার কেনা-বেচার নজর দিয়েছেন তারা। ফলে সর্বশেষ ১২ এপ্রিল থেকে ২৫ এপ্রিল পর্যন্ত টাকা ৯ কার্যদিবস পুঁজিবাজারে উত্থান হয়েছে। টানা নয়দিন পর সোমবার (২৬প্রিল) পুঁজিবাজারে মূল্য সংশোধন হয়েছে। 

 

ডিএসইর তথ্য মতে, ৪ এপ্রিল থেকে ২৬ এপ্রিল পর্যন্ত সময়ে ডিএসইর প্রধান সূচক বেড়েছে ৪০০ পয়েন্ট। বেড়েছে বেশির ভাগ শেয়ারের দাম, তাতে ডিএসইর বাজার মূলধন ২৯ হাজার ৪৩১ কোটি ৬৫ লাখ ৯৪ হাজার টাকা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪ লাখ ৭২ হাজার ৭৭৭ কোটি ৪১ লাখ ৫ হাজার টাকায়। লকডাউনের শুরু অর্থাৎ গত ৪ এপ্রিল বাজার মূলধন ছিল ৪ লাখ ৪৩ হাজার ৩৪৫কোটি ৭৫ লাখ ৫৬ হাজার টাকা।

 

করোনার মধ্যে দেশের পুঁজিবাজার পজেটিভ আচরণ করেছে বলেন মনে করেন ডিএসইর পরিচালক শাকিল রিজভী। তিনি বলেন, করোনায় অফিস আদালত বন্ধ থাকার কারণে বিনিয়োগকারীরা এখন পুঁজিবাজারমুখী হচ্ছেন। নতুন করে বিনিয়োগকারীও আসছে। ফলে লেনদেনও দ্বিগুণ হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন শাকিল রিজভী।

 

শেয়ার সংরক্ষকারী প্রতিষ্ঠান সেন্ট্রাল ডিপোজিটরি অব বাংলাদেশ লিমিটেডের তথ্য অনুসারে ৪ এপ্রিল থেকে ২৬ এপ্রিলে নতুন করে ২ হাজার ৭৭৩ জন বিনিয়োগকারী নতুন করে বিনিয়োগের জন্য বেনিফিশিয়ারি ওনার্স বিও অ্যাকাউন্ট খুলেছেন।

 

নিষ্ক্রিয় বিনিযোগকারী সক্রিয় হওয়ার পাশাপাশি নতুন বিনিয়োগকারী বাজারে আসায় মাত্র আড়াই ঘণ্টায় এখন লেনদেন হচ্ছে হাজার কোটি টাকার বেশি। এ বিষয়ে ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশনের (ডিবিএ) সভাপতি শরীফ আনোয়ার হোসেন বলেন, করোনার কারণে বিনিয়োগকারীরা এখন ঘরে বসেই লেনদেন করছেন। খুব বেশি প্রয়োজন ছাড়া বাইরে বের হচ্ছে না। ফলে তারা নিজের শেয়ারগুলোর দেখছেন। তাদের হাতে থাকা টাকাগুলো কোথায় বিনিয়োগ করবেন তা নিয়ে গুরুত্ব সহকারে দেখছেন। নিরাপদ বিনিয়োগ মনে হলে বিনিয়োগ করছেন। তাতে প্রতিনিয়তেই লেনদেন বাড়ছে। ব্রোকার হাউজগুলোতে একটু স্বস্তি ফিরছে।

 

বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মির্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, সরকার ঘোষিত করোনার ছুটিতে পুঁজিবাজার ইতিবাচক আচরণ করছে এটা ভালো দিক। তবে এরই মধ্যে বেশ কিছু কোম্পানির শেয়ারের দাম অযৌক্তিমূল্যে উঠে এসেছে। এসব শেয়ারে কারসাজি হচ্ছে কিনা কমিশনের খতিয়ে দেখা উচিৎ। কারসাজি হলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। তা না হলে বিনিয়োগকারীরা বড় ধরনের ক্ষতির সম্মুখীন হবে।

 

যাযাদি/এসআই