ওয়ানডে থেকে আচমকা অবসর ম্যাক্সওয়েলের
প্রকাশ | ০২ জুন ২০২৫, ১৪:৪৭

অস্ট্রেলিয়ার তারকা ক্রিকেটার গ্লেন ম্যাক্সওয়েল ওয়ানডে ক্রিকেট থেকে আচমকা অবসরের ঘোষণা দিয়েছেন। আজ সোমবার (২ জুর) দ্য ফাইনাল ওয়ার্ড পডকাস্ট-এর একটি দীর্ঘ সাক্ষাৎকারে অবসরের ঘোষণা দেন ৩৬ বছর বয়সি এই অজি অলরাউন্ডার।
তর্কসাপেক্ষে ওয়ানডের সর্বকালের সেরা ইনিংসটি খেলেছেন গ্লেন ম্যাক্সওয়েল। মারকুটে অস্ট্রেলিয়ার এই অলরাউন্ডার ওয়ানডে থেকে অবসরের ঘোষণা দিয়েছেন। যা অনতিবিলম্বে কার্যকর হচ্ছে। তবে তিনি আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টির জন্য নিজেকে উন্মুক্ত রেখেছেন। সংক্ষিপ্ত ফরম্যাটে খেলে যাবেন আগামী টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ পর্যন্ত।
চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির সেমিফাইনালে ছিটকে যাওয়ার পর স্টিভেন স্মিথ ওয়ানডেকে বিদায় জানিয়েছেন। এবার সেই তালিকায় যুক্ত হলো ৩৬ বছর বয়সী ম্যাক্সওয়েলের নাম। তিনি টেস্ট থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে এখনও অবসর নেননি। তবে লাল বলের ক্রিকেটে তার আর নির্বাচিত হওয়ার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে।
ম্যাক্সওয়েল সোমবার ফাইনাল ওয়ার্ড পডকাস্টের সঙ্গে দীর্ঘ সাক্ষাৎকারের সময় তার অবসরের ঘোষণাটি দিয়েছেন। সেখানেই জানান যে, ২০২২ সালে তার পা ভেঙে যাওয়ার পর ওয়ানডে ক্রিকেটের শারীরিক চাপ তার জন্য খুব বেশি হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশেষ করে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে ম্যাচগুলোর পর যেভাবে শরীর সাড়া দিয়েছে, ‘আমি মনে হচ্ছিল শরীর যেভাবে প্রতিক্রিয়া করছে তাতে দলের প্রতি কিছুটা দায়িত্বজ্ঞানহীন আচরণ করছি। আমি জর্জ বেইলির (প্রধান নির্বাচক) সঙ্গে আলোচনা করি এবং তাকে জিজ্ঞেস করি তার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী।’
তিনি বলছিলেন, ‘‘আমরা ২০২৭ বিশ্বকাপ নিয়ে কথা বলি এবং তাকে বলি, ‘আমার মনে হচ্ছে না ওতদূর পর্যন্ত পৌঁছাতে পারবো। এখনই সময় আমার পজিশনের জন্য নতুন কাউকে প্রস্তুত করার এবং তাকে স্থায়ী সুযোগ দেওয়ার।’ আশা করি, তারা সেজন্য যথেষ্ট প্রস্তুতির সময় পাবে।’’
ম্যাক্সওয়েল বলেছেন, ‘আমি সবসময় বলেছি, যদি নিজেকে উপযুক্ত মনে না করি, তাহলে কখনই জোর করে জায়গা ধরে রাখতে চাই না। শুধু কয়েকটি সিরিজ খেলার জন্য বা নিজের স্বার্থে খেলে যেতে চাই না। ওরা এখন খুব স্পষ্ট একটি পথে এগোচ্ছে, তাই এটি তাদের জন্য সুযোগ পরবর্তী বিশ্বকাপকে সামনে রেখে সেরা কম্বিনেশন গড়ে তোলা। আমি জানি পরিকল্পনা কতটা গুরুত্বপূর্ণ।’
ম্যাক্সওয়েল অসাধারণ ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ইতি টানছেন। যদিও তার সংখ্যাগুলো তার ভূমিকার গুরুত্ব তুলে ধরবে না। ১৪৯ ম্যাচে সংগ্রহ ৩ হাজার ৯৯০ রান (গড় ৩৩.৮১) এবং ৭৭ উইকেট (গড় ৪৭.৩২) ।
ম্যাক্সওয়েল নিজেই স্বীকার করেছেন, অস্ট্রেলিয়ার ওয়ানডে দলে তার অন্তর্ভুক্তি অনেক আগেই হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু বাস্তবে পুরোপুরি প্রস্তুত ছিলেন না তিনি। ২০১২ সালে ওয়ানডে অভিষেকের আগে তিনি ভিক্টোরিয়ার হয়ে মাত্র ১৪টি লিস্ট ‘এ’ ম্যাচ খেলেছিলেন। কিন্তু সেই পথচলার ছয় নম্বর ম্যাচেই ২০১১ সালে মাত্র ১৯ বলে অস্ট্রেলিয়ার ঘরোয়া ওয়ানডে ক্রিকেটের দ্রুততম হাফসেঞ্চুরি করেন। এই রেকর্ডটি ২০২৩ সাল পর্যন্ত অক্ষুণ্ণ ছিল, তার পর জেক ফ্রেজার-ম্যাকগার্ক তার পথ ধরে ইতিহাসের দ্রুততম লিস্ট ‘এ’ সেঞ্চুরি করতে গিয়ে তা ভেঙে দেন।
যদিও সেটিই ছিল ম্যাক্সওয়েলের ভবিষ্যৎ ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ইঙ্গিত। আন্দ্রে রাসেল ছাড়া ৫০ ওভারের ক্রিকেটের ইতিহাসে আর কোনও ব্যাটারের স্ট্রাইক রেট ম্যাক্সওয়েলের ১২৬.৭০-এর চেয়ে বেশি নয়। আর যেসব ব্যাটার ২০০০ রানের বেশি করেছেন, তাদের মধ্যে কেউই ১১৭.০৫ স্ট্রাইক রেট অতিক্রম করতে পারেননি।
ম্যাক্সওয়েল ফিনিশারের ভূমিকায় খেলে ৩৩.৮১ গড় বজায় রেখেই সেই স্ট্রাইক রেট ধরে রেখেছেন এবং চারটি সেঞ্চুরি করেছেন। যার মধ্যে অন্যতম ছিল ২০২৩ বিশ্বকাপে মুম্বাইয়ে আফগানিস্তানের বিপক্ষে তার অবিশ্বাস্য ২০১* রানের ইনিংস। এটি ছিল ওয়ানডেতে কোনও অস্ট্রেলিয়ানের করা প্রথম ডাবল সেঞ্চুরি এবং একইসঙ্গে রান তাড়ায় বিশ্বের প্রথম ডাবল সেঞ্চুরি।
এছাড়াও ওপেনার ছাড়া কোনও ব্যাটারের প্রথম ডাবল সেঞ্চুরির নজির ছিল সেটি এবং এটি করেছিলেন ছয় নম্বরে নেমে এমন এক অবস্থায় যখন অস্ট্রেলিয়া ২৯২ রানের লক্ষ্য তাড়ায় ৯১ রানে ৭ উইকেট হারিয়ে চরম বিপর্যয়ের মুখে!
অ্রস্ট্রলিয়ার প্রধান নির্বাচক জর্জ বেইলি বলেন,‘ ম্যাক্সওয়েল ছিলেন ওডিআই ইতিহাসের অন্যতম সেরা ডায়নামিক খেলোয়াড়। তার ব্যাটিং, বোলিং, ফিল্ডিং সবকিছুতেই ছিল ক্লাস। দুইটি বিশ্বকাপ জয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখা ম্যাক্সওয়েল এখনো টি২০তে আমাদের বড় শক্তি।’