২০২০ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর, ন্যাশনাল টি-টোয়েন্টি কাপে সাউদার্ন পাঞ্জাবের ছুড়ে দিয়েছে ২০১ রানের টার্গেট। পাহাড়সম এই চ্যালেঞ্জ সাত বল হাতে রেখেই অতিক্রম করলো সেন্ট্রাল পাঞ্জাব, নায়ক আব্দুল্লাহ শফিক। টি-টোয়েন্টিতে অভিষেক ম্যাচে ৫৮ বলে ১১ চার ও ৪ ছয়ে ১০২ রানে অপরাজিত থেকে দলকে জেতালেন তিনি। আর ওই দিনই নজর কেড়ে ফেলেন পাকিস্তানের নির্বাচকদের। ডাক পান জাতীয় টি-টোয়েন্টি দলে।
ওই বছর নভেম্বরে রাওয়ালপিন্ডিতে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে অভিষেকে ৪১ রানে অপরাজিত ছিলেন। কিন্তু নিউ জিল্যান্ডে দুটি ম্যাচ খেলেই ডাক মারেন। তারপর থেকে কেবল সাইড বেঞ্চই গরম করেছেন শফিক। কিন্তু তার চোখ ছিল লঙ্গার ভার্সনে। প্রথম শ্রেণির প্রক্রিয়ায় ২০ মাস কাটানোর পর অপেক্ষা ফুরোয়। বাংলাদেশের বিপক্ষে চট্টগ্রামে নেমেই নিজের জাত চেনান। করেন দুটি হাফ সেঞ্চুরি- ৫২ ও ৭৩। অবশ্য দ্বিতীয় ম্যাচে একমাত্র ইনিংসে ব্যাট করে আসে ২৫ রান।
রাওয়ালপিন্ডিতে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ঐতিহাসিক টেস্টেও জায়গা ধরে রাখেন শফিক। প্রথম ইনিংসে ৪৪ করার পর দ্বিতীয় ইনিংসে উদ্বোধনী জুটিতে ইমাম উল হকের সঙ্গে ২৫২ রান। ড্র হওয়া ম্যাচে ওই ইনিংসে প্রথম সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে অপরাজিত ছিলেন ১৩৬ রানে। করাচিতে অল্পের জন্য দ্বিতীয় সেঞ্চুরি মিস করেন, ৫০৬ রানের টার্গেটে ব্যাটিং বিপর্যয়ে ৯৬ রানের স্বস্তিদায়ক ইনিংস খেলেন শফিক। লাহোরেও প্রথম ইনিংসে আশির উপরে রান করেন।
অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে দুই ফিফটি ও অপরাজিত সেঞ্চুরিতে সাজানো ইনিংস খেলে যেন পাকিস্তানের ওপেনারের জন্য হাপিত্যেশ দূর করে দেন শফিক। সাঈদ আনোয়ারের পর সেরা ওপেনারকে খুঁজে পাওয়ার খুশি তখন পাকিস্তানের। ২২ বছর বয়সী ডানহাতি ওপেনার নিজেকে আরেকবার প্রমাণ করলেন, এবার নিজের ক্যারিয়ার সেরা পারফরম্যান্স ছাপিয়ে গেলেন। গলে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড তাড়া করলো পাকিস্তান তার ব্যাটে।
৩৪২ রানের টার্গেটে নেমে দ্বিতীয় সেঞ্চুরি করলেন শফিক। ওপেনিংয়ে নেমে শেষ করে আসলেন ম্যাচ। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে চার উইকেটের জয়ে অবশ্য দারুণ দুটি জুটি পেয়েছেন তিনি, তৃতীয় উইকেটে বাবর আজমের সঙ্গে ১০১ রান ও চতুর্থ উইকেটে মোহাম্মদ রিজওয়ানের সঙ্গে ৭১ রান।
প্রথম ইনিংসে মাত্র ১৩ রান করা শফিক দলকে জেতানোর ইনিংসে তিনবার জীবন পান- ৭০, ১৩৫ ও ১৫১ রানে। খেলেন ১৬০ রানের অপরাজিত ইনিংস, ৪০৮ বলের ইনিংসে ছিল মাত্র ৭ চার ও ১ ছয়। টি-টোয়েন্টি দিয়ে নজরকাড়া এই ডানহাতি ব্যাটসম্যান সাদা পোশাকে গড়েছেন অনন্য এক রেকর্ড। বিশ্বের প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসে ৫০০ মিনিটেরও বেশি সময় ব্যাট করে রান তাড়ায় সফল হলেন তিনি। ক্রিজে ছিলেন ৫২৪ মিনিট! প্রভাত জয়াসুরিয়া ও ধনঞ্জয়া ডি সিলভার স্পিন জাদুতে দুই সেশনে ম্যাচ থেকে ছিটকে যাওয়ার আশঙ্কায় পড়েছিল পাকিস্তান। কিন্তু ঠাণ্ডা মাথায় দলকে জিতিয়ে ছাড়লেন শফিক। তার চারেই তো নিশ্চিত হয় অবিস্মরণীয় জয়।
তার প্রশংসা করতে গিয়ে বাবর বললেন, ‘তরুণ ব্যাটসম্যান হিসেবে নিজের জাত দেখালো শফিক। তাকে ভালো পারফর্ম করা দেখতে পেরে সত্যিই ভালো লাগছে।’ টি-টোয়েন্টি দিয়ে আবির্ভাব হওয়া শফিক সাদা পোশাকে যেন জ্বলন্ত নক্ষত্র।
যাযাদি/এস