শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

টেস্ট সাম্রাজ্যও কি বাবরের?

যাযাদি ডেস্ক
  ১৮ জুলাই ২০২২, ১৯:৪২

বাবর আজম- ওয়ানডের শীর্ষ র‌্যাংকিংধারী ব্যাটসম্যান, তার পরে থাকা ইমাম উল হকের চেয়ে ৭৭ র‌্যাংকিং পয়েন্ট এগিয়ে। টি-টোয়েন্টি র‌্যাংকিংয়েও এক নম্বরে, তার পরে ২৪ পয়েন্টের ব্যবধানে পিছিয়ে থাকা মোহাম্মদ রিজওয়ান। স্বপ্ন দেখেন টেস্টেও এক নম্বর হওয়ার। এই তো গত জুনেই এমনটা জানান পাকিস্তানের অধিনায়ক।

এজন্য অবশ্য আরও বহুদূর যেতে হবে বাবরকে। লাল বলের ক্রিকেটের র‌্যাংকিংয়ে চতুর্থ স্থানে তিনি, যেখানে শীর্ষে আছেন দুরন্ত ফর্মে থাকা জো রুট। বাবরের উপরে বাকি দুজন হলেন স্টিভেন স্মিথ ও মার্নাস লাবুশেন। বাবর যে গতিতে এগোচ্ছেন, এক সময় সেই স্বপ্ন যে পূরণ হবে না সেটা বলতে শতবার ভাবতে হবে।

বর্তমান যুগে অধিনায়কত্ব ও ব্যক্তিগত পারফরম্যান্সের মেলবন্ধন করতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন ক্রিকেটাররা, সেখানে বাবর অনন্য। ম্যাচের পরিস্থিতি বুঝতে পারছেন, মাথা ঠাণ্ডা রেখে ভাবছেন কীভাবে দলকে বাঁচানো যায়। সামনে থেকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। পরিকল্পনা সফল করতে যাদের পাশে প্রয়োজন, তারা ব্যর্থ হলেও অন্যদের অনুপ্রেরণা-উৎসাহ দিয়ে যাচ্ছেন ২২ গজে থেকে।

এর অন্যতম সেরা দৃষ্টান্ত সবশেষ দেখা গেলো গল টেস্টে। শ্রীলঙ্কার প্রভাত জয়াসুরিয়া যখন অন্য প্রান্তের ব্যাটসম্যানদের নাভিশ্বাস তুলে ছাড়ছেন, তখন স্বাভাবিকভাবে চাপে পড়ার কথা অধিনায়কের। গলেতে দ্বিতীয় দিনের টার্নিং উইকেটে যেভাবে বাবর নিজেকে সামলে নিলেন এবং টেল এন্ডারদের মনোবল বাড়ালেন, তা এক কথায় অবিশ্বাস্য। বিশেষ করে নাসিম শাহকে কৃতিত্ব দিতেই হয়। ১১তম ব্যাটসম্যান হিসেবে নেমে ৫২ বল খেলেছেন তিনি, করেছেন ৫ রান। যে জুটি ছিল ৭০ রানে, আর বল ১৮৫টি।

১১৯ রানের এই ইনিংসে ২৪৪ বল খেলেছেন বাবর। পরের সেরা ইয়াসির শাহের, ৫৬ বল। অধিনায়ক যে ব্যক্তিগত রান করেছেন, তা ছয় দিয়ে ভাগ করলেও তিনিই দলের শীর্ষ স্কোরার।

যখন বাবরের রান ২৮, তখন সপ্তম উইকেট পড়ে যায়। আট নম্বর উইকেটটি পড়ে তার ৩৮ রানের সময়, নবমটি যায় যখন রান ৫৫। এরপরই যেন গতি বাড়ান স্ট্রাইকিংয়ে। কাসুন রাজিথাকে টানা তিনটি চার মেরে আগ্রাসী হয়ে ওঠেন। যে পিচে দলের কেউই ২০ রানও করতে পারেননি, সেখানে করলেন ক্যারিয়ারের সপ্তম সেঞ্চুরি!

এই ইনিংস হয়তো রূপকথার অংশ হবে না, কিন্তু যা অবাক করার মতো ব্যাপার- সেটা হলো তার ৮২ রানই হয়েছে দলের ৯, ১০ ও ১১ নম্বর ব্যাটসম্যানের সঙ্গে থেকে। পিচের কন্ডিশন, প্রতিপক্ষ, ম্যাচ পরিস্থিতি ভেদে বিশেষ কিছুই করে দেখালেন বাবর।

এই ইনিংস দিয়েই এশিয়ার দ্রুততম ১০ হাজার আন্তর্জাতিক রানের কীর্তি গড়েন বাবর, পেছনে ফেলেন সময়ের আলোচিত ব্যাটসম্যান বিরাট কোহলিকে। এমন অনবদ্য এক ইনিংসের পর বর্তমান অধিনায়ককে নিয়ে শহীদ আফ্রিদি বললেন, ‘বাবর বিশাল চাপের মধ্যে থেকে অসাধারণ ইনিংস খেলে আবারও নিজের মান ও সামর্থ্যের প্রমাণ দিলো।’

হ্যাঁ, এর আগেও নিজের সামর্থ্যের প্রমাণ দিয়েছিলেন। গত মার্চের কথা। ১৭২ ওভারে ৫০৬ রানের লক্ষ্য। করাচিতে সেদিন অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে হাল ধরেন বাবর। শেষ দিনে লাগতো ৩১৪ রান। হাতে ছিল ৮ উইকেট। ৪২৫ বলে ১৯৬ রানের অবিশ্বাস্য এক ইনিংস খেলে অস্ট্রেলিয়ার দিকে ঘুরে যাওয়া ম্যাচটি ড্রয়ের দিকে নিয়ে যান।

রঙিন পোশাকে বাবর এখন সাদা পোশাকেও উজ্জ্বল। এই ফরম্যাটেও কি তাকে সেরাদের কাতার, যার কেতাবি নাম ‘বিগ ফোর’, সেখানে কি রাখার সময় হয়ে গেলো? রুট, স্মিথ, কোহলি, কেন উইলিয়ামসনদের সঙ্গে তার নামও কি শোভা পাবে? নাকি একের পর এক বিভিন্ন রেকর্ডে কোহলিকে টপকাতে থাকা বাবর এই তালিকা থেকেও তাকে সরিয়ে দেবেন?

বয়সটা কেবল ২৭, এখনও বহু বছর পড়ে আছে সামনে। সাদা পোশাকে রঙিন পোশাকের মতো ঔজ্জ্বলতা বাবর ধরে রাখতে পারেন কি না সেটাই দেখার। আপাতত গলে যে ‘ব্যতিক্রমী, পরিণত ও ধৈর্যশীল’ ইনিংস খেললেন তা দারুণ সম্ভাবনারই আভাস দিচ্ছে। হয়তো ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টির পর টেস্ট সাম্রাজ্যও নিজের করে নিতে যাচ্ছেন বাবর।

যাযাদি/ এস

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে