লিটন-সোহানের দারুণ জুটি ভাঙলেন মিচেল

প্রকাশ | ১১ জানুয়ারি ২০২২, ১০:২৫

যাযাদি ডেস্ক

 

বিশাল ব্যবধানে পিছিয়ে থাকায় যেখানে ইনিংস মেরামতই মূল লক্ষ্য, সেখানে তৃতীয় দিনের প্রথম সেশনে ভালো ব্যাটিংয়ের উদাহরণ রেখেছিল সফরকারীরা। ২ উইকেট হারিয়ে তুলতে পারে ৭৪ রান। কিন্তু ক্রাইস্টচার্চে দ্বিতীয় সেশন শুরু হতেই ছন্দ হারায় বাংলাদেশের ইনিংস। দ্রুত পতন হয় ৩ উইকেটের! তবে ফলোঅন করতে নেমে চা পানের বিরতির পর দারুণ জুটিতে কিউইদের হতাশ করেছেন লিটন দাস ও নুরুল হাসান সোহান। ১০১ রানের এই জুটি ভাঙে নুরুল হাসান ড্যারিল মিচেলের বল মেরে খেলতে গেলে। দ্বিতীয় ইনিংসে বাংলাদেশের সংগ্রহ দাঁড়িয়েছে ৬ উইকেটে ২৩৫ রান। সফরকারীরা এখনও ১৬০ রানে পিছিয়ে। ১২তম ফিফটি তুলে লিটন দাস ব্যাট করছেন ৭৩ রানে। সঙ্গে ক্রিজে আছেন মেহেদী হাসান মিরাজ ২ রানে।

 

দ্বিতীয় টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসে ফলোঅনে নামা বাংলাদেশের প্রথম সেশনে প্রাপ্তি ছিল ভালো ব্যাটিং প্রদর্শনী। প্রায় ঘণ্টাখানেক প্রতিরোধ গড়ে কিউইদের হতাশ করতে পেরেছে সাদমান ইসলাম-মোহাম্মদ নাঈম জুটি। দলীয় স্কোর যখন ২৭ তখনই বিপদ ডেকে আনেন সাদমান। ১৪তম ওভারে কাইল জেমিসনের লেগ স্টাম্পের বাইরের বল ছেড়ে দিলেও পারতেন। কিন্তু অলস ভঙ্গিতে খেলতে গিয়ে টম ব্লান্ডেলের অসাধারণ এক ক্যাচে পরিণত হন তিনি। প্রায় ঘণ্টা খানেক ক্রিজে পড়ে থাকলেও বামহাতি ব্যাটার সাজঘরে ফিরেছেন ৪৮ বলে ২১ রানে। তাতে ছিল ৩টি চার। প্রথম ইনিংসেও ব্যর্থ হওয়া সাদমান করতে পেরেছিলেন মাত্র ৭ রান।

 

এক ওভার বিরতি দিয়ে আবারও উইকেট পেয়ে যাচ্ছিলেন জেমিসন। খোঁচা মারতে গিয়ে স্লিপে ক্যাচ দিয়েছিলেন নাজমুল হোসেন শান্ত। কিন্তু মিচেল সেই সুযোগ হাতছাড়া করেছেন।  

 

জীবন পেয়ে শান্ত ইনিংস মেরামতে মনোযোগী হয়েছিলেন। নাঈমকে সঙ্গে নিয়ে যোগ করেন ৪৪ রান। লাঞ্চ ব্রেকের আগে শান্ত আরেকটু ধৈর্য ধরলেই প্রথম সেশনের বিরতিটা একটু স্বস্তিতে কাটাতে পারতো বাংলাদেশ। কিন্তু নিল ওয়াগনারের শর্ট ডেলিভারিতে আর শেষ রক্ষা হয়নি। পুল করতে গিয়ে ধরা পরেন বাউন্ডারি লাইনে। ৩৬ বলে আগ্রাসী ভঙ্গিতে খেলতে থাকা শান্ত করেছেন ২৯ রান। তাতে ছিল ৫টি চার। অথচ আগের ওভারে এই শর্ট ডেলিভারিতেই তাকে অস্বস্তিতে ফেলতে চেষ্টা করেছেন ওয়াগনার। কিন্তু কিউই পেসারকে মেরে খেলেই জবাব দিয়েছিলেন। 

