১৯৯৮-২০১৫ সাল পর্যন্ত এই ১৭ বছর ফুটবলের সর্বোচ্চ নিয়ন্ত্রণ সংস্থা ফিফার প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন সেপ ব্ল্যাটার। এক সময় ফুটবলের হর্তাকর্তা এ ব্যক্তির এখন দিন কাটে আদালত পাড়ায় যাওয়া-আসা করেই। সুইজারল্যান্ডের ৮৬ বছর বয়সী ব্ল্যাটার আর ফরাসি কিংবদন্তি ও সাবেক উয়েফা প্রেসিডেন্ট মিশেল প্লাতিনি জালিয়াতি এবং অন্যান্য অপরাধের দায়ে বিচারের মুখোমুখিতে এখন তাদের দিন যাচ্ছে লজ্জা আর সম্মানহানির মধ্য দিয়ে।
২০১১ সালে প্লাতিনিকে দেয়া ১৩ লাখ ইউরোর একটি 'অনৈতিক অর্থপ্রদানের' মাধ্যমে ফিফার ইথিকস কোড ভাঙ্গার দায়ে ব্ল্যাটারকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়। সেইসাথে যুক্ত ছিল প্লাতিনির নামও। সে মামলা নিয়ে এখন বিচারের মুখোমুখি ব্ল্যাটার-প্লাতিনি। যার রায় হতে পারে আগামী মাসে।
নিজে মামলায় জড়ালেও এমন অবস্থার জন্য বর্তমান ফিফা সভাপতি জিয়ান্নি ইনফান্তিনোকে দায়ী করছেন ব্ল্যাটার । অন্যদিকে নিজের ওপর অন্যায়-অবিচার হচ্ছে বলে অভিযোগ তুলেছেন প্লাতিনি।
সুইজারল্যান্ডের সংবাদমাধ্যম রাদিও তেলিভিসিওন সুইসে (আরটিএস) নানা কথার মাঝে নিজে ফিফার প্রধানের দায়িত্বে থাকার সময় কী কী উন্নতি করেছেন, সেগুলোর ব্যাখা করেছেন ব্ল্যাটার, ‘নিজের সম্মান আমি ফিরে পেতে চাই। আমি যখন এসেছিলাম (ফিফায়), আমাদের কিছুই ছিল না। আর আমি যখন বিদায় নিলাম, আমরা একটা বড় আন্তর্জাতিক সংগঠন হয়ে উঠি। আর্থিকভাবে, সামাজিকভাবে, সাংস্কৃতিকভাবে, এমনকি রাজনৈতিক দিক থেকেও অনেক শক্তিশালী একটা সংগঠন হয়ে উঠি।’
নিজেকে নির্দোষ দাবি করে ব্ল্যাটার উল্টো ইনফান্তিনো তার বিপক্ষে মনগড়া মামলা করতে চান বলে জানান, ‘জানি না কেন, তবে ইনফান্তিনো আমাকে চায় না। সে তো আমার বিরুদ্ধে মনগড়া নতুন নতুন মামলাও তৈরি করতে চায়। সে আমাকে টেনেহিঁচড়ে নিচে নামাতে চায়, পাশাপাশি আমি যা যা করেছি সেগুলোকেও। কারণ, সে মনে করে, সে আমার চেয়ে ভালো করছে।’
‘বলতেই হচ্ছে, আমি খুব কষ্ট পেয়েছি সবকিছুতে। আমার বিরুদ্ধে ফৌজদারি অপরাধের অভিযোগ তোলা হয়েছে, আমাকে চোর বলা হচ্ছে। অবিশ্বাস্য! আমি কেন এখন আদালতে আছি, সেটাই বুঝতে পারছি না। আমি নিশ্চিত, লাখ লাখ না হলেও হাজারো ফুটবলার আমার এই অবস্থার কারণ বুঝতে পারছে না।’
এদিকে প্লাতিনি তার বিরুদ্ধে চলা মামলাগুলোকে বলছেন অন্যায়-অবিচার, ‘অন্যায়–অবিচারের কারণে আমাদের কাছের মানুষ, পরিবার, সন্তান, নাতি-নাতনি, সবাই কষ্ট পায়, কারণ তারা তো এসবের জন্য তৈরি নয়। তবে আমি লড়ে যাব। আমি লড়াইয়ে আছি এবং লড়াই ব্যাপারটা আমি সব সময়ই উপভোগ করেছি। হাল ছেড়ে দিইনি কখনো, দেবও না। শেষ পর্যন্ত দেখব কী হয়।’
উল্লেখ্য, ব্ল্যাটার (৮৬) ও প্লাতিনি (৬৬) উভয়ই তাদের বিরুদ্ধে আনা 'অনৈতিক অর্থপ্রদানের' অভিযোগকে অস্বীকার করেন। তারা জানান, অর্থ প্রদানের বিষয়ে তাদের ২০ বছরের জন্য মৌখিক চুক্তি ছিল।
তবে ২০১১ সালে যখন ব্ল্যাটার ফিফা থেকে প্লাতিনিকে টাকা দিয়েছিলেন, তখন তিনি কাতারের মোহাম্মদ বিন হাম্মামের বিরুদ্ধে পুনঃনির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় প্রচারণা চালানোর প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। যেখানে ইউরোপীয় ভোটারদের ওপর প্লাতিনির প্রভাব মুখ্য কারণ হিসাবে দেখা হয়।
যাযাদি/ এস