বিদেশের মাটিতে নাঈমের বাজিমাত

প্রকাশ | ২০ জুন ২০২৫, ১৮:২৭ | আপডেট: ২০ জুন ২০২৫, ১৯:২৬

ক্রীড়া ডেস্ক
লংকানদের একাই ধসিয়ে দিয়েছেন নাঈম হাসান

গল টেস্টের চতুর্থ দিনে বাংলাদেশকে চিন্তায় ফেলে দিয়েছিল শ্রীলংকার ব্যাটাসম্যানরা। যদিও শুরুতে বাংলাদেশের বোলাররা সাফল্য পেলেও এরপর প্রতিরোধ গড়েন কামিন্দু মেন্ডিস ও মিলান রত্নায়েকে। 

স্বাগতিক শ্রীলংকা যখন লিড নেওয়ার পথে, তখন বাধা হয়ে দঁড়ালেন নাঈম হাসান। বাংলাদেশি স্পিনারের সামনে ভেঙে পড়েছে লংকান প্রতিরোধ। বিদেশের মাঠিতে প্রথমবারের মতো নাঈম তুলে নিয়েছেন টেস্ট ক্যারিয়ারে নিজের চতুর্থ পাঁচ উইকেট।

২০১৮ সালের নভেম্বরে চট্টগ্রামে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে টেস্ট অভিষেক হয়েছিল নাঈম হাসানের। সেই থেকে পেরিয়ে গেছে সাড়ে ছয় বছরের বেশি সময়। 

শুধু একটি সংস্করণেই খেলতে থাকা অফ স্পিনারের অবশেষে বিদেশের মাটিতে বোলিংয়ের সুযোগ মিলল। আর তা দারুণভাবে লুফে নিলেন তিনি। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে দারুণ পারফরম্যান্সে ৫ উইকেট নিয়ে বাংলাদেশকে পাইয়ে দিলেন লিড।
শুক্রবার গল টেস্টের চতুর্থ দিনের দ্বিতীয় সেশনে স্বাগতিকদের প্রথম ইনিংস থেমেছে ৪৮৫ রানে। টস জিতে আগে ব্যাট করা বাংলাদেশ প্রথম ইনিংসে ৪৯৫ রান তোলায় ১০ রানের ছোট একটি লিড মিলেছে তাদের। অথচ এক পর্যায়ে লঙ্কানরাই লিড নেওয়ার জন্য শক্ত অবস্থানে ছিল। 

তবে লাঞ্চ বিরতির পর খেলা শুরু হলে মাত্র ২০ রানে তাদের শেষ ৪ উইকেট তুলে নেয় টাইগাররা। সেখানে মূল ভূমিকা রাখেন ২৫ বছর বয়সী নাঈম। ৪৩.২ ওভার বল করে ১২১ রান খরচায় ৫ উইকেট নেন তিনি।

১৩ টেস্টের ক্যারিয়ারে নাঈমের এটি চতুর্থ ৫ উইকেট। শ্রীলংকার বিপক্ষে এই স্বাদ তিনি পেলেন দ্বিতীয়বার। ২০২২ সালের মেতে চট্টগ্রামে দলটির বিপরীতে ১০৫ রান খরচায় ৬ উইকেট শিকার করেছিলেন, যা তার ক্যারিয়ারসেরা বোলিংয়ের নজির।

দেশের বাইরে এর আগে কেবল একটি টেস্টই খেলেছিলেন নাঈম। ২০১৯ সালের নভেম্বরে ইডেন গার্ডেন্সে ভারতের বিপক্ষে। কিন্তু বাংলাদেশের প্রথম ইনিংসে ব্যাটিংয়ের সময় প্রতিপক্ষের পেসার মোহাম্মদ শামির বল আঘাত করে তার হেলমেটে। পরিস্থিতি গুরুতর হওয়ায় তাকে হাসপাতালে পর্যন্ত যেতে হয়েছিল। 

আর শেষমেশ ওই ম্যাচ থেকে ছিটকে যাওয়ায় আর বল করতে পারেননি নাঈম। পরে তার কনকাশন বদলি হিসেবে নামেন বাঁহাতি স্পিনার তাইজুল ইসলাম। ওই ঘটনার সাড়ে পাঁচ বছরের বেশি সময় পর ফের বিদেশের মাটিতে খেলার সুযোগ পেয়েই বাজিমাত করলেন তিনি।

এদিন শ্রীলংকা লাঞ্চে গিয়েছিল ৬ উইকেটে ৪৬৫ রান নিয়ে। অর্থাৎ বাংলাদেশের পুঁজি থেকে মাত্র ৩০ রান পিছিয়ে ছিল তারা। হাতে ছিল ৪ উইকেট। ক্রিজে থিতু হয়ে কামিন্দু মেন্ডিস পাচ্ছিলেন সেঞ্চুরির সুবাস। তাকে যোগ্য সঙ্গ দিচ্ছিলেন মিলন রত্নায়েকে। দুজনের অবিচ্ছিন্ন সপ্তম উইকেট জুটির রান তখন ছিল ৭৯।

বিরতির পর নাঈমের নেতৃত্বে বাংলাদেশ দল হাজির হয় অন্যরূপে। অভাবনীয় কায়দায় তারা আদায় করে নেয় লিড। দ্বিতীয় সেশনের তৃতীয় ওভারে শ্রীলঙ্কার ইনিংসে আঘাত করেন পেসার হাসান মাহমুদ। পুল করতে গিয়ে তার বল স্টাম্পে টেনে বোল্ড হন মিলন (৮৩ বলে ৩৯ রান)।

৮৪ রানের জুটি ভাঙার পর নাঈম মেলে ধরেন নিজেকে। পরের ওভারেই জোড়া শিকার ধরেন তিনি। প্রথম বলে বিপজ্জনক কামিন্দুকে (১৪৮ বলে ৮৭ রান) বিদায় করেন। টার্ন ও বাউন্সে পরাস্ত হন এই সংস্করণে বাংলাদেশের বিপক্ষে পাঁচ ইনিংসের মধ্যে তৃতীয় সেঞ্চুরির পথে থাকা লঙ্কান ব্যাটার। 

উইকেটের পেছনে দারুণ ক্যাচ নেন লিটন দাস। শেষ বলে লাইন মিস করে স্টাম্প হারান অভিষিক্ত থারিন্দু রত্নায়েকে (৭ বলে শূন্য)। 

এরপর আসিতা ফার্নান্দোকে (৮ বলে ৪ রান) বোল্ড করে শ্রীলংকাকে অলআউট করে দেন নাঈম। আগের দিন শুধু দিনেশ চান্দিমালের উইকেট নিয়েছিলেন তিনি। এদিন কামিন্দু, থারিন্দু ও আসিতাকে সাজঘরে পাঠানোর আগে সকালে তিনি বিদায় করেন স্বাগতিক অধিনায়ক ধনঞ্জয়া ডি সিলভাকে।

শেষ পর্যন্ত গল টেস্টের প্রথম ইনিংসে নাঈমের বোলিং ফিগারটি ছিল এরকম ৪৩.২-৪-১২১-৫।