 

বিরতির পর মুমিনুল হক ও মোহাম্মদ নাঈম মিলে ইনিংস সামাল দিচ্ছিলেন ভালোভাবেই। ৩৪ রান যোগ করেন তারা। দুই ঘণ্টারও বেশি সময় প্রান্ত আগলে খেলা নাঈম মনোযোগ হারিয়ে বসেন দলের স্কোর ১০৫ ছাড়ালে। টিম সাউদির ফুলার লেংথের বল ড্রাইভ করতে চেয়েছিলেন। ফলাফল বল এজ হয়ে জমা পড়েছে দ্বিতীয় স্লিপে। তাতে শেষ হয় নাঈমের ৯৮ বলে খেলা ২৪ রানের ইনিংস।

 

দারুণ ইনিংস খেলার পথে ছিলেন মুমিনুল হকও। কিন্তু নাঈমের মতো একই রকম বিলাসী হওয়ার খেসরাত দিতে হয়েছে তাকে। ওয়াগনারের ফুলার লেংথের বাইরের বল ড্রাইভ করতে গিয়ে টেলরের ক্যাচ হয়ে ফিরেছেন বাংলাদেশ অধিনায়ক। তাতে ৬৩ বল খেলা মুমিনুলকে থেমে যেতে হয় ৩৭ রানে!

 

দ্রুত খেই হারানো বাংলাদেশের ইনিংসের পরবর্তী ব্যাটার ছিলেন ইয়াসির। প্রথম ইনিংসে যার হাফসেঞ্চুরি স্কোরবোর্ড সমৃদ্ধ করেছিল। এবার অবশ্য তাকে ২ রানেই সাজঘরে পাঠিয়েছেন ওয়াগনার। শর্ট ডেলিভারিকে অস্ত্র বানিয়ে বিপদে ফেলেন ইয়াসিরকে। বল তার ব্যাটে লেগে জমা পড়ে ল্যাথামের হাতে।  তার পর চা পানের বিরতির দ্রুত গতিতে রান তুলতে থাকেন নুরুল হাসান ও লিটন দাস। বেশ কিছু বাউন্ডারিতে কিউইদের হতাশ করেছেন দু’জনই। দারুন প্রতিরোধের সম্ভাবনাও দেখা যাচ্ছিল। কিন্তু মিচেলের বলে সোহান মেরে খেলতে গেলে ভেঙে যায় ১০১ রানের দারুণ এই জুটি। ৫৪ বলে ৩৬ রানে থেমেছেন সোহান। তাতে ছিল ৭টি চার।    

 

অথচ প্রথম ইনিংসে ছিল পুরোপুরি ভিন্ন চিত্র। দ্বিতীয় দিন কিউইরা ৬ উইকেটে ৫২১ রানে প্রথম ইনিংস ঘোষণার পর মাত্র ২৭ রান তুলতেই টপ অর্ডারের ৫ উইকেট হারায় বাংলাদেশ! কিছুই করতে পারেননি সাদমান ইসলাম, নাঈম শেখ, নাজমুল হোসেন শান্ত, মুমিনুল হক ও লিটন দাস।

 

ইয়াসির আলী ও নুরুল হাসান মিলে প্রাথমিক ধাক্কা সামাল না দিলে হয়তো আরও বাজে কিছু হতো। দেখতে দেখতে দলীয় স্কোর শত রানের কাছে পৌঁছায় এই দুই ব্যাটারের কল্যাণে। কিন্তু দলীয় ৮৭ রানে টিম সাউদির দুরন্ত গতির কাছে পরাস্ত হতেই হয় নুরুল হাসানকে। লেগ বিফোরে আম্পায়ার আঙুল তুলে দেন সরাসরি। নুরুল হাসান রিভিউ নিলেও রক্ষা হয়নি। আম্পায়ার্স কলে বিদায় নিতে হয়েছে। ফেরার আগে ৬২ বলে ৪১ রানের গুরুত্বপূর্ণ ইনিংস উপহার দেন নুরুল হাসান। এই জুটিতে যোগ হয় গুরুত্বপূর্ণ ৬০ রান।

