কেপটাউনের মাঠে ইতিহাস গড়লেন পন্থ

প্রকাশ | ১৪ জানুয়ারি ২০২২, ১২:২০

যাযাদি ডেস্ক

 

মহেন্দ্র সিং ধোনি কি কেপটাউনে ফোন করেছিলেন তাকে? বিরাট কোহলি যখন তার মতো তরুণ, ধোনি পরামর্শ দিয়েছিলেন- দুইটি ভুলের মধ্যে যেন ছয় থেকে সাত মাসের পার্থক্য থাকে। কাগিসো রাবাডাকে জোহানেসবার্গ টেস্টে পাল্টা আক্রমণ করতে গিয়ে উইকেট দিয়ে তীব্র সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছিল তাকে। সেই তিনিই উঠে দাঁড়ালেন কেপটাউনে। হেলমেট খুলে যখন প্রশংসা কুড়াচ্ছিলেন, গ্যালারিতে তৃপ্ত দেখাচ্ছিল সতীর্থদের। প্রত্যাবর্তনকে আসলে সেঞ্চুরি নামে চেনে ক্রিকেট। জবাব দেওয়ার ভাষাও সেঞ্চুরি।

 

কেপটাউনের বাইশ গজে দাঁড়িয়ে থাকা মাঝারি উচ্চতার ছেলেটির নাম যে ঋষভ পন্থ তা মনেই হচ্ছিল না। যেন ধোনির ছায়া আঁকড়ে দাঁড়িয়ে আছেন তিনি। ঠান্ডা মাথা। চাপহীন। একদম শেষ মুহূর্তে আগ্রাসী। যেন নিজের সেঞ্চুরি ইনিংসের স্ক্রিপ্ট নিজেই লিখলেন। ১০০ রানে অপরাজিত থাকলেন। কিন্তু এই ইনিংসে দেখিয়ে দিয়ে গেলেন, পন্থ আসলে বড় ম্যাচের প্লেয়ার। ইংল্যান্ডে সেঞ্চুরি করেছেন ক্যারিয়ারের একদম শুরুর দিকে। অস্ট্রেলিয়াতেও পেয়েছেন। এবার দক্ষিণ আফ্রিকার মাঠেও শতরানের স্মৃতি রেখে গেলেন ভারতীয় এই কিপার। আর রেকর্ড? প্রথম এশিয়ান কিপার হিসেবে প্রোটিয়াদের দেশে করলেন সেঞ্চুরি।

 

গত বছর আমেদাবাদের ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে ১০১ রান করেছিলেন পন্থ। ১৫টা ইনিংস পর আবার সেঞ্চুরি বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যানের। কমেন্ট্রি বক্সে বলে সুনীল গাভাস্কারের মতো বিশ্লেষক উচ্ছ্বসিত হয়ে বললেন, ‘দুরন্ত ইনিংস। ঠান্ডা মাথায় নিজেকে এগিয়ে নিয়ে গেছে। এই ইনিংসটা সে অনেকদিন মনে রাখবে।’ শুধু পন্থ কেন, ভারতীয় ক্রিকেটও মনে রাখবে। না হলে বীরেন্দ্র শেবাগের মতো একজন ক্রিকেটার টুইটারে লিখবেন কেন, ‘ছেলেটাকে একাই ছেড়ে দাও। বিশ্বের অন্যতম সেরা টেস্ট ম্যাচ উইনার।’

 

পন্থকে প্রশংসায় ভরিয়ে দেওয়ার পিছনে অনেক কারণ আছে। ১৩৯ বলে ১০০ রানের নট আউট দিয়ে এই ইনিংসটাকে ব্যাখ্যা করা যাবে না। পর পর ব্যর্থতায় ঘাড়ে নিঃশ্বাস ফেলা সিনিয়র কিপার ঋদ্ধিমান সাহা নামক চাপটাও জুড়তে হবে। আগের ইনিংসে উইকেট ছুড়ে আসার সমালোচনার চাপটাও মাথায় রাখতে হবে। থাকবে ভারতের দ্বিতীয় ইনিংসে ১৫২ রানে ৫ উইকেট চলে যাওয়া। বিরাট কোহলিকে উল্টো দিকে পেয়ে নিজেকে সংযত রেখেছিলেন। ক্যাপ্টেন আউট হওয়ার পরও ভারত ১৯৮ রান তুলবে আশাই করা যায়নি। পন্থ করেছিলেন। অশ্বিন, শার্দূল, উমেশ, সামি, বুমরাহদের উইকেট হারানোর খেলার মাঝেও নিজের ব্যাটিংয়ের ধরণ বদলাননি। বিরাট আউট হওয়ার সময় ৭১ রানে ক্রিজে ছিলেন। শেষ পর্যন্ত নট আউট থেকে গেলেন সেঞ্চুরি ছুঁয়ে। শুধু তাই, সেঞ্চুরির কাছে হেরে হারিয়ে যান এই অভিযোগও তো ওড়ালেন পন্থ।

 

কিছু ইনিংস চিরকাল মনে থেকে যায়। আর সেই কারণেই টি-টোয়েন্টি যুগেও টেস্ট ক্রিকেট সমান প্রাসঙ্গিক। যেমন মনে থেকে যাবে পন্থের এই সেঞ্চুরি। ঠিক তেমনই মনে থেকে যাবে, হাত থেকে ব্যাট ছিটকে যাওয়ার পর যত্ন করে তা তুলে আনা। তারপর ওই ব্যাটকে চুমুতে ভরিয়ে দেওয়া। ব্যাটকে আদর করতে হয়। না হলে ব্যাট ভালোবাসবে কেন?

 

যাযাদি/এসএইচ