‘পাকিস্তানের ক্রিকেটকে মেরে ফেললো নিউজিল্যান্ড’

প্রকাশ | ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২১, ১৬:৩৬

যাযাদি ডেস্ক

পাকিস্তানে একটি ওডিআই সিরিজের প্রথম ম্যাচ শুরুর ২০ মিনিট আগে সফররত নিউজিল্যান্ড সফর বাতিল করে দেশে ফিরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়ার ঘটনায় ক্রিকেট বিশ্বে নানা রকম তর্ক-বিতর্ক, আলোচনা-সমালোচনা চলছে। সেই সাথে পাকিস্তানে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট পুরোপুরি আবারো কবে থেকে শুরু হতে পারে এটা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

 

এই বছরের শুরুতেই দক্ষিণ আফ্রিকার ক্রিকেট দল পাকিস্তানে একটি সিরিজ খেলেছে, এরপর নিউজিল্যান্ডের ক্রিকেট দল যদি সিরিজটি সম্পন্ন করতো সেটি পাকিস্তানের মাটিতে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের একটা বেশ বড় বিজ্ঞাপন হতো।

 

কিন্তু শেষ পর্যন্ত খেলা মাঠে গড়ানোর কিছু সময় আগে সিরিজ বাতিল করা পাকিস্তানের ক্রিকেট বোর্ড, সমর্থকরা এবং ক্রিকেটাররা ভালো ভাবে নেননি।

 

সদ্য পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পাওয়া রমিজ রাজা হুমকি দিয়েছেন, নিউজিল্যান্ডকে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিলে জবাবদিহি করতে হবে।

 

পাকিস্তানের সাবেক পেস বোলার, শোয়েব আখতার টুইটবার্তায় জানিয়েছেন, নিউজিল্যান্ড পাকিস্তানের ক্রিকেটকে মেরে ফেললো!’

 

পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড যা বলছে

 

রমিজ রাজা বলেছেন, ক্রিকেটার ও ভক্তদের জন্য তার খারাপ লাগছে।

 

একটি টুইট বার্তায় তিনি লিখেছেন, ‘নিউজিল্যান্ড ক্রিকেট বোর্ড একটা একক সিদ্ধান্তে সিরিজ বাতিল করে দিল। নিরাপত্তা ইস্যুতে যদি কোনো ঝুঁকি বা প্রশ্ন থাকতো সেক্ষেত্রে তারা আমাদের সাহায্য নিতে পারতো। আমাদের সাথে কোনো বিষয়েই আলাপ হয়নি।’

 

পাকিস্তানের অনেকে মনে করছেন, এটা কেবল ক্রিকেটের বিষয় না এখানে আন্তর্জাতিক রাজনীতি আছে।

 

পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান খালিদ মাহমুদ বিবিসিকে বলেছেন, ‘এটা শুধু ক্রিকেট না। এটা একটা পাকিস্তানবিরোধী ব্যাপার। আফগানিস্তান থেকে যখন যুক্তরাষ্ট্র থেকে সরে এসেছে এবং তালেবান ক্ষমতা নিয়েছে সেখানে পাকিস্তান সরকার তালেবানের পক্ষে আছে এতে করে ক্রিকেটেও প্রভাব পড়ছে। পাকিস্তানের বিরোধী কোনো শক্তি এখানে নিউজিল্যান্ডকে বুঝিয়েছে পাকিস্তানে নিউজিল্যান্ডের ক্রিকেটাররা নিরাপদ না।’

 

পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড এই সফর বাতিল হওয়ার আর্থিক ক্ষতিপূরণ না চাইলেও অন্তত পুনরায় যাতে সিরিজ মাঠে গড়ায় এবং সেটা পাকিস্তানেই হয় সে বিষয়টি নিশ্চিত করার চেষ্টা করবে বলে খবর পেয়েছেন বিবিসির উর্দু ভাষা সার্ভিসের ক্রীড়া সাংবাদিক আব্দুল রাশিদ শাকুর।

 

