বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

সঠিক পথেই আছে দেশের ক্রিকেট : হাবিবুল বাশার

টেস্ট ক্রিকেটে যার অধিনায়কত্বে বাংলাদেশ পেয়েছিল প্রথম জয়, তিনি আর কেউ নন মিস্টার ফিফটিখ্যাত হাবিবুল বাশার সুমন। ব্যাট-প্যাড খুলে রেখে বর্তমানে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) নির্বাচক হিসেবে কঠিন এক দায়িত্ব পালন করছেন তিনি। খেলোয়াড়ি জীবন ও ক্রিকেট নিয়ে খোলামেলা কথা বলেছেন যায়যায়দিনের সঙ্গে। কীভাবে দেশের ক্রিকেটের আরও উন্নতি করা যায় সেই বিষয়েও পরামর্শ দিয়েছেন জাতীয় দলের সাবেক এই অধিনায়ক। তার সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন ক্রীড়া প্রতিবেদক সুলতান মাহমুদ রিপন
নতুনধারা
  ১২ সেপ্টেম্বর ২০২০, ০০:০০
হাবিবুল বাশার সুমন -ফাইল ফটো

খেলোয়াড় হিসেবে মাঠের খেলা, না কি নির্বাচক- কোনটাকে বেশি কঠিন মনে করেন? বাশার : যখন খেলতাম তখন মাঠের খেলোয়াড় হিসেবে অবশ্যই খেলাটাকে খুবই ইনজয় করতাম। কিন্তু খেলার চেয়েও বোর্ডে নিবার্চক হিসেবে দায়িত্ব পালন করাটাকে অনেক কঠিন মনে করছি। আপনাদের সময়কার বাংলাদেশের ক্রিকেট আর বর্তমানের ক্রিকেটের মধ্যে কী পার্থক্য খুঁজে পান? বাশার : আমাদের সময়কার বাংলাদেশ দল এত পরিমাণে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে খেলতে পারত না। প্রায় পাঁচ-ছয় মাস পর একটা খেলা হতো। ওই সময়কার খেলোয়াড়রা একবার জাতীয় দলে খারাপ করলে তার ফিরে আসাটা খুবই কঠিন হয়ে পড়ত। বর্তমানে বাংলাদেশ দল অনেক আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে খেলে থাকে, তাছাড়া 'এ' দল আছে, বিসিবি স্কোয়াড আছে এবং আছে এইচপিও দল- এতগুলো দল থাকায় একটা জায়গায় ভালো পারফর্ম করে আবারও জাতীয় দলে কামব্যাক করার প্রচুর সুযোগ রয়েছে। যেটা আমাদের সময়ে ছিল না। ২০০৭ সালে আপনার নেতৃত্বে ওয়েস্ট ইন্ডিজ বিশ্বকাপে বাংলাদেশ দল দুর্দান্ত পারফর্ম করেছিল। কিন্তু পরের সিরিজে আপনাকে আর দলে রাখা হয়নি। তাতে কী মনে হয়েছে দলকে আরও কিছু দেওয়ার বাকি ছিল? বাশার : ওয়েস্ট ইন্ডিজ বিশ্বকাপের পর আমি সেভাবে আর ভালো পারফর্ম করতে পারছিলাম না। আসলে ক্যারিবীয় বিশ্বকাপ থেকে রান-খরায় ভুগছিলাম। তাতে করে পরে আর ওভারকাম না করায় দল থেকে বাদ পড়ে যাই। যদিও প্রথমে একটু আক্ষেপও ছিল। কিন্তু পরে মনে হয়েছে নতুনদের সুযোগ করে দিতে হবে। অনেক বিদেশি কোচের অধীনেই তো আপনি খেলেছেন। আপনার দৃষ্টিতে কাকে সেরা কোচ মনে হয়েছে? বাশার : গর্ডন গ্রিনিজ, ট্রেভর চ্যাপেল, আলী জিয়া- মহসিন খান ডেভ হোয়াইটমোরের মতো অনেক নামি কোচের সঙ্গে কাজ করলেও দক্ষিণ আফ্রিকার এডি বারলোকে আমার কাছে সেরা বলে মনে হয়েছে। আর দ্বিতীয় সেরা হিসেবে বেছে নেব ডেভ হোয়াটমোরকে। বাংলাদেশের ক্রিকেট যেভাবে চলছে, তাতে করে কী আপনার মনে হয়েছে সঠিক প্রক্রিয়ায় দেশের ক্রিকেট এগিয়ে যাচ্ছে। আর এই ধারা অব্যাহত থাকলে বাংলাদেশ দল ভালো একটা জায়গায় পৌঁছাবে? বাশার : বর্তমানে ভালো এক সিস্টেমে ক্রিকেট এগিয়ে যাচ্ছে। বিভিন্ন ধাপে পর্যায়ক্রমে বয়সভিত্তিক ক্রিকেটে এখন অনেক ভালোভাবে কাজ করা হচ্ছে। যার ফলে গতবার আমরা অনূর্ধ্ব-১৯ ক্রিকেট টুর্নামেন্টে চ্যাম্পিয়ন হয়েছি। এছাড়া গত তিন-চার বছর হলো প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটের মান এখন অনেকখানি বেড়েছে। এমনকি এখানে দলগুলোর মধ্যে অনেক প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়ে থাকে। তাতে আশা করা যায়, আগামী চার-পাঁচ বছরের মধ্যে বাংলাদেশের ক্রিকেট একটা ভালোমানের স্ট্যান্ডার্ডে পৌঁছে যাবে। বর্তমানে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের জন্য একাধিক কোচ নিয়োগ দিয়েছে বিসিবি। প্রধান কোচ ছাড়াও আছেন ব্যাটিং কোচ, ফিল্ডিং কোচ, স্পিন কোচ এবং পেসারদের জন্য আছেন পেস বোলিং কোচ। অথচ আপনারা যখন খেলেছেন তখন তো এত কোচ ছিল না। তাতে কী মনে হয় না, আগে এত ধরনের কোচ থাকলে আমরা আরও ভালো করতে পারতাম? বাশার : এটা আসলে খুব স্বাভাবিক ব্যাপার। আমরা যেটা পেয়েছি, সেটা হয়তো আমার আগেরকার খেলোয়াড়রা পায়নি। তাই যেটা পেয়েছি, সেটাইতো অনেক। তবে আমাদের সময়ে এই সমস্ত কোচ পেলে নিশ্চয় আমার রানটা আরও সমৃদ্ধ হতে পারত। এমনকি যেসব জায়গায় ঘাটতি ছিল সেগুলোয় কাটিয়ে ওঠা যেত। এখনকার মতো প্র্যাকটিস সেশন ও ফিল্ডিং সেশন থাকলে অবশ্য আমি আরও উন্নতি করতে পারতাম। বাংলাদেশের ক্রিকেটের যে পারিবর্তন হচ্ছে, সেটিকে সঠিক বলে মনে করছেন? বাশার : বাংলাদেশের ক্রিকেটের পজিটিভ পরিবর্তন হচ্ছে। যখন আমি প্রথম দিকে খেলেছি তখন তো মাঠের মধ্যে বালতি করে পানি নিয়ে গিয়ে খেলোয়াড়দের খাওয়ানো হতো। তারপর তো মাঠের খেলোয়াড়দের জন্য মিনারেল-ওয়াটারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। আমি দুটোই পেয়েছি। টিমের সঙ্গে সবকিছুই পাল্টায়। তাই পরিবর্তনটা কী, পজিটিভ পরিবর্তন হচ্ছে কিনা সেটাই আমাদের দেখতে হবে। তবে বাংলাদেশের ক্রিকেট এখন ভালোর জন্য সবকিছুই পজিটিভ পরিবর্তন করা হচ্ছে। ক্রিকেট ছাড়া আপনি কী আর অন্য কোনো পেশায় জড়িত আছেন? বাশার : খেলা ছাড়ার পর অনেকে ব্যবসা-বণিজ্যের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। কিন্তু আমি ক্রিকেট খেলা ছাড়া জীবনে আর অন্য কিছু করিনি। তাই জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত ক্রিকেটের সঙ্গেই থাকতে চাই। আপনি যখন খেলতেন তখন কার খেলা ভালো লাগত। আর বর্তমানে কাদের খেলা পছন্দ করেন? বাশার : আমি যখন খেলতাম তখন আকরাম ভাই, ফারুক ভাই, নান্নু ভাই, বুলবুল ভাইদের খেলা ভালো লাগত। আমরা যখন খেলা শুরু করি তখন এনাদের খেলা ফলো করতাম। বর্তমানে সাকিব, তামিম, মুশফিক ও রিয়াদের খেলা ভালো লাগে। এখন আমাদের আইকন অনেক ব্যটসম্যান আছেন। লিটনের কয়েকটি ইনিংস আমার চোখে খুবই ভালো লেগেছে। টেস্ট এবং ওয়ানডেতে নব্বইয়ের ঘরে গিয়ে অনেক ম্যাচেই আউট হয়ে গেছেন। তাতে কী আপনার মনে হয় না ওইসব ইনিংসগুলোয় আরেকটু থিতু হতে পারলে নামের পাশে অনেকগুলো সেঞ্চুরি জমা হতো? বাশার : এখন ছাড়ার পর মনে হয় ওই ইনিংসগুলোতে আরেকটু দেখেশুনে খেললে নিশ্চয় আমার টেস্ট এবং ওয়ানডে ক্যারিয়ারে নামের পাশে অনেকগুলো সেঞ্চুরি লেখা থাকত। নব্বইয়ের ঘরে গিয়ে অনেকগুলোয় আউট হয়ে গেছি। আসলে আমি নিজের জন্য খেলিনি, সবসময় খেলেছি দেশের জন্য।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে