আসামে অবৈধদের বাংলাদেশে পাঠানোর হুমকি বিজেপি নেতার

প্রকাশ | ১১ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ০০:০০ | আপডেট: ১২ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
ভারতে ক্ষমতাসীন দল বিজেপি এই প্রথমবারের মতো স্পষ্টভাবে ঘোষণা করল যে, আসামের চ‚ড়ান্ত নাগরিক তালিকা বা এনআরসি থেকে যাদের নাম বাদ পড়বে তাদের বাংলাদেশেই ‘ডিপোটর্’ করা হবে। বিজেপির অত্যন্ত প্রভাবশালী সাধারণ সম্পাদক রাম মাধব সোমবার সন্ধ্যায় দিল্লিতে এনআরসি বিষয়ক এক আলোচনা সভায় তাদের এই নীতির কথা অত্যন্ত স্পষ্ট ভাষায় ঘোষণা করেছেন। সেখানে তিনি বলেন, এখানে আমাদের পরিকল্পনা হলো তিনটে ডি - ডিটেক্ট, ডিলিট ও ডিপোটর্। অথার্ৎ প্রথম ধাপে অবৈধ বিদেশি কারা, তাদের শনাক্ত করা হবে (ডিটেক্ট) - যেটা এখন চলছে। তারপর ভোটার তালিকা থেকে তাদের নাম বাদ দেয়া ও বিভিন্ন সরকারি সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত করার প্রক্রিয়া শুরু হবে (ডিলিট)। আর তারপর আমরা তাদের বাংলাদেশে ডিপোটর্ করব! এর আগে বিজেপির শীষর্ স্তরের কোনো নেতাই এত স্পষ্টভাবে এনআরসি থেকে বাদ-পড়া লোকজনকে বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেয়ার কথা বলেননি। ওই একই আলোচনাসভায় হাজির ছিলেন আসামের মুখ্যমন্ত্রী সবার্নন্দ সোনোয়ালও। তিনি মন্তব্য করেন, অবৈধ বিদেশিদের খুঁজতে আসামের পর এবার সারা ভারতেই এনআরসি প্রক্রিয়া চালু করা উচিত। রাম মাধব যখন ডিপোটর্ করার কথা বলেন, মুখ্যমন্ত্রী সোনোওয়াল-সমেত সভায় উপস্থিত বিজেপির শীষর্ নেতারা ও শ্রোতা-দশর্করা টেবিল চাপড়ে ও তুমুল করতালিতে সেই মন্তব্যকে স্বাগত জানান। বস্তুত রাম মাধব অবৈধ বিদেশিদের যেভাবে বাংলাদেশে ডিপোটর্ করার পরিকল্পনা ব্যাখ্যা করেছেন, তাতে পরিষ্কার বিজেপির মধ্যে বিষয়টি নিয়ে ইতিমধ্যেই অনেক ভাবনাচিন্তা হয়েছে। তিনি বলেন, অনেকে হয়তো প্রশ্ন তুলবেন, বাংলাদেশ আমাদের বন্ধুপ্রতিম দেশ, সেখানে কীভাবে আপনি এই লোকগুলোকে ডিপোটর্ করবেন? আরে, বন্ধু তো আপনাদের সবাই - তাই বলে কি তাদের যেসব লোকজন অবৈধভাবে এখানে আছেন তাদের কি ফেরত পাঠানো যাবে না? আরে বাংলাদেশে আসা রোহিঙ্গাদের দিকেই তাকান না। বাংলাদেশ নিজেরাই তো লক্ষ লক্ষ রোহিঙ্গাকে মিয়ানমারে ফেরত পাঠাতে সে দেশের সঙ্গে সক্রিয় আলাপ-আলোচনা চালাচ্ছে। সৌদি আরবও সে দেশে থাকা অবৈধ পাকিস্তানি, বাংলাদেশি বা ভারতীয়দের মাঝে মাঝেই ফেরত পাঠায়। কাজেই ডিপোটর্ করার মধ্যে অন্যায় কিছু নেই। ভারত সরকার বন্ধুপ্রতিম বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে বিষয়টি ঠিকই কূটনৈতিক দক্ষতায় ম্যানেজ করে নিতে পারবে বলেও তিনি দাবি করেন। রাম মাধব বিজেপির নিছক একজন সাধারণ সম্পাদক মাত্র নন - দলের কাশ্মীর নীতি থেকে শুরু করে উত্তর-পূবর্ ভারতের নীতি, সবই তিনি দেখাশুনো করেন। রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ বা আরএসএসের সঙ্গে বিজেপির প্রধান সেতুও তিনি। বিজেপির পররাষ্ট্র নীতির ক্ষেত্রেও দলের বাংলাদেশ বিষয়ক নীতি ও কমর্কাÐও পরিচালিত হয় রাম মাধবের নিদেের্শ। বাংলাদেশ থেকে আওয়ামী লীগ নেতা ওবায়দুল কাদের বা এইচ টি ইমাম, জাতীয় পাটির্র প্রেসিডেন্ট এইচ এম এরশাদ কিংবা জাকের পাটির্র নেতা আমির ফয়সল মুজাদ্দেদি - দিল্লিতে যারাই আসুন না কেন, রাম মাধবের সঙ্গে তারা দেখা করবেন ধরেই নেয়া যায়। দিল্লিতে রাম মাধব ‘ইন্ডিয়া ফাউন্ডেশন’ নামে যে থিঙ্কট্যাঙ্কের সঙ্গে যুক্ত, বাংলাদেশের নেতা-মন্ত্রী-নীতিনিধার্রকরাও সেখানে নিয়মিতই বিভিন্ন আলোচনাসভা বা সেমিনারে যোগ দিয়ে থাকেন। এই কারণেই রাম মাধব যখন এনআরসি থেকে বাদ পড়া লোকজনকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোর কথা বলেন, সেটাকে আলাদা গুরুত্ব দিতে হয়। বস্তুত এটা যে তার কোনো ব্যক্তিগত দাবি নয়, বরং বিজেপির সুচিন্তিত মতামত, সেটাও তিনি সোমবার সভার পর একান্ত আলোচনায় স্পষ্ট করে দিয়েছেন। তবে এনআরসি থেকে যারা বাদ পড়বেন, তাদের বাংলাদেশে ডিপোটর্ করাটা ভারত সরকারেরও নীতি কি না - দিল্লিতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় স্পষ্টতই এ প্রশ্নের জবাব এড়িয়ে যাচ্ছে। মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রবীশ কুমার এ বিষয়ে বিবিসির এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, আমরা এনআরসি প্রক্রিয়া নিয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রেখে চলছি। ভারতের সুপ্রিম কোটের্র নিদেের্শ পরিচালিত এই প্রক্রিয়া যে এখনো শেষ হয়নি এবং খসড়ায় যাদের নাম বাদ পড়েছে তারা যে নিজেদের ভারতীয় নাগরিক প্রমাণ করার আরও অনেক সুযোগ পাবেন সেটাও বাংলাদেশকে জানানো হয়েছে। এই মুহ‚তের্ এর চেয়ে বেশি কিছু আমাদের বলার নেই, জানাচ্ছেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র। তার কথা থেকে এটা পরিষ্কার, বিজেপির শীষর্ নেতৃত্ব বাংলাদেশে ডিপোটর্ করার কথা পরিষ্কার করে বললেও ভারত সরকার এখনই এ বিষয়ে মুখ খুলতে চাইছে না। ভারতে জুলাই মাসের শেষে আসামের জাতীয় নাগরিক তালিকার (এনআরসি) যে দ্বিতীয় খসড়া প্রকাশিতহ হয়েছে, তা থেকে রাজ্যের প্রায় চল্লিশ লক্ষ বাসিন্দার নাম বাদ পড়েছে। সরকার যদিও বলছে, এরা সবাই আবার আপিল করার বা নথিপত্র জমা দেওয়ার সুযোগ পাবেন। তারপরেও যদি এনআরসি-তে তাদের নাম না-ওঠে, তাহলেও তাদের ফরেনাসর্ ট্রাইব্যুনালে বা শেষ পযর্ন্ত হাইকোটের্ যাওয়ার অবকাশ থাকবে। কিন্তু এসব প্রক্রিয়ার শেষেও আসামের বেশ কয়েক লাখ লোক অবৈধ বিদেশি হিসেবেই চিহ্নিত হবেন বলে ধরে নেয়া হচ্ছে। বিজেপি এই লোকজনদেরই এখন বাংলাদেশে পাঠানোর কথা বলছে - যদিও বাংলাদেশ সরকার অনেক আগেই জানিয়ে দিয়েছে তারা এদের বাংলাদেশি নাগরিক বলে মনে করে না আর তাই তাদের ফিরিয়ে নেয়ারও কোনো প্রশ্ন নেই। বিবিসি