আগামী বছর আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিলের ওয়ানডে সুপার লিগের ম্যাচ আছে, এই সুপার লিগের খেলা এখন বিশ্বকাপে সুযোগ পাওয়ার জন্য গুরুত্বপূর্ণ এবং এই ম্যাচগুলো পাকিস্তানের মাটিতেই হবে।

 

তাই এখন নিউজিল্যান্ড সরকার ও ক্রিকেট বোর্ড কী ধরনের পদক্ষেপ নেবে সামনে সেটা গুরুত্বপূর্ণ।

 

এর আগে ২০০৩ বিশ্বকাপে কেনিয়ার মাটিতে বিশ্বকাপের ম্যাচ খেলতে চায়নি নিউজিল্যান্ড। ফলে তারা পয়েন্ট হারিয়েছিল এবং কেনিয়া সেমিফাইনালে জায়গা করে নিয়েছিল সেই বিশ্বকাপে।

 

ইংল্যান্ডের সফর নিয়েও প্রশ্ন

 

অক্টোবর মাসে ইংল্যান্ডের পাকিস্তান সফর করার কথা আছে।

 

এই সিরিজ বাতিলের আগ পর্যন্তও পাকিস্তানের ক্রিকেটের শীর্ষ কর্মকর্তারা নিউজিল্যান্ড দল নিয়ে ব্যস্ত ছিল, কিন্তু এখন পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের প্রধান নির্বাহী ওয়াসিম খান বলছেন তারা ইংলিশ ক্রিকেট বোর্ডের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ করে যাচ্ছেন।

 

ইংল্যান্ড ও ওয়েলস ক্রিকেট বোর্ডের বিবৃতিতে দেখা গেছে, তারা পাকিস্তানের নিরাপত্তা নিয়ে খোঁজ খবর রাখছেন এবং দ্রুততম সময়ের মধ্যে একটা সিদ্ধান্ত আসবে।

 

নিউজিল্যান্ড কী বলছে

 

নিউজিল্যান্ডের গণমাধ্যম এনজেড হেরাল্ডে খবর এসেছে, নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী জেসিন্ডা আরডার্ন ভয় পেয়েছেন প্রথম ম্যাচের আগে ক্রিকেটাররা স্টেডিয়ামের বাইরে আক্রমণের শিকার হতে পারে।

 

মিজ আরডার্ন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের সাথে কথা বলেছেন বলে খবরে বলা হয়েছে।

 

তবে এখনো ঠিক কী ধরনের ঝুঁকি এবং সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য এখনো বলেনি নিউজিল্যান্ড কর্তৃপক্ষ।

 

২০০৩ সালের পর এই প্রথম নিউজিল্যান্ড সফরে গিয়েছিল, সেবার করাচীতে হোটেলের বাইরে একটা বিস্ফোরণ হয়েছিল এবং দলটি ফিরে গিয়েছিল নিউজিল্যান্ডে।

 

মূলত ২০০৯ সালে করাচীতে শ্রীলঙ্কার একটি ক্রিকেট দলের বাসে হামলার পর দীর্ঘ দিন পাকিস্তানে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট বন্ধ ছিল। ২০১৫ সালে প্রথম আন্তর্জাতিক ক্রিকেট দল হিসেবে জিম্বাবুয়ে পাকিস্তানে সফর করে।

 

এরপর সাম্প্রতিক বছরগুলোতে পাকিস্তানের ঘরোয়া টি টোয়েন্টি ফ্র্যাঞ্চাইজ লিগ পাকিস্তান সুপার লিগের বেশ কয়েকটি ম্যাচ পাকিস্তানের মাটিতে আয়োজিত হয়েছে।

 

২০১৭ ও ২০১৯ সালে শ্রীলঙ্কার ক্রিকেট দল, ২০১৮ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের ক্রিকেট দল এবং ২০২০ সালে বাংলাদেশের ক্রিকেট দল পাকিস্তানে গিয়ে ম্যাচ খেলেছে। সূত্র : বিবিসি বাংলা

 

যাযাদি/এসআই