 

তার পর মিরাজ ছিলেন শেষ প্রতিষ্ঠিত ব্যাটসম্যান। কিন্তু অফস্পিনিং অলরাউন্ডার টিকে থাকার ধৈর্য দেখাতে পারলেন না। ৩৩ বল খেলা এই ব্যাটারকে বোল্ড করেছেন ট্রেন্ট বোল্ট। আর এই উইকেট তুলে নিয়েই টেস্ট ক্যারিয়ারের ৩০০ উইকেটের মাইলফলক ছুঁয়ে ফেলেন কিউই পেসার। মিরাজের বিদায়ে তখন লেজ বের হয়ে যায় সফরকারীদের। লেজের দিকে শুরুর পতনই হয় তাসকিনের বিদায়ে। জেমিসনের বলে ক্যাচ তুলে দিয়েছেন।

 

একপ্রান্ত আগলে ইয়াসির শুধু নিজের ব্যাটিং দক্ষতার প্রদর্শনী করতে পেরেছেন। তুলে নিতে পেরেছন ক্যারিয়ারের প্রথম টেস্ট ফিফটিও। তবে ৫৫ রান করার পর আগ্রাসী হতে গিয়ে ক্যাচ দিয়ে ফিরেছেন জেমিসনের বলে। ৯৫ বল খেলা ইয়াসিরের ইনিংসে ছিল ৭টি চার। তার বিদায়ের পর শরিফুলও বোল্ড হলে ৪১.২ ওভারে ১২৬ রানেই শেষ হয় বাংলাদেশের প্রথম ইনিংস।

 

নিউজিল্যান্ডের হয়ে সেরা বোলিং ছিল ট্রেন্ট বোল্টের। ৪৩ রানে ৫ উইকেট নিয়েছেন। ২৮ রানে ৩টি নিয়েছেন টিম সাউদি। ৩২ রানে দুটি নিয়েছেন কাইল জেমিসন।      

 

কিউইদের ৬ উইকেটে ৫২১ রানে প্রথম ইনিংস ঘোষণার পথে দুর্দান্ত ব্যাটিংয়ে ল্যাথাম খেলেছেন ২৫২ রানের ঝলমলে ইনিংস। ডাবল সেঞ্চুরির পথ প্রথম দিনই করে রেখেছিলেন। সুযোগটা নষ্ট করেননি বাঁহাতি ওপেনার। দ্বিতীয় দিনের সকালেই টেস্ট ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় ডাবল সেঞ্চুরি পূরণ করেছেন তিনি। মুমিনুলের বলে আউট হওয়ার আগে ৩৭৩ বলের ইনিংসটি কিউই অধিনায়ক সাজান ৩৪ বাউন্ডারি ও ২ ছক্কায়।

 

ল্যাথামের সঙ্গে ৯৯ রান নিয়ে দ্বিতীয় দিন শুরু করেছিলেন ডেভন কনওয়ে। প্রথম বলেই বাউন্ডারি হাঁকিয়ে টেস্ট ক্যারিয়ারের তৃতীয় সেঞ্চুরি তুলে নেন এই ব্যাটার। যদিও শতক পূরণের পর বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি। করেছেন ১০৯ রান। কনওয়ে ১৬৬ বলের ইনিংসটি সাজান ১২ বাউন্ডারি ও ১ ছক্কায়। বাংলাদেশের দুই পেসার শরিফুল ও এবাদত দুজনই পেয়েছেন ২টি করে উইকেট। আর ১ উইকেট শিকার মিরাজের।

 

যাযাদি/এসএইচ